somewhere in... blog

মহান আল্লাহর সৃষ্ট মানব হিসাবে আত্মপলব্দি। লেখাটি সকল ধর্মাবলম্বী এবং ধর্মে অবিশ্বাসিদের জন্যও উন্মোক্ত

২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১ম অধ্যায়ঃ সকল মানবের আত্মপলব্দি জাগরণে জীবন্ত মুজিযা আল কোরআনের মোহিনী শক্তি

বিসমিল্লাহহির রাহমানির রাহিম । শুরু করছি পরম করুনাময় আল্লাহর নামে ।

প্রথমেই শোকর গুজার করছি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে তাঁর নিকট গ্রহণযোগ্য পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম ধর্মের অনুসারী করার জন্য । অন্য ধর্মালম্বী, অধর্মী ,ধর্মে অবিশ্বাসী সকলকে এই পোষ্টে সুস্বাগতম ।

ইসলাম সার্বজনীন ধর্ম। ইসলামে সকলেই সামিল হতে পারেন। ইসলাম শুধুমাত্র মক্কা মদিনা বা আরব দেশ ও জাতির জন্য নয় বরং ইসলাম বিশ্বের সকল বর্ণ,গোত্র, জাতি, ধনী-গরিব, সাদা-কালো ও আরব-আনারব সকল মানুষের জন্যই প্রেরিত আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। ইসলাম আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম, যার অনুসারী সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ। বিশ্বে ৫০টিরও বেশী দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমষ্টিই মুসলমান ।

ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কুরআন। আল্লাহ বলেন কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকেদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে……। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)


মহাবিজ্ঞ মহিমান্বিত খোদার প্রসংসা বর্ণনাতীত
যার বাণীর মাধ্যমে আমরা পাই তাঁর দিশা ।
যে আলো আমরা এই কুরআন থেকে পাই
হাজার সম্মিলিত সূর্যের কাছেও সে আলো নাই ।

সবচাইতে সোজা রাস্তা এবং উত্তম উপায় যা নিশ্চয়তার আলোক রাশি দ্বারা উদ্ভাসিত এবং আমাদের আধ্যাত্মিক কল্যাণ ও জ্ঞান বুদ্ধির উন্নতির জন্য যোগ্যতম পথপ্রদর্শক তা হচ্ছে কুরআন কারীম। এই কিতাব পৃথিবীর যাবতীয় বিতর্ক ও মতানৈক্যের মীমাংসার দায়িত্বভার নিয়ে এসেছে, এর আয়াতে আয়াতে. শব্দে শব্দে হাজারো ধরনের জ্ঞানের ধারা প্রবাহ মিশে আছে এবং যার মধ্যে প্রচুর জীবনদায়ি পানি বা আবে হায়াত ভরপুর হয়ে আছে এবং যার অভ্যন্তরে বিপুল পরিমাণে বিরল ও অমূল্য মণিমুক্তা লুকায়িত রয়েছে, যা প্রতিদিনই প্রদর্শিত হয়ে চলেছে, যার সাহায্যে আমরা সত্য মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারি এই সেই উজ্জ্বল প্রদীপ যা আমাদেরকে সত্যের পথ প্রদর্শন করে।

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মুল বিষয যথা কলেমা(সাক্ষ ও বিশ্বাস) , নামাজ , রোজা, হজ্জ ও যাকাত ( সামর্থবানদের জন্য ) প্রভৃতি যথাযথভাবে প্রতিপালনের সাথে সাথে যত বেশী পারা যায় কুরআন তেলাওয়াত,কুরআনের বাণী অনুধাবন, নীজ জীবনাচারে তার প্রয়োগ, আল্লাহকে স্মরণ ও দুরুদ পাঠ করে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করা যায় তা ততই মানব জীবনের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে ।


কুরআন এক জীবন্ত মুজিযা,সম্মোহনী শক্তির উৎস,কুরআনে এমন কাহিনী আছে যা রূপকথাকেও হার মানায়, এমনো ছবি আছে যা আজ পর্যন্ত কোন শিল্পীই আঁকতে পারেননি, এমন সুরের মুর্ছনা ও ব্যথার কাব্যিক ছন্দময় রাগিণী আছে যা সমস্ত সুরের জগতকে অচ্ছন্ন করে রাখে।কুরআনকে নিবিষ্ট মনে সে রকম অনুসন্ধিতসু মনোভাব নিয়ে পাঠ করলে আমাদেরকে দিবে এক নতুন গিগন্তের পথ-নির্দেশনা। আমরা হারিয়ে যাব কুরআনের অসীমমতায় অতল গহীনে। কোন শক্তিই আমাদেরকে ফেরাতে পারবেনা সে গভীর মায়াপুরী হতে ।
শুধুই কি সহজ সরল শব্দে ভাব প্রকাশ ,তথ্য আর নিগুঢ় তত্বকথা ,শুদ্ধ কল্যানকামী জীবনাচারের কথা তাতো নয়, এর রচনাশৈলীতেও রয়েছে অপুর্ব বিজ্ঞামনস্ককতা। আমরা পন্ডিতের দাবীদার অনেকেই একটা কি দুটো ভাল অর্ধবোধক বাক্য লিখতে গিয়ে কতবারই যে এডিট করি, সংশোধন করি তা কি আর বলতে! আর কোন রকম এডিট আর পুণ:সংশোধন না করে মহর্তেই কি সুন্দর রচনা তিনি আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন তা ভাবলেও বিস্ময়াবিভুত হতে হয় ।

উদাহরণ হিসাবে পবিত্র কুরআনে থাকা সূরা আল কাওসারের কথাই ধরা যাক, এর সর্বমোট শব্দ হল ১০ টি। এই সূরার ১ম আয়াতে মোট অক্ষর হল ১০ টি। (একই অক্ষর একের অধিকবার থাকলে তাকে ১ বার ধরতে হবে), একইভাবে এই সূরার ২য় আয়াতেও মোট অক্ষর হল ১০ টি। এই সূরার ৩য় আয়াতেও মোট অক্ষর হল ১০ টি। এই সূরার প্রতিটি আয়াতই শেষ হয়েছে আরবি ( ر র) অক্ষরটি দ্বারা। আর ( ر র) হল আরবি বর্নমালার ১০ম বর্ন। এবং সম্পূর্ণ কুরআনে সর্বমোট ১০ টি সুরা শেষ হয়েছে (ر র) অক্ষর দিয়ে। ( সূরা নং ৫, ২২, ৩১, ৪২, ৫৪, ৬০, ৯৭, ১০০, ১০৩, ১০৮), এই সূরায় সব থেকে বেশিবার ব্যাবহৃত হয়েছে ( ا আলিফ)অক্ষরটি। আর আলিফ অক্ষরটি এই সূরায় ব্যবহৃত হয়েছে সর্বমোট ১০ বার। সর্বমোট ১০ টি অক্ষর এই সূরায় ১ বার করে ব্যাবহৃত হয়েছে। এই সূরার ১ম শব্দটি হল (ইন্না) আর পবিত্র কুরআনে সর্বপ্রথম যে আয়াতে ইন্না শব্দ দিয়ে শুরু হয়েছে সে আয়াতের মোট শব্দ হল ১০ টি। এমনতর ১০ সংখ্যাবিশিষ্ট একটি অধ্যায় তথা বড় সুরা রচনা সেযে কতবড় ও কঠিন প্রয়াস তা ভাবতে গেলেও বিস্ময়াবিভুত হতে হয় । একমাত্র অতি বিজ্ঞ ও সর্ব শক্তিমান আল্লাহ ছাড়া কোন রকম কাটা চিড়া যোগ বিয়োগ আর এডিট না করে গড় গড়িয়ে একবারের চেষ্টায় মুখে মুখে মহুর্তের মধ্যেই এমন রচনা কোন মানবের পক্ষে একেবারেই অসসম্ভ ব্যপার । এ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন,
قُلۡ لَّئِنِ اجۡتَمَعَتِ الۡاِنۡسُ وَ الۡجِنُّ عَلٰۤی اَنۡ یَّاۡتُوۡا بِمِثۡلِ هٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لَا یَاۡتُوۡنَ بِمِثۡلِهٖ وَ لَوۡ کَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ
বল, ‘যদি মানুষ ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’( আল ইসরা আয়াত ৮৮)।
তারপর আল্লাহ এই চ্যালেঞ্জটি সমগ্র কুরআন থেকে কমিয়ে দিয়ে বলেন
اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىهُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِعَشۡرِ سُوَرٍ مِّثۡلِهٖ مُفۡتَرَیٰتٍ وَّ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ
তারা নাকি বলে ‘সে (অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.) ওটা রচনা করেছে? বল,তাহলে তোমরা এর মত দশটি সূরাহ রচনা করে আন, আর (এ কাজে সাহায্য করার জন্য) আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাকে ডাকতে পার ডেকে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়েই থাক‌‘ ( সুরা হুদ আয়াত ১৩)।
তারপর তাদের প্রতি চ্যল্যেঞ্জকে আরো সহজ করে দিয়ে বলেন,
اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىهُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّثۡلِهٖ وَ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ
নাকি তারা বলে, ‘সে তা বানিয়েছে’? বল, ‘তবে তোমরা তার মত একটি সূরা (বানিয়ে) নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’( সুরা ইউনুছ , আয়াত ৩৮)
কিন্তু কাফের-মুশরিকগণ তাও আনতে সক্ষম হয়নি। আর তারা সেটা আনতে পারবেও না[ইবন কাসীর]। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন,
فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا وَ لَنۡ تَفۡعَلُوۡا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِیۡ وَقُوۡدُهَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ ۚۖ اُعِدَّتۡ لِلۡکٰفِرِیۡنَ
যদি তোমরা না পার এবং কক্ষনো পারবেও না, তাহলে সেই আগুনকে ভয় কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যা প্রস্তুত রয়েছে কাফেরদের জন্য(সুরা আল বাকারা আয়াত ২৪)। [তাইসিরুল বায়ান]

