কিছু কথা বলার জন্য এই পোস্ট। বলার প্রয়োজন বোধ করছি। এই ব্লগে আমার বিচরণ দুই বছরেরও বেশি সময়। এইটুকু দাবি করতে পারি যে ব্লগের অনেক ভাল উদ্যোগের সাথে আমার সংম্লিষন্টতা আছে। এমনকি জামাত-শিবির অর্থাৎ ছাগু তাড়ানোর আন্দোলনেও। সুতরাং এই ব্লগকে নিজের বলে দাবী করতেই পারি।
স্বচ্ছ মডারেশন এই ব্লগের একটা পুরানা দাবী। দাবীটি জোড়ালো হয়েছে হাসিবকে ব্যান করা নিয়ে। এছাড়াও পুতুল (শিরোনামহীন), আরিফ জেবতিক, বিমাসহ আরও কয়েকজনকেও জেনারেল করা নিয়ে এই দাবীটি আবার জোরালো হয়ে উঠে। গত কয়েকদিন ধরে আবার এ বিষয়টি নিয়ে কথা উঠলো। এবারের উপলক্ষ্য সম্ভবত আমি। এ কারণেই কিছু কথা বলা প্রয়োজন বলে বোধ করছি।
কখা উঠেছে খারেজি নামের একজন ব্লগারের জেনারেল হওয়া নিয়ে। তিনি অনেকগুলো অভিযোগ করেছেন আমাকে নিয়ে। তিনি তা করতেই পারেন। কিন্তু তার নিজের কর্মকান্ড আড়াল করে নিজে যা করেছেন তা জানতে না দিয়ে সব দোষ দিলেন আমাকে এবং এর সঙ্গে স্বচ্ছ মডারেশনকে জোড়া দিয়ে নতুন করে অনেককে উসকাচ্ছেন। তাতে ব্লগের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই আমার কিছু বলা প্রয়োজন বলে মনে করছি।
১. ঘটনার সূত্রপাত আইএমএফকে না বলুন শিরোনামে আমার একটা পোস্ট নিয়ে। তার আগে বলি আরেকটা কথা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিআইডিএস) একটা কথা চালু আছে। সেটা হলো, জার্নালিস্টিক ভিউ। কোনো অর্থনীতিবিদ যদি মৌলিক অর্থনীতিকে গুরুত্ব না দিয়ে ভাসা ভাসা কোনো গবেষণা করেন বা কিছু লেখেন তাকে তারা জার্নালিস্টিক ভিউ বলে হাসাহাসি করেন।
আমি সাংবাদিক, গবেষক না। আইএমএফ নিয়ে লেখাটা ব্লগের জন্যই লেখা। একটা আবেগপূর্ণ লেখা। কোনো গবেষণা প্রতিবেদন না। সেখানে আমি বলেছিলাম যে কিবরিয়া সাহেব আইএমএফএর ঋণ নেয়নি, কিন্তু সাইফুর রহমান নিয়েছিলেন।
জনাব খারেজি সেখানে প্রশ্ন তুললেন ৯৬ সালের শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে কিরবিয়া সাহেবের পরিবারের সংস্লিষ্টতা নিয়ে। তিনি বলতে চেয়েছেন তাঁর ছেলে রেজা কিররিয়া স্ত্রী রিনা কিবরিয় নিয়ে। এটা অনেক পুরানা ইস্যু। আর আমি যেহেতু ১৯৯৩ সাল থেকে অর্থনীতি বিষয়ে রিপোর্টিং করি সুতরাং আমার মোটামুটি সব জানা আছে। তবে এই পেস্টে প্রাসঙ্গিক ছিল না বলে উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করিনি। এটাই তার রাগ। কেন আমি উত্তর দিলাম না।
