আজকাল এমন অলস হয়েছি – লেখালেখির ক্ষেত্রে মন বসাতেই পারিনা। তাই অনেকদিন কোন পোস্ট ও দেয়া হয়না। অনেকেই জিজ্ঞেস করেন নতুন পোস্ট নাই কেন? কিছু বলতে পারিনা। কেমন যেন হয়ে গিয়েছি আমি। এখন শুধু পড়তে ভালো লাগে। লেখার কথা মনে হলেই যেন জ্বর আসে গায়ে। যাই হোক ব্যাক্তিগত তাড়নায় হোক আর সহব্লগারদের আগ্রহের কারনে হোক আজ কিছু লেখার চেষ্টা করছি। কোন ছবি দেখে তার রিভিউ কখনো লিখিনি, তাই এই পোস্টকে মুভি রিভিউ ভাবা ঠিক হবেনা। শুধু আমার কিছু ভালো লাগার কথা শেয়ার করতেই এই পোস্টের অবতারণা।
আমাকে মাঝে মাঝে শুক্রবারে অফিস করতে হয়। অবশ্য শুক্রবারে অফিস করে মজা আছে, বস থাকেনা। আর সারাদিনে বড়জোর দুঘণ্টার কাজ করতে হয় এরপর বাকী সময়টা নিজের মত করে কাটাই আমরা। ছবি দেখে বা গেমস খেলে। গত শুক্রবারে দুটো ছবি দেখে ফেললাম। প্রথমে দেখলাম একলা আকাশ। কয়েকদিন আগেই পরমব্রতের ছবি দেখে ক্রাশ খেয়েছিলাম। তাই You tube এ ছবি খুঁজতে যেয়ে যখন দেখলাম এটাতে পরমব্রত আছে তখন এটাই দেখা শুরু করলাম। ভারতীয় বাংলা ছবিগুলো দেখতে ভালো লাগে দুটো কারনে – ওদের অনেক ছবিতেই সুন্দর কাহিনী থাকে আর ওদের অভিনয় দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। বিরক্ত হই একটা জিনিস দেখে – ওদের অনেক ছবিতেই যেমন করেই হোক পরকীয়া ব্যাপারটা থাকবেই। যেন পরকীয়াকে স্বীকৃতি দেয়ার একটা বড়সড় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ভারতীয় বাংলা ছবির নির্মাতারা।
২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া একলা আকাশ ছবিতে নিশা চরিত্রে পারনো মিত্রের অভিনয় ভালোই লেগেছে। শুধু মনে হচ্ছিলো শেষ দৃশ্যে মেয়ের মৃত্যুর পর তার যে প্রতিক্রিয়া তা আরও একটু ভালো হতে পারতো। আর পরমব্রত তো আমার ফেবারিট এখন। তবে এই ছবিতে ওর অভিনয়ের সুযোগ কম ছিল বলে মনে হয়েছে। সন্তানের মঙ্গলের জন্য বাবা মা যে কোন কিছুর সাথে আপোষ করেননা তা এই ছবিতে বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।
কাহিনী সংক্ষেপ – নিশা ও অরিজিতের ছোট সংসার। নিশা গর্ভবতী, তাঁকে যে পরিমাণ সময় ও মানসিক সাপোর্ট দেয়া দরকার অরিজিত তা পারেনা অফিসের কাজের চাপে ও মহিলা কলীগের কারনে যার সাথে তার এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার থাকে। নিশার একসময় একটি মেয়ে সন্তান হয়। নিশা তার মেয়েটি বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে অরিজিতের সময় পাওয়ার। পরবর্তীতে সে তার এক গুরু ও চলচিত্র নির্মাতার সূত্রে চলচিত্রে অভিনয় করা শুরু করে। যা তার ও অরিজিতের মধ্যকার দুরত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। অরিজিত একসময় বুঝতে পারে নিশাই তার প্রকৃত ভালবাসা আর তাদের মেয়ে দিশা সেই ভালোবাসার শক্তি। সে ফিরে আসে একসময়। এদিকে নিশাও একসময় তার ভুল বুঝতে পারে এবং সংসারে ফিরে আসে। কিন্তু এর মাঝে তাদের সন্তানের লাংস এর সমস্যার কারনে সে অসুস্থ হয় ও শেষে মারা যায়। ট্র্যাজিক এন্ডিং দিয়ে শেষ হয় ছবি। একজন মা হিসেবে খুব খারাপ লেগেছে শেষটা দেখে। আপনার সন্তানকে সময় দিন – এমন একটা মেসেজ দেয়ার চেষ্টা ছিল ছবিটিতে যা ভালো লেগেছে।