এ চ্যালেঞ্জ শুধু কুরআনের ভাষাশৈলীর উপর করা হয়নি। সাধারণভাবে লোকেরা এ চ্যালেঞ্জটিকে নিছক কুরআনের ভাষাশৈলী অলংকার ও সাহিত্য সুষমার দিক দিয়ে ছিল বলে মনে করে। কুরআন তার অনন্য ও অতুলনীয় হবার দাবীর ভিত্তি নিছক নিজের শাব্দিক সৌন্দর্য সুষমার ওপর প্রতিষ্ঠিত করেনি। নিঃসন্দেহে ভাষাশৈলীর দিক দিয়েও কুরআন নজিরবিহীন। কিন্তু মূলত যে জিনিসটির ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, কোন মানবিক মেধা ও প্রতিভা এহেন কিতাব রচনা করতে পারে না, সেটি হচ্ছে তার বিষয়বস্তু, অলংকারিত ও শিক্ষা।
বস্তুতই কুরাআনের মত এমনভাবে কোন লেখাই কোন মানবের পক্ষে কোন কালেই কোন ভাবেই লেখা সম্ভব নয় । আসুন সকলে এখানে এই সুযোগে অতি বরকতময় ও বহু ইহলৌকিক, পারলৌকিক মহিমান্বিত সুরা কাওছার তেলাওয়াত করে নিই একবার-

اِنَّاۤ اَعۡطَیۡنٰکَ الۡکَوۡثَرَ। ইন্না আতাইনা কাল কাউছার । অর্থ- নিশ্চয় আমি তোমাকে আল-কাউসার দান করেছি
فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ ফাসাল্লে লে রাব্বিকা ওয়ানহার।অর্থ-সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় কর ও কুরবানী কর
اِنَّ شَانِئَکَ هُوَ الۡاَبۡتَرُ ইন্না শানিয়াকা হুয়াল আবতার । অর্থ- নিশ্চয়ই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীইতো নিবংশ।

এই আয়াতের অনেক মর্তবা ও শানেনযুল রয়েছে । আগ্রহী পাঠকগন কুরআনের যেকোন ভাল তাফসির গ্রন্থ পাঠে তা বিশদভাবে জেনে নিতে পারবেন ।

আল কুরআন স্বীয় বৈশিষ্টের প্রভাবে অমুসলিম ও মুমিনদেরকে তার প্রভাব বলয়ে টেনে নিতে সক্ষম হয়েছে । যারা ইসলাম গ্রহণ করে সৌভাগ্যশালী হয়েছেন , তাদের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে আল- কুরআন। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে কুরআনের ছোট্ট একটি সুরা কিংবা তার অংশ বিশেষ তাদের জীবনের মোরকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল ।

এ কথা সত্য যে মানুষ অনেক কারণেই ইসলাম গ্রহণ করেছিল । যথা ;
১)কতিপয় লোক রাসুলে আকরাম (সা.) ও সাহাবী কিরামের আমল ও আখলাকে প্রভাবিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। ২) কিছু লোক সবকিছুর উর্ধে দ্বীনকে প্রাধান্য দিয়ে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সকল প্রকার দু:খ কষ্ট নির্যাতন ভোগ করছিল , কতিপয় লোক এ ব্যপারে প্রভাবান্বিত হয়ে মুসলমান হযেছিল । ৩) কিছু লোক এ কথা চিন্তা করে ইসলাম গ্রহণ করেছিল যে মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর সঙ্গী সাথীরা সংখ্যায় খুবই অল্প কিন্ত তবু কোন বৃহত শক্তি তাদেরকে পরাস্ত করতে পারেনা । এটি আল্লার সাহায্য ও তত্বাবধান ছাড়া কিছুতেই সম্ভব হতে পারেনা । ৪) কতিপয় লোক ইসলাম গ্রহন করেছিল তখন, যখন ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ইসলামের ইনসাফ ও ন্যয় বিচার কার্যকরী ছিল । যা ইতিপুর্বে তারা কথনো দেখেনি ।

এরকম আরো অনেক কারণেই মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিল । কিন্তু তার মধ্যে অন্যতম ছিল আল কুরআনের প্রাণষ্পর্শী আবেদন ও মোহিনী টান । যা ইসলামের প্রাথমিক আবস্থায় একক ভাবে অবদান রেখেছে ।

আল কুরআনের সন্মোহনী শক্তির উৎস কোথায় সে কথাটি একটু দেখা যাক । ইসলামের প্রথম দিকে শরীয়ত পরিপুর্ণ ছিলনা , অদৃশ্য জগতের খবর ছিল না , জীবন ও জগত সম্পর্কেও তেমন কিছু বলা হয়নি , ব্যবহারিক কোন দিক নির্দেশনাও তখনও কুরআন দেয়নি। কুরআনে থাকা মক্কায় অবতীর্ণ ছোট ছোট সুরাগুলি যদি আমরা অধ্যয়ন করি দেখতে পাব তখন যেখানে শরয়ী কোন আইন কিংবা পার্থিব কোন ব্যপারে সামান্যতম ইঙ্গিতও ছিলনা । অবশ্য সুরা আলাকে মানব সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে সামান্য আলোচনা হয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে মানুষকে জমাট বাঁধা রক্তপিন্ড থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ।
সুরা আলাকের প্রথম ৫টি আয়াতের দিকে সুক্ষভাবে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে ;
সেখানে কথামালার সামঞ্জস্য ও দ্যোতনার এক অপুর্ব সমাহার । প্রতিটি বক্তব্য উন্নত সাহিত্যের মুর্ত প্রতিক। অথচ তা একেবারেই প্রথম দিকে অবতীর্ণ একটি আয়াত । সেখানে বলা হয়েছে পড়ো । তবে তা আল্লাহর পবিত্র ও সন্মানিত নামের সাথে হতে হবে । ইকরা বা পড়ো শব্দ দিয়ে বুঝানো হচ্ছে –
আল কুরআন তিলাওয়াত বা অধ্যয়ন । এ জন্যই আল্লাহর নাম নেয়ার প্রয়োজন যে, তিনি নিজের নামের সাথেই দাওয়াত দেন । আল্লাহর এক সিফাতি নাম ‘‌রব্ব‌’
অর্থ প্রতিপালক । তাই তিনি প্রতিপালন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন । এ কথাগুলি আল্লাহর ভাষায় :
اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ
পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।

তখন ছিল ইসলামী দাওয়াতের একেবারে সুচনাকাল । এ জন্য রব্ব এর বিশ্লেষন হিসাবে এমন একটি শব্দ বেছে নেয়া হয়েছে যা জীবন শুরুর সাথে জড়িত । অর্থাৎ তিনি এমন রব্ব الَّذِیۡ خَلَق যিনি সৃষ্টি করেছেন ।
خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ عَلَق সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিন্ড হতে।
অন্য কথায় তিনি মানুষের জীবন শুরু করেছেন জমাট বাধা রক্তপিন্ড থেকে । কত ছোট ও সাধারণ অবস্থা দিয়ে ইসলামে দাওয়াতের সুচনা ।
কিন্তু আল্লাহ রব্ব বা প্রতিপালক হওয়ার সাথে সাথে খালিক ( সৃষ্টিকর্তা) ও উঁচুস্তরের মেহেরবান। তাই ছোট একটি মাংসপিন্ডকে ধীরে ধীরে পরিপুর্ণ এক মানুষে রূপায়িত করেন । আর তার প্রকৃতি এমন , তাকে কোন কিছু শিখালে শেখার যোগ্যতা আছে । এ জন্যই বলা হয়েছে;
اِقۡرَاۡ وَ رَبُّکَ الۡاَکۡرَم পাঠ কর, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। الَّذِیۡ عَلَّمَ بِالۡقَلَم যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।
عَلَّمَ الۡاِنۡسَانَ مَا لَمۡ یَعۡلَم তিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না (সুরা আলাক আয়াত ৩-৫)।

দেখা যায় ছোট ছোট মাত্র কটি আয়াতে কতো সুন্দরভাবে মানুষের শুরু থেকে পূর্ণতার দিকে নেয়ার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে । ছোট্ট সুরাটিতে জন্ম ও মৃত্যুর মাঝামাঝি সময়ের কথা একের পর এক বলা হয়েছে । যেন মানুষের চিন্তা ও সহজাত প্রবৃত্তি সেই দাওয়াতের প্রতি সাড়া দেয় । আল্লার দান বুদ্ধি বিবেকের দাবিই ছিল এ ব্যপারে চিন্তা ভাবনা করা । সে কি ছিল, আর এখন কোথায় এসে
পৌঁছেছে ।

২য় অধ্যায়
কুরআনে থাকা মানব সৃষ্টি বিষয়ক আয়াতের আলোকে আত্মপলব্দি

আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে জানতে হলে , তাঁর গুণাবলী বুঝতে হলে প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হয়ে যায় যদি আমরা স্মরণ করি হেরা পর্বত গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকা কালে রাসুল( সা.) প্রতি নাযিলকৃত কুরআনের প্রথম বাণিটির প্রতি( উল্লেখ্য সুরা আলাকের প্রথম ৫ টি আয়াতের কথামালা পুর্বেও ভিন্ন প্রসঙ্গে সংক্ষেপে বলা হয়েছে ) , যেখানে আল্লাহ তাঁর প্রেরিত ফেরেসতা জিবরাইল ( আ.) এর মাধ্যমে রাসুলকে বলেছেন ;
اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ
পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন
خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ عَلَقٍ
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে। ‘আলাক’ হচ্ছে ‘আলাকাহ’ শব্দের বহুবচন। এর মানে জমাট বাঁধা রক্ত।
মানুষকে জমাট রক্ত বিন্দু হতে সৃস্টি করার কথামালায় যা অনুভবে আসে তা নিয়ে একটুখানি ভেবে ও দেখে,মানুষ হিসাবে নিজের আত্মপলব্দির বিষয়টিই সর্বাজ্ঞে আলোচনায় উঠে আসে।
নিম্নে মানবসৃষ্টি বিষয়ে কুরআনের এমন কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হলো, যা আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমানিত।

