২১-০৩-১৯৯৭
ফিরোজকে আমি বিশ্বাস করে ভুল করেছি। ওকে আমি ভুল করে খুব ভাল একজন বন্ধু মনে করেছিলাম। তাই ওকে দিয়েছিলাম আমার ভাইয়ের স্থান। আমার মাকে মা বোন কে বোন ডাকার অধিকার। ছোটবেলা থেকে ওকে আমি নিজের ভাইয়ের মত দেখেছি। কিন্তু আজ আমার কাছে সব পরিষ্কার। ও আমার ভাই নয়- ও আমার বোনার ঈজ্জত হরণ করেছে একা পেয়ে। যে বোন হেসে খেলে কাটাত ওর সময়- সে এখন কবরের ভেতর। আত্মহত্যা ছাড়া হয়ত কোন পথ খুঁজে পায়নি।
কদিন আগে সুমি আমাকে বলেছিল-
"ভাইয়া ফিরোজ ভাই আমার দিকে কেমন কেমন করে তাকায়- আমার ভাল লাগেনা"
সেদিন আমি ওকে আদর করে বলেছিলাম -
"বোকা তোকে তো ও নিজের বোনের মত দেখে।"
আমি বিশ্বাস করিনি সেই ফিরোজ যাকে আমি নিজের ভাই মনে করেছিলাম সে রাস্তা থেকে সুমিকে তুলে নিয়ে গিয়ে......
না।। আর ভাবতে পারছিনা। ওকে আমি খুন করে ফেলবো..
২৭-০৩-১৯৯৭
মাত্র আমি ফিরোজকে লোহার রড দিয়ে মেরে মাথার পেছন দিকটা থেতলে দিয়েছি। এক বাড়িতেই শেষ বেচারা। ইচ্ছা ছিল ওকে কেটে টুকরা টুকরা করে ভাসিয়ে দেব বুড়িগঙ্গায়- কিন্তু এখন ঘেন্না লাগছে। এইত কদিন আগেও কোরবানির গোস্ত কাটার জন্য আমাকে ও হাত লাগাতে হত। নিজের হাতে কত মাংস কেটেছি। কিন্তু এই পশুটার দিকে তাকাতেই আমার খুব ঘেন্না হচ্ছে।
কি করা যায় একে? বস্তা ভরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেব নদীতে?
নাহ- ভুল হবে। কালকেই লাশ ভেসে ঊঠবে- তখন আমাকে ঠিক বের করে ফেলবে পুলিশ।
কাটাকাটির চিন্তা তো আগেই বাদ দিয়েছি।
মাটি চাপা ও দিতে পারতাম- কিন্তু এখন ঢাকা শহরে খালি যায়গা খুঁজেই পাওয়া যায়না। মাটি চাপা দেব কই? এর মাঝেই লাশের গা থেকে গন্ধ বের হওয়া শুরু হয়েছে। মাকে তিনদিন আগে রেখে এসেছিলাম আমার ফুফুর বাড়িতে। না হলে এখন মা এসব দেখলে ঠিক পাগল হয়ে যেতেন।
কি করি এখন?
২৮-০৩-১৯৯৭
টানা দুই দিন হতে চলল আমি কিছু খাইনি। লাশটাকে রেখেছি বাথরুমে ।
একটু আগে দুইবার বমি হয়েছে আমার। ফুফুর বাড়ি থেকে মা ফোন করেছিল। এখানে আসতে চায়। কিন্তু এখন এখানে আসলে আরেক কান্ড বাধবে। তাই এখন আসতে না করে দিয়েছি।
এখন অনেক রাত। এত রাতে শুধু একটা বাড়িতেই আলো জ্বলে। সেটা হল এলাকার নেতা সংসদ সদস্যের বাড়িতে। উনি সারা রাত জেগে দিনে ঘুমান। ভোটের সময় দেখা হয়। তারপর উনি হাপিস হয়ে সারা বছর ঘুমান। এভাবেই চলছে। আমি কি উনার কাছে যাব? গিয়ে বলব যে আমি একটা খুন করেছি?
পুলিশকে ফোন করেছিলাম। বিশ্বাস করেনি আমার কথা। তাই এখন আমাদের নেতাই শেষ সম্বল। আমি উনার কাছে গে্লাম......
