
ঐ হিটারের সাথে সেন্সর নামক এক পাহারাদার লাগানো আছে যে সবসময়ে রুমের তাপমাত্রা মাপতে থাকে। যখনই সহনশীল মাত্রার নিচে নেমে যায় তাপমাত্রা তখনই সে হিটার অন করে দিয়ে গৃহকর্তাকে অতিশীতের হাত থেকে রক্ষা করে। তা না হলে দেখা যেত ঘুমের ভিতরেই মাইনাস ডিগ্রী তাপমাত্রায় হি হি করে কাঁপছি!
তাহলে আমরা এবার জানতে চাই এ সেন্সর মানে কি? খায় নাকি মাথায় দেয়? সেন্সর নেটওয়ার্কই বা কি জিনিস?
বাংলাদেশের লোডশেডিং-এর জামাই আদরের মাঝে থেকে এ সরকারের আমলে আপনারা সবাই কম-বেশি সৌর বিদ্যুত নামটার সাথে পরিচিত।

তবে পোস্টের মূল উদ্দেশ্যের বাইরে গিয়ে বলি আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য যে পরিমাণ বিদ্যুত দরকার সেটা সোলার প্যানেল দিয়ে পূরণ করা সম্ভব না, কারণ এটা দিয়ে খুব অল্প ভোল্টেজের বিদ্যুত উৎপন্ন হয়, কিন্তু সোলার প্যানেলগুলোর দাম অত্যধিক।গ্রামে- গন্জে বিশেষ করে দ্বীপ অন্চলে যেখানে বিদ্যুতের তার পৌঁছানো কষ্টকর সেখানে নাই মামা চেয়ে কানা মামা ভাল হিসেবে সৌর বিদ্যুত কাজে লাগে।
তাহলে আমরা কি দেখলাম? একটা সেন্সর (Sensor) এক শক্তিকে আরেকটা শক্তিতে রূপান্তর করে।এটার আরেকটা নাম হলো ট্রান্সডিউসর (Transducer). যেমন ধরুন, তাপ শক্তি থেকে বিদ্যুত শক্তি, আলোক শক্তি থেকে বিদ্যুত শক্তি, শব্দ শক্তি থেকে আলোক শক্তি, চুম্বক শক্তি থেকে শব্দ শক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাহলে আমরা নানারকমের সেন্সরের প্রকারভেদটা একটু দেখে নেই,
১। ম্যাকানিক্যাল সেন্সর (পিজোইলেকট্রিক ইফেক্ট কাজে লাগায়, নদীর জোয়ার ভাটা নির্ণয়ে, বন্যা পরিস্থিতিতে পানির উচ্চতা মাপতে পারে)
২। ম্যাগনেটিক, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সেন্সর (হল ইফেক্ট কাজে লাগায়)
৩। থার্মাল সেন্সর (এটা আমার রুমে কাজ করে)
৪। অপটিক্যাল ট্র্যান্সডিউসার (ফটোভোল্টায়িক ইফেক্ট কাজে লাগায়, এটা হলো গিয়ে সোলার সেল)
৫। ক্যামিক্যাল এবং বায়োলজিক্যাল সেন্সর (বিভিন্ন ফুড মনিটরিং-এর কাজে, ব্লাড প্রেশার মাপতে, হার্টের অবস্থা ইত্যাদি চেক করতে ব্যবহৃত হয়)
ব্র্যাকেটের ভিতরে কিছু তাত্ত্বিক ইফেক্টের কথা বলা আছে, মানে এই সেন্সরগুলো কিভাবে কোন পদ্ধতিতে সেন্সিং-এর কাজ করে সেই নামগুলো। এগুলো সাধারণের না জানলেও চলবে, কেবল এই লাইনের টেিক লোকেরা নিজ দায়িত্বে পড়ে বুঝে নিলেই হবে বা অনেকে জানেও।

