-oh, my God!
--what? what?
-wow! Hey, Rayan?
--yeah?
-you should see the sun of the Ganges. It’s amazing!
মহাশূন্য থেকে আমাদের এই মহামায়া পৃথিবী দেখতে কেমন? মুভিটির প্রথম দৃশ্যই মন কেড়ে নেয়। অসীম মুগ্ধতা নিয়ে পৃথিবীর অবর্ণীয় রূপ দেখি, মহাশূন্যের নিরন্তর নৈশব্দ্যে রোমাঞ্চিত হই। থ্রিলার মুভি অনেক দেখেছি, সাইন্স ফিকশন থ্রিলার এই মুভিটির মত আর দেখিনি। শুরু থেকে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত এত রোমাঞ্চ, আর গতি, কখন যে মুভিটি শেষ হয়ে গেল বুঝতেই দেয় নি। অথচ মুগ্ধতার রেশ এখনো রয়ে গেছে। জেমস ক্যামেরন হয়ত একটু বাড়িয়েই বলেছেন, ‘Gravity is the best space film ever made’। ‘Apollo-13’, ‘2001: A Space Odyssey’ এদেরকে সাথে নিয়ে বলাই যায়, আমার দেখা অন্যতম সেরা মহাশূন্য বিষয়ক মুভি এটি।
স্বাস্থ্য প্রকৌশলী ড. রায়ান স্টোন (Sandra Bullock) এক্সপ্লোরার মহাকাশযানে তাঁর প্রথম মহাশূন্য অভিযানে এসেছেন, সঙ্গী এই অভিযানের কমান্ডার খ্যাতনামা মহাকাশচারী ম্যাট কোয়ালস্কি (George Clooney)। রায়ান এই অভিযানের আগে মাত্র কয়েক মাস প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, আর কোয়ালস্কির এটাই শেষ মহাকাশ অভিযান।
রাশিয়া বিশেষ কারণে তাদের একটি স্যাটেলাইট ধ্বংস করে, দুর্ঘটনাক্রমে চেইন রিএ্যাকশনে সবগুলো স্যাটেলাইট ধ্বংস হয়ে যায়। এর ধ্বংসাবশেষ দ্রুত গতিতে মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়লে, হিউস্টনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মিশন শেষ করে এক্সপ্লোরারকে পৃথিবীতে ফিরে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে এক্সপ্লোরারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্যাটেলাইটের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে এক্সপ্লোরার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুর্ঘটনায় পড়ে এর অভিযাত্রীরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর বেঁচে থাকা আর পৃথিবীতে ফিরে আসার এক রুদ্ধশ্বাস সংগ্রাম। এভাবেই কাহিনীর শুরু। নব্বই এর দশকে আমেরিকান-রাশান স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও, আমেরিকানদের মাঝে ব্লেম গেম আর রাশান জুজু যে এখনো অবচেতন মনে ভর করে আছে, মুভির কাহিনী লেখক ও পরিচালক Alfonso Cuarón সেটাই মনে করিয়ে দিলেন রাশিয়াকে ভিলেনের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে।
রায়ান চরিত্রে Sandra Bullock অসাধারণ অভিনয় করেছেন। রায়ানের অকালপ্রয়াত মেয়ের স্মৃতি রোমন্থন, চাইনিজ মহাকাশ স্টেশনে বসে গ্রিনলান্ডবাসী জেলের সাথে বেতারে আবেগি কথোপকথন দর্শককেও আবেগাক্রান্ত করেছে। কোয়ালস্কি মিউজিক ভালোবাসেন, গল্প আর হাস্যরসে মাতিয়ে রাখেন সহ-মহাকাশচারীদের, বিপদে ধীর স্থির হয়ে আগলে রাখতে চান সবাইকে। কোয়ালস্কি চরিত্রটি খুবই ছোট, কিন্তু মুভিটি জুড়েই তাঁর আশ্চর্যরকম প্রভাব রেখে গেছেন।
Gravity (2013) অন্যতম ভিজুয়্যাল মাস্টারপিস মুভি!কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে (Computer-generated imagery -CGI) মুভির সেট Alfonso Cuarón এমন নিঃখুত করে সাঁজিয়েছেন, দর্শক ঘরে বসেই সিনেমার পর্দায় মহাশূন্যের অসাধারণ সব অনুভূতি মননে ধারণ করেছে।
মুভির সংলাপে কিছু ক্ষেত্রে জড়তা দেখা গেছে। ধ্বংসাবশেষে স্যাটেলাইটগুলো একের পর ধ্বংসের খবরে কোয়ালস্কি বলে উঠেন, “Half of North America just lost their Facebook”। ইন্টারনেট স্যাটেলাইট নির্ভর নয়, বরং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য দীর্ঘ লাইন একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে ইন্টারনেট সিস্টেমটি গড়ে উঠেছে।জানিনা কোয়ালস্কি এই সংলাপটি মজা করে বলেছেন কিনা, সেক্ষেত্রে এটি একটি চোখে পড়ার মত ত্রুটি।
মুভি শুরু “There is nothing to carry sound. No air pressure. No oxygen. Life in space is impossible.” টাইটেল দিয়ে। ড. রায়ান যখন রেঞ্চ দিয়ে এক্সপ্লোরার মেরামত করছিলেন, এর যান্ত্রিক শব্দ, বাতাসের চাপ চোখে লাগছিল কিছুটা।
মহাকাশযান চালনা সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকা সত্ত্বেও, কেবল ম্যানুয়াল পড়ে মাত্র ৯১ মিনিটে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ থেকে আন্তর্জাতিক মহাশূন্য স্টেশন ও চাইনিজ মহাশূন্য স্টেশনে অভিযান দুঃসাধ্য ও অবাস্তব হলেও কাহিনীর প্রয়োজনে মানিয়ে যায়।
ব্যবসাহিক সাফল্যের পাশাপাশি, দর্শক ও সমালোচক সব মহলেই মুভিটি দারুন প্রশংসিত হয়েছে। ২০১৩ সালের অস্কারের আসরে সেরা পরিচালকের পুরস্কারসহ ৭টি অস্কার জিতে নিয়েছে এই মুভিটি। মুভিটির IMDB Rating 8.0/10, আর রোটেন টম্যাটোতে এটি পেয়েছে ৯৭% ফ্রেস মুভির স্বীকৃতি।
নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মহাশূন্যের অসীম নৈশব্দ্যে ভেসে ভেসে গঙ্গার বুকে মুগ্ধ চোখে সূর্যকে দেখে কোয়ালস্কি যখন বলে উঠে, “you should see the sun of the Ganges. It’s amazing!”, তখন একজন বাঙালি হয়ে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা দুঃসাধ্য হয়ে উঠে। যারা মুভিটি দেখেননি, দেখার আমন্ত্রণ রইল। ৯১ মিনিট রোমাঞ্চে কাটার অগ্রিম নিশ্চয়তা রইল।
সূত্র:
১। উইকিপিডিয়া ডট ওআরজি
২। আইএমডিবি ডট কম
৩। রোটেনটম্যাটোস ডট কম