ইসলামী বিশ্বাসের মূল উৎস হচ্ছে, আল-কোরাআন ।
মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে,এটা আল্লাহ পক্ষ থেকে এসেছে এবং তা গোটা মানব জাতির জন্য হেদায়েত । কোরআন যেহেতু সকল যুগের জন্য,তাই তা সকল যুগের জন্যই সামঞ্জস্যপণ্য।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে,কোরআন কিসে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কোরআনের ঐশী উৎসের আলোকে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নিরীখে মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাসের বস্তুনিষ্ঠ কিছু ব্যাখ্যা দিতে চাই।
কোরআন তার যে কোন একটি মাত্র সূরার মত অনুরূপ আরেকটি সূরা তৈরির চ্যালেঞ্জ দিয়েছে।কোরআনে বহুবার একই ধরণের চ্যালেঞ্জের পুনরাবৃত্তিও হয়েছে।বর্তমান কাল পর্যন্ত কোরআনের সূরার মত সৌন্দর্য,অলংকার,গভীরতা ও অর্থের দিক থেকে সমমানের আরেকটি সূরা চ্যালেঞ্জ অপূরণকৃত রয়ে গেছে।বর্তমান যুগের কোন লোক পৃথিবী চেপ্টা এ মর্মে সর্বোত্তম কাব্যিক ভঙ্গীতে কোন ধর্মীয় পুস্তকের বক্তব্যকে মেনে নেবে না। কেননা ,আমরা যে যুগে বাস করছি ,সে যুগে মানবিক কারন , যুক্তি ও বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দেয়া হয় । কোরআনের অতি চমকপ্রদ ও সুন্দর ভাষার জন্য অনেকেই একে ঐশী গ্রন্থ হিসাবে মেনে নিতে চাইবে না । কোন ঐশী গ্রন্থের দাবীদার কে অবশ্যই যুক্তি ও কারণের শক্তির দিক থেকে ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে ।
প্রখ্যাত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনেষ্টাইন বলেছেনঃ বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ । আসুন আমরা কোরআন নিয়ে গবেষনা চালাই যে,তা বজ্ঞানের সাথে সামজ্ঞস্যপূর্ন না অসামজ্ঞস্যপূন্য ।কোরআন কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয় , বরং নিদর্শন গ্রন্থ । এতে ৬ হাজার নিদর্শন (আয়াত ) আছে । এক হাজারেরও বেশী আয়াত বিজ্ঞানের মূল বিষয় বসতু নিয়ে আলোচনা করেছে ।
আমরা সকলে জানি যে, বিজ্ঞান অনেক সময় সিদ্বান্ত পরিবর্তন করে । এই পুস্তিকায় আমি কেবল বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্য (Fact )নিয়ে আলোচনা করবো , কল্পনা বা ধারনার উপর নির্ভরশীল তত্ত্ব নয় , যা প্রমানিত হয়নি ।
বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে জ্যোতিবিদের প্রদত্ত ব্যাখ্যা ব্যাপকহারে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে নভোচারী ও জ্যোতিবিদদের সংগৃহীত ও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষামূলক উপাত্ত দ্বারাও তা সমর্থিত হয়েছে । মহা বিস্ফোরণ তত্ত অনুযায়ী মহাবিশ্ব ছিল প্রথমে একটি বিশাল নীহারিকা ।পরে ২য় পর্যায়ে তাতে এক বিরাট বিস্ফোরণ ঘটে । ফলে ছায়া পথ তৈরী হয় । এগুলো পরে তারকা , গ্রহ , সূর্য ও চন্দ্র ইত্যাদিতে রুপান্তরিত হয় ।বিশ্বের সূচনা বিষ্ময়কর এবং দৈবক্রমে তা ঘটার সম্ভাবনা শূন্য পর্যায়ে।
পবিত্র কোরআন মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াতে বলেছে ,
কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মূখ বন্ধ ছিল , তারপর আমি ঊভয়কে খুলে দিলাম।” - সূরা আম্বিয়া-৩০
চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আলো
