somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিডলইস্ট ক্রাইসিসঃ ইরান-সৌদিআরব কাজিয়া

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিডল ইস্ট-এ শেষ কয়দিন নাটকীয় কিছু ঘটনা ঘটছে। ব্যাপার টা এমন, জাতিগত, আধিপত্যগত বিরোধে আরেকটা বড় যুদ্ধ বেধে যাওয়া অসম্ভব কিছু না।
প্রথমে সরকার বিরোধী মদদের অভিযোগে সৌদিআরব এক শিয়া নেতার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করল। প্রতিক্রিয়ায় ইরানে বিক্ষোভ, দুতাবাস পুড়িয়ে দিল জনতা। পালটা প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সাথে সৌদিআরবের কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন। পরের দিন সৌদি প্রভাবে বাহরাইন, আরবআমিরাত একই কাজ করল।

ঘটনা হল, মোটা দাগে, গোটা মিডলইস্টে আজকে যা যুদ্ধ যুদ্ধ উৎসব চলছে, তার পেছনে এই সুন্নি-শিয়া জাতিগত বিরোধ।
মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নি বলয় বা সুন্নি এক্সিস এর অলিখিত সর্দার হল সৌদিআরব। আর শিয়া বলয়ের অলিখিত নেতা ইরান।
কিন্তু এখানে ভারসাম্য এখন পর্যন্ত সুন্নি পন্থীদের পক্ষে। এদের সংখ্যা বেশী, অর্থ বেশী, ক্ষমতা বেশী। মিডলইস্ট আর আফ্রিকা মিলে গোটা ২৫/৩০ টা শক্তি এই বলয় এর অংশ। আবার পেছনের সাপোর্ট বা এদের এলাইনপেন্ট হচ্ছে মেইনস্ট্রিম পশ্চিমাদের সাথে। অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে এরা আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করে।

অপর দিকে শিয়া এক্সিস-এ ইরান ছাড়া বলার মত বড় শক্তি তেমন নাই। আর আছে সিরিয়া, সেখানে পুরা সিস্টেম ভেঙ্গে পড়েছে ৫ বছর যুদ্ধে। সাথে আছে লেবাবন(মজার ব্যাপার, লেবানন খৃস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র)। বাদবাকি অবশ্য শিয়া মুসলিম। আর ইরাক, যা আজও যুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আর এদের পেছনের শক্তি হিসেবে রাশিয়া। ক্ষেত্রবিশেষে চিনেরও সমর্থন পেয়ে এসেছে এরা। ব্যাপার হল, শিয়া সম্প্রদায়ের সাথে রাশিয়ার এমন কোনও ঐতিহাসিক প্রেম পিরিতি নাই, গ্লোবাল রাজনীতিতে শত্রুর শত্রু বন্ধু অটোমেটিক চয়েস তত্ব কাজ করেছে এখানে।

যা হোক, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের আজকেই এই যুদ্ধবিদ্ধস্ত অবস্থার মূল হচ্ছে এই দুই শক্তির দন্দ্ব। দুই পক্ষই চাচ্ছে নিজেদের প্রভাব আরও বিস্তার করতে, জিনিসটা এখন আর কুটনীতি'র মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই, সরাসরি শক্তিপ্রয়োগের পর্যায়ে চলে গেছে। তার ফলাফল হচ্ছে আজকের এই যুদ্ধ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে ভালো? উত্তর কেউই না! সোজা বাংলায়, দুইটাই হারামি! এখন, সৌদি এন্ড কোং-এর সংখ্যা, বিস্তার বেশী বলে এদের কৃত অপরাধের পরিমাণও বেশী দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে, কিন্তু অপর দিকে ইরান ব্লক-ও সাধু না মোটেও।
সৌদি ব্লক যেমন ইয়েমেনে হুতি/হাউতি দের দমনে সেখানে হামলা করে প্রতিদিন মানুষ মারছে, ২০১১ সালে বাহরাইনে অত্যাচারি রাজার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে তা দমনে ট্যাংক, সেনা পাঠিয়ে তা নিষ্ঠুর ভাবে দমন করেছে;
একই ভাবে ইরানও তার মীত্র খুনি রক্তপিপাসু বাশার আল আসাদ-কে ক্রমাগত রক্ষা করেই যাচ্ছে, অবস্থা বেগতিক হওয়ায় ২০১৫-তে রাশিয়া কে ডেকে এনেছে। ব্যাপারটা এমন, পাড়ার মাস্তানের সাথে মারামারি তে শক্তি বৃদ্ধি করতে কিলার হায়ার করে এনেছে- টাইপ।
মোট কথা নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য এমন কিছু নাই যে তারা করেনি। কত মানুষ মারা গেল, কত রক্তপাত হল, এগুলো এদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না, শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের উপর ডমিনেট করতে পারছে কি না, সেটাই মূখ্য।

