কুড়িগ্রাম; যে জেলাকে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা বলা হয়। দেশের আর কোথাও এখন 'মঙ্গা' কার্যক্রম দেখা না গেলেও, এখানে 'মঙ্গা' কার্যক্রম প্রতিবছর চালু থাকে। এখানকার মানুষদের এখনো শুনতে হয়, 'আরে! তোমরা তো মঙ্গা এলাকার লোক।'
কুড়িগ্রামের একদম মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে দেশের অন্যতম বড় নদী, ব্রহ্মপুত্র। ফলে, প্রতিবছর বর্ষাকালে এখানে বন্যা হয়। আর নদীভাঙন তো নিত্যদিনের ঘটনা। যারা, নদীতীরবর্তী এলাকায় থাকে, গত ১০ বছরে কম করে হলেও একাধিকবার বাড়ি ভাঙ্গার সম্মুখীন হয়েছে। তবুও, এখানে সরকার, স্থানীয় প্রসাশন, কারো কোনো উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষণ দেখা যায় নি। নেই কোনো সুপরিকল্পিত বাঁধের ব্যবস্থা। ফলে প্রতিবছর নদীর পানি অত্যধিক হারে বেড়ে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।
তবে কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী উপজেলা বা পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বন্যার প্রভাব কখনোই সেভাবে ছিলনা। কিন্ত এবার একদম ব্যাতিক্রম। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি,ভারত থেকে আসা পানি,বাঁধ ভেঙ্গে যাতা একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আজকে শুনলাম উপজেলা চত্বরে পানি উঠেছে। রৌমারীর প্রায় ৭০% লোক এখন পানিবন্দী। সবমিলিয়ে একটা ভয়াবহ অবস্থা বলতেই হয়। আমাদের এদিকটায় যখন এই অবস্থা, তখন একদম নদী তীরবর্তী রিমোট এলাকার মানুষ, নদীর সাথেই যাদের বসবাস, যাদের ঘর-বাড়ি, ভিটেমাটি সব পানিতে মিশে গেছে, তাদের দিনকাল আসলে কেমন যাচ্ছে, চিন্তা করা যায় না।
মানুষগুলোর থাকার, খাবারের, চিকিৎসার ব্যাবস্থা, সবকিছু ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে এটা আশা করাও যায় না। হয়তো বিভিন্ন দিক থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, উপজেলা থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, উপরমহল থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্ত যেভাবে পরিস্থিতি এগোচ্ছে, তাতে পানি কমার এখন পর্যন্ত কোন লক্ষণ দেখা যায় নি। পানি ক্রমান্বয়েই বেড়ে যাচ্ছে। আর তাই সেই মানুষগুলোর সাহায্যের দরকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
গত ২ বছরে প্রধানমন্ত্রী দুইবার কুড়িগ্রাম ঘুরে এসেছেন, মানুষের দূর্দশা দেখেছেন, তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপের মুখ দেখেনি কুড়িগ্রাম। প্রতিবার বন্যা হয়, প্রতিবার বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে, এভাবে ত্রাণ নিয়ে আর কত বছর চলা যায়? যদি স্থায়ী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে প্রতিবছর এভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে যেতে হবে।
কুড়িগ্রামে প্রায় ২০০ কি.মি বাঁধের মধ্যে ২৩ কি.মি ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে এই দূর্দশার সৃষ্টি হয়েছে। অনতিবিলম্বে বেড়িবাঁধ উঁচু ও প্রসস্থ করা না হলে, এরকম বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে। পাশাপাশি নদীখনন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা দরকার।
সবশেষে, একটা কথাই বলতে চাই, আর ত্রাণ নয়, এবার স্থায়ী পরিত্রাণ চাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৫৯