১৫-০৪-১৯৯৭
আজ আমার দ্বিতীয় মিশন। কি মিশন জানেন? খুন করার মিশন। বিরোধী দল হরতাল দিয়েছে। তাই এখন একটা ইস্যু দরকার যাতে সরকারী দল ও বলতে পারে যে তাদের ও একজন মারা গেছে। আমাকে সেদিন রাতে নেতা চুপচাপ উনার বাসায় থাকতে বললেন। তারপর দিন থানা থেকে ওসি সাহেব আসলে উনি সব চেপে যান। বাসা থেকে লাশ উদ্ধার হয়। কিন্তু রেডিও টিভি পর্যন্ত খবর পৌছায়না।
দিন কয়েক এর জন্য আমাকে আরেক টা এলাকায় পাঠানো হয়। সেখানে আমি বেশ ভাল ছিলাম। চিকিৎসা করানো হল আমার। সুস্থ হলে আমাকে আমার প্রথম মিশনে পাঠাল নেতা। আমাকে এক জন পাতি নেতাকে খুন করতে হবে। খুনের পর লাশ ও গুম করতে হবে।
সেবার আমি ফাইভ স্টার নিয়ে গিয়েছিলাম খুন করতে। হাত অনেক কেঁপেছিল। মারার পর লাশ টা গুম করতে ও অনেক ঝামেলা হয়েছিল। তাই এবার আমাকে আমার পুরোনো অস্ত্র দেয়া হল। সেই লোহার রড। যেটা দিয়ে আমার প্রথম শিকার ছিল ফিরোজ। আমাকে শুধু মাথার পেছন থেকে বাড়ি মেড়ে মেরে ফেলতে হবে সেই পাতি নেতা কে।
নাহ-থুঃ ফিরোজ নামটা মনে আসতেই মুখে থু থু চলে আসল। আমাকে এগিয়ে যেতে হবে খুব আসতে আসতে। সামনে বসে থাকবে খুনি।
অনেক ক্ষন ধরে বসে আছি।কিন্তু কেউ আসছেনা। কি হল- আমাকে একটা খুন করতে বলা হল- সামনে বসে থাকবে খুনি। লম্বা পাচফুট চার- কালো চেহারা। চুল কোঁকড়া। এমন একজন। ও নেতা আবার সবুজ শার্ট ও পড়ে আসবে। এইত আমাকে যা বলা হয়েছে। কিন্তু সে রকম তো কেউ আসছে না। যেখানে বসে আছি- পুরো এলাকা শুনশান। কখন যে আসবে সেই শিকার- আমি শিকারী তাকে খুন করবো কে জা্নে...
ওই ত দেখা যাচ্ছে শিকার আমার- সোনা তুমি আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছ। ওই ত- বাইকে করে এসেছে। পাতি নেতা বলে কথা। ঐযে হাতে লাল স্কার্ফ- লাল স্যান্ডো গেঞ্জি- উচ্চতা মাপা যাচ্ছেনা। তবে মাথার চুল কোঁকড়া। আমাকে পেছন থেকে যেতে হবে। পেছন থেকে মাথার বামে এলাকায় জোড়সে একটা মারলেই বেচারা শেষ।
কিন্তু একি? ও যাচ্ছে কোথায়? আমাকে না বলা হল ও অনেক ক্ষন থাকবে। আমাকে তাহলে কি ব্লাফ দিল ওরা? এখন আমি কি করবো? আমি কি ফিরে যাব? চিন্তা করতে করতে ঘুরতে গিয়েই দেখি আমার পেছনে সেই পাতি নেতা।
দূর থেকে আমি তাঁর চোখ দেখিনি। এখন দেখতে পাচ্ছি। টকটকে লাল। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ও তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমার হাতে লোহার রড টা ধরা। কিন্তু আমি মারার চিন্তা করার আগেই দেখতে পেলাম একটা সাদাটে ঝলক- তারপর সব ফাঁকা .....
..............................................................................................................................................................................................................................................................................................................
দুই দিন পর একটা লাশ নিয়ে মিছিল করছে দুই টা দল। পুলিশের সাথে ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় জখম হয়েছে শতাধিক। দুই দলের সব নেতা সেই লাশকে নিজেদের দলের লোকের লাশ বলে দাবি করছে। কিন্তু সেই লাশের আসল পরিচয় কেউ জানেনা.........
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:০৪