মানুষের প্রজনন ব্যবস্থা
মানুষের প্রজননের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল (১) প্রজনন চক্রের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিম্বাণু বা ডিম্বাণুর মুক্তি,(২)শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণুর অভ্যন্তরীণ নিষিক্তকরণ। বা শুক্রাণু কোষ,(৩)জরায়ু বা গর্ভাশয়ে নিষিক্ত ডিম্বাণু পরিবহন,(৪) ব্লাস্টোসিস্টের ইমপ্লান্টেশন, জরায়ুর দেয়ালে নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে বিকশিত প্রাথমিক ভ্রূণ, (৫) প্রাথমিক ভ্রুন হতে শিশুর গঠন এবং রক্ষণাবেক্ষণ।
মাতৃগর্ভের ধারাবাহিক স্তর
মাতৃগর্ভে সন্তান গঠনের চক্র সাধারণত দীর্ঘ ২৮০ দিন হয়, যা ৪০ দিন অন্তর সুনির্দিষ্ট সাতটি চক্রে বিভক্ত। পবিত্র কোরআনে সাতটি স্তর এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ سُلٰلَۃٍ مِّنۡ طِیۡنٍ
আমরা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি (সুরা মুমিনুন আয়াত ১২)।
ثُمَّ جَعَلۡنٰهُ نُطۡفَۃً فِیۡ قَرَارٍ مَّکِیۡنٍ
অতঃপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত আঁধারে (জরায়ুতে) স্থাপন করেছি ( সুরা মুমিনিন আয়াত ১৩) ।
ثُمَّ خَلَقۡنَا النُّطۡفَۃَ عَلَقَۃً فَخَلَقۡنَا الۡعَلَقَۃَ مُضۡغَۃً فَخَلَقۡنَا الۡمُضۡغَۃَ عِظٰمًا فَکَسَوۡنَا الۡعِظٰمَ لَحۡمًا ٭ ثُمَّ اَنۡشَاۡنٰهُ خَلۡقًا اٰخَرَ ؕ فَتَبٰرَکَ اللّٰهُ اَحۡسَنُ الۡخٰلِقِیۡنَ
এরপর শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিণ্ডে পরিণত করেছি, এরপর মাংসপিণ্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুনরূপে করেছি।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত , ১৪)


আল্লাহ কত কল্যাণময় নিপুনতম সৃষ্টিকর্তা।কি অসাধারণ জৈবিক জটিল এক সৃস্টি কর্মের ভিতর দিয়ে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী মানব গর্ভ হতে ছেলে কিংবা মেয়ে সন্তান পৃথিবী পৃষ্টের এই সৃষ্টি জগতে নিয়ে আসেন । এটা সঠিকভাবে আনুধাবন করলে আল্লার প্রতি ঈমান বৃদ্ধি পাবে, তৌহিদি চেতনা আরো পুষ্ট হয়ে তাঁর গুণগানে মগ্ন হবে, তাঁর প্রতি জিকির তৈরী হবে এবং তা চেতনে অচেতনে মানব মনে চলতেই থাকবে ।সেই সাথে চালু রাখতে হবে মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি শুকর গুজারী ।

এবার নজর দেয়া যাক মানুষের জন্ম বিকাশ ও পর্যায়ক্রমে সময়ের আবর্তে অন্তিমের পানে তার ক্রমরাশের ধারাটির দিকে ।
জন্মপূর্ব বিকাশ
মানুষের জন্ম ও বিকাশ বলতে মানুষের মধ্যে ভ্রূণের গঠন থেকে শুরু করে তার বিকাশের মাধ্যমে, জন্ম (বা প্রসব) পর্যন্ত সময়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
মাতৃগর্ভের বিকাশ
আল্লাহ মাতৃগর্ভে শিশুর পরিপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। শিশুরা মাতৃগর্ভে তিনটি পর্দার অন্তরালে অবস্থান করে। আল্লাহ বলেন,
خَلَقَکُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَ اَنۡزَلَ لَکُمۡ مِّنَ الۡاَنۡعَامِ ثَمٰنِیَۃَ اَزۡوَاجٍ ؕ یَخۡلُقُکُمۡ فِیۡ بُطُوۡنِ اُمَّهٰتِکُمۡ خَلۡقًا مِّنۡۢ بَعۡدِ خَلۡقٍ فِیۡ ظُلُمٰتٍ ثَلٰثٍ ؕ ذٰلِکُمُ اللّٰهُ رَبُّکُمۡ لَهُ الۡمُلۡکُ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ فَاَنّٰی تُصۡرَفُوۡنَ
তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নাফ্স থেকে, তারপর তা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তু থেকে তোমাদের জন্য দিয়েছেন আট জোড়া ; তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে; এক সৃষ্টির পর আরেক সৃষ্টি, ত্রিবিধ অন্ধকারে; তিনিই আল্লাহ; তোমাদের রব; রাজত্ব তাঁরই; তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তারপরও তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?(সুরা ঝুমার আয়াত ৬)।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও কুরআনে বর্ণিত তিন স্তরের নিরাপত্তার কথা স্বীকার করেছে। তা হলো- ১. রেহেম, ২. মাশিমা বা গর্ভফুল এবং ৩. মায়ের পেট।
রেহেমে রক্তপিণ্ড ছাড়া সন্তানের আকার-আকৃতি কিছুই তৈরি হয় না। আর গর্ভফুল (Placenta) ভ্রূণ বৃদ্ধি, সংরক্ষণ, প্রতিরোধ ইত্যাদি কাজে অন্যতম ভূমিকা রাখে, আর
মায়ের পেটে শিশু বেড়ে উঠে, অভিজ্ঞ চিকিৎসকগন আলট্রাসনিক পদ্ধিতিতে তা দেখতে পারেন।


শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ
মহান আল্লাহ বলেন,
لِلّٰهِ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ ؕیَهَبُ لِمَنۡ یَّشَآءُ اِنَاثًا وَّ یَهَبُ لِمَنۡ یَّشَآءُ الذُّکُوۡرَ
আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন (সুরা শুরা ,আয়াত ৪৯) ।
اَوۡ یُزَوِّجُهُمۡ ذُکۡرَانًا وَّ اِنَاثًا ۚ وَ یَجۡعَلُ مَنۡ یَّشَآءُ عَقِیۡمًا ؕ اِنَّهٗ عَلِیۡمٌ قَدِیۡرٌ
অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান( সুরা আস শুরা ,আয়াত ৫০)।

জীবকোষ ও পানি
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আর প্রাণবান সব কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে। তবু কি তারা ঈমান আনবে না?’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)
اَوَ لَمۡ یَرَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ کَانَتَا رَتۡقًا فَفَتَقۡنٰهُمَا ؕ وَ جَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّ ؕ اَفَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ
অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আকাশ আর যমীন এক সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে আলাদা করে দিলাম, আর প্রাণসম্পন্ন সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা ঈমান আনবে না? ( সুরা আম্বিয়া আয়াত ৫০)।

আধুনিক জীববিজ্ঞানের মতে, সাগরের অভ্যন্তরের পানিতে যে প্রটোপ্লাজম বা জীবনের আদিম মূলীভূত উপাদান রয়েছে, তা থেকেই সব জীবের সৃষ্টি। আবার সব জীবদেহ কোষ দ্বারা গঠিত। আর এই কোষ গঠনের মূল উপাদান হচ্ছে পানি। ভিন্নমতে, পানি অর্থ শুক্র(কুরতুবি)। উল্লেখ্য তাফসীর আল-কুরতুবী হল বিশিষ্ট ইসলামী আলেম আল-কুরতবী রচিত ত্রয়োদশ শতাব্দীর একটি বিখ্যাত কুরআনের তাফসীর । এই গ্রন্থে কুরআনে থাকা বিজ্ঞান বিষয়ক বিশদ আলোচনা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলির ব্যখাা রয়েছে।
এখন মানবদেহের জন্য এই কোষ গঠনের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাব সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত যে নিপুন কারিগর এবং কত বিজ্ঞ ছিলেন । তাঁর অসীম বিজ্ঞতার কনা পরিমানও আমরা এখনো দেখিনি কিংবা জানতে পারিনি,তার পরেও আমাদের দেহের ভিতরেই কি বিপুল পরিমান নিদর্শন তিনি রেখে দিয়েছেন তা দেখলে আর জানলে শুধু বিস্ময়াবিভুতই হবোনা তাঁর প্রতি অঢেল বিশ্বাস ও কৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করতে হবে ।

মানবদেহ

অমাদের নীজের মানবদেহটি অসংখ বৈশিষ্টমন্ডিত ভৌত পদার্থ, জীবিত কোষ এবং বহুগুণের অধিকারি পদার্থের সমন্বয়ে টিস্যু, ও অঙ্গসমুহের একটি ভারসাম্যমুলক সিস্টেমে সু সংগঠিত রূপ।
কোষ(Cell)
জীববিজ্ঞানে কোষ হল মৌলিক ঝিল্লি-আবদ্ধ একক যা জীবনের মৌলিক অণু ধারণ করে এবং যা থেকে সমস্ত জীবিত জিনিস গঠিত। একটি একক কোষ প্রায়ই নিজেই একটি সম্পূর্ণ জীব, যেমন একটি ব্যাকটেরিয়া বা খামির। নীচে মানবদেহের একটি কোষের গঠন কাঠামো দেখানো হলো ।
একটি মানব কোষের গঠন


বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন প্রতিটি মানব জীব ৩০, ০০০,০০০,০০০,০০০ তথা তিন লক্ষ কোটির বেশি কোষ নিয়ে গঠিত । এটা আমাদের কল্পনারো বাইরে, সৃষ্টিকর্তা কত নিখুতভাবে আমাদের শরীরের মধ্যে এত বিশাল পরিমানের স্বয়সম্পুর্ণ জীব কোষ তৈরী করে রেখে দিয়েছেন আমাদের জীবনকে তার নির্দেশিত একটি নির্দিষ্ট কার্যকলাপ সম্পাদনের জন্য । এমন একটি ছোট কোষের ভিতর আল্লাহ কত শক্তি দিয়েছেন তা এই কিছুদিন আগে কোভিড১৯ ভাইরাস হতেই মানুষ কিছুটা টের পেয়েছে । তাইতো আল্লাহ বলেন তার প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যেই রয়েছে বুদ্ধিমান ও চিন্তাশীলদের জন্য চিন্তার খোরাক ।

মানবদেহের কোষগুলি এতই ছোট যে শক্তিশালী অনুবিক্ষন যন্ত্র ছাড়া এটা দেখাই যায়না । আল্লাহর কি অপার সৃস্টি রহস্য যে এত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষ দিয়ে আমাদের দেহকে গড়েছেন সৃষ্টির শ্রেষ্ট মখলুকাত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য় ।
অন্যদিকে একটি মাত্র কোষ নিয়েও তার সৃস্টি জগতে রয়েছে বেশ কিছু প্রাণী যেমন এক কোষী সামুদ্রিক শৈবাল জাতীয় এমিবা । আবার খালী চোখেও দেখা যায় এমন এক কোষি প্রাণীও রয়েছে যথা ভ্যলোনিয়া ভেন্ট্রকোষা ।

পরিচিত এককোষী জীবের মধ্যে আন্যতম বৃহত্তমটি হল ভ্যলোনিয়া ভেন্ট্রকোষা । এর খোলস একটি পাতলা দেয়ালযুক্ত শক্ত, মাল্টিনিউক্লিয়েট কোষ নিয়ে গঠিত যার ব্যাস সাধারণত ১ থেকে ৪ সেন্টিমিটার (০.৪ থেকে ১.৬ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে, যদিও এটি বিরল ক্ষেত্রে ৫.১ সেন্টিমিটার (২.০০ইঞ্চি) পর্যন্ত ব্যাস অর্জন করতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্চের লোহিত সাগরের শৈবালে থাকা এককোষী প্রাণী Valonia ventricosa একটি চিত্র ।


টিস্যু ( Tissue)
বহুকোষী জীবের সংগঠনের একটি স্তর হলো টিস্যু; এটি মানবদেহের গঠনগত এবং কার্যকরীভাবে অনুরূপ কোষ এবং তাদের আন্তঃকোষীয় উপাদানগুলির একটি গ্রুপ নিয়ে গঠিত। আল্লাহ কিভাবে ছোট্ট বিন্দুর মত কোষগুলিকে একটির সাথে আরেকটি সহযোগে টিস্যু ও মানবাঙ্গ ও মস্তবড় দেহ গড়েছেন তা দেখলে অবাকই হতে হয় । যতই জানব তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও ভক্তি ততই বাড়বে ।
টিস্যুর গঠন( Tissues Structure)


অঙ্গ (Organ)
জীববিজ্ঞানে অঙ্গ হলো একটি জীবন্ত জীবের টিস্যুগুলির একটি গ্রুপ যা একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য অভিযোজিত হয়েছে। যেমন খাদ্যনালী, পাকস্থলী এবং যকৃত হল পরিপাকতন্ত্রের অঙ্গ। এখন বিধাতার অপরূপ সৃষ্টি আমাদের আভ্যন্তরিন অঙ্গ আমাদেরকে বেঁচে থাকতে এবং জীবনের গতিময়তা দিতে কত গুরুত্বপুর্ণ তা একটু খানি দেখে নিতে পারি । এগুলি দেখে চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলে খোদার গুণাবলীর কথাই শুধু অন্তরে বিরাজ করবে আর শুকর গুজারী করতে অনুপ্রাণিত করবে ।


রক্ত ( Human blood)
রক্ত হল একটি তরল পদার্থ যা কোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পরিবহন করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য পণ্য বহন করে।


মানুষের শরীরে রয়েছে লোহিত আর শ্বেত রক্তকনিকা । লোহিত রক্তকনিকা ফুস ফুস থেকে দেহের কলাগুলিতে আক্সিজেন সরবরাহের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। হিমোগ্লবিনের মাধ্যমে ফুসফুস বা ফুলকার মধ্যকার কৈশিক নালির মধ্যে সংবহনের সময় স্বাসবায়ু থেকে লোহিত রক্তকণিকাতে অক্সিজেন সংগৃহীত হয় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিত্যক্ত হয়।শ্বেত রক্তকণিকা দেহের প্রতিরক্ষার কাজ করে।এটি নানা ধরনের সংক্রামণকারী থেকে মানুষকে রক্ষা করে।
বিষয়গুলি এমনভাবে না দেখলে আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি কৌশল বুঝাই যেতোনা ।
এ জন্যই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আমাদেরকে তাঁর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ মান্য করার মধ্যেও রয়েছে অনেক পূণ্য ।

মানুষের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম
মানুষের কার্ডিউভাসকুলার সিস্টেম তার শরীরের সমস্ত অংশে এবং রক্তনালীগুলির মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করে, টিস্যুতে পুষ্টি এবং অক্সিজেন বহন করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য অপসারণ করে। এটি একটি বন্ধ টিউবুলার সিস্টেম যেখানে রক্ত একটি পেশীবহুল হৃদয়(heart) দ্বারা চালিত হয়। এর একটু এদিক সেদিক হলেই হয় হার্ট ফেলিউর, যার পরিনামে মানুষের মৃত্যু হয়ে উঠে অনেকটাই অনিবার্য্য যদিনা সময়মত চিকিৎসা করা হয় আর আল্লার হুকুমে/অশেষ রহমতে তার আয়ু বৃদ্ধি পায় । তবে যাহাই ঘটুক না কেন, আল্লাহ নির্দ্ধারিত একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তে প্রতিটি মানুষকেই আল্লাহর হুকুম যখন হবে তখন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই
হবে ।


যাহোক ,আল্লাহ কতই মেহেরবান,তিনি মানুষকে একটি নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ রেখে তার হার্টকে সচল রেখেছেন, আল্লাহ প্রদত্ত সীমারেখা অতিক্রম করে বা রীতির বরখেলাপ করে যথা হারাম জাতীয় খাবার কিংবা অন্য যে কোন স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করে অধিক ভুজন বা চর্বিজাতীয় খাবার বেশী গ্রহণ কিংবা জাগতিক বিষয়ে আল্লার উপর নির্ভর না করে দুনিয়াধারী জাগতিক বিষয়ে বেশি চিন্তা করে হার্ট ফেউলুরের ঝুকি বাড়িয়ে তুলে অনেকেই। ছবিতে দেখুন মানুষের কার্ডিউ ভাসকুলার সিসটেমটি কত জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে , অথচ সুস্থ সবল একজন মানুষ টেরই পায়না মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ কত নিখুতভাবে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাধীনে বিরামহীনভাবে দিবানিশী এটা চালু রেখে,দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে নিখুতভাবে পরিচালনা করে আমাদেরকে জিবীত রেখে দুনিয়াধারী করার তৌফিক দান করেছেন , তবু কি আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও শুকর গুজার করবনা ? অথচ খুব সহজেই নিভৃতে নিরবে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর কতই না সুযোগ রয়েছে ,শুধু সে সুযোগের সদব্যবহার করতে হবে । এর মাধ্যমে দ্বীন দুনিয়া দুদিক হতেই অশেষ কল্যান লাভ করা যাবে।

আসুন এই ফাকে আল্লার কাছে সকলেই একটু প্রার্থনা করে নিই ।
রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।

মানুষের ত্বক( Human Skin)
মানুষের ত্বক, শরীরের পৃষ্ঠের আচ্ছাদন, বা ইন্টিগুমেন্ট যা উভয়ই সুরক্ষা প্রদান করে এবং বাহ্যিক পরিবেশ থেকে সংবেদনশীল উদ্দীপনা গ্রহণ করে। ত্বকে টিস্যুর তিনটি স্তর থাকে: এপিডার্মিস, একটি বাইরের স্তর যা প্রাথমিক প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো ধারণ করে, স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম; ডার্মিস, একটি তন্তুযুক্ত স্তর যা এপিডার্মিসকে সমর্থন করে এবং শক্তিশালী করে; এবং সাবকুটিস, ডার্মিসের নীচে চর্বির একটি স্তর যা অন্য দুটি স্তরে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং এটি শরীরকে কুশন এবং ইনসুলেট করে।


সুবহানান্নাহ, আল্লাহ আমাদের দেহটিকে কি চমৎকার ভাবেই সুরক্ষা করে রেখেছেন বিভিন্ন জটিল কার্যাবলী সম্পাদনের দায়িত্ত্ব পালনারী ত্বক দিয়ে।

স্নায়ুতন্ত্র
স্নায়ুতন্ত্র আমাদের দেহের ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক কাজের সমন্বয় সাধন করে এবং দেহের বিভিন্ন অংশে সংকেত প্রদান করে।যে তন্ত্রের সাহায্যে প্রাণী উত্তেজনায় সাড়া দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে, দৈহিক মানসিক ও শারীরবৃত্তীয় কাজের সমন্বয় ঘটায়, দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ সাধন করে এবং তাদের কাজের মধ্যে সংবাদ আনয়ন ও নিয়ন্ত্রণ করে তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলে
মস্তিস্কের মগজের শিরা উপশিরা ও তার সংবেদনশীলতার একটি চিত্র ।
পায়ের আঙ্গুল হতে মানুষের মাথায় থাকা ব্রেন পর্যন্ত স্নায়ুতন্ত্র