পরে দেখলাম এক জায়গায় তিনি বলেছেন, আমি নাকি কিবরিয়া সাহেবকে গ্লোরিফাই করেছি। আমি তখন ইত্তেফাকে। আমার রিপোর্ট তাঁর পক্ষে না যাওয়ায় তিনি নিজে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করেছিলেন। বিবিসির কাদির কল্লোলকেও আমার বিরুদ্ধে বলেছিলেন।অথচ ব্লগে আমার এক লেখা নিয়ে খারেজি আমার সম্বন্ধে সিন্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। তিনি মনে করেছেন স্টিকি পোস্টে উত্তর দিতে আমি বাধ্য। আমি মনে করি তা না। এটা আমার ইচ্ছার বিষয়।
তিনি মনে করেছেন এবং উত্তর দেইনি বলে কিরবিয়া সাহেব এবং আমাকে লক্ষ্য করে আলাদা একটা পোস্টও দিলেন। আমি তাতে কিছু মনে করিনি। কারণ উত্তর না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং সেটা জানান দিয়েছেন। আমার যদি সমালোচনাই সহ্য না হবে তাহলে তো আমি ঐ পোস্টের বিরুদ্ধেই রিপোর্ট করতে পারতাম। সেটা তো করিনি।
তারপর মেঘ লেসবিয়ান বিষয়টি নিয়ে একটা পোস্ট দিলেন। আমি সেখানে একটা মন্তব্য করলাম। অযাচিত ভাবে সেখানে তিনি আমাকে সম্বোধন করলেন প্রতিবেদক বলে। আমি তো এখানে প্রতিবেদক হিসেবে ব্লগিং করি না।
ফলে আমাকে বলতে হলো যে, 'এইখানে আমি একজন ব্লগার। অন্যসবাই যেমন। পার্থক্য খালি নিজের নামে ব্লগিং করি। সুতরাং আমার চাকরির বিষয়টা বা আমার পেশা উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন নাই।'
তারপর তিনি কি করলেন? আবার একটা আলাদা পোস্ট দিলেন আমাকে কটাক্ষ করে। মৃনাল সেনের কোনো এক সাক্ষাৎকার দিয়ে শুরু করে শেষ করলেন আমার ব্লগে ব্যানারে লেখা আমার কথাগুলো দিয়ে। তিনি স্বীকারও করেছেন যে আমাকে উদ্দেশ্য করেই তিনি পোস্টটা দিয়েছেন। আর আমারও মনে করার যথেষ্ট কারণ ছিল যে সেটা ব্যক্তিআক্রমনাত্বক একটা পোম্ট। তাই নিয়ম মেনেই লাল বুতাম চেপে রিপোর্ট করেছি।
সেটা রাত ১০টার পরের ঘটনা। অফিস থেকে আমি বাসায় চলে যাই। পরের দিন সকালে অফিসে এসে দেখি তিনি জেনারেল, তার নাকি তিনটা পোস্ট গায়েব। আর দেখলাম একটা নতুন পোস্ট বিষয় আমি এবং শিরোনাম আলপিন প্রতিবেদক। কেউ যেয়ে ঐ পোস্টটা পড়ে আসতে পারেন। সেটা যদি ব্যক্তি আক্রমনাত্বক পোস্ট না হয় তাহলে কোনটা হবে? তাঁর মূল বক্তব্য হচ্ছে আমি নাকি মডুদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তার পোস্ট মুছেছি।
তারপর তিনি স্বচ্ছ মডারেশনের আওয়াজ দিয়ে আরেকটা পোস্ট দিলেন। সেখানেও মূল লক্ষ্য্ আমি। সেটাও পড়ে আসতে পারেন। সেখানে তার পূর্ব ভুমিকা না জানিয়ে ভাব ধরলেন যে ব্লগে স্বচ্ছ মডারেশন হচ্ছে না। সচ্ছ মডারেশনের আওয়াজ তোলার আগে নিজে স্বচ্ছ কিনা সেটাও দেখা উচিৎ। অনেক ব্লগারকে দেখলাম তারাও খারেজি প্রশ্নে স্বচ্ছ মডারেশনের কথা বলছেন । এবং নানা ধরণের কথাও বলছেন। বিশেষ করে প্রিয় ব্লগার কাঁকনের পোস্ট পড়ে মনে হলো আমার কিছু বলা উচিৎ।