আগের সভ্যতা গুলোর ধারণা ছিল,চাঁদের নিজস্ব আলো আছে।কিন্তু বিজ্ঞান বর্তমানে আমাদেরকে বলে যে,চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আলো।এ সত্যটি কোরআন আমাদেরকে আজ থেকে ১৪শ বছর আগে বলেছে।আল্লাহ বলেনঃ
কল্যাণময় তিনি ,যিনি নভোমণ্ডলকে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।”- সূরা ফুরকান-৬১
তিনিই সত্তা যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জল এবং চাঁদকে স্নিন্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।”সুরা ইউনুস-৫
তোমরা কি লক্ষ্য করনা যে,আল্লাহ কিভাবে সাত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন,সেখানে চাঁদকে রেখেছেন স্নিন্ধ আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে ?”- সুরা নূহ-১৫-১৬
মহান কোরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান চাঁদ ও সূর্যের আলোর ব্যবধানের ব্যাপারে অভিন্ন কথা বলে।
দীর্ঘদিন ব্যাপী ইউরোপীয় দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করত যে,পৃথীবি মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং সূর্য সহ অন্যান্য জিনিসগুলো একে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরে।এ ভূকেন্দ্রিক ধারণা,পাশ্চাত্যে খৃষ্টপৃর্ব ২য় শতাব্দীতে টলেমীর যুগ থেকে বিদ্যামান ছিল।১৫১২ খৃঃ নিকোলাস কোপারনিকাস গ্রহের গতি আছে মর্মে- সূর্যকেন্দ্রিক তত্ব দেন।এই তত্বে বলা হয়,সৌরজগতের কেন্দবিন্দু- সূর্য গতিহীন।কিন্তু অন্যান্য গ্রহগুলো একে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরে।
১৬০৯ খৃঃ জার্মান বিজ্ঞানী ইউহান্নাস কেপলার ‘Astronomia Nova’নামক একটি বই প্রকাশ করেন।তিনি তাতে মত প্রকাশ করেন যে, গ্রহগুলো শুধুমাত্র সূর্যের চারদিকে ডিম্বাকৃতির কক্ষপথেই চলে না,বরং সেগুলো নিজ নিজ কক্ষপথে অনিয়মিত গতিতে আবর্তিত হয়।এ জ্ঞানের আলোকে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের পক্ষে সৌরজগতের বহু বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হয়েছে,যার মধ্যে দিন রাতের বিষয়টি অন্যতম।
এসকল আবিষ্কারের পর ধারনা করা হয় যে, সূর্য স্থিতিশীল যা পৃথিবীর মত নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে না।
আমরা এখন কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি ব্যাখ্যা করবো।আল্লাহ বলেনঃ
তিনি সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং চাঁদ- সূর্য। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।”(সূরা আম্বিয়া -৩৩ )
বৃষ্টির কাছে আসি
১৫৮০ খৃঃ বর্ণার্ড পলিসি সর্বপ্রথম বর্তমান যুগের পানি চক্র সম্পর্কে আলোচনা করেন।তিনি সাগর থেকে বাষ্পাকারে পানির উড়ে যাওয়া এবং পরে ঠান্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হওয়ার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন।মেঘমালা সাগর থেকে দূরবর্তী ভূখন্ডের উপর ঘনীভূত হয়ে পরে বৃষ্টি আকারে নীচে পতিত হয়।বৃষ্টির পানি খাল-বিল ও নদী-নালায় জড় হয়ে অব্যাহত নিয়মে সাগরে প্রবাহিত হয়।খৃষ্টপূর্ব ৭ শতাব্দী আগে,মিলেটাসের থেলসের মতে সাগরের উপরিভাগের ছিঁটানো পানি কণাকে ধারণকারী বাতাস, ভূখন্ডে তা বৃষ্টি আকারে ছড়িয়ে দেয়।
