২ পর্ব ...................................
রাষ্ট্র বিষয়ক বন্ধুতা ও শত্রুতা...
পি মুন্সী রাষ্ট্রের বন্ধুতা ও শত্রুতা নিয়ে 'বন্ধুরাষ্ট্র : একটি সোনার পাথর বাটি ধারণা' শীর্ষক রচনাটিতে যে তত্ত্বীয় তথ্য পরিবেশন করেছেন তা অতীব সত্য ভাষণ। তাঁর রচনাটিতে তত্ত্বের উপস্থাপনা রীতি সম্বন্ধে বলতে হয়-- বক্তব্য খুব একটা স্বচ্ছ হয়ে ওঠে নি। দৃষ্টান্তও বোধগম্য করে তোলার ব্যাপারে লেখক যথেষ্ট সচেতন ছিলেন বলে মনে হয় না। উপস্থাপন কৌশলের এই দুর্বলতা অতিক্রম করে লেখাটি থেকে উদ্ধার করা যায়-- কোন রাষ্ট্রই অন্য রাষ্ট্রের বন্ধু বলে যে কথাটির প্রচলন দেখা যায়, তা সত্য নয়; বরং সকল রাষ্ট্রই পরস্পর শত্রু। আর জন্মগত সেই শত্রুর সাথেও নানান বিষয়-আশয় নিয়ে আলোচনা কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাবিধ পারস্পরিক নির্ভরশীলতার প্রয়োজনে চিরশত্রুকে কূটনৈতিক মুখোশের আবরণে 'বন্ধু রাষ্ট্র' হিসেবে অভিহিত করা হয়। লেখকের বর্ণনা থেকে জানা যায় :
রাষ্ট্রে, বন্ধুত্ব হতে পারে একমাত্র রাষ্ট্রের ভিতরে, শত্রুর জায়গা বাইরে। কারণ, রাষ্ট্র মানেই শত্রু আর মিত্রের ভেদাভেদের সীমানা। ফলে ১৯৭১ সালে আমাদের জন্মগত দুর্বলতা কিংবা সবলতা যাই থাক, কিছুই যায় আসে না তাতে।--পৃ.১৬
পরিসমাপ্তিতে লেখক পি মুন্সী কি বোঝাতে চেয়েছেন উপরোক্ত অনুচ্ছেদের বর্ণনায় তাও কিন্তু খুব একটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে নি পাঠকের কাছে।কারণ, লেখকের বক্তব্য বিষয় কিংবা বাক্যের উদ্দিষ্ট অনুপস্থিত। লেখাটির সমগ্র দেহেই আছে এ জাতীয় দুর্বলতা। তবে লেখকের বিষয় নির্বাচনটি সত্যিই প্রশংসার্হ্য। ভবিষ্যতে আশাকরি লেখক এই তত্ত্বগত ধারণাটি আরো স্পষ্ট করে বৃহৎ কলেবরে রাষ্ট্রের পারস্পারিক এই সম্পর্কের কথা পাঠকের সামনে উপস্থাপন করবেন।
......................................
বিভাগ : মুক্তিযুদ্ধ
ছোটলোকের পোলাটা মুক্তিযোদ্ধা, অতঃপর আমাদের বিবেক...
অমি রহমান পিয়াল লিখেছেন এক মুক্তিযোদ্ধার করুণ পরিণামের কথা 'ওই ছোটলোকের পোলাটা কিন্তু বীর প্রতীক ছিল' শীর্ষক স্মৃতিচারণমূলক রচনায়। শহীদুল ইসলাম ওরফে লালুর বীরত্বগাথায় জানা যায় মাত্র ১২ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তিনি স্বাধীন দেশে বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তারপরও কোনদিন রাষ্ট্রীয় ভাতা কিংবা কোন ধরনের আর্থিক সহায়তা পান নি। এমনকি বীর প্রতীক লালু মৃতু্যর সময় অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মৃতু্যবরণ করেছেন। রাষ্ট্রের নিকট থেকে শহীদুল ইসলামের প্রাপ্তি বীর প্রতীক খেতাব ও কতিপয় পদক। এছাড়া মৃতু্যর পর জাতীয় পতাকায় মুড়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন-কাফন। অমি রহমানের স্মৃতিমূলক এ রচনাটি এক কথায় হৃদয়স্পর্শী এবং একই সাথে সুখপাঠ্য। 'অপারেশন গোপালপুর থানা' শীর্ষক সম্মুখ সমরের একক কৃতিত্ব যে শহীদুলের তিনি মৃতু্যর আগে নিজের সন্তানাদির ভবিষ্যৎ নির্মাণ করে যেতে পারেন নি। বীর প্রতীক শহীদুলের প্রতি রাষ্ট্র যে অন্যায় করেছে, অন্তত সে অন্যায়ের বোঝা লাঘব করবে লালুর সন্তানাদির পড়ালেখাসহ যাবতীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। অমি রহমানের লেখাটি থেকে জানা গেল মাত্র ১২ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধ করে তিনি দেশের সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক খেতাব লাভ করেছিলেন। কিন্তু গত ২৬ মার্চ ২০১০ তারিখে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে জানতে পারলাম যশোরের সিদ্দিকুর রহমান মাত্র ১০ বছর ৯ মাস বয়সে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অদ্যাবধি দেশের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফকরে আলমের শ্রুতিলিখন থেকে সিদ্দিকুর রহমানের বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরলাম :
