বাচ্চারা ক্লান্ত। আমারাও ২০ ঘন্টা জার্নির পর আর পারছিলাম না।
অবশেষে সাগড় পাড়ে একটা হোটেল পেলাম। খুব মন্দ নয় বরং বেশ বড় রুম খোলা মেলা, বেলকনি আছে। তবে হাইডির মন খারাপ কারন হোটেল রিসেপশনিস্ট এর ব্যবহার খুবই খারাপ। আমি আর পারলামনা হাইডিকে চুপ থাকতে বলে রিসেপশনিস্টকে কয়েকটা ঝাড়ি দিয়ে সোজা বানিয়ে আমাদের লাগেজ উপরে পাঠেনোর ব্যবস্থা করতে বলে গট গট করে বাচ্চা আর হাইডিকে নিয়ে লিফ্টের দিকে এগোলাম। কাজ হলো তাতে।
চেন্জ করে নিচে গেলাম ডিনার করতে আর শহরটা দেখতে। শহর সাগড় পাড় থেকে দশ মিনিটের ড্রাইভ। চমৎকার আলোক সজ্যা সারা শহরে। না কোন উৎসব নয় এটা ওদের নরমাল প্রতিদিনের রাতের সজ্যা।
সেরাতে আর বেশি ঘুরা ফেরা না করে চমৎকার এক রেসট্যুরেন্টে ডিনার করলাম কলার মোচার সালাদ দিয়ে (ওটা আমার খুবই প্রিয় ডিশ)।
পর দিন সকালে ব্রেকফাস্ট করেই বীচে। অসাধারন বীচ। আমি অনেক বীচে গেছি এক একটা বীচের সৌন্দর্য একেক রকম।
এটা খুব রঙিন টাইপের চমৎকার পরিস্কার বীচ। প্রচন্ড গরম। চামরা পুরে যায় রোদে। জ্যমা আর গ্রেস খুবই মজা পেল।
ওদের নিয়ে স্যান্ড কাসেল বানালাম আর সব ভিয়েতনামি বাচ্চাদের নিয়ে।
দুপুরে গেলাম খেতে বীচের রেস্টুরেন্টে। মেনু চাইতেই দেখিয়ে দিল কিছু গামলা ভর্তি সি ফিশ।
ওটাই ওদের মেনু। তাজা সি ফিশ গুলো গামলার পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে ওখান থেকে পছন্দ করে দিলে ওরা ওজন করে রান্না করে দেবে ওখানে।
ভাষা নিয়ে মহা ঝামেলায় পরলাম। কিছুতেই বোঝাতে পারিনা আমরা কি ভাবে রান্না চাই বা কি চাই, এদিকে খিদেয় মরছি। শেষে এক আধা ইংরেজি জানা ভিয়েতনামি কে পেলাম। উনি আমাদের সাহায্য করলেন অর্ডার করতে।
আহ চমৎকার সব খাবার। সি ক্রাব, মাসল্স, স্কালোপ, প্রন আর কলমি শাক!!!
এখনো মুখে লেগে আছে। অসাধারন। আমি সি ফুড ভালবাসি তাই আমার কাছে স্বর্গীয় মনে হলো।
তবে সব কিছুর সাথে সেই পাতা চিবানোর ব্যপারটা আছে। সব খাবারের সাথে ওরা পাতা দেয় চেবানোর জন্য । ছগল আরকি
ওখানকার মানুষ গুলো সাদামাটা সরল, ব্যবহার ভাল। পরের দিন আমরা গেলাম পাহাড়ের চুড়ায় এক বুড্ডিস্ট টেম্পলে।
অসাধারন দৃশ্য!
সাগড়ের কোল ঘেসে পাহাড় আর তার চুড়ায় বিশাল বুড্ডা মুর্তি।
ওখানে গেলাম মটর বাইকে চড়ে।
একটাতে আমি আর জ্যামা অন্যটাতে হাইডি আর গ্রেস চালকের পেছনে। ওখান সেরে ঠিক করলাম আমারা মারবেল পাহাড় দেখে হোয়য়ান এ যাবো। হোয়য়ান ২৫ মিনিটের ড্রাইভ ডেনাং থেকে। মাঝ পথে মার্বেল পাহাড়।
অসাধারন মার্বেলের কাজ করা জিনিস পত্র দেখলাম। পাহাড়টা পুরোটা মার্বেলের।
পাহাড় কেটে কেটে মার্বেলে চমৎকার সব জিনিস বানানো দেখলাম।
এর পর গেলাম হোয়য়ান। এক শান্ত শিস্ট শহর। আর্ট আর হ্যান্ডি ক্রাফটের জন্য বিখ্যাত। টেইলারিং এর জন্য খুব নাম করা। কাপড় কিনে জামা বানান খুব সস্তা। বলা চলে একেবারে ট্যুরিস্টি শহর। চমৎকার হ্যাট পাওয়া যায় ওখানে। শপিং করে দিন কাটিয়ে সন্ধায় ফিরে এলাম ডেনাংএ। পরের দিন টা শহর ঘুড়ে বীচে কাটিয়ে রেস্ট নিয়ে জায়গা আর পরিবেশটা উপোভোগ করলাম। এর মাঝে আমার বেটী মাহমুদির "নট উইদ্যাউট মাই ডটার" টাও শেষ।
ফেরার পালা এবার। সন্ধের ফ্লাইটে ফিরে এলাম হো চি মিন সিটি। রাতে হটেল পেতে তেমন কষ্ট হলো না। পরের দিনটা আমারা শপিং করে কাটালাম লাল মার্কেটে। সন্ধেয় গেলাম ডিনার করতে চমৎকার এক ৫ তারা হটেলে, আমাদের ফেয়ারওয়েল ডিনার বলা চলে।
পরেরদিন সকালে আমদের ফ্লাইট ব্যাক হোম।
চমৎকার খাবার আর পরিবেশ। সময়টা ভাল কাটল আমদের চারজনের।
তবে এ সবের মাঝে জ্যামা আর গ্রেসের ঘন ঘন টয়লেট যাওয়া কিন্তু অবিরাম চলছে।
পরেরদিন সকালে এয়ার পোর্টে পৌছে আমারা যার যার গেটে চলে গেলাম আলাদা হয়ে। আমি এস আই এ সিংগাপুরে আর হাইডি জেট স্টার এ অস্ট্রেলিয়া। মন খারাপ সবারই গত ১৫ দিনের দুঃখ শুখ আর ভাল লাগার সময় গুলো আমাদের সবার মনে দোলা দিচ্ছিলো। বাড়ি ফিরে এলাম আমারা যার যার মতন কিন্তু সাথে নিয়ে এলাম অজস্র স্মৃতি যার অনকটাই এখানে লেখা হলোনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৫