রাজশাহী এসোসিয়েশন সাহিত্য পত্রিকা
বর্ষ : ২৬, সংখ্য ৬ (সার্ধশত রবীন্দ্রনাথ ক্রোড়পত্র), রাজশাহী : রাজশাহী এসোসিয়েশন, এপ্রিল ২০১২ মূল্য : ২৫০ টাকা। প্রচ্ছদ : আসাদুজ্জামান খোকন। পৃষ্ঠা : ৬৪০+
সম্পাদক : ড. তসিকুল ইসলাম রাজা
‘রাজশাহী এসোসিয়েশন সাহিত্য পত্রিকা’ দীর্ঘ ছয়/সাত বছর পরে প্রকাশিত হলেও সংখ্যাটির সমৃদ্ধ আয়োজনে পাঠক ও লেখকমহলের ক্ষোভ প্রশমিত হয়েছে। বিপুলায়তন এ সংখ্যাটিতে রয়েছে ৪টি বিভাগ : এক. গবেষণামূলক প্রবন্ধ (পর্ব : এক ও দুই), দুই. রবীন্দ্রনাথ : ক্রোড়পত্র (পর্ব : এক ও দুই), তিন. প্রবন্ধ (সৃজনশীল গদ্য) , চার. বই আলোচনা। বলার অপেক্ষা রাখে না প্রত্যেকটি বিভাগের লেখাই সমৃদ্ধ। প্রসঙ্গত বলা দরকার ‘রাজশাহী এসোসিয়েশন সাহিত্য পত্রিকা’র চারিত্র্যবৈশিষ্ট্য মূলত গবেষণাধর্মী। দেশের প্রথম শ্রেণীর লেখকবৃন্দের রচনায় সমৃদ্ধ পত্রিকার বর্তমান সংখ্যাটি নিয়ে সেই অর্থে সমালোচনার সুযোগও নেই। কারণ, এঁদের প্রায় সকলেরই রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় ও লেখক স্বীকৃতি। তবে বই আলোচনা বিভাগের কোনো কোনো লেখার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠতেই পারে। অবশ্য, এক্ষেত্রে সম্পাদক অনেক নতুন লিখিয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়েই এ জাতীয় লেখা প্রকাশ করেছেন।
‘রাজশাহী এসোসিয়েশন সাহিত্য পত্রিকা’র ৬ষ্ঠ সংখ্যা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরূপ দুই পর্বে যে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। প্রথম পর্বে ৯টি এবং দ্বিতীয় পর্বে ৫টি মোট ১৪টি প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্বন্ধে বিচিত্র গবেষণাধর্মী প্রবন্ধে প্রায় পৌনে তিনশ পৃষ্ঠাব্যাপী মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিশেষত উস্তাদ বাবু রহমান ইরানে রবীন্দ্রচর্চা বিষয়ে প্রায় অনালোচিত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিকের সন্ধান দিয়েছেন। অধ্যাপক ফজলুল হক তাঁর রচনায় নাটরের জমিদার জগদিন্দ্রনাথের সাথে রবীন্দ্রনাথের পারস্পারিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক সূত্রানুসন্ধান করেছেন খাঁটি গবেষকের দৃষ্টিতে তথ্য ও যুক্তি দিয়ে। ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরীর প্রবন্ধে উঠে এসেছে রাজশাহীতে রবীন্দ্রনাথের আগমন বিষয়ক ঐতিহাসিক তথ্য। এছাড়াও লিখেছেন খোন্দকার সিরাজুল হক, মহীবুল আজিজ, ড. আবদুল খালেকের মতো প্রমুখ পণ্ডিত
পত্রিকাটির প্রচ্ছদ পরিকল্পনা থেকে শুরু করে লেখার বিষয় ও লেখক নির্ধারণে সম্পাদকের সুরুচির পরিচয় বিদ্যমান সর্বত্র। বলার অপেক্ষা রাখে না প্রাতিষ্ঠানিক এ পত্রিকাটিতে মূলত গবেষণামূলক লেখা প্রকাশ করে। ফলে দেশের প্রোথিতযশা প-িত লেখক ও গবেষকদের রচনায় বর্তমান সংখ্যাটি ঋদ্ধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রাতিষ্ঠানিক গ-ির মধ্যে থেকেও সম্পাদকের ঔদার্যে পত্রিকাটিতে সৃজনশীল ৮টি প্রবন্ধ ছাড়াও ১৮টি বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থের প্রায় ১১০ পৃষ্ঠাব্যাপী আলোচনা রয়েছে। পত্রিকাটির বয়স ছাব্বিশ অতিক্রম করলেও ইতোপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে মাত্র ৫টি সংখ্যা। বর্তমান সংখ্যাটি ৬ষ্ঠ সংখ্যা। অনিয়মিত প্রকাশের দায় পত্রিকাটির আছে তবে ছাব্বিশ বছর অতিক্রম করে বর্তমান সংখ্যাটি বয়সের সমৃদ্ধি নিয়ে প্রকাশ হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির সমৃদ্ধতর মূল্যায়ন ও গবেষণার স্বার্থে পত্রিকাটির নিয়মিত প্রকাশ কামনা করি।
দুই.
