"ওকে কিভাবে তৈরি করা হবে? "
" কেন যেভাবে ভাবা হয়েছিল"
"তাহলে দেরী কেন?"
" শুরু হোক"
" কোথা থেকে শুরু হবে?"
"মাঝ থেকে-মেরুদন্ডের মাঝ থেকে"
..........................................................................................
দিন ১
কোমরের মাঝে প্রচন্ড ব্যাথা।চিনচিনে ব্যাথা। হটাত হটাত ব্যাথার ঢেঊ উঠে ঊঠে আসছে মাথার দিকে। যখন আসে তখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। আশে পাশে কেউ নেই। একা একা থাকি। কাউকে জানাতে ও পারছিনা।মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হচ্ছে হটাত হটাত। এরকম ব্যাথা কল্পনাই করা যায় না। কি হবে আমার? উফফ- বসলে উঠতে পারিনা। উঠলে বসতে পারিনা। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আশে পাশে কোন ডাক্তার ও নেই। কার কাছে যাব। থাকি মফস্বলের এই বাসায়। তাও একা। সকালে অফিসে খাই। রাতে অনেক দুরের হোটেল থেকে খেয়ে আসি। এখন কিভাবে আমি ডাক্তার এর কাছে যাব? একজন ডাক্তার আছেন। কিন্তু তাও অনেক দূরে। দেখি সময় করে যেতে হবে।কিন্তু একা একা কিভাবে যাব বুঝতে পারছিনা। বাসায় কেউ থাকলে ভাল হত।
দিন ৩
সারা দিন শুয়ে আছি। মাথা ভারী হয়ে গেছে। শরীরের মাঝে যেন একটা লোহার শলাকা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছু বুঝতে পারছিনা। কি হবে এখন? উফ আর পারছিনা। ব্যাথা দিন দিন বাড়ছে। হাই ডোজ এন্টিবায়োটিক এও কোন কাজ করছেনা। কিছু বুঝতে পারছিনা।উফ মাথা ঘুরছে অনেক। মনে হচ্ছে যেন মাথায় তরল আগুন। এই আগুনের শেষ নেই। জ্বলছে তো জ্বলছেই ।
দিন ৭
ব্যাথা এখন ছড়িয়ে গেছে সারা শরীরে। আমার হাতের কনুই গুলো প্রায় অবশ এখন। আঙ্গুল গুলো নাড়াতে পারি। কিন্তু কেমন যেন অসাড়। পায়ের দিকে তাকাতে পারছিনা। দেখেই ভয় লাগছে। বাম পায়ের গোড়ালি র দিকটায় যেন কেমন ভাবে বেঁকে গেছে। এর ফলাফল কি হবে জানিনা। এখন কুঁজো হয়ে হাঁটতে হচ্ছে। কিন্তু ঠিক সাধারন কুঁজো না। কেমন যেন বেঁকে গেছে পিঠ। ঠিক উলটো ভাবে। আসতে আসতে যেন উলটে যাবে এমন ই মনে হচ্ছে।
দিন ১১
মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা। পা গুলো প্রচন্ড বেখাপ্পা ভাবে বেঁকে গেছে গতকাল রাতে। আমি বুঝিনি কি হয়েছে। আমি শুধু টের পাচ্ছি আমার শরীরের সব কিছু উলটো হয়ে যাচ্ছে। পায়ের দিকে তাকাতে ভয় লাগছে অনেক। গল্পে পড়তাম ভুতের পায়ের পাতা উলটা হয়। এখন আমার নিজের উলটো পায়ের পাতা দেখে কেমন যেন বমি আসছে আমার। প্রচন্ড যন্ত্রনা সারা শরীর জুড়ে। এই কয় দিন কিছুই খাইনি। কেন যেন খিদে লাগেনি। বুঝতেই পারছিনা। আমি কিভাবে না খেয়ে থাকছি এতদিন সেটাই বিশ্বাস হচ্ছেনা। উফ আর ভাবতে পারছিনা।
দিন ১৩
আজকে তের তম দিন। আমাকে এখন আমি নিজেই চিনতে পারছিনা। হয়ত একদিন পর আমাকে আমি নিজেই চিনতে পারবোনা।দাঁত গুলো অনেক লম্বা হয়ে গেছ ভোরের দিকে। কি হবে জানিনা। প্রচন্ড মানসিক চাপ অনুভব করছি। কি হবে জানিনা সব কিছু উলটে গেলে। এখন আমি পুরোপুরি উলটে যাবার অপেক্ষায় আছি।
.............................................................................................
“কেমন হল পরিবর্তন?”
“ অনেক সুন্দর লাগছে ওকে। ঠিক আমাদের মতই”।
“ না আমাদের মত সুন্দর সে নয়। তবে ও যাকে ওর শ্বদন্ত দিয়ে কামড় দেবে-যার রক্ত খাবে তার চেহারা হবে অনেক টা আমাদের মত”।
“ হয়ত...... কে জানে”।
“ হুম এখন আমি সন্তুষ্ট”
“এখন কি করা হবে একে নিয়ে?”
“কেন ? যা পরিকল্পনার শেষ ধাপে ছিল তাই হবে”
“হুম- তাহলে ওকে এখন লোকালয়ে পাঠানো যাক। দেখি ওর থেকে যার পরিবর্তন হবে সে দেখতে কেমন হবে”
“ঠিক। এখন ওকে লোকালয়ে পাঠানো যাক”
..........................................................................................
সুমির কোন ভাবেই ঘুম আসছে না। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা বলে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। কিন্তু ঘুম আসছেনা।বাইরে চাঁদ নেই। নিকষ কালো অন্ধকার। কিন্তু এক স্নিগ্ধ আলো ঘরে প্রবেশ করছে। রাতে এই আলোকে অনেক উপভোগ করে সে। কিন্তু আজকে অনেক বিরক্ত লাগছে এই আলো। কি মনে করে বিছানা থেকে উঠে এসে বারান্দায় দাড়ালো সে। উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিচে রাস্তার দিকে তাকিয়েই কেমন যেন ভয় পেয়ে গেল সুমি। নিচে কেউ যেন হামাগুড়ি দিয়ে হেটে চলেছে। উপর থেকে দেখে অনেকটা কুকুরের মত মনে হচ্ছে। এগিয়ে আসছে ওদের বাড়ির দিকেই। হটাত ঠিক নিচে থেমে গেল সুমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর সোজা সুমিদের বাড়ির দেয়াল বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। হটাত ভয় পেয়ে গেল সুমি। তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকেই বারান্দায় যাওয়ার দরজাটা বন্ধ করে দিল। ও হয়ত জানেনা- কোন ভাবেই জন্তু টাকে আটকানো যাবেনা। সেটা এগিয়ে আসছে সুমির দিকেই////
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:২৮