২। কে এই খারেজি। আমি চিনি না। এটা তার নিক। নিকে আমার আপত্তি নেই। ছাগু তাড়াতে আমি সাগর নামে আমারও একটা নিক ছিল । সেই নিকের ঘোষণা আমি প্রকাশ্যে দিয়েছি। এই ব্লগে অনেকেই জানেন আমি কি চাকরি করি। এমনকি আমার ছেলে মেয়ে এবং আমার বউ নিয়েও অনেক কথা বলি আমি ব্লগে।
আমি পত্রিকায় কাজ করি। এইটা আমার চাকরি। যত ছোট চাকরিই হোক না কেন আমার পেশা নিয়ে কটাক্ষ করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি । অথচ দিনের পর দিন খারেজি এই কাজটি করেছেন। অথচ আমি জানি না তিনি কে। বেশ্যার দালাল না মহান গবেষক। সুতরাং আমি চাইলেও কিছু বলতে পারবো না। অথচ আমার ছেলে মেয়ে বা বউ নিয়ে নিয়েও তিনি অনেক কিছু বলতে পারেন কেবল ব্লগ পড়েই।
৩। খারেজির অবদান কি ব্লগে? তিনি মেঘকে বলেছেন স্বল্প বুদ্ধি। মেঘকে আমরা অনেকেই জানি, চিনি। মেঘ নিজের মুল পরিচয় কখনো লুকায়নি। মেঘকে স্বল্পবুদ্ধি বলার অধিকার খারেজিকে কে দিয়েছে।
আকাশ-পাগল নামের একজন ব্লগারকে তিনি যা তা বলেছেন অনেক পোস্টে। আকাশ-পাগলকে আমি চিনি না। কিন্তু আকাশ-পাগল যে বুদ্ধিহীন সে রায় অনেকবার দিয়েছেন খারেজি। আমি যে অজ্ঞ সেকথাও বলেছেন। শুধু আমরা কেন, আমার শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ স্যার অর্থনীতি কম জানে সেটি তিনি বলেছেন একলব্যের এক পোস্ট।
সুতরাং এই ব্লগে বা বাইরের বিশিষ্টজনদের বুদ্ধির অভাব, জ্ঞানের অভাব বলার অধিকার খারেজিকে কে দিয়েছে? আমি নিশ্চিত তার ব্লগ ও করা মন্তব্য মনোযোগ দিয়ে পড়লে আরও কিছু পাওয়া যাবে। এসব কি ব্লগের পরিবেশ নষ্ট হয় না।
তিনি বদলে দাও বদলে যাও নামের একটা পোস্ট দিয়েছেন। চাইলে কেউ পড়তে পারেন। এই ব্লগে এতোটা অরুচিকর পোস্ট সম্ভবত একটাও নাই। একজন সম্পাদকের উপর রাগ থাকতেই পারে। কিন্তু তার স্ত্রীকে নিয়ে যেভাবে লিখেছেন তা চরম ইতরামির পর্যায়ে পড়ে।
সেজন্যই ভয় হয় এই খারেজিকে। ব্লগে আমার পুত্র ও কন্যার ছবি আছে। আমার বউ নিয়েও কথা আছে। সেই কারণেই ব্লগে থাকা নিরাপদ মনে করছি না।
২।আলপিন প্রতিবেদক বিষয়ে আরও কিছু কথা। সেই বিখ্যাত বিড়াল নিয়ে কার্টুনের কথা সবারই মনে আছে। একটা প্রচলিত কৌতুক নিয়ে জামাত-শিবির আর মৌলবাদিদের আন্দোলনের কথা সবাই জানেন। অথচ ওটা ছিল একটা ফান ম্যাগাজিন ও একটা পুরানা কৌতুক। ব্লগেও এ নিয়ে কম লেখালেখি হয়নি। আমার মনে পড়ছে পিয়ালের (নাকি হাসিব?) সেই বিখ্যাত উক্তি। শুয়োরের সাথে সহাবস্থান করা সম্ভব না।
যাই হোক। প্রসঙ্গে আসি। সেই মৌলবাদিদের মতো একই কাজ করলেন খারেজি, রস আলোতে ছাপা হওয়া আমার একটা লেখা নিয়ে তিনি ব্লগে হৈচৈ বাধালেন। সেখানে তত্ত্বের ভুল নিয়ে আবারো তার জ্ঞান বিতরণ শুরু করলেন। ফান লেখা বোঝার মতো জ্ঞানও তার নেই। আবার আইএমএফ নিয়ে লেখায় কেন আমি টেক্সট বুকের উদাহরণ না দিয়ে উইকির উদাহরণ দিলাম সেটা নিয়ে হাসাহাসি করলেন। ব্লগে আমি গবেষণা করতে আসি নাই। এইটা তার বোঝা উচিৎ ছিল। আর সহজবোধ্য বলে উইকির রেফারেন্স দেওয়া পোস্টের সংখ্যা অগুনিত।
