somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রমত্তা তিস্তা! একটি নদীর অপমৃত্যু!! অতপর একটি জাতির করুণ আর্তনাদ!!

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রমত্তা তিস্তা। এখন শুধুই ধু ধু বালুচর। প্রমত্তা তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ায় তিস্তা পাড়ের শত শত জেলে পরিবার এবং কৃষকের নেমে এসেছে দুর্দিন।দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ অকার্যকর হয়ে পড়েছে তিস্তার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। তিস্তার ১২০ কিলোমিটার নদী বিধৌত এলাকা এখন প্রায় মরুভূমি। তিস্তা নদীতে এখন মাইলের পর মাইল চর। নদীর অনেক স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পায়ে হেঁটেও এক ফোঁটা পানির দেখা মেলে না।



শুষ্ক মওসুমে এমনিতেই এ সময় নদীতে পানি থাকে না। আর সেই সন্ধিক্ষণে তিস্তা ব্যারেজের ৬৫ কিলোমিটার উজানে হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীর পানি একতরফা ভাবে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত প্রত্যাহার করে নিচ্ছে গজলডোবা বাধের মাধ্যমে। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ প্রণীত কনভেনশনের বেশ কয়েকটি ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অভিন্ন নদীগুলোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যেকের সমানাধিকার প্রযোজ্য হবে। যাতে পৃথিবীতে নদীগুলো যেন নদীর মতো বেঁচে থাকে। সে হিসাবে তিস্তা নদীর জলপ্রবাহও সমানাধিকারের ভিত্তিতে বণ্টন হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে একটা বৃহৎ অংশ মরুভূমিতে পরিনত হচ্ছে। বৃহত্তর রংপুর দিনাজপুর চাষের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে বোরো ধানের চারা প্রচণ্ড রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতে সেচ দেয়ার মতো পানি দূরে থাক খাওয়ার পানি সংগ্রহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। কোথাও কোথাও ১৫০ ফিট মাটি খুঁড়েও পানি পাওয়া যাচ্ছে না।



উত্তর জনপদকে বাঁচাতে হলে তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তিস্তাকে এভাবে আমরা মরে যেতে দিতে পারি না। তিস্তাকে এভাবে গল্প হয়ে যেতে দিতে পারি না। চোখের সামনে নদীটি পানিশূন্য হতে দিতে পারি না।
ভারত তিস্তা পানি আটকে রাখার জন্য নতুন নতুন বাঁধ দিচ্ছে। ফলে তিস্তা বিধৌত এলাকার অনেক জেলে ও মাঝি তাদের বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা।

ভারত উজানে স্থায়ীভাবে গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তায় গজলডোবা বাঁধ, মনু নদীতে নলকাথা বাঁধ, যশোরে কোদলা নদীর উপর বাঁধ, খোয়াই নদীর উপর চাকমা ঘাট বাঁধ, বাংলাবন্ধে মহানন্দা নদীর উপর বাঁধ, গোমতি নদীর উপর মহারানি বাঁধ এবং মুহুরি নদীর উপর কলসী বাঁধ নির্মান করে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে বছরের পর বছর। এছাড়াও আরও কমপক্ষে ১৫টি সীমান্ত নদীর উপর অস্থায়ী ভিত্তিতে ভারত কাঁচা বাঁধ নির্মাণ করে। বর্ষায় এসব অস্থায়ী বাঁধ কেটে দেয়া হয়। ভারতের এরকম পানি আগ্রাসী নীতির কবলে পড়ে শুষ্ক মৌসুমে দেশের নদ-নদীগুলো পানি শুন্য হয়ে পড়ে। আর বর্ষায় বাংলাদেশকে ভাসানো হয় পানি দিয়ে। এছাড়াও সীমান্ত নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভারত পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে বাংলাদেশ অংশে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি করছে। ভারতের এমন নীতির কবলে পড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের শত শত কোটি টাকা সম্পদ নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে।

