পুর্বের পর্ব সমুহ
পরশ পাথর প্রাপ্তি: পর্ব-১
পরশ পাথর প্রাপ্তি : পর্ব-২
বাড়ীর পুর্ব দিকের বিল থেকে একটি সরু খাল দক্ষীন মুখী হয়ে গিয়ে পড়েছে নদীর ঘাটের বাপাশ দিয়ে নদীতে। খালের দু’পাশেই ঘন বন ও বাশের ঝাড়। আবার খালটি নদীর সাথে যেখানে মিশেছে সেখানে নদীর ঘাটের এক পাশে খানিক দুরে রয়েছে একটি শ্মশান। এলাকার হিন্দুরা মারা গেলে ঐ শ্মশান ঘাটে এনে মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করে । শ্মশানে বছরে মাত্র দু’তিনটি মৃত দেহ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য আসে। খালের অপর পাশে নদীর তীরে বাস করত এলাকার একটি হিন্দু ধোপা পরিবার । ধোপাটার নাম ছিল রায়া ও ধোপীকে আমরা সকলে দিগ্গয়ার মা বলে ডাকতাম। দুজনেই ছিল আধা পাগলা। ১৯৬৫ সনে পাক ভারত যুদ্ধের সময় রায়ট লেগে গেলে এলাকায় হিন্দুরের উপর বেশ বিপদ নেমে আসে, জায়গা জমি দখলের জন্য সুযোগ সন্ধানী কিছু লোক রাতের আঁধারে হিন্দুদের উপরে চড়াও হতো। মাত্র ১৭ দিনের মাথায় পাক ভারত যুদ্ধ থেমে গেলেও হিন্দুদের উপর সহিংসতা কমেনি।
ধোপাধোপীর একমাত্র ছেলে দিগু ও তার বউ বাপ মায়ের জমি জমা পানির দামে গোপনে কয়েকজনের কাছে বিক্রয় করে তাদেরকে এখানে ফেলে রেখে ভারতে চলে যায়। জমি সন্তান হারানোর কারণে ধোপা ধোপি পাগল হয়ে গেছে বলে সবাই বলাবলি করত। এই ধোপা-ধুপী সকল সময়ই এটা সেটা নিয়ে নীজেদের মধ্যে ঝগড়া ঝাটি ও কথা কাটাকাটি করত । রায়া বলত সে রামের ধোপা আর দিগুর মা বলত সে সীতার ধোপা, তাই কেও কাওরে ছেড়ে কথা বলতনা ।
ছবি-২ : নদীর ঘাটে ধোপাধোপীর ছবি
দিন কয়েক আগে আমরা বন্ধুরা দুপুর বেলায় গোছলের জন্য সবে মাত্র নদীর ঘাটে গিয়েছি। সে সময় দেখতে পাই বাড়ীর সামনে নদীর পারে সরিষার বীজ বপনের জন্য সদ্য চাষ দেয়া জমিতে বড় দুটি ঢেলার উপরে বসে ধোপা ধোপী তুমুল ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি করছে। তাদের অবস্থা দেখে আমরা বলাবলি করছিলাম পাগলা পাগলি এখনই লেগে যাবে। এমন সময় চোখের পলক পড়তে না পড়তেই দেখা যায় দিগুর মা রায়াকে বড় একটা শক্ত ঢেলা দিয়ে শরীরের বিশেষ সংবেদনশীল স্থানে কষে আঘাত করছে। ঢেলার আঘাত খেয়ে মাগো বাবাগো বলে রায়ার সে কি চিৎকার। রায়ার মাগো বাবাগো মরে গেলাম মরে গেলাম চিৎকার শুনে আমরা দৌঁড়িয়ে গিয়ে দেখি রায়ার অবস্থা কাহিল। সকলেই ধরা ধরি করে তাকে ঘরে নিয়ে যাই। বৃদ্ধ রায়ার চিকিৎসার জন্য এলাকার পুরানো কালী ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে আসা হয় ।মাস খানেক ভোগার পরে দারুন অসুখে বৃদ্ধ রায়া মারা যায়। তাকে ঐ শ্মশানে সংকার করা হয়। আমরা দুরে দাড়িয়ে দেখেছি তাকে আগুনে পুড়িয়ে কি ভাবে সৎকার করা হয়েছে।শুকনা কাঠের স্তুপের ভিতরে তার দেহ রেখে আগুনে পুড়া দেয়ার সময় তার হাত পা বেঁকে উঠলে বড় একটি বাশের লাঠি দিয়ে বাকা হয়ে যাওয়া হাত পাগুলিকে আগুনে ঠেলে দেয় ভাল করে পুড়ার জন্য। আগুনে পোড়া দেহের ভস্ম ও কয়লা পরে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয় ।