কঙ্কাল
বর্ষ ৩ : সংখ্যা ৩, কক্সবাজার : ফেব্রুয়ারি, ২০১২ মূল্য : ৫০ টাকা । প্রচ্ছদ : নির্ঝর নৈঃশব্দ্য । পৃষ্ঠা : ১৫০
সম্পাদক : মনজুর কাদের
সম্পাদক মনজুর কাদের কবিতাকে প্রাধান্য দিয়ে ‘কঙ্কাল’ পত্রিকার অঙ্গসজ্জার পাশাপাশি যেসব গদ্য প্রকাশ করেছেন তা কবিতা বিষয়ক মূল্যায়ন। এই অর্থে ‘কঙ্কাল’কে কবিতা বিষয়ক ছোটকাগজ বলা যেতে পারে নিঃসন্দেহে। পত্রিকার শুরুতেই আছে সম্পাদকের কথা এবং তারপর ১৪ পৃষ্ঠাব্যাপী কবিতা। লিখেছেন : ওমর কায়সার, মারুফ রায়হান, শাহিদ আনোয়ার, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, সেলিনা শেলী এবং হাফিজ রশীদ খান। এরপর গদ্য বিভাগে মুজিব মেহদী সোহেল, সোহেল হাসান গালিব এবং অনুপম মুখোপাধ্যায় লিখেছেন যথাক্রমে ‘প্রভাব বিষয়ে প্রমিত আলাপ’, ‘অনঙ্গ রূপের দেশে’ এবং ‘কবিতার অজুহাত’। গদ্য বিভাগের পরে সম্পাদক আশি ও নব্বই দশকের ১৫জন কবির কবিতা সংযুক্ত করে সমকালের কবিদের সাথে আগের দশকের কবিদের একটা ব্রিজ তৈরি করে দিয়েছেন। এরপর রবীন ঘোষালের ভিন্নধর্মী গদ্য ‘ভাষার বারোটা বাজতেই থাকবে’ শিরোনামের একটি চমৎকার গদ্য। আবরো কবিতা শূন্য এবং তাদের পরের মোট ১৩জন কবির। এই কবিতা বিভাগের পরে পাবলো শাহি ‘সাবদার সিদ্দিকি : স্বর্গচ্যুত দেবদূতের ব্যক্তিজীবনী’ শীর্ষক গদ্যে একজন অপরিচিত কবির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পাঠককে। পরবর্তী পর্যায় সেলিনা শেলী, মাদল হাসান, সৈয়দ মবনু এবং সলিমুল্লাহ খান গ্রন্থালোচনা করেছেন যথাক্রমে আহমেদ স্বপন মাহমুদের ‘অতিক্রমণের রেখা’ (নির্বাচিত কবিতা, ২০১১), মুজিব মেহদীর ‘খড়বিচালির দূর্গ’ (উভলিঙ্গ রচনা, ২০১১), নির্ঝর নৈঃশব্দ্যের ‘পাখি ও পাপ’ (২০১১)। এ বিভাগে সলিমুল্লাহ খান কর্তৃক আলোচিত গ্রন্থালোচনাটি কার এবং কোন বিষয়ে তার কোনো পরিচয় নেই। তবে পাঠে জানা যায় জনৈক অভীক ওসমানের ‘বিষাদের জার্নাল’ (১৯৯৪) শীর্ষক একটি কাব্যগ্রন্থের আলোচনা করা হয়েছে সাধু ভাষায়। লেখাটি আসলে গ্রন্থালোচনা নাকি ব্যক্তিগত বিষয়ক তা বলা মুশকিল। লেখাটি এক অর্থে বেমানান হয়েছে গ্রন্থালোচনা বিভাগে। পরের পর্বে সম্পাদক মনজুর কাদের এবং মাদল হাসানের গুচ্ছ কবিতা রয়েছে। উল্লেখ্য, মাদল হাসানের কবিতাগুলো ৮টি কবিতাই টানা গদ্যে রচিত। পত্রিকায় ‘কাব্যগল্প’ শিরোনামে শাহনেওয়াজ বিপ্লব এবং পিন্টু রহমানের দুটো ভিন্নধর্মী রচনা ছাড়া ভাগ্যধন বড়–য়ার ‘অপরপৃষ্ঠার বৃত্তান্ত’ শীর্ষক একটি অপ্রকাশিত পা-ুলিপি ‘কঙ্কাল’-এর এ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। পরিশেষে ‘কঙ্কাল’ সম্পাদক মনজুর কাদেরের কবিতাপ্রীতি এবং ভিন্নধর্মী লেখার প্রতি বিশেষ আগ্রহের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। তবে পত্রিকাটিকে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, বন্ধুর কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে তিনি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাবেন এ প্রত্যাশা করি।