ন হন্যতে – এই ছবিটিও ২০১২ সালে মুক্তি পায়। জুঁই চরিত্রে রূপা গাঙ্গুলির অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ। শিউলি চরিত্রে সায়ানি দত্তের অভিনয় ও প্রশংসা করার মতোই। শেষ দৃশ্যে এই দুজনের অভিনয়ে আমাকেও কাঁদতে হয়েছে।
কাহিনী সংক্ষেপ - পুরনো জরাজীর্ণ বাড়িতে এক ছেলে এক মেয়ে আর স্বামিকে নিয়ে জুঁইয়ের বাস বিশাল এক যৌথ পরিবারে। একদিন রাতে সেই বিশাল বাড়ী ভেঙ্গে পড়ে। ঘটনাক্রমে জুঁই ও তার স্বামী বাড়ীর বাইরে ছিল। তাদের ছেলে ও মেয়ে সেই ভেঙ্গে পড়া বাড়ীর নিচে চাপা পড়ে। জুঁই ও তার স্বামী সন্তানদের ব্যাকুল হয়ে খুঁজতে থাকে ভেঙ্গে পড়ার বাড়ীর ধ্বংসাবশেষে। একসময় মনে করে ওদের সন্তানরা বেঁচে নেই। কিছুক্ষণ পর জুঁইয়ের কানে আসে তার বাচ্চাদের আর্তনাদ। তখন সে দেখতে পায় ওরা বেঁচে আছে তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। লোকজন ডেকে জুঁই ওদের উদ্ধারের চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু উদ্ধারকারী লোকজন এক পর্যায়ে জানায় যে ছেলে মেয়ে দুটো এমনভাবে আটকে আছে যে ওদের যে কোন একজনকে বাঁচানো যাবে। কাকে বাঁচাবে সেই স্বিদ্ধান্তের জন্য যখন মাকে প্রশ্ন করা হয় তখন তার যেই অসহায় অবস্থা তা রূপা গাঙ্গুলি বেশ দক্ষতার সাথেই ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেক কষ্টে মা তার ছেলেকে বাঁচাতে বলেন আর মেয়ের মৃত্যুর জন্য তিনিই দায়ী এই অপরাধ বোধে বাকী জীবন দগ্ধ হতে থাকেন। ধ্বংসস্তুপের নিচে থেকে শিউলি তা শুনতে পায়। সৌভাগ্যক্রমে সেও বেঁচে যায়। কিন্তু সে প্রচণ্ড অভিমানে মায়ের কাছে না যেয়ে একা হাঁটতে থাকে রেললাইনের পথ ধরে। ষ্টেশনে অপেক্ষারত একজন ক্লান্ত ও বিদ্ধস্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে ঊদ্ধার করে ও তার বাসায় নিয়ে যায়। এখানে একটু ড্রামাটিক ব্যাপার দেখায় যা কিছুটা অবিশ্বাস্য তবে পুরো ছবির কাহিনীর সাথে তা খুব একটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। যিনি শিউলিকে উদ্ধার করেন তার নাম মুর্শিদ। ওনারা তাদের মেয়েকে হারান কিছুদিন আগে। এরপর থেকে মুর্শিদের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে যান। ওনাদের মেয়ে দেখতে শিউলির মতো ছিল বলেই তিনি শিউলির মা বাবার কোন খোঁজ না করে ওকে মেয়ে হারানো স্ত্রীর কাছে নিয়ে যান। শিউলিকে দেখে অনেক দিন পর ওনার স্ত্রী জয়ার মুখে হাসি ফুটে আর ধীরে ধীরে তিনি স্বাভাবিক হতে থাকেন। এভাবে শিউলি মুর্শিদ পরিবারে বড় হতে থাকে আর ওদিকে ওর মা স্বামী হারিয়ে ছেলে রতনকে নিয়ে একা জীবন যাপন করতে থাকেন। মাঝে অনেক ঘটনা প্রবাহের পর একদিন শিউলি ওর ভাইয়ের দেখা পায়। পরে সে তার মায়ের সাথে দেখা করতে যায়। এতবছর পর মা মেয়ের দেখা হওয়া এই দৃশ্য দেখার আগেই আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল, আর তা দেখার পর অটো চোখে পানি চলে এল। ছবিতে মা মেয়ের সাথে আমিও কেঁদেছি।
মা বাবা সন্তান এই সম্পর্কটি পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী সম্পর্ক। আর সন্তান মা বাবার জন্য আল্লাহতায়ালার রহমত স্বরূপ মনে হয় আমার। তাই এই সম্পর্ককে সুন্দর রাখতে আমাদের সবচেয়ে বেশী যত্নবান হওয়া উচিত।
*** অনেকদিন পর লিখলাম। জানিনা কিছু হয়েছে কিনা। যারা সময় নষ্ট করে পড়বেন তাদেরকে অগ্রিম ধন্যবাদ।