ঐ তো দেখা যাচ্ছে লালচে গোলাকার গহবর টা।দুই পাশ থেকে নেমে এসেছে কালচে কেশর। ভেতর থেকে ও নেমে এসেছে একটা- সুক্ষ্ম ও চিকন চিকন কেশর। মাঝ থেকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে ওটা। ঠিক আমার দিকে।আমার আজকে এখানে আসার পেছনে এত কষ্টের মুলে ঐ চলমান পাহাড়টা। ত্রিশ প্রহর আগে এই পাহাড়টা আমার সন্তান কে- আমার প্রাণের টুকরা কে মেরে ফেলেছে। হত্যা করেছে চরম নৃশংস ভাবে। আমি ভাবতে ও পারিনা- এভাবে আমার রক্ত কে ওটা মেরে ফেলতে পারে। আমার সন্তান না হয় খেলতে খেলতে চলমান পাহাড় টার এলাকায় চলে এসেছিল- হয়ত বা ভুল করে চলে এসেছিল ওর ঘুমানোর স্থানে- তাই বলে কি এভাবে চ্যাপ্টা করে পিষে ফেলতে হবে? আমার মাকে ও এভাবেই এক চলমান বিশাল পাহাড় পিষে হত্যা করেছিল। আমার বয়স তখন মাত্র দুই শত প্রহর। সেই ছোট্ট বয়েস থেকে আমি মা হারা। মায়ের আদর কি আমি বুঝিনি। আদর করে আমাকে বুলিয়ে দেয়নি ভালবাসা কেউ। আমি ষোল জোড়া পা নীলাভ থালার দিকে উঁচু করে উপরে তাকিয়ে সেখানে থাকা মহান প্রভুর কাছে কত চেয়েছি আমার মাকে ফেরত পেতে- মায়ের একটু ভালবাসা পেতে- কিন্তু পাইনি। আমার বাবা আর ভাইয়েরা আমাকে কত সান্তনা দিয়েছে। এনে দিয়েছে সবুজাভ গাছের পাতা। আমি খাইনি-মাকে ফেলে আমি খেতে ও পারিনি অনেক অনেক প্রহর। সেই থেকে আমি কতদিন অপেক্ষায় থেকে থেকে যখন বড় হয়েছি তখন বুঝলাম সেই নীলাভ থালার উপর বসে থাকা মহান প্রভু আমাদের সবাইকে মৃত্যু দিয়েছেন। মরার পর কেউ জীবিত হয়না। তাই আমি আমার একমাত্র সন্তান কে আগলে আগলে রাখতাম। কিন্তু সেই কুপ্রহরে কি যে হল- আমার বাবু সোনা হটাত করে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে চলে গেল ঐ দৈত্যের সামনে পড়ে গেল সে- আহ আর মনে করতে পারছিনা। কি যে দুঃসহ সেই স্মৃতি। ভাবতেই বুক ভেঙ্গে যায়। শয়তান টা আমার সন্তানকে চ্যাপ্টা করেই ক্ষান্ত হয়নি।একটা পাতলা সাদা বস্তু দিয়ে আবৃত করে আমার সন্তানকে ছুড়ে ফেলল অনেক নিচে বহমান তরলের ধারায়। সেই তরলের ধারা আমার সন্তানকে বয়ে নিয়ে গেছে বহুদুর। আমি অনেক খুজেছি আমার বাবু সোনার শেষ চিহ্ন টূকু- পাইনি। পাইনি আমার সোনা মানিক কে শেষ বারের মত দেখতে। তাই আমি অনেক ভেবে চিনতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ঐ দৈত্যটাকে শেষ করে দেব। ওর ভেতর প্রসব করব আমার অনাগত সন্তান। ওর শরীরের ভেতর তৈরি করব নিষ্ঠুর মৃত্যুর জাল।
এখানে আস্তে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। প্রথমে সবুজাভ গাছের পাতা থেকে নেমে আমি আসলাম কালচে জলধারার তীরে। সেখানে আবার অনেক অনেক দৈত্য ছুটা ছুটি করে। লাঠি দিয়ে নির্দয় ভাবে পেটায় এক অবুঝ গোলাকার বস্তু। তারপর ছুটা ছুটি করে সেই লাঠিকে মাটিতে ঠেকিয়ে। ওদের পার হয়ে আসতে আমার অনেক বেগ পেতে হল। তারপর শরীর বেকিয়ে একটা সাদা আবর্জনা উপর পাড়ি দিয়ে চলে আসি সেই কালচে জলধারা। তারপর শুরু হয় আমার ক্লান্তি কর ভ্রমন। অনেক গুলো তলা পার করে আস্তে আস্তে যখন আমি এলাম তখন গরম প্রদিপ চলে গেছে নীলচে থালার উল্টো পাশে। এখানে আলো আছে বলে আমি ঠিক খুঁজে খুঁজে চলে এলাম সেই দৈত্যের কাছে।
ঐ যে সামনে পড়ে আছে দৈত্য। যেন খুব ক্লান্ত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার নিখাদ শয়তানি। জানি এটাকে ওদের ভাষায় বলে ঘুম। আমি আসছি রে শয়তান। তোকে আমি জনমের ঘুম পাড়িয়ে দেব। এমন ভাবে তোর ভেতর বিষ ঢেলে দেব যে তুই কাঁদবি- কিন্তু ব্যাথায় ঘুমাতে পারবিনা।
দেখ আমি এসে গেছি- একদম কাছে এসে গেছি। ঐ গহবর টা দিয়ে ই আমি ঢুকবো। একবার ঢুকলেই বুঝবি যন্ত্রনা কি... মৃত্যু কি......
