ডিরেক্টরের অফিসে ঢুকে আমরা হা হয়ে গেলাম। গিজ গিজ করছে মেয়ে। দশ বারো জন মেয়ে তার সামনের সোফা ও চেয়ারগুলো দখল করে বসে আছে। হি হি হি হি চলছে।
আমরা ঢোকার পরেই তারা সবাই আমাদের দিকে তাকাল। ঝাঁকড়া চুল ডিরেক্টর সাহেব বিরক্ত চোখে তাকালেন। তার চাউনি দেখেই বুঝতে পারলাম, তিনি আমাদের চিনেন নি।
আমরা ভেতরে ঢুকে কোথায় বসব বুঝতে না পেরে দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি হুংকার দিলেন, ‘বশির, দুইটা চেয়ার আন।’
ভেতরের একটা ঘর থেকে একটা হাড়গিলে ছোকড়া দুটো চেয়ার নিয়ে দৌড়ে এল। আমরা বসলাম। তিনি আমাদের নাটকের দলের ছোকড়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,‘হ্যা, তারপর বলেন।’
এইবার নাটকের দলের ছোকড়াও বুঝল যে, ডিরেক্টর আমাদের চিনতে পারেন নি। ওর মুখ কালো হয়ে গেল। আমার মনে পড়ে গেল, বাসে বসে বসে নাটকের দলের ছোকড়াটি এই ডিরেক্টর যে তার কত ঘনিষ্ঠ সেটা বুঝাচ্ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এই ডিরেক্টর তার আপন ভাইয়ের চেয়েও আপন। সেটাও একটা ফাপড় ছিল।
নাটকের দলের ছোকড়া পুরো ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিল। উনি সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেলেন। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, ‘আপনারা এই ঘরে আসেন।’
আমার উনার পিছু পিছু পাশের ঘরটায় গেলাম। বুঝতে পারছিলাম, পেছনের সবগুলো চোখ আমাদের পিঠে গেঁথে আছে।
এই ঘরটা মাঝারি সাইজ। একটা বড় টেবিল এবং তার সঙ্গে লাগোয়া রিভলভিং চেয়ার। পাশে একটা র্যাকে অসংখ্য ম্যাগাজিন। দেয়ালে লাগানো প্রচুর মিউজিক ভিডিওর পোস্টার। একপাশে একটা দু সিটের সোফা ও লো টেবিল। সোফার পাশে একটা টিভি ট্রলির উপর একটা ঢাউস সাইজের টিভি । টিভির নিচে একটা ডিভিডি প্লেয়ার এবং তার নিচে অসংখ্য ডিভিডি রাখা।
গিয়ে রিভলভিং চেয়ারে বসলেন। আমরা টেবিলের বিপরীত পাশে দুটো চেয়ার টেনে বসলাম। চেয়ারে বসেই উনি টিভিটা অন করলেন। ডিভিডি চালু করে দিলেন। টিভির স্ক্রিন জুড়ে একটা খেমটা নাচ চলছে। উনি পরের গানটা দিলেন। ওটাও খেমটা। তবে মডেলগুলো আগের গানের চেয়ে সুন্দর। কিন্তু পোশাক আশাক সংক্ষিপ্ত। এতো সংক্ষিপ্ত যে কেমন কেমন লাগে।
ডিরেক্টর সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘নাচ জানেন ?’
‘জানি একটু একটু।’
‘শিখছেন কোথাও?’