স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের কোষগুলির একটি বিশাল নেটওয়ার্ক যা শরীরকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজ করতে সক্ষম করে তুলে যেমন শ্বাস নেওয়া, খাওয়া, দেখা, শ্রবণ এবং চলাফেরা। ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি সেরা সুপার-কম্পিউটারগুলির চেয়ে মানব মস্তিষ্কের কম্পিউটিং ক্ষমতা অনেক বেশী । তারপরেও মানব মস্তিষ্কের কম্পিউটিং ব্যবস্থা চালানোর জন্য সুপার কম্পিউটারের তুলনায় মস্তিস্কের ভিতরে খুবই ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ পরিমান স্থান ও শক্তির প্রয়োজন।

অথচ মনুষ্যসৃষ্ট একটি রোবটের পুরাটা মাথাজুরেই মাকরসার জালের মত ছোট বড় অসংখ কেবল ফিট করেও তা মানুষের তুলনায় মিলিয়নভাগের একভাগ সমপরিমান স্নায়ুবিক কাজেও ব্যবহার উপযোগী করতে পারিনি ।


স্নায়ুতন্ত্র কেবল তার নকশার অসাধারণ ডিজাইনের প্রমাণই দেয় না বরং এটা আমাদের সৃস্টিকর্তা আল্লাহর অসীম প্রজ্ঞা ও সুনিপুন সৃষ্টি কৌশলের নিদর্শন প্রকাশ করে।

মানুষের শ্বাসযন্ত্র

শ্বাসযন্ত্র সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষ অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়। মানুষের গ্যাস-আদান-প্রদানকারী অঙ্গ, ফুসফুস, থোরাক্সে অবস্থিত, যেখানে এর সূক্ষ্ম টিস্যুগুলি হাড় এবং পেশীবহুল বক্ষের খাঁচা দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। ফুসফুস মানব দেহের টিস্যুগুলিকে অক্সিজেনের অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ সরবরাহ করে এবং বায়বীয় বর্জ্য পদার্থ, কার্বন ডাই অক্সাইডের রক্ত পরিষ্কার করে। বায়ুমণ্ডলীয় বায়ু নিয়মিতভাবে পাইপের একটি সিস্টেমের মাধ্যমে পাম্প করা হয়, যাকে বলা হয় কন্ডাক্টিং এয়ারওয়েজ, যা শরীরের বাইরের সাথে গ্যাস-বিনিময় অঞ্চলে যোগ দেয়। মানুষের দেহের ভিতর শ্বাস নালী ও দেহ পিঞ্জরের ভিতরে ফুসফুসের কাজ কতই না নিখুত ও স্বয়ংক্রিয় , দেহে বায়ু প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে জীবন প্রদীপ নিভে যাবে , আর এই জীবন প্রদীপকে দিবা নীশি কে চালু রাখেন , তিনি আমাদের মৃষ্টি কর্তা আল্লাহ ভিন্ন আর কেহ নন ।


শ্বাস-প্রশ্বাসের মূল্য যে কত বেশি, সেটা কেবল সেই-ই বুঝে যে মহামারি করোনায় চূড়ান্ত শ্বাসকষ্টের সম্মুখীন হয়েছে। করোনা মূলতঃ ফুসফুসে হানা দেয়। আর তাই প্রয়োজন হয় অক্সিজেনের। বুকের মধ্যে রক্ষিত ফুসফুস বা ফুল্কা এই অক্সিজেন সিলিন্ডারের কাজ করে এবং সারাজীবন আমাদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে। প্রতি মিনিটে গড়ে ১২-১৮ বার শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে থাকলে জীবনে কত লক্ষ-কোটি বার এই সিলিন্ডার আমাদের অক্সিজেন দিয়েছে, তা একবার ভেবেছি কি?উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বাংলাদেশে বর্তমান বাজারে ১২ লিটারের একটি সাধারণ অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, যা দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা চলে। পরে তাতে আবার অক্সিজেন ভরতে হয়। একবার ভাবুন, কত কোটি টাকার অক্সিজেন আমরা বিনা পয়সায় বিনা চেষ্টায় সর্বদা পাচ্ছি আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে ।

যাহোক, মানুষকে মনে রাখতে হবে, আল্লার হুকুমে বা ইচ্ছায় একদিন মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হবে , তার প্রাণ বায়ু উড়ে যাবে , তাকে আল্লার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে । যেমন আল্লাহ বলেন,
وَ اتَّقُوۡا یَوۡمًا تُرۡجَعُوۡنَ فِیۡهِ اِلَی اللّٰهِ ٭۟ ثُمَّ تُوَفّٰی کُلُّ نَفۡسٍ مَّا کَسَبَتۡ وَ هُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ
‘আর তোমরা ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট ফিরিয়ে নেওয়া হবে। অতঃপর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মফল পুরোপুরি প্রাপ্ত হবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ আয়াত ২৮১)।

মানুষের সংবেদনশীল অভ্যর্থনা/রিসেপটর

মানুষের সংবেদনশীল অভ্যর্থনা, যার মাধ্যমে মানুষ বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ পরিবেশের পরিবর্তনে প্রতিক্রিয়া দেখায়। প্রাচীন দার্শনিকরা মানুষের ইন্দ্রিয়কে "আত্মার জানালা" বলে অভিহিত করেছেন এবং গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল কমপক্ষে পাঁচটি ইন্দ্রিয় বর্ণনা করেছেন-দৃষ্টি, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ এবং স্পর্শ। মানুষ অনেকদিন পর্যন্ত পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের কথাই বলত । কিন্তু আধুনিক সংবেদন গ্রহনস্থল হিসাবে এখন পেশী, টেন্ডন এবং জয়েন্টগুলিকেও রিসেপ্টর হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে, যা গতির/স্পর্শের অনুভূতির জন্ম দেয় ।


আল্লাহ বলেন-
اِنَّا خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ اَمۡشَاجٍ ٭ۖ نَّبۡتَلِیۡهِ فَجَعَلۡنٰهُ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرًا
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু থেকে তাকে পরীক্ষা করার জন্য, এজন্য তাকে করেছি শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী(সুরা দাহর, আয়াত ২ )।

মানুষের চোখ


এর গঠন কত জটিল তা নীচের ছবিটিতে দেখা যাবে ।

মানুষের চোখের গঠন বিন্যাস


১)কাঁচা শরীর ২.ওরা সেরেটা, ৩)সিলিয়ারি পেশী, ৪)জিনের জোনুল,৫)শ্লেমের ক্যানেল, ৬)পিউপিল, ৭)চক্ষুগোলকের পুর্বের প্রকোষ্ট, ৮)কর্ণিয়া, ৯)আইরিস, ১০)লেন্স কর্টেক্স, ১১)লেন্স নিউক্লিয়াস, ১২)সিলিয়ারি প্রক্রিয়া, ১৩)কনজাংটিভা, ১৪)নিন্মতর তির্যক পেশী, ১৫)নিন্মতর রেক্টাস পেশী, ১৬)মিডিয়াল রেকটাস পেশী, ১৭)রেটিনার ধমনিী এবং শিরা, ১৮)অপটিক্স ডিক্স, ১৯)ডুরা ম্যটার, ২০)কেন্দ্রীয় রেটিনাল ধমনী, ২১),সেন্ট্রাল রেটিনাল শিরা, ২২)অপ্টিক স্নায়ু ,২৩)ভার্টিকোজ শিরা, ২৪)বুলবারশীথ ম্যকুলা, ২৫)ফ্লোভিয়া,২৬)ষ্কুলেরা, ২৭)কোরয়েড ,২৮)সুপিরিয়র রেকটাস ২৯. ….৩০) রেটিনা ।

চোখের অপটিক ডিস্কের কারণেই আমরা বিশ্বকে দেখতে পাচ্ছি। আমরা রং এর খেলা দেখছি। শরীরবিজ্ঞান জানায়, মানুষের চোখ ৫৭৬ মেগাপিক্সেল পর্যন্ত ভিউ দেখাতে পারে। অর্থাৎ, সহজ কথায়, চোখ একবারে ৫৭৬ মেগাপিক্সেলের এলাকা দেখতে পারে। সবচেয়ে দামী আইফোন- ১৫ এ মাত্র ৪৮ মেগাপিক্সেল পর্যন্ত ভিউ দেখতে পারে তাও মাত্র স্বল্প দুরত্বে । অথচ একটি পরিষ্কার, অন্ধকার রাতে, ভাল দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন একজন মানুষের যদি অবাধ দৃষ্টি থাকে, তবে সে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি দেখতে পাবে। মানুষের চোখ ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সিও দেখতে পারে। প্রায় ৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে, এটি মানুষের চোখ দ্বারা পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান দূরতম বস্তুগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়( সুত্র Click This Link)
আল্লার কুদরতের সীমা পরিসীমা মাপার ক্ষমতা কারো নাই ।


এখন আসা যাক চোখ কিভাবে দেখে এবং কিভাবে বুঝে সে কি বিষয় বা বস্তু দেখেছে ।যখন আমরা কোন কিছু দেখার সিদ্ধান্ত নিই, তখন পনস নামক একটি ব্রেনস্টেম কাঠামো কাজে লাগানো হয় ।এটি চোখের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে, ক্রমাগত আমাদের চোখের পেশীগুলিকে আলোর সঠিক উদ্দীপকের দিকে যেতে বলে (যে বস্তুটি আমরা দেখতে চাই)। পুতলির মধ্য দিয়ে যখন চোখে আলো প্রবেশ করে, তখন এটি রেটিনার ফটোরিসেপ্টর কোষগুলিতে আঘাত করে যাকে রড এবং কোনস বলা হয়। রড কোষগুলি সাধারণ দৃষ্টি এবং কোনস কোষগুলি উজ্জ্বল আলো, রঙ এবং সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতিক্রিয়া দেখায়।

