somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"অমর একুশে" - ইতিহাসের বুকে নয় বরং বর্তমানের বুকে অতীতের আস্ফালন

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্বাধীন দেশমাতৃকার আঁচল তলে উষ্ণ স্নেহের আলিঙ্গনে কাটানো দিন রাত্রি গুলো মাঝে মাঝেই বড় বেশি আহ্লাদী হয়ে ওঠে। বেপরোয়া ইচ্ছে গুলো বন্দুকের বেয়োনেটের মতো আস্ফালন করে ওঠে। ভুলে যাওয়া সে দিনের রক্তাক্ত স্মৃতি ভেসে ওঠে ধোঁয়া ওঠা মগের কাপে। স্নিগ্ধ বিকেলের আলসেমিতে চিঁড় ধরে। সেখানে বাসা বাঁধে বাঙালীর চিরচেনা আক্রোশ। ভাষার প্রতি ভালোবাসা। দেশের প্রতি প্রকাশহীন প্রেম। রাজনৈতিক দলাদলিতে ফিকে হয়ে যাওয়া এই আজন্ম লালিত প্রেম গুমরে কেঁদে ওঠে নববধূর সুদীর্ঘ ঘোমটার আড়ালে। তবু চিরচেনা অলিগলি দিয়ে পায়ে হাঁটা পথে উন্মুক্ত সূর্যের সান্নিধ্য পেতে বারবার ফিরে আসে বাস্তবতার সম্মুখে।

আর সেই জন্যই আজ আমার কলম ধরা। কোন রাজকণ্যার জন্য নয়, নয় কোন গল্প কবিতার জন্য। বই এর পাতায় আটকে পড়া ইতিহাস নয় বরং বর্তমানের কাছে হেরে যাওয়া সোনালী অতীত কে টেনে হিঁচড়ে সামনে আনার জন্য।

"অমর একুশে ফেব্রুয়ারি"

আমি বাঙালী
অামি গর্বিত
অামি গর্বিত বাঙালী।

বুকের পাজরে লালিত দেশপ্রেম আজ ধূলি ধূসরিত কর্দমাক্ত বাস্তবতার কাছে পরাজিত এক নায়িকা। যে তার আব্রু বিকিয়ে দিয়েছে নিলামহীন এক স্বেচ্ছাচারিতার কাছে। এদেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ অবশ্যই যারা কিঞ্চিৎ পরিমাণ মানবিক গুণসম্পন্ন, তাদের প্রত্যকেরই বুকের প্রকোষ্ঠে ভালোবাসার লালন হয়। শুধুই এই দেশমাতার জন্য।

১৯৫২ তে ভাষার প্রতি দুর্বার প্রেম, বাঙালীকে দিয়েছিল নতুন দিশা। বেঁচে থাকার প্রেরণা। যদি ২১শে ফেব্রুয়ারি না হতো তবে ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালীর জীবনে হয়তোবা অধরা রয়ে যেত। তাই স্বাধীন বাংলার ভিত্তির অন্যতম গাঁথুনি হল ভাষা আন্দোলন। যার পাল তোলা নৌকায় চড়েই আজ আমরা স্বাধীন।

কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর আধুনিকতা কি আমাদের স্বকীয়তাকে গ্রাস করছে না? দেশের প্রতি ভাষার প্রতি আমাদের লালিত ভালোবাসা কি আজ আধুনিকতার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে না? দেশের প্রতি আত্মিক সেই টান কি আজ অদৃশ্যমান নয়? প্রশ্নগুলো বড় বেশি অবাধ্য। মনের দেওয়ালের কার্নিশ বেয়ে ক্রমাগত উপরে উঠতে থাকে।

বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর আর সালামের আত্মত্যাগ আজ ঝড় তোলে না চায়ের কাপে। তাঁদের আত্ম বলিদানের পবিত্র বেদীর উপর দাঁড়িয়ে আজ আমরা আধুনিক। তাই তাদের জন্য তুলে রেখেছি ফেব্রুয়ারির ২৮টি অমূল্য দিন শুধুই ২৮টি দিন। আর কিছু নয়। সভ্যতার নির্মমতায় পিষ্ট বাঙালী আজ ভুলতে বসেছে তার ঐতিহ্যের ইতিহাস।