‘না।’
‘শিখ্যা ফালান কোনখানে ভর্তি হয়া।’
আমি মাথা নাড়িয়ে হু হ্যা করার চেষ্টা করলাম। ডিরেক্টর সাহেব আবার হুংকার দিলেন, ‘বাবলু।’
পাশে ঘর দৌড়ে এল হাফ লেডিস। ওমা ! এতক্ষণ তো খেয়ালই করি নি মেয়েদের দলে যে হাফ লেডিসও আছে। পরনে একটা ট্রাউজার আর ভি গলার টি শার্ট। ভি গলার টি শার্ট তো মেয়েরা পরে। ও ব্যাটা তো দেখি ফুল লেডিস হয়ে যাচ্ছে।
হাফ লেডিস এসে আমাদের পেছনে দাঁড়াল, ‘বস।’
‘উনি আমাদের পরের গানের মডেল। একটু নাচটা দেখান তো ।’
ডিরেক্টরের কথায় অবাক হলাম। আমি কি তাহলে চান্স পেয়ে গেলাম ? টাইট টি শার্ট তো ভালোই কাজে লেগেছে।
হাফ লেডিস আমাকে দাঁড়াতে বলল। আমি দাঁড়ালাম। হাফ লেডিস বললেন, ‘চলেন।’
আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ডিরেক্টরের দিকে তাকালাম। তিনি বললেন, ‘পাশের রুমে যান। ও একটা ডান্স দেখায়া দিব।’
আমার সঙ্গের ছোকড়াটাও উঠে দাঁড়িয়েছিল। ডিরেক্টর তাকে ইশারায় বসতে বলল। ও আবারও তার চেয়ারে বসে পড়ল।
আমি আর হাফ লেডিস পাশের রুমে চলে এলাম। রুমটা মাঝারি সাইজের। কিন্তু রুমটা একেবারে ফাঁকা। কেবল ফ্লোরে একটা ম্যাট বিছানো। হাফ লেডিস রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। আমাকে দাঁড় করিয়ে দিল ঘরের মাঝখানে।
এবার খেয়াল করলাম রুমের এক পাশে একটা টেবিল। তার পাশে দুটা লোহার চেয়ার আছে। টেবিলের উপরে একটা হারমোনিয়ার ও তবলা আছে। উপরে দেয়ালে একটা দেয়াল ঘড়ি টানানো।
হাফ লেডিস একটা চেয়ার টেনে বসল। হাত বাড়িয়ে ফ্যানের সুইচ চাপল। মাথার উপরে ফ্যান ঘুরতে শুরু করল।
হাফ লেডিস বলল,‘ নাচ খুবই সোজা জিনিস। কোমর দুলাইতে পারেন তো ?’
আমি হাসলাম। হাফ লেডিস উঠে দাঁড়াল। আমার কাছাকাছি এসে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াল। এমন সময় দরজা খুলে গেল। ঝাঁকড়া চুল ডিরেক্টর ঢুকলেন। তিনি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন।
ঝাঁকড়া চুল বললেন, ‘গানটা ছাইড়া নেও। ’
ফ্লোরের উপরে থাকা ছোট সাইজের টেপ রেকর্ডারটাকে খেয়াল করিনি। হাফ লেডিস টেপ রেকর্ডারটাকে হাতে নিয়ে একটা গান ছেড়ে দিল। ধুমধারাক্কা মার্কা গান। গানের কথা বুঝতে পারছি না। কেবল শেষের কথা ‘পাগল করেছে’ বুঝতে পারছি।
হাফ লেডিস মিউজিকের তালে তালে কোমর দুলাতে লাগল। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। হাফ লেডিস বলল,‘আমার সাথে নাচেন।’
আমার মিরর গেমের কথা মনে পড়ে গেল। অভিনয় শেখার একটা গেমের নাম মিরর গেম। দু’জন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বা বসে খেলতে হয়। একজন হয় আরেকজনের আয়না। একজন যা করে অন্যজন তা অনুকরণ করে। রানা ভাই আমাদের রিহার্সেল রুমে অসংখ্যবার মিরর গেম করিয়েছে।
আমি মিরর গেমের মতো করে নাচতে শুরু করলাম। হাফ লেডিস যা করে আমি হুবহু তা করি। পরিষ্কার অনুকরণ। ডিরেক্টর বোধহয় এতটা আশা করেন নি। তিনি অবাক হয়ে গেলেন।
