একদিন বন্ধের দিন
প্রচন্ড বৃষ্টি
মতিঝিল থেকে ফিরছিলাম
সাভারের বাসায়।
.
বিআরটিসি'র ডাবলডেকার বাসে
দোতলার একটা জানালায় কাঁচ ছিল না।
যাত্রী ও কম ছিল
ওপরে ভেজা সিটে বসতে অনীহায়
নীচতলায় অনেক গাদাগাদি। তাই দেখে
দোতলায় ভাঙ্গা জানালা দিয়ে বৃষ্টি
দেখে দেখে ভিজে চলেছিলাম।
বৃষ্টি দেখছিলাম
আর অনুভব করছিলাম বিষন্নতা।
.
সে আমার থেকে বছর দশের ছোট হবে
পেটা শরীর আর চোখ দুটি নজর কাড়ে
ঘষা কাচের মাঝে সাপের শীতল দৃষ্টি।
এত জায়গা থাকতে আমার সাথের সিটেই বসে স্বগতোক্তি
' কথা বলা ছাড়া জার্ণি বোরিং লাগে
তাই পাশেই বসলাম।'
.
ঘুরে ওর দিকে তাকাই এক পলক
চোখ সরিয়ে বাইরে বৃষ্টিতে চোখ ধুয়ে নিয়ে বলি
- আমাকে বেশ আলাপী লোক বলে মনে হল আপনার?
নিরবে হেসে সাদা রুমাল দিয়ে
মাথা আর মুখ মুছে সে.. উত্তর দেয় না।
হয়ত হাসিতে-ই উত্তর ছিল
আমার দেখার গরজ ছিল না
তাই নিরব থাকার চেষ্টা করি।
ফার্মগেট পার হলেও আর কেউ ওপরে এলো না
এমন ঘন ঘোর বরষায় বৃষ্টির ছাটে ছাটে
থাকে ভেজবার ব্যকুলতা!
কিন্তু বেশীরভাগই ঘরকুনো মানুষ
তাই নির্জন নিশ্চুপ চারিধার ।
.
সিগ্রেট ধরিয়ে এক মুখ নিকোটিন বাতাসে ছড়ায়, আর
হেসে বলে ' মাফ করবেন, পারছিলাম না থাকতে'
হাসি সংক্রামক
আমাকেও আক্রমন করে।
.
আসাদ গেট আসতেই টুকটাক অনেক কথা
এক পর্যায়ে সে বলে আমার এক প্রশ্নের উত্তরে,
' আমি পেশাদার খুনী.. এক পতিতার ছেলে।'
আজ স্পষ্ট মনে নেই
শুনে পলকের তরে থমকে গিয়েছিলাম কি না?
ওর পলকহীন সাপের চোখে ঐ মুহুর্তে
আমি পলক পড়তে দেখলাম
নিষ্প্রাণ ঘষা কাঁচ ভেদ করে
প্রাণের উন্মেষ অনুভব করলাম!
.
' আমার মাকে তার এক প্রেমিক
গ্রাম থেকে এনে পাড়ায় বিক্রী করে দিয়েছিল
আপনাদের মত কোনো এক ভদ্রলোক আমার বাবা!
পলাতক চাঁদের মত
অনুভবে আছে কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে!
হয়তো অনেকেই আমার বাবা।'
.
' মাকে এক মাতাল খদ্দের ক্ষুর দিয়ে
গলা কেটে মারল যেদিন
আমি তখন কতটুকু আর
সব স্পষ্ট মনে নেই।
তবে এরপর বড় হবার জন্য
আমাকে যা যা করতে হয়েছে
সইতে হয়েছে.. যাক সে সব কথা।
প্রথমে পাড়ার প্রতিবাদী টোকাই,
সময়ের সাথে সাথে বড় ভাইদের
নজরে পড়ে ক্ষুদে মাস্তান,
এরপর ভাইয়ের ডান-বাম উভয় হাত
ভাইকে সিঁড়ি বানিয়ে আরো উপরে উঠবার চেষ্টা...
সফল হল.. ব্যর্থতা এলো শিক্ষার অভাবে কেবল।
তবে জীবন জন্ম থেকে যা শিখালো
তা ও একেবারে কম ছিল না।
.
এক 'মহামান্যের' একটা কাজ করতে গিয়েই
প্রথম রক্তের স্বাদ পেলাম
বাঘ হলাম!
আর একবার বাঘ হলে
কখনো আর শিয়ালের জীবনযাপন করা যায় না!
তাই বাঘ-ই রইলাম
টাকার বিনিময়ে শিকার করতে লাগলাম।
.
আমার অতীত জুড়ে অন্ধকার
তাই চাইলেও আলোয় যেতে পারিনি আমি!
কখনো যে আলো হতে চায়নি মন
তা বলব না আমি,
কিন্তু জন্মই আজন্ম পাপ যার
আপনাদের সিভিল সোসাইটি
তাকে বাঁকা চোখে দেখবেই!
আমাকে আপনাদের কবিরা বলেন
'অন্ধকারের নারীর সন্তান!'
আরে! অন্ধকারে নারীকে টেনে নিয়ে যান
আপনাদের ভেতরটা-ই তো
নিকশ কালো!
পুরুষের গোপনাঙ্গের ঘন লোমরাজির মত কালো!
আর আমাকেই পতিতার অন্ধকার কক্ষে
জন্ম নেয়া এক কুলাংগার বলেন?'
.
আমি কোনো উত্তর দেই নাই তার কথার
বিবশ হয়ে ভাবছিলাম।
সে ও চুপ চাপ.. সিগ্রেট নি:শব্দে জ্বলছে
পুড়ছে.. আমাদের দু'জনের হৃদয়ও।
আমি বিশমাইল গেইটে নেমে যাচ্ছি
ওপর থেকে তার পলকহীন ঘষা কাঁচের চোখে তাকিয়ে
আমাকে বললে, ' এই যে মিস্টার
তোমার নামটা জানা হল না?'
আমাকে অবাক হতে দেখে হাসে সে
' তুমি করে বলছি বলে অবাক হচ্ছ বেশ!
যে কথা কখনো কাউকে বলিনি
আজ বলছি তোমায় শোনো-
তোমরা-ই কুলাংগার অন্ধকার
তোমরাই মাগি বেশ্যা পতিতা
পতিত সময়ের নরকের কীট..
এগুলো-ই বলতে না আমার মাকে?
যা যা বলতে তাকে
আজ সেগুলি-ই সব তোমাদের ফিরিয়ে দিলাম।।'
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:১৬