চট্টগ্রামে গনজাগরন মঞ্চের সমাবেশ ঠেকিয়ে প্রথম লাইমলাইটে আসে হেফাজতে ইসলাম। গত ৬ই এপ্রিল হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় লংমার্চে বড়ধরনের জনসমাগম করে তাদের বিশাল শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানান দেয়। ভোটের হিসাব করে রাজনৈতিক দলগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে হেফাজতের সেবায়।এর বাইরেও তারা অনেকের করুনা লাভ করে এই ভাবনা থেকে যে হেফাজতিরা সমাজের অবহেলিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করে, তারা ধর্মকে ভালোবাসে, আর ভালোবাসে আল্লাহ আর তার নবীকে। এর বাইরে কিছু দুর্বল ঈমানের লোকও তাদের সমর্থন দেয় এইভেবে যে, এবার যদি ইসলামের কোন গতি হয়! কিন্তু সাধারন ধর্মপ্রান মানুষ প্রথম থেকেই বলে আসছেন- ইসলামের হেফাজত করবেন স্বয়ং আল্লাহ, মানুষকে ইসলামের হেফাজত করার দ্বায়িত্ব দেয়া হয়নি।
হেফাজতিরা কারও কথায় কর্নপাত না করে ইসলামের হেফাজতের দ্বায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়, লংমার্চ শেষে সমাবেশে তারা ১৩ দফা দাবি তুলে এবং দাবি তুলেই ক্ষান্ত হয়নি, সেটা সমাজ মেনে নিচ্ছে কিনা বা এই দেশের উপযোগী কিনা তার তোয়াক্কা না করে পুরু রাষ্ট্রকেই চ্যালেন্জ করে বসে।এইদিকে সরকারও তাদেরকে বেশী ঘাটাঘাটি করার সাহস করেনি তাদের ধর্মীয় লেবাসের কারনে। তাদের লংমার্চের বিশাল অর্থের যোগানদাতা কে সে প্রশ্ন তোলার সাহসও কেও করেনি।তারপর বগুরা সমাবেশে আল্লামা শফীর হেলিকপ্টার যাত্রা এবং ঐ সমাবেশ থেকে ৫ই মের পর সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি মানুষ ভালভাবে নেয়নি।
৫ই মে অবরোধ শেষে শর্তসাপেক্ষে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অনুমতি পায়। তাদের সমাবেশে আসার কথা ছিল তজবি হাতে, কিন্তু তাদের হাতে ছিল লাঠিসোটা আর হাতবোমা। তারা কথা দিয়েছিল, তাদের দাবি জানিয়ে সন্ধ্যায় চলে যাবে মতিঝিলের ব্যাস্ততম এলাকা থেকে। কিন্তু সারাদিন তারা ঐ এলাকায় বিভিন্ন হকারদের দোকান-পাট এমনকি কোরআন , পার্টি-অফিস, গাড়ি, ব্যাংক, ভাংচুর জ্বালাও-পোড়াও করে গেছে। তাদের দানবীয় হিংসায় ঐ এলাকার অফিসফেরত লোকজন ভয়ে, আতংকে কুকড়ে যায়, পৈত্রিক-প্রান নিয়ে কোনভাবে পালিয়ে আসে, আবার অনেকে বেঘোড়ে প্রান হারায় । তারপরও প্রশাসন অপেক্ষা করছিল, সমাবেশ শেষ করে তারা সন্ধ্যায় চলে যাবে। কিন্তু সব শর্ত ভঙ্গ করে তারা ঘোষনা করে, দাবি না মানা পর্যন্ত তারা একচুলও নড়বে না। ধর্মনীতি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা রাজনীতি তে জড়িয়ে পড়ে। তাদেরকে যৌথবাহিনী অপারেশন শুরুর আগমুহুর্ত পর্যন্ত অনুনয় বিনুনয় করে টলাতে পারেনি, তার প্রতিজ্ঞা করে এসেছে শহীদ হবে । কিন্তু অপারেশন শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে এই ভিডিওতে তাদের সব ঈমানী জোশ ফুড়িয়ে যায়।
আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম, ইসলামের হেফাজতকারী স্বয়ং আল্লাহ, কিন্তু তারা সেই দ্বায়িত্ব তাদের নিজেদের কাধে তুলে নেয়, কেউ রাজনৈতিক লোভের কারনে, কেউ অর্থনৈতিক লোভের কারনে । এখন তাদের এই জমায়েতকে কেন্দ্র করে যার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার মাস্টারপ্ল্যান করে রেখেছে, পরদিন হয়তবা সেটা সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেত, দেশে দীর্ঘকালীন অরাজকতা দেখা দিত, সেটার দায়ভার নিশ্চয়ই হেফাজতিরা নিত না।
তবে মানুষ মাত্রই ভুল করে, ধর্মকারীরাও ভুল করে। আশার কথা হচ্ছে হেফাজতিরা তাদের ভুল একটু একটু করে বুঝতে পারছেন এবং তাদের কারও কারও সেই ভুলের মাশুলও দিতে হয়েছে- এ যেন "একে পাপ করে, দশে পৈড়া মরে"। ইসলাম ধর্মের কোথাও কোরান বা নবীকে অবমাননার বিচার ভার মানুষের হাতে দেয়া হয়নি। আল্লামা শফী, তাদের ডাকা হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এবং বলেছেন- "জুলুম নাস্তিকের ভার আল্লাহর উপর দিলাম"। আল্লাহ পাকের হেদায়েত হোক কিংবা পুলিশের মাইরের ভয় হোক অবশেষে তারা সত্যটা উপলদ্ধি করতে পেরেছেন সেটাই বড় কথা।আশা রাখি তাদের এই বিশ্বাস দীর্ঘজীবি হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:৩৯