হাফ লেডিস থামল। আমিও থামলাম। খেয়াল করলাম, আমি একটু হাঁপিয়ে উঠেছি। ডিরেক্টর বললেন, ‘আপনে বললেন, ডান্স শিখেন নাই। এখন তো দেখি ভালোই পারেন।’
আমি হাসলাম। হাফ লেডিস চেয়ার টেনে বসল। সেও সামান্য হাঁপাচ্ছে।
ডিরেক্টর বললেন, ‘শোনেন, মিউজিক ভিডিওর কাজ সহজ না। সবাই পারে না। মুরুব্বিরা বলে, লজ্জা দ্বিধা ভয় - তিন থাকতে নয়। এই তিন জিনিস থাকলে মডেল হওয়া সম্ভব না। একটু খোলামেলা ড্রেস না পরাইলে তো কেউ মিউজিক ভিডিও কিনব না। আমাগোও তো বৌ পুলাপানরে খাওয়াতে হইব। চিন্তা কইরা দেখেন। ’
তার কথা যুক্তিযুক্ত। সারা শরীর ঢেকে রেখে তো আর কেউ মডেল হতে পারবে না। আমি বললাম, ‘আমি চিন্তা ভাবনা করেই এসেছি।’
ঝাঁকড়া চুল ডিরেক্টর উঠে দাঁড়ালেন। আমার পেটের কাছটায় হাত রাখলেন। টি-শার্টটা খানিকটা উঁচু করলেন। আমার শ্যামলা পেটটা বেরিয়ে পড়ল। ভেতরে ভেতরে বিব্রত হলেও বাইরে প্রকাশ করলাম না। একটু নার্ভাস লাগছে। ডিরেক্টর আমার জিন্স পেন্টের বেল্ট ধরে নিচের দিকে নামিয়ে দিলেন। আমার নাভি বেরিয়ে পড়ল। আমার নাভিটা দেখার মতো সুন্দর । মোমের মতো পেটের মাঝখানে সুডৌল গর্ত। কবিরা বোধহয় এই রকম নাভিকেই আদর করে নাভিমূল ডাকে।
ঝাঁকড়া চুল ডিরেক্টর আবার তার চেয়ারে ফেরত গেল। বসল। বলল, ‘এই রকম পোশাকে নাচতে অসুবিধা নাই তো ? ’
আমি না-সূচক মাথা নাড়লাম। তিনি হাফ লেডিসকে বললেন, ‘এইবার একটা ডান্স দেখায়া দেও।’
আমার ইচ্ছা হচ্ছিল টি শার্টটা নামিয়ে দেই। পেটটা খোলা থাকায় অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু নামাতে পারছি না।
হাফ লেডিস উঠে দাঁড়াল। আবারও গানটা ছাড়ল। ধুমধারাক্কা মিউজিক। এবার হাফ লেডিস আমার পেছনে চলে গেল। পেছনে থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমার খোলা নাভির উপর হাত রেখে বলল, ‘আমি যেমনে করমু, আপনে সেই রকমই করবেন।’
আমার রানা ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। অভিনয়ের জন্য একটা গেম করিয়েছিলেন উনি - ব্যাক ড্যান্স। দু’জন পরস্পর পিঠ লাগিয়ে দাঁড়াতে হয়। দু’জনেরই চোখ থাকবে বন্ধ। একজন ডান্স শুরু করবে। অপর জন তার সঙ্গে লাগানো পিঠ দিয়ে অনুভব করে তাকে অনুকরণ করবে। দারুণ একটা গেম।
আমি ব্যাক ডান্সের মতো করে হাফ লেডিসকে অনুকরণ করতে শুরু করলাম। ঝাকড়া চুল ডিরেক্টরের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আমি মিউজিক ভিডিওতে চান্স পেয়ে গেলাম।
(চলবে...... )
প্রথম পর্ব । তৃতীয় পর্ব
যদি এই উপন্যাসটি কিনতে চান :
তাহলে যোগাযোগ করুন :
উপন্যাস : নাটকের মেয়ে
প্রকাশক : চারুলিপি প্রকাশন
যোগাযোগ : ০১৯১২৫৭৭১৮৭
গল্প সংক্ষেপ :
পিংকি নামের মেয়েটি থিয়েটার কর্মী। তাদের নাটকের দলের পরিচালক রানা ভাই। রানা ভাই বলে রেখেছে, তার দলের কেউ টিভি বা সিনেমায় অভিনয় করলে তাকে দল থেকে বের করে দেয়া হবে। কিন্তু তার দলের সবাই গোপনে গোপনে টিভি বা সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। পরিচালক রানা কি তাদের ঘাড় ধরে বের করতে পারবে ?