স্বাধীনতা-পরবর্তী সব সরকারের মুক্তিযোদ্ধার সনদ আমার আছে। এর মধ্যে গ্রিনেস বুকে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমি আবেদন করেছিলাম। তারা আমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি জবাবও দিয়েছে। তারা বলেছে যদি তোমার দেশ তোমাকে সবচেয়ে ছোট মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তবেই আমরা তোমাকে স্বীকৃতি দেব। আমৃতু্য দেশের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করে যাব। --(স্বাধীনতা দিবস ২০১০ বিশেষ সংখ্যা [গণমানুষের মুক্তিযুদ্ধ], দৈনিক কালের কণ্ঠ : ঢাকা, ২৬ মার্চ ২০১০ ।। গৌরব ও অহঙ্কারের মুক্তিযুদ্ধ'-- সিদ্দিকুর রহমান, শ্রুতিলিখন : ফকরে আলম।--পৃ.৭)
এমন অবস্থায় আমাদের প্রস্তাবনা হচ্ছে যত শীঘ্র সম্ভব সিদ্দিকুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি কতটা যৌক্তিকতা গুরুত্ব সহকারে পরীক্ষা করা। কারণ, জাতি হিসেবে আমাদের উচিত মুক্তিযোদ্ধার সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করে তাদেরকে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। অন্যথায় শহীদুল ইসলামের মতো পরিণাম হয়তো সিদ্দিকুর রহমানের হবে; যা হলে জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জার সীমা থাকবে না।
.....................................
বিভাগ : স্মরণ
পুণ্যভূমি বাংলার সাধক...
আকাশ অম্বর আউল-বাউল পীর-ফকির-দরবেশ, সাধু-সন্ন্যাসীর উর্বর ভূমি বাংলার স্বনামধন্য সাধক পুরুষ শাহ আবদুল করিমের স্মৃতিচারণ করেছেন। লেখাটির শিরোনাম 'তপঃসিদ্ধ এক শাহ আবদুল করিম'। লেখাটির সূচনা অসাধারণ কিন্তু দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ থেকেই লেখকের মনোসংযোগ ছিন্ন হওয়ার ব্যাপারটি লক্ষ্য করা যায়। উপরন্তু আবদুল করিমের স্মৃতিচারণের ক্ষেত্রে বাউল সাধকের জীবনকথার উপস্থাপন না করে তাঁর রচিত গানের দৃষ্টান্ত দিয়ে ভরে ফেলেছেন। সেটা করেছেন বটে, কিন্তু গানগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রতি আগ্রহী হন নি। বলা যায়, লেখার শিরোনাম কিংবা এর সূচনার অংশ থেকে ক্রমশ লেখকের বিচু্যতি ঘটায় পরিণামে তা একটি অসম্পূর্ণ অসংলগ্ন লেখায় পরিণত হয়েছে। বলা অতু্যক্তি হবে না যে, রচনাটিকে স্মৃতিমূলক না বলে আবদুল করিমের গানের মূল্যায়ন বিষয়ক কোন শিরোনামে উপস্থাপন করাই যৌক্তিক ও যথার্থ হবে বলে মনে হয়। তবে লেখককে ধন্যবাদ এজন্য যে, তিনি শাহ আবদুল করিমের বেশকিছু গানের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত একটা উদাহরণ সম্বন্ধে আমার সংশয়ের কথাও প্রকাশ করছি; তা হচ্ছে-- 'গাড়ি চলে না' শীর্ষক গানটির রচয়িতা আমার জানামতে দলছুট ব্যণ্ড দলের সঞ্জীব দা'র। যেহেতু এটি শোনা কথা, সুনির্দিষ্ট তথ্য আমার নিকট নেই-- তাই এ বিষয়টি আকাশ অম্বরকে নিশ্চিত করার অনুরোধ করব। এছাড়া লেখকের প্রতি আমার প্রস্তাবনা-- ভবিষ্যতে লেখাটির পুনর্লিখন করে আবদুল করিমের জীবন সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্যের পাশাপাশি তাঁর রচিত গানের মূল্যায়ন নিয়ে আলাদা শিরোনামে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ রচনা করা।
..............................
