তার সন্বন্ধে নতুন করে আর কিছুই বলার নাই,শুধু বলা যায় হাজার বছরে তারা কেবল একবারই আসে।কে বলে নজরুল দু:খু মিয়া?
জীবনের স্বাদ প্রতি ফোটায় কানায় কানায় এমন কে আর পেয়েছে?
কি বিচিত্র-ই না ছিল তার জীবন!!
রুটির দোকানে কাজ করেছেন,মসজিদে ইমামতি করিয়েছেন,লেটের দলে গান গেয়েছেন,জাইগির থেকেছেন,যুদ্ধ করেছেন,রাজশক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন,জেল খেটেছেন,রাজনীতি করেছেন,কবিতা লিখেছেন,সঙ্গীত রচনা করেছেন,সিনেমা পরিচালনা করেছেন,অভিনয় করেছেন...আসলে কি করেন নি??সময়ের সবচেয়ে আধুনিক মানুষ।
ভাবতে পারেন,ত্রিশের দশকে-ই তিনি চলচিত্র নির্মাণ করেছেন!,যখন পশ্চিমাদের কাছেও এটা ছিল বিলাসিতার একটা মাধ্যম।
দু:খের বিষয় বিষয় আমরা কেবল তার বিদ্রোহী রুপটাই জানি।অথচ তিনি তো প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি, বিরহের কবি,সাম্যের কবি,তারুন্যের কবি,চির যৌবনের কবি...সর্বোপরী বিদ্রোহী কবি।
এটা ঠিক যে তার বিদ্রোহী রুপটাই আর সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। বস্তুত তার 'বিদ্রোহী' কবিতায় তিনি নিজেই তার পরিচয়টা জানান দিয়েছেন।
" ...............................
....................................
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভুলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
খোদার আসন 'আরশ' ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!
...........................
............................. "
আমরা জানি নজরুলের সাহিত্যজীব কেবল দু'দশকের। শেষের দিকে তিনি কেবল সঙ্গীত সৃষ্টিতে মননিবেশ করেন। তার বিদ্রোহী কিংবা অনিয়ম-উছৃঙ্খল সৌন্দর্য তখন অনেকটাই ম্লান।
হতেপারে এজন্য যে, কবি ছিলেন প্রচন্ড অভিমাণী...
"................
বড় বড় কথা ভাব আসেনাক' মাথায়, বন্ধু, বড় দু:খে !
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে !
.............................. "
[আমার কৈফিয়ৎ]
আসলে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখানোর তার কোন অভিলাস ছিলনা, বরং নজরুল সৃষ্টিকর্ম খালিচোখে বিশ্লেষন কলে দেখা যায়, তা এসেছে কেবলই সময়ের প্রয়জনে, যুগের চাহিদা মেটাতে।
তার সমসাময়িক শুভানুধ্যায়ীদের কাছথেকে জানা যায় তার প্রত্যেকটি সাহিত্যকর্মের সৃষ্টির পেছনে কোন না কোন ঘটনা রয়েছে,
কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে;
সঙ্গীতময় কোন এক বিকেলে হিজ মাষ্টার্স ভয়েস-এর রেকর্ডিং রুমে কে যেন বাজি ধরল; কে তার প্রিয়াকে সবচেয়ে অনন্য সাজে সাজাবে?কবি তখন রচনা করলেন"মোর প্রিয়া হবে এসো রানী,দেব খোপায় তারার ফুল..."
আবার এক বিষন্ন সন্ধায় ঝমঝমে বৃষ্টিতে নিজকক্ষে উদাস কবি জানালার দিকে চেয়ে লিখে ফেললেন"বসিয়া বিজনে কেন একা মনে, পানিয়া ভরণে চলল গোরী...."
আবার বিচ্ছেদের ১৬ বছর পর প্রথম প্রেয়সী নার্গিসের চিঠি লন্ডন থেকে পেয়ে অভিমানী কবি উত্তরদিলেন"যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারনাই, কেন মনে রাখ তারে/ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একে বারে....."
আবার খুবই পরিচিত একটা নজরুলগীতি"আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়/আমার গানের ফুল গো, আমার গানের মালা গো/কুড়িয়ে তুমি নিও..."---এখানে তিনি বেতার বার্তায় ইথারে তার গানের মালা ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।
আবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে বেদনাহত কবি রচনা করেছিলেন 'রবীহারা' কবিতাটি , আর স্বকন্ঠে গেয়েছিলেন 'ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবীরে / জাগায়ো না জাগায়োনা....'
