somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সিদ্ধান্তই বদলে দেবে বাংলাদেশ

১৮ ই জুন, ২০১০ রাত ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি সিদ্ধান্তই বদলে দেবে বাংলাদেশ
মাওলানা বাকীবিল্লাহ আনজুম

দিন বদলের শ্লোগানে মুখর সাধারণ নির্বাচনে জনগন দিনবদলের পক্ষে বিপুল রায় দিয়েছিল। অন্ধ দলীয় সংকীর্ণতায় বন্দী নয় এমন নিরপেক্ষ লোকদের ভাবনায় প্রকৃতপক্ষেই নির্বাচনের সময় দিনবদলের একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। তারাই ভোটের ফলাফল নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিলেন। এখন তাদের মনের অবস্থা আমার জানা নেই। তারা এখন প্রত্যাশিত প্রাপ্তির আনন্দে তৃপ্ত নাকি অপ্রাপ্তির মানসিক দহণে নিষ্পেষিত তা জানার সহজ কোন উপায় বাংলাদেশে নেই। সঠিক অর্থে মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী, বস্তুনিষ্ঠ মিডিয়া থাকলে হয়ত জনতার মনের কথা জানা যেত। কিন্ত শতধা বিভক্ত এ দূর্ভাগা জাতির মিডিয়াও যে মানসিক সংকীর্ণংতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খানা খন্দে বন্দী! রাজনৈতিক দলগুলোর মত তাদেরও আদর্শিক প্রতিপক্ষকে সামান্যতম মানবিক মর্যাদা দেয়ার অথবা কোন দলের পক্ষ বিপক্ষ চিন্তা না করে নির্লিপ্তভাবে সত্য বলার ইচ্ছে নেই।

আসল কথায় ফেরা যাক। দিন বদলের জন্যে মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশার স্ফুরণ ঘটেছিল কেউ কেউ মনে করেন তা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। কারণ প্রকৃত দিন বদলের জন্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তন প্রয়োজন তা মোটেই প্রত্যাশিত পথে এগোচ্ছে না। অতীতের মত পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি বহাল তবিয়তেই আছে। জনগণের জন্য কল্যাণকর কর্মসূচী দিয়ে প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে দাম্ভিকতা আর উগ্রতার দ্বারা একে অপরকে প্রতিহত করার মধ্যযুগীয় চর্চা একটুও বদলায়নি আমাদের রাজনীতিতে।

তবে দিন বদলের সম্ভাবনার দুয়ার এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। সংসদে বিপুল শক্তি সম্পন্ন বর্তমান সরকার চাইলে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েই দিনবদলের প্রত্যাশার সিংহভাগ পূরণ করতে পারে। আশাহতদেরকে আবার প্রত্যাশার নতুন মোহনায় জড়ো করতে পারে। সিদ্ধান্তটি আপাত দৃষ্টিতে কারো কারো কাছে জটিল মনে হলেও জাতির জন্যে খুলে দেবে সম্ভাবনার সিংহ দুয়ার। উগ্রতা, অসহিষ্ণুতা আর সহিংসতার অন্ধকার পথ ছেড়ে জাতি ঘুরে দাঁড়াবে আলোকদীপ্ত পথ ধরে। কমে আসবে রাজনৈতিক সহিংসতা আর রাজনৈতিক উগ্রতা। মেধার অপচয় হবেনা। উন্নত ও শিক্ষিত জাতির কারিগর শিক্ষকগণ আপন মর্যাদায় অভিষিক্ত হবেন। ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার মত জঘন্য, পুরো জাতির জন্য লজ্জাষ্কর ঘটনা কমবে। সরকার জনকল্যাণে অধিক মনোনিবেশ করার সুযোগ পাবে। ছাত্র সংগঠনগুলোর অপকর্মের বদনামে সরকারের সাফল্যের সুনাম ঢাকা পড়বে না। আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। দেশের বিনিয়োগ ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন প্রজন্ম মানবিক মূল্যবোধের সহনশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। সব সংকীর্ণতামুক্ত এক উন্নত প্রজন্ম গড়ে উঠবে। বদলে যাবে বাংলাদেশ। এভাবেই বদলে গেছে বৃটেন বদলেছে আমেরিকা, ইতালী, স্পেন। আমি অধিকাংশের কথা বলছি ক্ষুদ্র ব্যতিক্রম সর্বত্রই দৃশ্যমান। এক সময় যারা কালো মানুষ পেলেই দাস বানাত। শুধু রংয়ের বৈচিত্রের কারণে যারা মানুষকে মানবিক মর্যাদা দিত না। তারা আজ কত সহনশীল পরিবেশ তৈরি করেছে। সব ধর্মের, বর্ণের, আকৃতির, দলের, মতের মানুষ আছে, আছে রাজনীতি, প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন, আছে তীব্র রাজনৈতিক আর নির্বাচনী বিতর্ক। কিন্তু তাদের সহনশীলতা সব পার্থক্য আর উগ্রতাকে হার মানিয়ে দেয়।

এভাবেই বদলে যাবে আমাদের দেশ। সবার প্রিয় বাংলাদেশ সত্যিকারেই সোনার বাংলার রুপ পাবে। শুধু একটি সিদ্ধান্ত ছাত্রদেরকে রাজনীতির বাইরে রাখা। অন্তত একটি প্রজু।