বিভাগ : স্মৃতিচারণ
১.
উপকারী বৃক্ষের বাকল থাকে না...
হাসান শরিফ 'হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে রক্তাক্ত সেই মুহূর্তগুলো' শীর্ষক স্মৃতিকথায় দুঃসহ ভয়ানক ও বেদনাদায়ক স্মৃতিচারণে বাংলাদেশের খ্যাতিমান ভাষাবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর জঙ্গি আক্রমণ এবং তৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মানবিক যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন-- তার বিবরণ তুলে ধরেছিলেন। মানবিক দায়বোধ থেকেই লেখক হাসান শরিফ মুমূর্ষু অধ্যাপক আজাদকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যে কারণে অধ্যাপক আজাদ সে যাত্রায় মারাত্মক আহত হয়েও প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, উপকারী শরিফকে এই উপকার করার জন্য হুমায়ুন পরিবারের নিকট থেকে যেমন কোন সহানুভূতি বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় নি, তেমনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেও নাজেহাল হতে হয়েছে। এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই হাসান শরিফ দুঃখ করে লিখেছেন : '[...]এসব কারণেই মানুষ বোধহয় মানুষের উপকার করে না। একজন মানুষকে আমি বাঁচালাম আর এজন্য আমাকে এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।'--পৃ.২৯
এছাড়াও দুঃখজনকভাবে শরিফকেই অধ্যাপক আজাদের ওপর আক্রমণকারী মৌলবাদী হিসেবে সন্দেহ করার মতো জঘন্য অপরাধটি হুমায়ুন আজাদের পরিবারসহ ভিকটিম আজাদ নিজেও করেছিলেন। পরবর্তী সময় জঙ্গি সংগঠনের অপতৎপরতা বেরিয়ে আসার পর হাসান শরিফ ব্যক্তিগতভাবে উপকার করার মতো অপরাধ থেকে অব্যহতি পেলেও এ্যারেস্ট হওয়া পাভেলের কি হয়েছিলেন তা উল্লেখ করেন নি লেখক। উপরন্তু অনেক হেনস্থা হওয়ার পরও ব্যক্তি হাসান শরিফ পারিবারিক শিক্ষার কারণে এখনো উপকার করার মানসিকতা ত্যাগ করেন নি, কিন্তু সাধারণ মানুষরা কি করবে উপকার? যারা সাধারণ, তোরা সেদিনের মতো রক্তাক্ত আজাদকে ঘিরে দাঁড়িয়েই থাকবে-- এ জাতীয় ঝক্কিঝামেলা এড়ানোর ভয়ে। এভাবেই সভ্য মানুষ নিজেরই তৈরি করা শেকলে প্রতিনিয়ত বন্দী হয়ে পড়ে এবং করে অমানবিক আচরণ।
২.
সোনাঝরা দিনগুলো ফিরে আসে না...
স্মৃতিকথা বিভাগের দ্বিতীয় লেখাটি মেহরাব শাহরিয়ারের। নিতান্ত ব্যক্তিগত শৈশব কৈশোর আর প্রথম যৌবনের স্মৃতি। 'এক, দুই বা পাঁচ টাকার অর্থহীন গল্প' নামে অর্থহীন হলেও মানব জীবনের অতিক্রান্ত সময়ের জন্য শিল্পিত হাহাকার সংহত এবং পরিশীলিত গদ্যে প্রকাশ করেছেন মেহরাব শাহরিয়ার। মেহরাবের এক টাকার নোটের হরিণ কিংবা দুই টাকার কমলা রঙের নোটের দোয়েল প্রীতির গল্পটি এক কথায় অসাধারণ। আজ হয়তো মেহরাব শাহরিয়ার হাজার হাজার একটাকা কিংবা দুই টাকার চক্চকে নোট ব্যয় করেন-- তার জন্য কোন টান নেই। বলা যায়, শৈশবের সেই দোয়েল হরিণ প্রীতি আজ আর তাকে কষ্ট দেয় না। তবে শৈশবে কৈশোরের হারানো নোটগুলোর বেদনা সে ভুলতে পারে না, পারবেও না হয়তো। আর এজন্যই জীবনের অতিক্রান্ত সময়ের জন্য গীতিকারের কণ্ঠে ঝরে আক্ষেপের হাহাকার : 'আমি মেলা থেকে তাল পাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি/ বাঁশি কেন আগের মতো বাজে না, এমন আমার সাজে না।' এটাই নিয়ম, সময় হারিয়ে গেলে তার সাথে মানুষের আবেগ অনুভূতিগুলোরও ক্রমাগত পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু মেহরাবের মতো অতীত জীবনের জন্য বুকের ভেতর নিত্য গুমরে মরে এক ধরনের হাহাকার।
...................................