.........................
........................
দুই মাস পরঃ
ডাঃ রাজেশ মাত্র পোষ্ট মডেম করতে ঢুকলেন ওটি রুমে। প্রখ্যাত ব্যাবসায়ি আসাদ উল্লাহ্র একমাত্র ছেলে রাসিদ ঊল্লাহ মারা গেছে এক দম ছোট বয়সে। মৃত্যুর আগে ওর বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। অনেক লোক এটাকে সাধারন মৃত্যু বললে ও আসাদ উল্লাহ্র ভাষায় এটা হত্যা। উনার সম্পত্তির লোভে ঊনার একমাত্র ছেলেকে হত্যা করেছে উনার ভাই এই এজাহার দিয়ে পুলিশে দিয়েছেন উনার ভাই কে। আর পুলিশের আদেশে কবর না দিয়ে লাশ পোস্টমর্টেম টেবিলে নিয়ে আসা হয়েছে।
ডাঃ রাজেশ আস্তে আস্তে বুকের কাছ থেকে কাটতে শুরু করলেন লাশ। একটা বাচ্চা ছেলেকে কাটতে উনার খারাপ লাগছে। স্কাল্পেল দিয়ে কাটতে কাটতে এক যায়গায় এসে উনার চোখ থেমে গেল মাংসের ভাঁজে একটা পিন্ডের ঊপর এসে। ভাল মত দেখেই বুঝলেন এটা একটা লার্ভা। কিন্তু এটা কিভাবে এখানে এসেছে বুঝতে পারলেন না তিনি।
প্রথমে লিভারটা কেটে সেটার ভেতর নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুঝলেন যে ছেলেটাকে কোন বিষ দেয়া হয়নি। তারপর একই ভাবে একটা একটা অঙ্গ পরীক্ষা চালিয়ে যেতে থাকলেন তিনি।কেটে কেটে পরীক্ষা করতে করতে মাথার খুলি থেকে চুলের আস্তরণ কেটে খুলির উপরিভাগ তুলে ফেলতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন ডাঃ রাজেশ। কানের ভেতর থেকে শুরু করে পুরো মস্তিষ্ক আর খুলির কোটরে কোটরে সব জ্যান্ত বিছা। পিল পিল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে সব। যেন নিজেদের আস্তানা। রক্তাক্ত কিছু বিছা দেখেই বুঝলেন এই বিছা গুলো কোন এক অজানা কারনে রক্ত লোলুপ হয়ে প্রবেশ করেছে এই ছেলেটার কানের ফুটো দিয়ে।তারপর বংশ বৃদ্ধি করে বাড়িয়েছে নিজেদের। যদি ও বিছা প্রাণী টা নিরামিষ ভোজী- কিন্তু এখানকার বিছা গুলো রক্ত পান করতে দেখেই বুঝলেন যে এই বিছা গুলো ছেলেটার মস্তিষ্কের বেশ কিছু সেল ও খেয়ে ফেলেছে।
ভাবতে ভাবতে পোষ্টমরটেম রিপোর্টে কথা গুলো লিখতে লাগলেন ডাঃ রাজেন। কিন্তু তিনি বুঝতেই পারেননি- কখন একটা রক্তলোলুপ বিছা উনার আপ্রনের ভেতর করে চলে এসেছে উনার শরীরে। যেকোন সময় সেটা প্রবেশ করবে ডাঃ এর শরীরে- আরেকটা সুস্বাদু গরম রক্তবাহী প্রানীর তরল রক্তের খোঁজে ......
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:২৯