যাই হোক;
কবির সুস্থাবস্থার কিছু ছবি;
ছবি#৩:কিশোর নজরুল
ছবি#৬:হাবিলদার নজরুল;২১ বছর বয়সে
ছবি#৮:যুদ্ধ ফেরৎ নজরুল
ছবি#১০:অবচেতনে হারিয়ে কবি...২৬ বছর বয়স
ছবি#৭:কবি ২৪ বছর বয়সে
ছবি#৯:বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে দলমাদল কামানের পাশে কবি,২৫ বছর বয়সে
ছবি#১৫:শিরস্ত্রাণ পরিহীত নজরুল,কবি একবার তার এক শুভানুধ্যায়ীকে এসব অভিজাত পোশাক পরার সম্বন্ধে বলেছিলেন,'সম্ভ্রান্ত নায় তবে বিভ্রান্ত'
ছবি#১৭:ফেজ পরিহীত কবি
ছবি#১৬:চট্টগ্রামে সীতাকুন্ড পাহাড়ে কবি
ছবি#১৩:চির যৌবনের প্রতীক...
ছবি#২৮:এক বিশেষ ভঙ্গীমায় কবি...
ছবি#২:কবি
ছবি#২৯:সঙ্গীত স্রষ্টা নজরুল
ছবি#৩০:ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি?
ছবি#২৫:নারদের ভূমিকায় নিজের পরিচালিত ধ্রুব চলচিত্রে নজরুল
ছবি#১৪:বংশীবাদনরত কবি
ছবি#১২:কৃষ্ণণগরে কবি(১৯৩৪সাল)
ছবি#১১:কবি৩২ বছর বয়সে
ছবি#৩১:কবি মধ্যবয়সে
ছবি#৩৩:প্রাণবন্ত কবি
ছবি#৪০:
সবার কথা কইলে,এবার নিজের কথা কহ কবি...
কবির পারিবারিক কিছু ছবি:-
ছবি#:২০;কবির কৃষ্ণনগরের বাসভবন 'গ্রেস কটেজ'-এ কবিপরিবার; নজরুলের কোলে শিশু পুত্র বুলবুল,একেবারে বামে বুলবুলের গভর্ণেন্স,সামনে বামে উপবিষ্ট শ্বাশুরি গিরিবালা দেবী,ডানে কবিপত্নী প্রমীলা। উল্লেখ্য, বুলবুল কবির সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ছিল। বুলবুলের অকাল মৃত্যুতে শোকার্ত কবি লিখেছিলেন 'ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে / আমার গানের বুলবুলি....'
ছবি#৩২:কবি পরিবার,কোলে সব্যসাচী ও অনিরুদ্ধ
আরও কিছু ছবি:
ছবি#৩৪:ঢাকায় বনগ্রামের বাসভবনে প্রতিভা বসু (রাণু সোম)-কে গান শেখাচ্ছেন কবি-সাল ১৯২৮ ইং
ছবি#২৭:কলকাতার গ্রামোফোন কম্পানীতে; বাম থেকে বসে,নজরুল,ভগবতী ব্যানার্জি,তুলসী লাহিরী ও রাসবিহারী শীল
ছবি#২৪:অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক সুনীল রায়ের বনগ্রামস্থ বাসভবনে কবি। বাঁ' থেকে; জনাব জামান,টি এইচ চৌধুরী এবং ও ডি গণি; সাল:১৯৩৯ এর জুলাই
ছবি#১৮:তিন বন্ধু:বাম থেকে অধ্যাপক হেমন্ত সরকার,হাবীবুল্লাহ্ বাহার এবং নজরুল
ছবি#৫:স্যার হাসান সোহরাওয়ার্দী(বাঁ' থেকে তৃতীয়),কবি(বাঁ থেকে চতুর্থ) ,ইরশাদ হোসেন(বাঁ থেকে প্রথম) এবং অন্যান্য;সাল-১৯২৫
ছবি#৪:ড.যোগেশ চন্দ্র ঘোষ প্রতিষ্ঠিত আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান সাধনা ঔষধালয়ে সামনের সারিতে ডান থেকে; নজরুল,নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু,মৌলভী আশরাফউদ্দিন চৌধুরী এবং সর্ব বামে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়।
ছবি#২৬:কলকাতার গ্রামোফোন কম্পানীতে।দাঁড়িয়ে বাঁ' দিক থেকে:ধীরেন দাশ,নজরুল,আঙুরবালা,তুলসী লাহিরী,রাসবিহারী শীল। বসে:ভগবতী ব্যানার্জি