শহীদ মিনারের পাদপদ্মে শ্রদ্ধার ফুল যতটা না জমা হয় প্রেমিক যুগলের প্রেম নিবেদন আর একান্তে কাটানো কিছু মুহূর্তরা তার থেকে ঢের বেশি গুঞ্জরিত হয় এই পবিত্র ভূমিতে।

কেন এই শহীদ মিনার শুধু ওই একটি দিনই নববধূর মতো সাজবে; কেন প্রতিটি দিন নয়? কেন ছোট্ট শিশু পাঠ্যপুস্তকের একঘেয়েমি বর্ননার মধ্য দিয়ে জানবে আমাদের গৌরবের কথা; আমাদের বিজয়ের কথা; মহান ভাষা আন্দোলনের কথা?

মুক্তিযোদ্ধারা কেন আজ অন্ধকারে? দেশের নেতৃত্বে তো তাদের থাকার কথা? তবে কেন আজ তারা দৃশ্যমান নয়? জাতির এই সংকটকালে শুধুমাত্র অন্নসংস্থানই কেন তাদের চিন্তার খোরাক?

৫২ এর সেই সে দিনের ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী দামাল ছেলেরা আজ কোথায়? দেশমাতা যে আজো ওদের দিকে তাকিয়ে। যারা বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়েছিল বুলেট বেয়োনেটের সামনে, তারা কি পারবেনা এই স্বাধীন বাংলার বুক থেকে কিছু পশুশ্রেনীর মানুষকে বিতাড়িত করতে। নাকি সময়ের সাথে সাথে তাদের মতো তাদের বিপ্লবী চেতনাও আজ মহাকালে বিলীন।

বেশ কিছু প্রশ্ন বেড়ে উঠেছে প্রশ্রয়ের আতিশয্যে। এর উত্তর আমি চাই না। কেননা প্রতিটি বাঙালীর বিপ্লবী মন যখন দেখতে পাবে প্রিয় জননী তথা ভাষার অশ্রুসিক্ত অবয়ব, সেদিন এই প্রশ্নগুলো উড়িয়ে দেব রঙিন কাগজের সাথে। বাতাসে দেশপ্রেমের সাহ্মর রেখে যাবে উড়ন্ত সেই রঙ বেরঙের কাগজগুলো।

তাই আমি আবার মুক্তিযুদ্ধ দেখতে চাই। বহির্শক্তির বিরুদ্ধে নয়। এই বাংলার বুকে বেড়ে ওঠা জাত পাত ধর্ম দোষে দুষ্ট একটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক তকমার আড়ালে লুকানো হায়েনার বিরুদ্ধে। অপ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে।

আমি আবার দেশপ্রেমিক হতে চাই। শরীরের প্রতিটি লোমকূপে অনুভব করতে চাই একুশের চেতনা। ইতিহাসের পাতায় নয় বরং বর্তমানের বুকে রঙিন অালপনা আঁকতে চাই অমর একুশের।

➡আমার লেখাটা যেহেতু 'অমর একুশে ফেব্রুয়ারি' এর উদ্দেশ্যে তাই পাঠক মনে হতেই পারে ভাষা আন্দোলন অথবা ভাষা শহীদদের আত্মাহুতির কাহিনীকে এড়িয়ে কেন গোটা লেখা জুড়ে রয়েছে এক ধরনের আক্রোশ ছড়িয়ে আছে।

আমি শুধু একটি কথাই বলব, বুকে হাত দিয়ে বলুন তো আপনার হৃদয় মাঝে কি আক্রোশের জন্ম হয় নি?
যদি না হয় তবে আপনি বাঙালী নন।

ছবিঃ গুগল।
ধন্যবাদঃ খুব প্রিয় একটি মেয়ে 'মূর্ছনা' কে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০১
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×