এবার আমরা একটু বুঝে নেই সেন্সর নেটওয়ার্ক কি জিনিস? মনে করুন কোন এক স্থানের পরিবেশের ব্যাপারে আপনার উপাত্ত দরকার। তাহলে কি করতে হবে অনেকগুলো সেন্সর ডিভাইস (Sensor/ Actuator) সেখানে ছড়িয়ে দিতে হবে, তাদের কাজ হবে আশপাশের পরিবেশ থেকে কাঙ্খিত তথ্য সংগ্রহ করা, যেমন ধরেন তাপমাত্রা, এরপর সেটাকে মেশিন বুঝবে সেরকম ভাষায় পরিবর্তন করা মানে ইলেকট্রিক সিগনালে রূপান্তর করা। এদের সবার মাঝে বিভিন্ন টপোলজিতে কানেকশান থাকবে। কানেকশান হতে পারে রিং টপোলজিতে (Ring Topology) বা মেশ টপোলজিতে (Mesh Topology) বা আর কোনভাবে। আবার কানেকশান হতে পারে তারসহ (Wired) বা তারছাড়া (Wireless). বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারহীন সেন্সর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়, ঝামেলা কম, কস্ট কম তাই। সেন্সর নেটওয়ার্ক সাধারণত এডহক নেটওয়ার্কের (Adhoc Network) ন্যায় কাজ করে।

এরপর একটা মাস্টার থাকে (Gateway Sensor node) বা ধরেন গিয়ে মোবাইল ফোনের যে বেইস স্টেশন (Base Station) আছে সেরকম কিছু, তার কাজ হলো বিভিন্ন সেন্সর নোড থেকে উপাত্তগুলো সংগ্রহ করা, কোন নোড নষ্ট হয়ে গেল কিনা, তার আয়ু শেষ হয়ে এলো কিনা এসব দেখা। যদি লিন্কের মাঝখানের কোন নোড নষ্ট হয় তাহলে বিকল্প কানেকশান তৈরী করা, নোডগুলোতে পাওয়ার সাপ্লাই দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর সে উপাত্তগুলো জোগাড় করে উপরের মহলে পাঠায় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবার জন্য।
সেন্সরের আরেক রকম দুই ভাগ হলো: স্মার্ট সেন্সর এবং ভার্চুয়াল সেন্সর।
স্মার্ট সেন্সরের কাজ শুধু কেবল তথ্য সংগ্রহ করা না, সেখানে সিগনাল প্রসেসিং-এরও কাজ হয়, কিছু মেমোরী থাকে, তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জরুরী সিদ্ধান্ত নেবার মতো ক্ষমতা থাাকে, জরুরী পরিস্থিতির তৈরী হলে ( নদীতে হঠাৎ বন্যা বা বনে দাবানল ছড়িয়ে পড়লে) এলার্মিং ফাংশানও তৈরী করতে পারে। ভার্চুয়াল সেন্সর, স্মার্ট সেন্সরেরই একটা পার্ট।

তাহলে এই হলো অতি সংক্ষেপে সেন্সর নেটওয়ার্কের টেকি গ্যাজানি।
এবার এই নেটওয়ার্কের মজার কিছু এপ্লিকেশন দেখি,
১। ব্যস্ত শহরে রাস্তার জ্যাম কমানো(SFPark Program) :
Click This Link
আমেরিকার সানফ্রানসিস্কো শহরে হাজার হাজার ম্যাগনেটিক সেন্সর লাগানো হয়েছে যাতে করে ড্রাইভাররা খুব সহজে শহরে পৌঁছেই কোন পার্কিং করার জায়গা খালি আছে সেটা খুঁজে বের করতে পারে। এর জন্য ড্রাইভারদেরকে একটি ওয়েবসাইট বা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে হবে।
২। বডি সেন্সর নেটওয়ার্ক অথবা বডি এরিয়া নেটওয়ার্ক (BSN / BAN):
শরীরে তাপমাত্রা, ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ একজন রোগীর অনেক কিছুই ডাক্তার দূরে বসে মনিটর করতে পারবেন।

৩। বনের দাবানল সেন্স করা:
Click This Link
শীতকালীন শুষ্ক সময়ে অনেক সময়েই বিভিন্ন বনে গাছে গাছে সংঘর্ষ হয়ে দাবানল ছড়িয়ে যেতে পারে। চীনে পাঁচ মিনিটের ভিতরে সেই দাবানল সেন্স করার একটা পাইলট প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৮