নাটকের দলে পিংকির আরেক সহকর্মী রিমা আপা। তারও ইচ্ছা টিভি স্টার হওয়া। নাটকের জন্য সে তার প্রথম স্বামীকে ত্যাগ করে। কিন্তু পরের স্বামীও তাকে অভিনয় ত্যাগ করতে বলে। কী করবেন রিমা আপা ? এই স্বামীকেও ত্যাগ করবেন ?
সিরাজ সব্যসাচী ওরফে মাংকি ক্যাপ টিভি নাটকের পরিচালক। একটা নতুন নাটকের জন্য নতুন অভিনয় শিল্পীদের সুযোগ দেন। পিংকি নামে থিয়েটারের অভিনেত্রী ঢুকে পড়েন তার দলে। পিংকির ধারণা, টিভি নাটকে সুযোগের বিনিময়ে পরিচালক সিরাজ তার কাছে অনৈতিক কিছু দাবি করবে। তার ধারণা কি সত্যি ?
নিজেকে প্রযোজক বলে পরিচয় দেয় আজিজুর রহমান ওরফে টাকলু। পিংকির সঙ্গে খাতির জমাতে চায়। পিংকিকে বিরাট অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু এই লোকটিকে সহ্য করতে পারে না পিংকি। তার বিরক্তি চরমে ওঠে যখন জানতে পারে লোকটি ভুয়া প্রযোজক। এখন কী করবে পিংকি ?
শেষ ভেজালটা লাগায় পিংকির গোপন প্রেমিক রফিক ওরফে অগামারা। অগামারা তাকে বিয়ে করার জন্য তার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়। পিংকিকে দান করে দেয় তার ফ্ল্যাট। কিন্তু পিংকি তাকে বিয়ে না করে সব গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। কেন ?
পিংকি চায় যে কোন মূল্যে টিভি স্টার হতে। কিন্তু একের পর এক বাধা তার স্বপ্ন পূরণের পথে দেয়াল তৈরি করে। পরিবারের বাধা, আত্মীয়দের বাধা, সহকর্মীদের বাধা, সমাজের বাধা। সে টপকাতে থাকে, টপকাতে থাকে। দেয়ালের পর দেয়াল। কতগুলি দেয়াল সে টপকাবে ? তার কি আর স্বপ্ন পূরণ হবে না ?
এক কথায় বইটি সম্পর্কে তথ্য :
নাম : নাটকের মেয়ে
লেখক : শাহজাহান শামীম
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
প্রচ্ছদের আলোকচিত্র : কামরুল হাসান মিথুন
লেখকের আলোকচিত্র : এটিএম জামাল
প্রকাশক : হুমায়ূন কবীর, চারুলিপি প্রকাশন, ৩৮/৪ বাংলা বাজার, ঢাকা।
বই মেলায় স্টল নং-৩৫৩,৩৫৪ এবং ৩৫৫ (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)
মূল্য : ২৫০ টাকা ( $ 10 only )
U.K Distributor : Sangeeta Limited, 22 Brick Lane, London.
U.S.A Distributor : Muktadhara, 37-69, 2nd floor, 74 St. Jackson Heights, N.Y. 11372
Canada Distributor : ATN Mega Store, 2970 Danforth Ave, Toronto
Anyamela, 300 Danforth Ave (1st floor, Suite 202), Toronto
অনলাইনে বই কিনতে পারেন রকমারি ডট কম থেকে। বই মেলা উপলক্ষে ২৫% ডিসকাউন্ট চলছে। ডিসকাউন্ট মূল্য ১৮৮ টাকা। এখানে অর্ডার দিন। বই পৌঁছে যাবে আপনার বাসায় :
http://rokomari.com/book/75811
যারা ঢাকার বাইরে :
ঢাকার বাইরে থাকেন ? বই মেলায় আসতে পারছেন না ? কোন সমস্যা নাই।
লেখকের অটোগ্রাফসহ উপন্যাস 'নাটকের মেয়ে' কুরিয়ারে পেতে হলে ০১৯১২৫৭৭১৮৭ নাম্বারে ২০০/- টাকা বিকাশ করুন। আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে বই।
বইটি সম্পর্কে আপডেট সংবাদ জানতে নিচের পেজটিতে লাইক দিন। নিজে লাইক দিন, আপনার বন্ধুদেরকেও লাইক দিতে বলুন।
https://www.facebook.com/natokermeye
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৩