
আমি মনযোগ দিয়ে মুভি দেখা শুরু করেছি অল্প কিছুদিন আগে। তাই বলতে পারবোনা ইতোঃপুর্বে আমি ডিরেক্টর আজগর ফারহাদীর অন্য কোন মুভি দেখেছি কিনা। মনে হয়না দেখেছি, আর যদি দেখেও থাকি তার মধ্যে গত বছর (২০১১) এ মুক্তি পাওয়া “আ সেপারেশন’-ই তালিকার প্রথম দিকে থাকবে।
একটি দেশের মুভি সাধারণত ঐ দেশের মানুষের চরিত্র, আচার আচরণ ইত্যাদি নানা দিক তুলে ধরে। আচরন ভেদেও বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কিন্তু এই ‘আ সেপারেশন’ মুভিটি তুলে ধরেছে মানুষের একেবারেই স্বাভাবিক কিছু দোষ গুন। যে দোষ বা গুণের কোন সীমারেখা বা ব্যাবচ্ছেদ টানা যাবেনা। কোন নির্দিষ্ট দেশের মানুষের নয়, বরঞ্চ, পৃথিবীর মানুষের গল্পই যেন মুভিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
Mankind is flawed. সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ ভুল আর পাপ করে আসছে। ধর্ম গ্রন্থগুলোতে আমরা যেমন দেখি, স্রষ্টার মহান কোন ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হই আদম হাওয়াকে। তাদেরকে সব কিছু খাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়, কিন্তু একটি গাছের ফল খেতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু দেখা যায়, নিষেধ থাকা স্বত্তেও আদম হাওয়া দু জনেই সে গাছের ফল খেয়ে স্বর্গচ্যুত হয়।
বলতে চাইছি, মানুষের মন তার সৃষ্টিকাল থেকেই পাপপ্রবন। আপাত দৃষ্টিতে কোন ব্যাক্তিকে অনেক পূণ্যবান মনে হলেও হয়ত সে মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির বশঃবর্তী হয়েই কোন না কোন পাপ করছে। আপনার পরিচিত কোন একজন ব্যক্তি, যে হয়ত অতি তুচ্ছ কোন বিষয়েও ধর্মের বিধি বিধান অথবা সমাজের নিয়ম নীতি মেনে চলার চেষ্টা করে, কিন্তু সেই একই ব্যক্তিটিই দেখবেন নিজের প্রয়োজনে হোক অথবা দুনিয়ার কোন বৈষয়িক ভয়ে হোক এমন অনেক কাজ করে যা হয়ত ধর্মসিদ্ধ না। মানুষের এহেন দ্বৈত নীতিই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুরো মুভিটিতে।
‘আ সেপারেশন’ মুভিটি আমাদের সেই পাপী দিকটার কথাই মনে করিয়ে দিতে চায়। শুরুতে আমরা দেখব নাদের আর সিমিন দম্পতি তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের বিচ্ছেদ করতে চাচ্ছে। তাদের সংসারে আছে তাদের ১১ বছর বয়সের মেয়ে তেরমেহ আর নাদেরের আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত বাবা, যে পুরোপুরিই পরনির্ভরশীল।স্বাভাবিক ভাবেই, নাদের আর সিমিন এর ডিভোর্স এর সিদ্ধান্তটি তাদের পরিবারকে খারাপ ভাবেই প্রভাবিত করে এবং নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। কিন্তু ঘটনা আরো খারাপ দিকে মোড় নেয় যখন নাদেরের অসুস্থ বাবাকে দেখা শোনা করার জন্য দৃশ্যপটে রাজিয়েহ, তার স্বামী হুজ্জাত আর তাদের মেয়ে সোমায়েহ হাজির হয়।
মুভির প্রধান চরিত্র গুলোর কোনটিকেই আপনি চারিত্রিক দিক দিয়ে খারাপ বলতে পারবেননা, বরং সবার চরিত্রই অতি মানবিক। কিন্তু, প্রয়োজনের সময় নাদের এর অসুস্থ বাবার চরিত্রটি ব্যাতিত প্রত্যেকেরই ২য় রূপটি সময়ে সময়ে ফূটে উঠেছে। মুভিটি দেখার পর আরেকবার বুঝতে পারলাম, প্রত্যেকটি মানুষের ভেতরেই ড। জেকিল & মিস্টার হাইড বর্তমান।
ছবিতে প্রত্যেক অভিনেতা আভিনেত্রী খুবই যত্নের সাথে অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে ছোট্ট সোমায়েহর চরিত্রটি অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে ছোট্ট মেয়েটি। কিছু কিছ জায়গায় তার অভিব্যক্তি গুলো এত অসাধারণ লেগেছে!!
নাদেরের চরিত্রে অভিনয় করেছেনঃ Peyman Moadi
সিমিন এর চরিত্রে অভিনয় করেছেনঃ Leila Hatami
ডিরেক্টর & রাইটারঃ Asghar Farhadi
আই এম ডি বি রেটিংঃ 8.6
ডাউনলোড লিংকঃ
এই পেজ থেকে সাবটাইটেল সহ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৪৭