আগের যুগের লোকেরা ভূগর্ভস্থ পানির উৎস সম্পর্কে জানতনা।তারা ভাবত যে,সাগরের পানি দমকা বাতাসের মাধ্যমে সজোরে ভূখন্ডে এসে পতিত হয়।তারা আরও বিশ্বাস করত যে,গোপন পথে কিংবা গভীর জলরাশি থেকে পানি পুনরায় ফিরে আসে যা সাগরের সাথে জড়িত।প্লেটোর যুগ থেকে এটাকে ‘তারতারুস’ বলা হত।এমন কি ১৮শ শতাব্দীর বিখ্যাত চিন্তাবিদ ডেস কার্টেজও এমত পোষণ করতেন।১৯শতকে এরিষ্টেটলের তত্ব সর্বত্র বিদ্যমান ছিল।ঐ তত্বে বলা হয় যে, পাহাড়ের ঠান্ডা গভীর গুহায় পানি ঘনীভূত হয় এবং মাটির নীচ দিয়ে প্রবাহিত হ্রদ ঝর্ণাগুলোকে পানি সরবরাহ করে।বর্তমান যুগে আমরা জানতে পেরেছি যে, বৃষ্টির পানি মাটির ফাটল দিয়ে ভেতরে চুইয়ে পড়ার কারণে ঐ পানি পাওয়া যায়।
একথাই কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে এভাবে বলা হয়েছেঃ
তুমি কি দেখনি যে,আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন,এর দ্বারা বিভিন্ন রংয়ের ফসল উৎপন্ন করেন?- সূরা যোমার -২১
তিনি আরো বলেনঃ
তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং মৃত্যুর পর ভূমির পূনরুজ্জীবন করেন।নিশ্চয়ই এতে, বুদ্ধিমান লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলী। ”( সূরা আর রুম -২৪ )
আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত , তারপর তাকে যমীনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম। -সূরা আল মুমিনূন -১৮
১৪০০ বছর আগের অন্য কোর বই পানি চক্রের এরূপ নিখুঁত বর্ণনা দেয়নি।
আল্লাহ বলেনঃ
তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চারিত করেন,তারপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন,অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন,তারপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলা বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা,তা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন।তার বিদ্যুত ঝলক দৃষ্টি শক্তিকে যেন বিলীন করে দিতে চায়।” সূরা আননূর -৪৩
আল্লাহ আরো বলেনঃ
তিনি আল্লাহ ,যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে।অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে স্তরে স্তরে রাখেন।এরপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারা।তিনি বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান,তখন তারা আনন্দিত হয়।”- সূরা আর রুম-৪৮
পানি বিজ্ঞানের আধুনিক উপায় এই বিষয়ে কোরআনের বর্ণনার সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ্য।কোরআন মজীদের নিম্নোক্ত সূরা সমূহেও পানি চক্র সম্পর্কে উল্লেখ আছে।
সূরা আরাফ -৫৭; সূরা রাদ -১৭; সূরা ফোরকান -৪৮-৪৯; সূরা ফাতির -৯; সূরা ইয়াসিন -৩; সূরা জাসিয়া-৫; সূরা আল ক্কাক -৯-১১; সূরা ওয়াকেয়া- ৬৮-৭০; এবং সূরা আল মূলক -৩০।
বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষনা করে প্রণীদের কথা বের করল তা হল এই যে,
প্রত্যেক প্রনীরা তাদের আত্মীয় গোষ্টি নিয়ে বসবাস করে। কিন্তু একথা বিজ্ঞানিরা বলছে আজ।
১৪০০ বছর আগে রাসুল সাঃ মাধ্যমে, আল্লাহ বলেনঃ
আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখী দু’ ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি শ্রেণী।সুরা আনআম ৩৭
সংগ্রহ) চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৩৬