আলো যখন তার সংশ্লিষ্ট রড বা কোনস এ আঘাত করে, তখন কোষটি সক্রিয় হয়, অপটিক নার্ভের মধ্য দিয়ে একটি স্নায়ু প্ররোচনা চালায় - চোখের এবং মস্তিষ্কের মধ্যবর্তী সংযোযক হিসাবে। এই প্ররোচনা অগণিত স্নায়ু প্রান্ত জুড়ে ভ্রমণ করে এবং অবশেষে আমাদের পাল অক্সিপিটাল লোবের সাথে শেষ হয়, যেখানে এটি প্রক্রিয়া করা হয় এবং একটি দৃশ্যমান চিত্র হিসাবে অনুভূত হয়। এটিই দৃষ্টিশক্তি।
এই সবই এক সেকেন্ডের ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশের মধ্যে ঘটে, যা আমাদেরকে মূলত বাস্তব সময়ে বিশ্বকে উপলব্ধি করতে দেয়।
মানুষের মস্তিষ্ক নিউরন এবং সিন্যাপসের একটি অবিশ্বাস্য জটিল বিষয়। এই জটিল প্রক্রিয়ায় আলোর এলোমেলো সংগ্রহগুলি প্রক্রিয়া এবং উপলব্ধি করার জন্য মস্তিস্কের ভিতরে থাকা মগজ ( ব্রেইন) তার বিস্ময়কর ক্ষমতা তথা পুর্ব প্রদত্ত বা আহরিত জ্ঞান এর প্রয়োগে আমরা বুঝতে পারি, আমরা কি দেখেছি । উপরের এই ছবিটিতেই দেখা যাক , চোখ প্রথম যে বস্তুটি দেখেছে সেটি একটি আপেল , কিন্তু সে কিভাবে জানল সে যা দেখেছে তা যে একটি আপেল , চোখ তখনই বুঝতে পারল যখন মস্তিস্ক তাকে প্রদত্ত জ্ঞান বা আহরিত জ্ঞান তাকে জানান দিয়েছে সে যে বস্তুটি দেখেছে তা একটি আপেল ।

এখন লেখাটির এই পর্যায়ে খানিকটা চোখ বুঝে ধ্যানে বসে চিন্তা করুন , আল্লাহ হযরত আদম(আ.) কে সৃষ্টি করার পরে তিনি আদম ও ফেরেসতাদের সামনে বিভিন্ন বস্তু রেখে ফেরেস্তাদেরকে বললেন তারা যা যা দেখেছে তার নামগুলি যেন বলে , তখন ফেরেসতাগন তাদের দেখা বস্তুগুলির নাম বলতে পারলেন না আর বললেন আমরা এদের নাম বলতে পারবনা, কারণ আমাদেরকে এদের নাম সম্পর্কে কোন জ্ঞান দেয়া হয়নি । তারপরে যখন আদম( আ.) কে বলা হল সে সকল বস্তুর নাম বলতে, তখন তিনি যা দেখেছেন তাদের নাম বলে দিয়েছেন । তার মানে আল্লাহ প্রদ্ত্ত জ্ঞানে বলিয়ান হয়ে আদম (আ.) চোখে যা দেখেছেন তা বলে দিতে পেরেছেন । তার অর্থ দাঁড়ায় তাঁর ব্রেনে দেয়া জ্ঞান হল খোদা প্রদত্ত জ্ঞান যার বলে বলিয়ান হয়েছিলেন আদম (আ.)। ঠিক তেমনই ভাবে আল্লাহ মানুষের ব্রেনে যে জ্ঞান প্রোথিত করে দিয়েছেন তারই বলে বলিয়ান হয়ে আমাদের চোখ যা দেখেছে তা বলতে পারছে , এবং মানুষের বয়োবৃদ্ধি ,সে সাথে তার জানার আকাঙ্খার প্রেক্ষিতে/চাহিদা অনুযায়ী ক্রমাগতভাবে আল্লাহ বাড়িয়েই যাচ্ছেন । আসুন,আমাদেরকে সৃষ্টি জগতের ও মখলুকাতের সেরা জীব হিসাবে তৈরীর বিষয়ে আল্লাহর এই নিখুত সুক্ষতাসুক্ষ সৃষ্টি কৌশল অনুধাবন করি আর বলি সোবহানাল্লাহ । আল্লাহ কতই না মেহেরবান , চোখের স্নায়ুতে সামান্য একটু খুত দেখা দিলে হয়ে যেতে হয় অন্ধ , আর অন্ধের কাছে জগতটাই আঁধারে পরিপুর্ণ । অপর দিকে খোদার মেহেবানীতে নিখুত চোখ দিয়ে আমরা আমাদের চারপাশের জটিল বিশ্বকে উপলব্ধি করতে পারছি। তার পরেও আমরা অস্বীকার করব আল্লার কোন কোন নিয়ামতকে । তাঁর দেয়া নিয়ামত প্রঙ্গগে তাইতো আল্লাহ বলেন -
فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِ
ফাবিআইয়ে আলা-ই রবিবকুমা তুকাযযিবান
অতএব (হে জ্বিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? ( সুরা আর রাহমান , আয়াত ১৩)

মানুষের পেশী সিস্টেম

মানুষের পেশী, সেও একটি কত জটিল সিসটেম, যেগুলি আল্লাহর আসীম কৃদরতে স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং এ পেশীসমুহের নড়াচড়া ভারসাম্যের সাথে সম্পর্কিত।


এবার আবারো আল্লাহর সৃষ্ট আমাদের মানব দেহের ভিতরে থাকা পাচন তন্ত্রের দিকে একটু দৃষ্টি দিয়ে দেখা যাক আল্লার হিকমত ।

মানুষের পাচনতন্ত্র

মানুষের পাচনতন্ত্র, হজম প্রক্রিয়ার জন্য মানবদেহের ভিতরে চলমান একটি ব্যবহৃত সিস্টেম।
মানুষের পাচনতন্ত্র মূলত পরিপাকতন্ত্র, বা কাঠামো এবং অঙ্গগুলির একটি সিরিজ নিয়ে গঠিত যার মাধ্যমে খাদ্য এবং তরলগুলি তাদের প্রক্রিয়াকরণের সময় রক্ত প্রবাহে শোষিত হতে পারে। সিস্টেমটি এমন একটি কাঠামো নিয়ে গঠিত যার মধ্য দিয়ে বর্জ্য নির্মূলের প্রক্রিয়ায় এবং অঙ্গগুলি যা পরিপাক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় রস যোগায়।

পাচনতন্ত্রে জটিলতর হজম প্রক্রিয়া


প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের পেটের ভিতর থাকা ক্ষুদ্রান্তটির দৈর্ঘ প্রায় ২০ হতে ২৫ ফুট । পাকস্থলী হতে খাদ্য হজম প্রানালীর মধ্য় দিয়ে পায়ুপথে বর্জ নির্গমন পর্যন্ত এই দির্ঘ পথটি পাড়ি দেয় । নিয়ম মেনে না চললে মানুষের রোগ ব্যধির বড় একটি অংশই এখান হতে জন্ম নেয় ।

এবার আল্লার কুদরত বুঝার ও জানার জন্য আমাদের দেহের ভিতরে থাকা আরো একটি গুরুত্বপুর্ণ অংগ তথা রেনাল সিস্টেম(Renal system) এর প্রতি দৃষ্টি দিয়ে দেখা যাক কি অসাধারণ জটিল কারিগরি বিষয় সংযোজন করে দিয়েছেন আল্লাহ আমাদের শরীরের ভিতরে । যার মধ্যে সামান্য এদিক সেদিক হলেই মরণ যন্ত্রনা অনিবার্য্য ।

রেনাল সিস্টেম(Renal system)


রেনাল সিস্টেম হল মানুষের শরীরের ভিতরে থাকা একটি অঙ্গ সিস্টেম যার মূল হল কিডনি, যেখানে প্রস্রাব উৎপন্ন হয় এবং মূত্র সঞ্চয় হয় এবং মূত্রনালী দিয়ে তা মানব দেহ হতে নির্গত হয় । আল্লার অশেষ মেহেরবানী যে এটা তিনি চালু রাখেন আমাদের জীবনকে সচল রাখার জন্য । যারা বিবিধ কারণে কিডনী সমস্যায় বা বৈকল্যে ভুগছেন ও নিয়মিত ডায়ালিসিস নিচ্ছেন তারাই কেবল ভাল করে অনুভব করতে পারেন দুটি কিডনী সচল না থাকলে জীবন কত কষ্টের । তাই এ কারণেও আমরা আমাদের মহান সৃষ্টি কর্তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও শুকর গুজার তো অবশ্‌ই করব ।
رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ
রাব্বি আউযিনি আন আশকুরা নিমাতিকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আমালা সালিহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।
অর্থ : হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে তোমার দেয়া সেসব নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সামর্থ দাও। যেসব নেয়ামত তুমি আমাকে ও আমার বাবা-মাকে দান করেছ। আর আমি যাতে তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর (সুরা নামল : আয়াত ১৯)।

মানব কঙ্কাল তথা কাঠামো

মানব কঙ্কাল, অভ্যন্তরীণ কঙ্কাল যা শরীরের জন্য একটি কাঠামো হিসাবে কাজ করে। এই কাঠামোটি অনেকগুলি পৃথক হাড় এবং তরুণাস্থি নিয়ে গঠিত। এছাড়াও কঙ্কালের অংশগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত তন্তুযুক্ত সংযোগকারী টিস্যুর ব্যান্ড - লিগামেন্ট এবং টেন্ডন রয়েছে৷


