দেশ স্বাধীন(১৯৭১) যখন হয়েছিল তখন আমার বাবার বয়স মাত্র ১৫ বছর।যুদ্ধের কাহিনী আমার বাবার কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি তার থেকে বেশি ভাল করে শুনেছি আমার দাদার কাছ থেকে।সে অনেক কথা, তাই অনেক কথার মাঝে একটি উল্লেখযোগ্য কথাই বলি।
আমাদের গ্রামের বাড়ির ঠিক পাশের গ্রামের একজন মুক্তিযোদ্ধার কথা। যখন পাকিস্তানি সৈনিক গ্রামে প্রবেশ করত তখন গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ বাড়ি থেকে পালাত এবং দুরে কোন মাঠের মাঝে/পুকুরের ভেতরে লুকিয়ে থাকত। এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধাটি খালি বাড়িতে গিয়ে টাকা পয়সা, মুল্যবাণ সব জিনিস পত্র নিজের বাড়িতে নিয়ে তুলত।এভাবে সে অনেক টাকার মালিক হয়ে যায়। যুদ্ধ চলতে চলতে এক সময় সে সাত-আট দিনের জন্য কোথায় যেন গিয়েছিল। পরে ফিরে এসে বলেছিল সে নাকি যুদ্ধে গিয়েছিল। আর ঐ সাত দিনের মধ্যেই দেশ স্বাধীন হয়ে যায়।উল্লেখ্য যে তার বাবা ছিলেন একজন খোদ রাজাকার, যাকে যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে গ্রামের রাস্তার পাশে মৃত পাওয়া যায়।তবে সম্ভবত হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে কারন তার শারীরিক অবস্থা ভাল ছিলনা তাছাড়া তার শরারের কোথাও কোন গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যাইহোক, স্বাধীনের পরে ঐ লোকটি কিভাবে কিভাবে যেন মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পেয়ে যায়।কিন্তু সবাই জানে সে রাজাকার না মুক্তিযোদ্ধা।
আজ তার এই সার্টিফিকেট এর কারনে সে আজও সরকারি একটি চাকরি করে।চার ছেলে-মেয়ে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে, কেউ এখনও পড়ছে। হয়ত তারাও বিসিএস ক্যাডার হবে আশারাখি। সে ব্যাক্তি এখন গ্রামে গন্যমান্য লোক। গ্রামে যে কোন অনুষ্ঠান হলে তাকে বক্তৃতা দিতে বলা হয় এবং তার হুকুম অনুযায়ী তার নামের আগে মুক্তিযোদ্ধা যোগ হয়।