ভারতের বিবেক বর্জিত নীতির কারণে শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে বাংলাদের বেশির ভাগ নদী যা নদী হত্যার সামিল। এই নদীহত্যার ঘটনা কেবল নদীর নয়। এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে নৃশংসভাবে হত্যার সমান। সেই সংগে পানির অতলে থাকা জলজ উদ্ভিদ, মৎস্য ও জলজবৈচিত্র্য হত্যারও সামিল। তাহলে আমাদেরকে কি সজ্ঞানে দেখতে হবে এই নদীহত্যা? আর নির্মিতব্য টিপাইমুখ বাঁধ কত ক্ষতি নিয়ে আসছে তা সময়ই বলে দিবে। টিপাইমুখ বাঁধ সম্পন্ন হলে, বাংলাদেশের সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনার ধারা মরে যাবে। গোটা সিলেট অঞ্চলে নেমে আসবে প্রাকৃতিক মহাবিপর্যয়। এসব বাঁধ বাংলাদেশের জন্য মরণ ফাঁদ বৈ কিছু নয়।



তাহলে ভারতের আগ্রাসী নীতির কারণে তিস্তায় পানি পাওয়ার আশা কি ছেড়েই দিতে হবে? তবে কি তিস্তা নামের নদীটি একদিন গল্পই হয়ে যাবে? সেদিন কি খুব বেশি দূরে? যেদিন আমরা শুনব, তিস্তা ছিল একটি নদীর নাম।

তিস্তা বাঁচলে উত্তর জনপথ বাঁচবে । নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে । তাই দেশকে বাঁচাতে, নদীকে বাঁচাতে সবাই এগিয়ে আসুন এবং স্ব-স্ব স্থান থেকে সোচ্চার হ'ন। তবেই আমরা একটি নদীর অপমৃত্যু ও অতপর একটি জাতির করুণ আর্তনাদ থেকে রক্ষা পাব।

আসুন একটি ভিডিও চিত্র দেখি।

সূত্র : মিডিয়া, ব্লগ ও ফেসবুকে বিভিন্ন লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:১৪
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন!

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



শত বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশের জনগণের জন্যে এ এক অনন্য স্বীকৃতি! ধন্যবাদ দ্যা ইকোনোমিস্টকে..... বাংলাদেশকে বর্ষ সেরা দেশ হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্যে! দ্যা ইকোনোমিস্ট লিখেছে -
ডেল্টা ফোর্স
আমাদের বিজয়ী... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন রিক্সাচালকের সামান্য গল্প!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৬

বন্ধু কবির এবং আমি গতকাল সন্ধ্যায় গুলিস্থানে বের হয়েছিলাম, আমি একজন গুলিস্থান এক্সপার্ট! কবির বলল, চলো কিছু কেনাকাটা করি, ক্যাপ গেঞ্জি টাউজার স্পোর্ট ওয়ার, গুলিস্থানে কোন চিপায় দেশি বিদেশী কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানরা ভীরু না

লিখেছেন এসো চিন্তা করি, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৯



মুসলমানরা ভীরু না
এ.কে.এম.রেদওয়ানূল হক (নাসিফ)

কি ভাবছো এতো হে বিশ্ব সংসার , মুসলমানরা
ভুলে গেছে তাদের পুরানো গৌরব;
তাই তো অবিচার , অনাচারে , তিলে তিলে করছো... ...বাকিটুকু পড়ুন

টুুকরো খবর

লিখেছেন বিষাদ সময়, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২

১) ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ দেশটাকে লুইটা, পুইটা খাইয়া গেছে। দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক দেওলিয়া, ফরেন রিজার্ভ তলানিতে। এই অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক করতে অন্ততঃ ৫০ বছর সময় লাগবে।
২) দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘আগ্রহ’ – সৃষ্টির আদি রহস্য

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৫



মানুষের আগ্রহ নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ভাবছি। এর উৎপত্তি কোথায়? দেহের কোন অংশ থেকে আগ্রহের সৃষ্টি? মস্তিষ্ক? মস্তিষ্কের ইলেকট্রনের কম্পনে কি এই আগ্রহ উৎপন্ন হয়? যদি তা-ই হয়ে থাকে, সেই ইলেকট্রনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×