যা হোক, সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারন আসলে জনাব বারাক হুসেন ওবামা! কিংবা আরও স্পষ্ট করে বললে তার সফট ডিপ্লোমেসি।
আগেই বলেছিলাম, মিডলইস্টের ক্ষমতার ভারসাম্য সুন্নিদের পক্ষে ছিলো(এখনও আছে)। মুসলিম সুন্নি রা ৯০%, শিয়া খুব অল্প। ফলে স্বাভাবক ভাবেই এখানে সুন্নি ডমিনেন্স চলে এসেছে। তার উপর সুন্নিদের এলাইমেন্ট পশ্চিমাদের সাথে হওয়ায় এরা আমেরিকা-ইউরোপকে দিয়ে এতদিন ইরানের উপর নানা ধরনের সামরিক, বানিজ্যিক অর্থনৈতিক অবরোধ করিয়ে এসেছে। ঘটনা হল, জনাব বারাক হুসেন ওবামা'র সফট ডিপ্লোমেসি'র ফলে আমেরিকা একে একে ইরানের উপর থেকে সব স্যাংসন তুলে নিচ্ছে(এই বিষয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। বারাক হুসেন ওবামা আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ৩ টা ক্রাইসিসের তালিকা করলে তার অন্তত দুইটা সমাধান করে ফেলেছে। ইরান আর কিউবা। আরেকটু সমর্থন পেলে ফিলিস্তিন ইস্যুটারও সমাধান করে ফেলতে পারত হয়ত!)। ফলে ইরানের অর্থনীতিও গতি পাচ্ছে। এইখানে হয়েছে সৌদি এন্ড কোং-এর মাথাব্যাথা। প্রতিদ্বন্দী'র এই উত্থান সৌদিআরব কোনোওভাবেই মেনে নিতে পারছে না। অবশ্য তাদের আশংকাও ভুল না। পার্সিয়ানরা(ইরানি) আরবদের চেয়ে অনেক বেশী কাজের এবং সচেতন তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এত শত অবরোধের পরও ইরানের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েনি। বাইরের বিশ্ব থেকে এক রকম বিচ্ছিন্ন রাখার পরও প্রযুক্তিগত ভাবে এদের এগিয়ে যাওয়া ঈর্ষনীয়। এমনকি নিজস্ব এনরিচমেন্টেই ইরানি মিলিটারি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় শক্তি একক ভাবে। অপর দিকে সৌদিআরবের বেলায় আমরা দেখতে পাই এর বিপরীত অবস্থান। সেখানে শ্রমিক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, প্রকৌশলি, সব ধরনের এক্সপার্টিজ তারা বিদেশ থেকে নিয়ে আসে।

কিন্তু প্রভাব প্রতিপত্তি, বৈশ্বিক রাজনীতির সুবিধা, পেট্রোডলার, সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠতা; ইত্যাদি নানা সুবিধায় সৌদি এতদিন ইরানকে টেক্কা দিয়ে একটা কৃত্তিম সুপ্রিমেসি ভোগ করে আসছিলো। কিন্তু আজকে মুসলিম রাষ্ট্রসমুহ এবং আরবে আঞ্চলিক ভাবে সৌদি'র এই সুপ্রিমেসি হুমকি'র মুখে। অবরোধ উঠে যাওয়ার ফলে ইরান যে খুব তারাতারি ক্লিন সুইপ করবে, বলার অপেক্ষা রাখেনা। ইরান ওপেন হয়ে গেলে সামনে হয়ত আমরা দেখতে পাবো, ইরানি বিজ্ঞানীরা নোবেল পাচ্ছে, গণিতবিদরা ফিল্ড মেডাল পাচ্ছে, যা অন্যান্য আরব রাষ্ট্রে অকল্পনীয়।

যে কারনে সৌদি কিছুতেই ইরানের সাথে পশ্চিমের সম্পর্কোন্নয়ন মেনে নিতে পারছে না(জর্জ ডব্লিউ বুশ-এর সময়ে আহমেদিনেজাদ এর ইরানের দা-কুমড়া সম্পর্কে আর যাই হোক, আড়ালে সবসময় মুচকি হেসে গেছেন বাদশ আল সৌদ!)। তারই ফলস্রুতিতে এই সাম্প্রতিক অস্থিরতা। খুব সম্ভবত সামনের দিনগুলোতে সৌদি ব্লকের আরও কয়েকটা রাষ্ট্র একই কাজ করবে। এই কুটনৈতিক যুদ্ধ শেষপর্যন্ত অস্ত্রবাজিতে যে গড়াবেনা, তা কে বলতে পারে!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৪১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×