ছবি#২১: সিলেটে গুণগ্রহীদের সাথে কবি;সাল-১৯২৮
ছবি#২২: রাজশাহী মুসলিম ক্লাবে কবি। বাম থেকে দাঁড়িয়ে; মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ,শেখ উমেদ আলী,আবুল ফজল শামসুল ইসলাম(নাবালক মিয়া),অগ্গাত একজন,এজাজ উদ্দীন আহমেদ,আব্দুল হাকিম খান চৌধুরী,আজীজুল আলম উকিল,কালু মিয়া,একামউদ্দীন সরকার।
মাঝের সারিতে ;নজরুল।
সামনে উপবিষ্ট বাম থেকে;নবীরউদ্দীন,মুহাম্মদ শারফুদ্দীন নজির, অধ্যাপক শেখ শরফুদ্দীন, বালক আব্দুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন(বিশিষ্ট বিজ্ঞানী),মহসীনউদ্দীন আহমদ, আব্দুল জব্বার(কালু মিয়া) ও আবদুস সামাদ। সাল-১৯২৯
ছবি#২৩:রাজশাহী মুসলিম ছাত্রাবাস(চৌধুরীর দালান)-এ কবি। বাম থেকে দন্ডায়মান:মুহাম্মদ ইয়াসিন,বি.এ.ক্লাশের জনৈক ছাত্র, আব্দুল কাদের, শামসুদ্দোহা,মুহাম্মদ লতিফুর রহমান,অগ্গাত,মিজান আলী চৌধুরী,মুহাম্মদ মমতাজ উদ্দীন,সিরাজুল ইসলাম। সামনে উপবিষ্ট: মোহাম্মদ জালালউদ্দীন, মোহাম্মদ আবুল কাসেম, কবি নজরুল,ফজলুল হক(হেড পন্ডিত,মাদ্রাসা) ও জিয়াদুর রহিম ;সাল-১৯২৯
ছবি#১:কবির কয়েকটি বইয়ের প্রথম প্রচ্ছদ।
উপরে বামথেকে(ক্লকওয়াইজ):অগ্নি-বীণা,বিষের বাঁশী,সর্বহারা,অনুবাদ গ্রন্থ রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ,চক্রবাক,নতুন চাঁদ,যুগবানী এবং দোলনচাঁপা
ছবি#৩৯:কবির হাতের লেখা
আমরা জানি কবি নজরুল আরব্য,পারস্য, রুমানিয়ান, আর্মেনিয়ান...ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির বিচিত্র সব সূর সংযোজন করে বাংলা সঙ্গীতকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন,শুধু তাই নয়, এইসব বিদেশী ভাষার উপর-ও তার যথেষ্ট দখল ছিল।
ছবি#৩৭:কবির স্বহস্তে লেখা;উপরে উর্দু,নীচে হিন্দি
ছবি#৩৮:কবির ইংরেজী লেখা,সাল-৩১শে সেপ্টেম্ব ,১৯৪১
নজরুলের বহুমুখী প্রতিভার আরেকটি দিক হচ্ছে তিনি টুকটাক ছবিও আঁকতেন(পেন্সিল স্কেচ) ,যদিও তা সেভাবে সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নি।
ছবি#৩৫:নজরুলের পান্ডুলিপিতে উপরে লেখা,নীচে মার্জিনে তার আঁকা পেন্সিল স্কেচ
ছবি#৩৬:লেখার নীচের দিকে নজরুলের আঁকা ছবি
আর একটা ব্যাপার,যে এখানে নজরুলের বার্ধক্যের আরও অনেক ছবি ছিল, কিন্তু আমি ইচ্ছা করেই এগুলো দিই নি। কেননা নজরুল তো তারুণ্যের প্রতীক, চির যৌবনের প্রতীক,সৃষ্টি সুখের উল্লাসে উদ্ভাসিত,
অথচ তার অসুস্থ সময়ের ছবি, তার অসচেতন কালের প্রতিকৃতই, যা কখনঐ নজরুল হতে পারে না, আসল নজরুল কে প্রকাশ করে না,সেই সব ছবি প্রকাশ করা কি কবির সাথে প্রতারণার শামিল নয়? তাছাড়া এ'সব ছবি যত্রতত্র প্রকাশ করলে শিশুদের মনে নজরুল সম্পর্কে বিরূপ ধারণা জন্মাতে পারে।
ছবিসূত্র:নজরুল ইন্সটিটিউট