১।
আমার বাড়ি ফেরার পথ, সবুজ মাঠ,শানিত লাঙলে সবুজ সিম্ফনি,শরতের কাশফুল, জ্যৈষ্ঠের আম্রমুকূল-কাঁচাপাকা আম, আমার হাহাকার নদী, সদানন্দপুর ষ্টেশন .......যেন এক একটি দীর্ঘশ্বাস,......মনে আছে সদানন্দপুর ষ্টেশন থেকে আমার বাড়ি ২৫ মিনিটের পথ রিক্সা অথবা লোকাল বাসে করে যেতে হত, সারাপথ কিছু মনে হত না, কিন্তু ষ্টেশনে নামার পর মনে হত ভো দৌড় দেই একটা... এই ২৫ মিনিট আর তর সইতো না। কিন্তু আজ অনেক অনেক দূর আমি, দুরুত্ব আমাকে দিয়ে যায় বিষণ্ণতা, অদেখা তেষ্টায় চোখের কোনে জমে লবণ জল, নিঃসঙ্গতা সাঁতার কাটে সেই জলে। তবু মাঝে মাঝে এইসব বিয়োগান্ত ছবির দেখা পাই মুখবইতে, আসাদ, বাবু, রফিক, ফয়সাল কে প্রায়ই বলি মুখবইতে আপলোড কর অনেক অনেক জ্যান্ত ছবি.....................আমার শালিক প্রহর, ছড়ানো সবুজ মাঠ, জনাকীর্ণ জনপথ, নিয়ন জ্যোৎস্না, যাদের মুখ মনে হলে অর্থহীন হয়ে যায় জগতের আর সব তাদের ছবি। এভাবেই আমার ফেলা আসা নেশাতুর নস্টালজিয়া খুঁজি মুখবইয়ের পাতায় পাতায়।
২।
সময় ঝড় এসে কত কত স্মৃতি উড়িয়ে নিয়ে যায়, অতীতের খাতা খুলে পড়ি স্মৃতির মহাকাব্য , ইচ্ছে পাখি কেবলই ডানা ঝাপটায় উড়বে বলে, মুক্তি নেই............ মহাকাল ধরে বন্ধী থাকি......তারপর এখানে নেমে আসে নিকষকালো রাত, শরীর চায় ঘুম.........কিন্তু চোখের কোটরে, মাথার নিউরনে নেমে আসে মুখবই এর পাতা.........হঠাত দেখি হাসানের প্রথম বাচ্চার ছবি, আতর ঘর থেকে কেউ দেখার আগেই ক্যামেরার চোখ দেখেছে তাকে, এরপর সরাসরি মুখবই এর পাতায়, অভিনন্দন জানাই, জানিনা ক্যামেরার এই ফোকাস সদ্যজাত বাচ্চার কোন ক্ষতি করে কিনা, কিন্তু মনে মনে বলি এসব তরতাজা দৃশ্যপট দেখবো বলেই মুখবই এ আমার বিচরণ।
৩।
যে পথ পারি দিয়ে যাব আপনের কাছে সে পথ আজ অনেক দূরে, তবু যারা কাছে আছে তারাও কি কাছে? যাপিত জীবনের দিনান্তে যারা থাকে- নিঃশ্বাস ফেলা দুরুত্বে তাদের সাথেও কথা হয় কদাচিৎ ।সেদিন দেখি আমার খুব কাছের একজনের হবু বউয়ের ছবি মুখবইতে, আমি তো অবাক, নিত্য যাদের সাথে দেখা হয়—কথা হয়-- তাদের খবরও কি মুখবই থেকে নিতে হবে? তাহলে কি আমরা এই সামাজিক যোগাযোগের যুগে আরও বেশী অসামাজিক হয়ে যাচ্ছিনা?
মাথার ভিতর ঘুরতো সাম্যবাদ তাই কখনো জন্মদিন পালন করেনি আমি, যারা করতে পারে না তারা যদি দুঃখ পায় এইভেবে, তবুও প্রতি জন্মদিনে কারো কারো ফোন আশা করি কিন্তু আজকাল আর কেউ ফোন করে না, সবাই মুখবইয়ে একটা বার্তা দিয়েই খালাস, তাই ইচ্ছে করেই জন্মদিনটা লুকিয়ে রেখেছি মুখবই এর পাতা থেকে।
৪।
যারা ৫২-৬৯-৭১-৯০ এর মিছিলে গিয়েছিল কণ্ঠে ছিল অন্যায় পুড়ে ছারখার করার আগুন,
যারা যুদ্ধে গিয়েছিল হাতে ছিল অস্ত্র, বুকে ছিল সীমাহীন দেশপ্রেম,
অস্ত্র দিয়ে কখনো স্বাধীনতা আসেনা, স্বাধীনতা আসে নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমে,
আজ আমাদের মুখে নেই মিছিল-বুকে নেই সেই প্রতিবাধ..................।।
মুখবই আর ব্লগের অ্যালকোহলিক নিমগ্নতায় হারিয়ে যাচ্ছে সব,
কাঁটাতারে ঝুলে থাকে অবিচার-আমরা মুখবইয়ে লিখি বিচার চাই,
রাজাকাররা দিব্যি ঘুরে বেড়ায় আমরা মুখবই বা ব্লগে লিখি বিচার চাই
রাস্তায় পরে থাকে হাজার হাজার তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর-আমরা বলি চালকের বিচার চাই
কিন্তু ভাল রাস্তার জন্য, নিরাপদ চলাচলের জন্য আমাদের কোন প্রতিবাধ বা চাওয়া নেই !!!
সবুজের কোলে হায়েনার থাবায় রক্ত ঝরে, আর আমরা সেই রক্তের দাগ মুছতেই ব্যস্ত, হায়েনার বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ যেন নেই.....................
আমার বোন রাস্তা-ঘাটে নির্যাতিত হয় মুখে বলি যুবক সমাজ গোল্লায় গেলো, আর মন খারাপ করে ঘরে এসে মুখবই এ একটা স্ট্যাটাস দেই “ইভ-টিজাররা নিপাত যাক”।
মনে রেখো বন্ধু মুখবই বা ব্লগে হাজারটা লেখার চেয়ে একবার মৌখিক প্রতিবাধ-প্রতিরোধ অনেক-অনেক গুন শক্তিশালী।
আসলেই মুখবইয়ের শব্দরা নারিয়ে দেয়কি কারো চেতনা, জাগ্রত করে কি কর্তব্য-কর্ম ? তবে কেন অযথাই এই সময়ক্ষেপণ , এসো বন্ধু হাতটা বাড়াও স্বপ্ন এঁকো–বুকে-আর মাথায়; --মুখবই এ নয়, কর্ম করে দেশটা গড়ি,- বড় বড় কথা দিয়ে নয়।
পূর্বে এখানে প্রকাশিত: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