বিভাগ : নিবন্ধ
মানবিক কিছু অসঙ্গতি...
ফারহান দাউদ 'সেলেব্রিটি সিনড্রোম' শীর্ষক নিবন্ধে মানব প্রজাতির মৌলিক এক প্রবণতা নিয়ে চমৎকার আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। লেখক সেলেব্রিটি বা খ্যাতিমানদের স্বতন্ত্রভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার মানবিক যে বিশেষ প্রবণতার অবতারণা করেছেন সেই আলোচনা শেষাবধি সাধারণ ব্যক্তি অবধি পরিব্যাপ্ত হয়েছে অনিবার্যভাবেই। আর এর মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হয়েছে-- জন্মগতভাবেই মানুষ একজনের চেয়ে অন্যজন পৃথক। সমস্যা অবশ্য এ পার্থক্য নিয়ে নয়; লেখক মূলত বোঝাতে চেয়েছেন স্বীয় স্বাতন্ত্র্য জাহির করার মধ্য দিয়ে অপরের দৃষ্টি নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার ওপর। এই দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে অনেক মানুষ কখনো কখনো যে উদ্ভটত্বের আশ্রয় নেয় ফারহান দাউদ মূলত তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। উপরন্তু তিনি মানব প্রজাতির এই উদ্ভট স্বাতন্ত্র্যকে ক্ষতিকারক দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর এজন্যই ফারহান দাউদক এই সিনড্রোম আক্রান্ত প্রবণতা সম্বন্ধে লিখেছেন :
'[...]গোটা জাতিটাই যখন সমষ্টির অহম ভুলে জাতিগত গর্ব ভুলে একে অন্যের পশ্চাতে, এমনকি কখনো নিজের পশ্চাতেই বাঁশ ঢুকিয়ে সেলিব্রিটি হবার নেশায় দৌড় শুরু করে, তখন কি একটুও ভাবার নেই?--পৃ.৩৬
অবশ্যই তা ভাবনার বিষয়। তবে এও সত্য যে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে স্বাতন্ত্র্য অর্জনের এই নেশা ত্যাগ করতে পারবে না হয়তো কোনদিন। কারণ, এটা তার (মানুষের) জন্মগত এবং খ্যাতির নেশা তার রক্তের সাথে সদা স্পন্দমান। সুতরাং মানুষ এ নেশা ত্যাগ করতে না পারলেও সংহত বা সীমাবদ্ধ ও শালীন গণ্ডীর মধ্যে থেকে করাই ভালো।
............................................
বিভাগ : রম্য
কয়েক যুবকের উৎকণ্ঠা...
'আমিই লোকালটক' শীর্ষক রচনায় একজন রহস্যময় ব্লগারের সন্ধান পেতে অতি উৎসাহী কয়েক যুবক কয়েকজন খ্যাতিমান ব্লগারকে আটক রেখেছে। তারা কেউ-ই ব্লগার লোকালটকের সন্ধান দিতে পারে নি। এমতাবস্থায় লোকালটক যখন স্বীয় সম্পাদনায় প্রকাশিত 'অপরবাস্তব'-৩ নিয়ে বাসায় ফিরছিল। তখন তার অনুসিন্ধুৎসু যুবকদের হাতে স্বয়ং লোকালটক ধৃত হয়। অতঃপর সামহোয়্যার ব্লগের কৃতি ব্লগারদের ব্যথাক্লিষট চেহারা দেখে এবং নিজের ওপরও নির্যাতনের ভয়ে নিজের পরিচয় জানায় : 'আমিই লোকালটক'। এ কথার মধ্য দিয়ে রম্যকথা সমাপ্ত হলে পাঠক পুনরায় আরেক রহস্যে জড়িয়ে পড়ে। কারণ, তখন তাদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেয়-- তাহলে কি লেখক সুমন রহমান-ই 'লোকালটক' ছদ্মনামে ব্লগে লেখেন? নাকি এই রম্য রচয়িতা 'লোকালটক' নামের রহস্যময়তা নিয়ে নিছক একটি গল্প তৈরি করেছেন; লোকালটকের প্রকৃত পরিচয় জানায়। কিংবা লোকালটকের প্রকৃত পরিচয় আদৌ জানা যাবে? অর্থাৎ রচনার সমাপ্তির বিভ্রান্তিতে পাঠক লেখকের কিংবা লোকালটকের মূল পরিচয় উদ্ধারের নতুন সমস্যায় নিমজ্জিত হয়।