অন্যতম সফল রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ চেষ্টা করেছিলেন। দেশপ্রেম আর বিচক্ষণতার কারণেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির বাইরে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা দলীয় লাভ - ক্ষতির হিসাব নিকাশে জাতির ভবিষ্যত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে পারিনি। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদও চেষ্টা করেছিলেন। ব্যর্থ হয়েছেন আমাদের অসহযোগিতার কারণে।

সর্বশেষ জাতীয় অধ্যাপকসহ দেশের সম্মানিত ৫জন শিক্ষাবিদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্ররাজনীতির ভয়াবহতা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বর্তমান সরকারের অনেক সাফল্য আর আন্তরিকতাকে কালিমালিপ্ত করে দিচ্ছে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা আর উগ্রতা যার পেছনে রয়েছে ছাত্র রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকছে। মেধাবী ছাত্রদের কর্মজীবন ছোট হয়ে আসছে ছাত্র রাজনৈতিক সেশন জটের কারণে। ঢাবি‘র আর রাবি‘র আবু বকরদেরকে ম্যানহোলে অথবা পড়ার টেবিলে জীবন দিতে হচ্ছে শুধু ছাত্ররাজনীতির কারণে। একে অপরের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর চলমান চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে কোন দলের নাম বলছি না। দেশের সম্পদ শাটল ট্রেন জ্বলছে, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের বাস পোড়াচ্ছে তাদেরই স্নেহাস্পদ ছাত্ররা। ঠুনকো অজুহাতে শিক্ষকদেরকে রুমের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রেখে বাইরে শিক্ষকদের নাম ধরে এমনকি ‘তুই‘ শব্দ প্রয়োগে শ্লোগান দেয়ার মত জঘণ্য ঘটনা পৃথিবীর কোথাও না ঘটলেও আমার দেশে নিয়মিতই ঘটে চলছে ছাত্র রাজনীতির ছায়ায়।

অতীতের সরকার চেষ্টা করেছে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে কিন্তু ছাত্র রাজনীতির কারণে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকারও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে চলছে। প্রধানমন্ত্রী কড়া হুশিয়ারী দিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনিকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। এর চেয়েও শক্তিশালী কোন সরকার ক্ষমতায় আসলেও এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। যতদিন ছাত্র আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি মুক্ত করা না হবে।

পরিবর্তনমুখী বাংলাদেশে ছাত্রদেরকে রাজনীতির বাইরে রাখাই হবে সবচেয়ে যুগান্তকারী পরিবর্তন। যাদের নেতৃত্বে শান্তিপ্রিয় কোটি জনতার এ প্রত্যাশাটি পূরণ হবে তারা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটিই এখন ক্ষমতায়। জাতির কাছে তাদের দিন বদলের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। সংসদীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার মত মেজরিটিও রয়েছে তাদের। শুধু দরকার দেশের স্বার্থে দলীয় লাভ -ক্ষতির হিসেব -নিকেষের উর্ধ্বে উঠে একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। তবে পথ বন্ধুর। প্রতিবাদ আসতে পারে সরকারের মধ্য থেকে এমনকি বিরোধী দল থেকেও। তবুও একটি সহিষ্ণু, উন্নত ও যথার্থ শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য একটি নেতৃত্ব সুলভ সাহসী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় জাতি। এ অপেক্ষা যত দীর্ঘায়িত হবে অদৃশ্য তিমির দেশ ও জাতিকে ততই গ্রাস করবে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার বড্ড ক্ষুধা পায়ঃমানুষের জন্য

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৯




শুধু খাবারের জন্য ক্ষুধার্ত নই আমি,
কখনো কখনো ক্ষুধা পায়
স্মৃতির কুয়াশায় হারানোদের জন্য।
একটি হৃদ স্পন্দন থামিয়ে দেয়া
যাদুকরি কন্ঠের জন্য,
একজোড়া চঞ্চল চোখের চঞ্চলতার জন্য,
একটা উষ্ণ হাতের উষ্ণতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেকারত্বের দিনগুলি - প্রথম অংশ

লিখেছেন দর্পণের প্রতিবিম্ব, ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০১




সাকসেস বা সফল বা সফলতা, ইহার সংজ্ঞা আমার জানা নেই। সাধারণ একজন ব্যক্তিকে যদি জিজ্ঞেস করেন আপনি সফল কিনা বা সফলতা বলতে কি বুঝেন? খেয়াল করবেন তিনি বা তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিটিংয়ের জন্য কেন এত তোড়জোড়?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১২



অর্থাৎ চীনের সহায়তায় লালমনিরহাটের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এয়ার বেইস চালুর চেষ্টা, তিস্তা মহাপরিকল্পনা চীনকে নিয়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ও চীনে গিয়ে ডক্টর ইউনূসের সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কিত বক্তব্য ভারতের ভালো লাগেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৭

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

ছবিসহ মিনি পোস্টারটি এআই দিয়ে তৈরিকৃত।

থেঁতলানো চোয়াল, ভেঙ্গে গেছে দাঁত, রক্তাক্ত অবয়ব—তবু ৪০ কিমি বাস চালিয়ে যাত্রীদের বাঁচালেন! এই সাহসী চালকই বাংলাদেশের নায়ক... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর পর যা হবে!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪২



বেহেশত বেশ বোরিং হওয়ার কথা।
হাজার হাজার বছর পার করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। দিনের পর দিন একই রুটিন। এরচেয়ে দোজক অন্য রকম। চ্যালেঞ্জ আছে। টেনশন আছে। ভয় আছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×