৩. এইবার বাঙ্গাল বিষয়ে। মন্দা নিয়ে এক লেখায় তিনি খারাপ ভাবেই প্রতিক্রিয়া জানান। সেখানে আমি নরিয়েল রুবিনি নামের একজন অর্থনীতিবিদের প্রসঙ্গ এনেছিলাম। ঐ লেখা ছিল আসলে একটা সংবাদ পত্র প্রতিবেদন। ফিচার বা কলাম না। এই রুবিনি একজন ইহুদি এবং আইএমএফ-এ কাজ করতেন। বাঙ্গাল বললেন আমি রুবিনর চাটুকারিতা করছি। আমি বলেছিলাম ভাষার ব্যবহার ঠিক না না হলে আমার ব্লগে না আসতে। তারপর তিনিও কিছু কথা বলেছেন। তারপরেও স্বাভাবিক করতে আমি তার ব্লগে গিয়েছি, মন্তব্যও করেছি। কারণ তার লেখার গভীরতা।
খারেজি বললেন বাঙ্গালও নাকি আমার কারণে জেনারেল এবং আমার কারণে মডুরা তার পোস্ট মুছে দিয়েছে। আমি বাঙ্গলকে জিজ্ঞেস করেছি তিনি জেনারেল কিনা। তিনি বলেছেন তিনি জেনারেল না। তার পোস্টে যেয়ে সেটা যে কেউ দেখতে পারেন।
আবার খারেজির একটা পোস্টে দেখলাম বাঙ্গল বলেছেন আমাকে উদ্দেশ্য করে ''আর খুনি লুটেরা ব্যবসায়ীদের কেনা পেপারে দুকলম লিখে এত অহমিকা ভাল না।'' তিনিও আমার চাকরি নিয়ে কটাক্ষ করলেন। সবাই এখন মালিকের চরিত্র দেখে তাহলে চাকরি করতে হবে? আর ব্যবসায়ী মানেই খুনি লুটেরা? তিনি নিজেও তো ড. বারীর সাথে কাজ করেছেন। বারী কি তাহলে? দেখলেন বাঙ্গাল, আপনি ব্লগে এই তথ্যটা দিয়েছিলেন বলে কটাক্ষ করতে পারলাম। আর আপনিও পারলেন। আবারও বলি আমি বেশ্যার দালালি বা চুরি করি না। এক জায়গায় চাকরি করি, বেতন পাই। মাকে দেই, নিজের সংসার চালাই। এটা নিয়ে কথা বলার অধিকার আপনাকে কেউ দেয় নি।
৪. নাটক করে বলছি না যে, বিদায় নিচ্ছি। হাসিব হলে বলতেন খুদা হাপেজ। কিন্তু আপাতত ব্লগ থেকে বিদায়। কখনো ভাল লাগলে আবার হয়তো আসবো। অহমিকর মতো শুনালেও বলি লেখালেখি করার জায়গা আমার জন্য আছে। এবং সেই লেখালেখি আমার কত জ্ঞান সেইটা দেখানোর লেখা না। বরং সেটা আমার পেশা। লিখি বলেই বেতন পাই। সে কারণেই বলেছিলাম যে লেখার জন্য আরও জায়গা আমার আছে। তাতে শ্রদ্ধেয় মঞ্জুরুল ভাই, নুশেরা ও প্রিয় বৃত্তবন্দীসহ আরও অনেকের খারাপ লেগেছে। এই জন্য তাদের কাছে ক্ষমা চাই।
আপাতত ব্লগে থাকতে পারছি না। আমি যে সমাজে চলি, বড় হয়েছি, বাবা মা রেখেছেন এবং আমি আমার ছেলে মেয়েকে রাখার চেষ্টা করি সেই সমাজ এটা না। এক সময় ছাগু তাড়াতাম। এখন দেখি গায়ে পড়ে ঝগড়া করার লোকেরও আগমন ঘটেছে। ব্লগে এরকম দুএকটা চরিত্র থাকলেই যথেষ্ট। সুতরাং এ সহাবস্থানও আমি অস্বীকার করলাম।
সবাইকে শুভেচ্ছা।