মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি । পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর । এক সময় মহাস্থানগড়ও বাংলার রাজধানী ছিল । এখানে মৌর্য গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন রয়েছে । এর অবস্থান বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় । এটি বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত ।
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন ১০৮২ সাল থেকে ১১২৫ সাল পযন্ত যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল । মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত সব সময় তার ভাই নীলের সাথে । এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে । কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন । পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং তিনি রাজা হন । ওই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম । ইতিহাসের পাতায় বলে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত । কথিত আছে পরশুরামের সাথে ফকির বেশী আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র এর যুদ্ধ হয়েছিল । কত সালের যুদ্ধে মারা যান তার কোন সঠিক তথ্য না মিললেও ধারণা করা হয় ১২০৫ সাল থেকে ১২২০সালের মধ্যে যে যুদ্ধ হয় সে যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত হয় এবং তার মৃত্যুও হয় ।
তবে মহাস্থান গড় বেড়াতে গেলে অনেক কিছু দেখার আছে । এ স্থানটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র । এখানে মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান হতে অনেক লোক সমাগম ঘটে। এখানকার দানবাক্সে সংরক্ষিত অর্থ বছরে কয়েক হাজার টাকা হয় । যা দিয়ে মাজার মসজিদের কর্মচারীদের বেতন এবং অন্যান্য উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী এর মাজার শরীফ আছে । অনেকের ধারনা বা জানা যায় তিনি মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন । তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয় । হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন । তিনি পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে ।
গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন । গড়ের পূর্বঅংশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে শীলাদেবীর ঘাট । শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন । এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে ।এই ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে । এক সময় নাকি সেই কুপের পানি পান করে পরশুরামের অসুস্থ সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত । তবে এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি । এটা লোক মনের ধারণা ।
মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে । মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত রাখা আছে ।
মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয় । স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট । স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোসল খানা । এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই বেশি পরিচিত । মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত ।
ছবি তথ্য ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:০১