আল্লাহর কি অপার মহিমা ও সৃষ্টি কৌশল, কত নিখুত ও ভারসাম্যভাবে তৈরী করে দিয়েছেন আমাদের দেহ কাঠামোটিকে । একটি ছোট কাঠিও মেজের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা যদি না তাকে ভাল করে মেঝেতে প্রোথিত করা হয় ।

একটি ছোট গাছের চাড়াও মাটির উপরে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা যদি না তার শিকড় মাটিতে প্রোথিত হয়। অথচ আল্লাহ আমাদের দেহ কাঠামোটিকে কঙ্কাল সজ্জিত করে এমনভাবে সাজিয়েছেন যে মাত্র দুটি পায়ের উপর ভর দিয়ে আমরা সাবলিলভাবে চলাফিরা করতে পারি । আমাদের পায়ের নীচে পৃথিবী ঘন্টায় ১২০০ মাইল বেগে সুর্যের চারিদিকে বন বন করে লাটিমের মত ঘুরছে, অথচ হেলে দুলে কিংবা ছিটকে না পরে দিব্বি আরামে আমরা হেটে চলছি, ঘুরাফিরা করছি তার উপরে । এতেও রয়েছে আল্লাহ তায়ালার অনেক কুদরত ও নিদর্শন । যত ভাবি ততই অবাক হই আমাদের সৃষ্টি কর্তার এই অপরূপ মানব সৃষ্টির কলাকৌশল দেখে । এর পরেও কে অস্বীকার করবে একমাত্র মহান সৃস্টিকর্তা আল্লাকে । আল্লার প্রতি অবিশ্বাসীদের ঈমানের বলে বলিয়ান হতে আর কি লাগে , তবু কি তারা অস্বীকার করবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাকে ।



মানব বিকাশ( Human Development)

একটি শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে তার আকার , টিস্যুর গঠন এবং বিকাশে পরিবর্তন হয়। নবজাতক একটি শিশুর মাথাটি তার মোট দৈর্ঘ্যের প্রায় এক চতুর্থাংশ হয়ে থাকে ; প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি প্রায় এক-সপ্তমাংশের মত হয় ।


গর্ভকালীন ভ্রূণ হতে শুরু করে মানবের জন্ম, বয়োবৃদ্ধি ,বার্ধক্য প্রতিটি স্তরেই শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন হতে হতে মানুষকে আবার ক্রমান্বয়ে অশিতপর বৃদ্ধাবস্থার দিকে পরিচালিত করে, বলতে গেলে তাকে সেই শিশুকালের মতই করে তোলে ।
দোলনা হতে কবর পর্যন্ত পুরাটা মানব জীবনকালই একটি গন্ডিবাধা নিয়মের মধ্যেই চলে। এই গন্ডিবদ্ধ নিয়মের মধ্যেই আল্লাহ মানুষকে আবার দিয়েছেন মুক্ত চিন্তার ক্ষমতা যাকে বলে ফ্রিডম ও উইসডম । যাতে করে সে তার ভাল মন্দ নীজেই বুঝে নিতে পারে ।


জন্মিলে মরতে হবে এ কথা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে।
کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ نَبۡلُوۡکُمۡ بِالشَّرِّ وَ الۡخَیۡرِ فِتۡنَۃً ؕ وَ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ
প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে৷ আর আমি ভালো ও মন্দ অবস্থার মধ্যে ফেলে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছি, শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে আমার দিকে ফিরে আসতে হবে৷ (সূরা আম্বিয়াঃ ৩৫) আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন,
کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ ؕ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ
প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কিয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ বদলা দেওয়া হবে। তারপর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।(সুরা আল ইমরান: ১৮৫)। দুনিয়াতে যেই আসবে তাকেই চলে যেতে হবে। এখানে আসার অর্থই তাকে যেতে হবে। আর আসার পর থেকেই যাওয়ার সময় এগুচ্ছে। একজন মানব সন্তান আসার পর থেকে আমরা দেখছি সে বড় হচ্ছে। কিন্তু আসলে তার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। যাওয়ার দিকে সে অগ্রসর হচ্ছে। ইসলামী দর্শন এবং ভাবধারায় মৃত্যু একটি নিশ্চিত এবং অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার। এর দ্বারা শুধুমাত্র জীবনের পরিসমাপ্তি বুঝায় না বরং এর দ্বারা বুঝায় আত্মার অবস্থার পরিবর্তন। ইসলামী বিশ্বাস মতে সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ) এই জগত এবং জীবন সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে। মৃত্যুর দ্বারা মানুষের জাগতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে মানবজাতিকে তার মৃত্যুর কথা অবহিত করেছেন। নবী-রাসুলগন তাঁদের উম্মতদের পার্থিব জীবনের পর আরেকটি জীবনের কথা বর্ণনা করেছেন। মানুষকে মৃত্যুর কথা অবহিত করার কারণ হলো, যাতে তারা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। মৃত্যুর পর যদি আর কোনো জীবন না থাকত, তাহলে মৃত্যু নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ থাকত না। মৃত্যু যদি জীবনাবসানের নাম হতো, তবে পৃথিবীতে যার যার ইচ্ছামতো চলার সুযোগ থাকত। কিন্তু মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করে যে মৃত্যু মানে এক জীবন থেকে আরেক জীবনে প্রত্যাবর্তন। একটি জীবন শেষ করে আরেকটি নতুন জীবনের সূচনা করা। দুনিয়ার জীবন অস্থায়ী, আর পরকালের জীবন স্থায়ী। দুনিয়ার সুখ-শান্তি আখিরাতের সুখ-শান্তির তুলনায় তুচ্ছ ও অতি নগণ্য। আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু কখন, কার কোন জায়গায় মৃত্যু হবে, তা গোপন রেখেছেন।

মৃত্যুর সময় অজ্ঞাত হওয়ার কারণে মানুষ মনে করে সে দীর্ঘজীবী হবে, এমনকি মৃত্যুর কথাও ভুলে যায়। মানুষ তার মৃত্যুর কথা জানলেও জানেনা তার মৃত্যুর তারিখ ও সময়। মানুষ একেক জন একেক সময় মৃত্যুবরণ করে। তবে তার মৃত্যুর সময় ও তারিখ নির্দিষ্ট।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে সেভাবে ভয় কর; যেভাবে ভয় করা উচিত। এবং অবশ্যই (সবধান!) মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১০২)

ছোট্ট একটি শব্দ মৃত্যু! এক শব্দে শেষ হয়ে যায় একটি অধ্যায়। মৃত্যু এমনই এক শব্দ, যা আমাদের নিয়ে যায় অজানা কোন রাজ্যে, যার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে কেউ যেতে চায় না। কিন্তু যখন মৃত্যুর ডাক এসে যায়, প্রিয়তমা স্ত্রী, আদরের সন্তান, বাবা-মা কেউ তাদের বন্ধন দিয়ে ধরে রাখতে পারে না। আমরা প্রতি মুহূর্তে এই মৃত্যুকে নিজের সাথে বয়ে বেড়াই। কেউ জানি না এক মিনিট পরে এই পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকবো কিনা। ইসলাম মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে বেশ স্পষ্ট করেই বর্ণনা করেছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
اِنَّمَا یَسۡتَجِیۡبُ الَّذِیۡنَ یَسۡمَعُوۡنَ ؕؔ وَ الۡمَوۡتٰی یَبۡعَثُهُمُ اللّٰهُ ثُمَّ اِلَیۡهِ یُرۡجَعُوۡنَ
‘যারা (তাদেরকে প্রদত্ত বিচারবুদ্ধি নিয়ে) শোনে, তারাই সত্যের ডাকে সাড়া দেয়। মহাবিচার দিবসে আল্লাহ মৃতদের পুনর্জীবিত করবেন। তারপর তারা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে।’ (সূরা আনজাম, আয়াত ৩৬)। অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে
یُخۡرِجُ الۡحَیَّ مِنَ الۡمَیِّتِ وَ یُخۡرِجُ الۡمَیِّتَ مِنَ الۡحَیِّ وَ یُحۡیِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَا ؕ وَ کَذٰلِکَ تُخۡرَجُوۡنَ
তিনিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটান
یُخۡرِجُ الۡحَیَّ مِنَ الۡمَیِّتِ وَ یُخۡرِجُ الۡمَیِّتَ مِنَ الۡحَیِّ وَ یُحۡیِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَا ؕ وَ کَذٰلِکَ تُخۡرَجُوۡنَ
এবং ভূমির মৃত্যুর পর ওকে পুনর্জীবিত করেন। আর এভাবেই তোমাদেরকেও (মাটি থেকে) বের করা হবে (সুরা রূম আয়াত ১৯)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে যেহেতু তার মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন, সেহেতু তার উচিত হবে মৃত্যুর জন্য সদা প্রস্তুত থাকা। আর মুমিন যেহেতু বিশ্বাস করে তার মৃত্যুর পরে আরেকটি জীবন আছে, সেহেতু তার কর্তব্য হলো পারলৌকিক জীবনের সুখের জন্য কাজ করা। মুমিনদের উচিত, সর্বপ্রকার গর্ব-অহংকার, অন্যায়-অবিচার, পাপাচার ইত্যাদি অপকর্ম বর্জন করে স্বীয় প্রভুর নির্দেশমতো পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র জীবন লাভ করা এবং আখিরাতের সুখ-শান্তি কামনা করা। সময় বয়ে যাচ্ছে, জন্মের সাথে সাথে জীবন নামক সূর্য ক্রমে অস্তমিত হওয়ার দিক ধাবিত হচ্ছে। মৃত্যুর ভয় নয়, সময় থাকতে মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আল্লাহপাক ও রাসুলের (সাঃ) এর পবিত্র কুরআন-হাদিসের আলোকে কায়মনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইবাদত-বন্দেগি ও আমলে সালেহ সৎকর্ম করি এবং পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামের আলোকে জীবন পরিচালনা করি। এতে আমরা আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করে আখেরাতে নাজাত লাভে সমর্থ হব। আল্লাহ তাআলা আমাদের পরকালের সুখ-শান্তির জন্য বেশি বেশি করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আল্লাহ তায়ালার সৃস্টি মানব জন্ম হতে মৃত্যুর মাধ্যমে তাঁর প্রতিশ্রুত তার দিকেই প্রত্যাবর্তনের ধারাবাহিক কাহিনী ও বিবরণে নীজের আত্মপলব্দির সুযোগ বেশী করে জানতে পারলাম বেশি করে পবিত্র কুরাআনে থাকা তারইঁ বাণী সমুহ পাঠে ও তার মর্মার্থ অনুধাবনে ।

আমাদের এই দেহ যন্ত্রটি নিয়ে্ কুরআনের কথামালা ও মানবদেহের গঠন, কার্যাবলী, সচল, অচল ও তা নিরাময় নিয়ে জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে আজতক হয়েছে টনকে টন গবেষনা আর পুস্তক রচনা । তারপরেও জীব ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন তারা মানব দেহের গঠণ কার্যাবলী বৈশিষ্ট, সয়ংক্রিয়তা, বৈকল্য ও নিরাময় ক্ষমতা নিয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র খুব সামান্যই জানতে পেরেছেন । অজানা ও অচেনা অনেক রোগ মানুষের দেহে বাসা বেধে চলেছে নিরন্তর , যেমন মাত্র কিছুদিন আগে সারা দুনিয়ার মনুষ্য সমাজে তান্ডব সৃস্টিকারী কভিড‌১৯ অতি ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস কি লিলাই না দেখিয়ে গেল বিশ্ববাসীকে । আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানী ও হিকমতে তারই দেয়া জ্ঞান কাজে লাগিয়ে মানুষ এর মোকাবেলা করতে কিছুটা সক্ষম হয়েছে। তবে এই ভাইরাসের তান্ডব লীলা এখনো হয়নি নির্মুল এই ধরাদাম হতে । এটা নির্মুল না হতেই নতুন সিনড্রোম নিয়ে নীচের ছবিটির মত নিউ কভিড ভেরিয়েন্ট ভাইরাস এসে গেছে আরো মারাত্মক আকারে হানা দেয়ার তালে ।


মুক্তির উপাই হলো এর সৃষ্টিকর্তা আল্লার কাছেই পানা চাওয়া আর এর হানাকে প্রতিরোধের জন্য পার্থিব বাহানা (ঔষধ, টিকা উদ্ভাবন) ও অপার্থিব পন্থা তথা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাহায্য কামনা করা , আল্লার সকল বিধিবিধান( ধর্মীয় ও জাগতিক ) মেনে চলে নীজের দেহযন্ত্রটিকে বিধাতা নির্ধারিত স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে চালনার চেষ্টা করা, ও তার কাছেই পানা চাওয়া । উল্লেখ্য হালাল পথে জীবন যাপন ,আহার, পানাহার, ভোজন , আর ধর্মাচার যথা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম পালন ও সাধন মানুষের দেহযন্ত্রটিকে সুস্থ আর নিরোগ রাখতে সাহায্য করে বিবিধ প্রকারে। আমাদেরকে এত বৈশিষ্টময় সুন্দর দেহ ও অঙ্গ প্রতঙ্গ দিয়ে তৈরী করে আমাদের জীবনকে এত বৈচিত্রময়তা ও সুন্দর পৃথিবীর বুকে কিছুকালের জন্য আনন্দের সহিত বিচরণের তৌফিক দানের জন্য আসুন সকলেই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শোকর গুজার করি পবিত্র কুরআনে থাকা তাঁরই শিখানো কথামালা দিয়ে ।
رَبِّ اَوۡزِعۡنِیۡۤ اَنۡ اَشۡکُرَ نِعۡمَتَکَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ وَ عَلٰی وَالِدَیَّ وَ اَنۡ اَعۡمَلَ صَالِحًا تَرۡضٰىهُ وَ اَدۡخِلۡنِیۡ بِرَحۡمَتِکَ فِیۡ عِبَادِکَ الصّٰلِحِیۡنَ
হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর (সুরা আন নামল আয়াত ১৯)।

এতক্ষন নীজের দেহ ও দেহাভ্যন্তরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আল্লার তায়ালার নিপুন সৃষ্টি ক্ষমতার যতসামান্য উপলব্দি করলাম । আল্লাহর সৃষ্টি একজন মানুষের অঙ্গ প্রতঙ্গের গঠন বৈশিষ্ট ও তাদের সুসামঞ্জস্যমন্ডিত কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এক সাগর পানি দিয়ে কালি বানিয়ে লিখেও তা শেষ করা যাবেনা ।
আল্লাহ নীজেই বলেছেন,
قُلۡ لَّوۡ کَانَ الۡبَحۡرُ مِدَادًا لِّکَلِمٰتِ رَبِّیۡ لَنَفِدَ الۡبَحۡرُ قَبۡلَ اَنۡ تَنۡفَدَ کَلِمٰتُ رَبِّیۡ وَ لَوۡ جِئۡنَا بِمِثۡلِهٖ مَدَدًا
বল, ‘আমার রবের কথা লেখার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়ে যায়, তবে সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে আমার রবের কথা শেষ হওয়ার আগেই। যদিও এর সাহায্যার্থে অনুরূপ আরো সমুদ্র নিয়ে আসি( সুরা আল কাহফ , আয়াত ১০৯)
وَ لَوۡ اَنَّ مَا فِی الۡاَرۡضِ مِنۡ شَجَرَۃٍ اَقۡلَامٌ وَّ الۡبَحۡرُ یَمُدُّهٗ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ سَبۡعَۃُ اَبۡحُرٍ مَّا نَفِدَتۡ کَلِمٰتُ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ
দুনিয়ার সব গাছ যদি কলম হয় আর সমুদ্র (কালি হয়) আর তার সাথে আরো সাত সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহর (প্রশংসার) কথা (লেখা) শেষ হবে না। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞার অধিকারী( সুরা লোকমান আয়াত ২৭) ।

বার্ধক্য জনিত বিবিধ রোগব্যধির কারণে দেহযন্ত্রটি ভাল যাচ্ছেনা। আমার জন্য সামুর সকল প্রিয় ভাই বোনের কাছে দোয়া চাই ।
নীজের অজান্তে কারো মনে যদি কোন দুঃখ , কষ্ট, যন্ত্রনা দিয়ে থাকি তাহলে নীজ গুণে ক্ষমা করার জন্য বিনীত আর্জি জানাচ্ছি ।

কষ্ট করে এতক্ষন ধৈর্য ধরে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।

সকলের প্রতি শুভেচ্ছা ও দোয়া রইল । আমীন


তথ্য সুত্র
১)পবিত্র কোরআনুল করিম , অনুবাদ ও তাফসির , মুল-মুফতি মুহাম্মদ শাফী (র.), বাংলায় অনুবাদ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, প্রকাশক খাদেমুল হারামাইন, শরীফাইন বাদশাহ ফাহদ কুরআন মুদ্রন প্রকল্প , মদিনা , সৌদি আরব , প্রকাশকাল ১৪২২হি.)।
২) তাফসির ইবনে কাসির,১ম,২য় ও তৃতীয় খন্ড,মুল হাফেজ ইমাদুদ্দিন ইবনু কাসীর (র)
অনুবাদ ড.মোহাম্মদ মুজীবুর রহমান , প্রকাশক, তাফসির পাবলিকেশন কমিটি, ঢাকা বংলাদেশ , প্রকাশকাল ১৯৮৬( প্রথম প্রকাশ) ।
৩) Human body @ https://www.britannica.com/science/human-body ( accessed on 15 February 2024)

ছবিসুত্র
গুগল অন্তরজালের পাবলিক ডোমেইন হতে নেয়া হয়েছে বেশ কিছু ছবি, তারমধ্যে অবশ্য অনেক ছবির পকৃত সুত্রের হদিছ পাওয়া যায়নি, তারপরেও সে সমস্ত ছবির প্রকৃত উৎসের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৫:৪৬
৫৬টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের উচিত তাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করা এবং বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।

লিখেছেন জ্যাকেল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা বরাবরই সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্য প্রকাশ, জনমতের প্রতিনিধিত্ব এবং গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে যে, বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার সাজিদ কমেন্ট অফ রাখায় এখানে লিখছি (সাময়িক)

লিখেছেন মিরোরডডল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৫


সাজিদের বিদায় পোষ্ট দেখলাম, কমেন্ট সেকশন বন্ধ রাখায় ভাবলাম এখানেই লিখে যাই।

জানিনা কি বলবো, হয়তো এটাই দেখা বাকি ছিলো।
চলে যাবার কারণ জানিনা কিন্তু অনুমান করতে পারছি।
Man! you shouldn't leave.

ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হতে যাচ্ছেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭


আজকাল মানুষ চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে। কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এই কথা আরো বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কখনো বিদায় বলতে নাই

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



ব্লগে কিছুদিন ধরে অনিয়মিত হওয়ায় কখন কি ঘটে জানি না।
কিছুক্ষণ আগে মিররডলের একটা পোস্টে জানতে পারলাম , ব্লগার আমি সাজিদ ঘোষণা দিয়ে ব্লগ ছেড়েছেন । তার সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তীব্র নিন্দা জানাই

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৭



চাঁদগাজী একজন গ্রেট ব্লগার। তার তুলনা হয় না।
সামু তার সাথে বারবার অন্যায় করেছে। একটা দিন তাকে শান্তিতে ব্লগিং করতে দেওয়া হয়নি। সামুর ইতিহাসে তাকে সবচেয়ে বেশি বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×