ছবি-৩ : শ্মশানে চিতদাহের একটি ছবি
আমরা ছোট কালে শুনেছি যেদিন শ্মশানে কাওকে পুড়ানো হয় সেদিনটি যদি আমাবশ্যা তিথি হয় তবে সেদিন শ্মশানে ভুত পেত্নি আসে। ছোট কালে বড়দের কাছে ভুত পেত্নির গল্পই শুধু শুনেছি কিন্তু তাদেরকে চোখে কখনো দেখিনি। তাই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম সন্ধার পরে রাত একটু গভীর হলে শ্মশান ঘাটে গিয়ে দুর থেকে চুপি চুপি ভুত পেত্নি দেখে আসব, আবার কবে না কবে পুড়াবার জন্য শ্মশানে মৃত দেহ আসবে তার কোন ঠিক নাই , তাই এ সুযোগ কিছুতেই ছাড়া যায় না। যা ভাবা সেই কাজ। রাতে খাবারের পরে বাহির বাড়ির ঘরে আমরা চাচা ভাতিজা দুজনে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়ি। ঘুম কি আসে, ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকি।অপেক্ষায় থাকি চাচা কখন ঘুমাবে। কিন্তু কাকা ঘুমাচ্ছেনা দেখে বিরক্তি ধরে যায়।আমি জানি দুজনে শুয়ে থাকার সময় কাকাকে গল্প বলতে বললে উনি যে কোন একটি গল্পের কিছুটা বলা শুরু করেই ঘুমিয়ে যান । তাই কাকাকে একটি গল্প শুনাতে বললাম । কাকা ধমক দিয়ে বললেন এখন কোন গল্প টল্প হবেনা ,নদের চাদ ও মহুয়ার ব্যপার সেপার নিয়ে বড় চিন্তায় আছি্, বুঝলাম কাকাকে মহুয়া পালাগানের বিষয় আছর করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে আমাদের এলাকার গান পাগল অবস্থাসম্পন্ন চিরকুমার ইদ্রিশ মাষ্টার তাঁর প্রাইমারী স্কুলের মাষ্টারী চাকুরী ছেড়ে দিয়ে একটি গানের দল গঠন করে এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পালাগান ও যাত্রার আসর বসাতেন । সারারাত ধরে চলত তার পালাগান । কোনদিন চলত রুপবান ,কোনদিন আলুমতি,কোন দিন ছয়ফলমুল্লুক ও বদিউজ্জামাল,কোনদিন বেদের মেয়ে মহুয়ার পালাগান চলত ।ইদ্রিশ মাষ্টার পরিচালিত ছয়ফলমুল্লুক ও বদিউজ্জামান পালাগানটি অনুসরনে আমি ছয়ফল মুল্লুক- বদিরুজ্জামাল রূপকথার সচিত্র কাব্যগাথা ( ১ম পর্ব ) নামে সামুতে একটি লেখাও প্রকাশ করি ।
সেথায় ছিল কাব্যাকারে লেখা কিছু কথা ও ছবি যথা-
সাদা মেঘ ধীরে ধীরে লেকের পাড়ে নেমে এসে হল প্রকাশ অপরূপা এক সুন্দর পরীর
মেলে দিল অঙ্গ স্বর্ণালীকেশ সুবর্ণ নেত্র, দেহটিও চন্দ্রপ্রভা, ডানা দুটি যেন উড়ন্ত শুভ্র শীখা
ছবি-৪ : পরীরূপী বদিরুজ্জামালের ছবি
তারপর ছয়ফুল দেখে বদর জামাল পাখনা খুলে লেকের জলে নামে সকলের শেষে
পটল চেড়া দুটি চোখ,দীঘল চুল, পুর্ণচন্দ্র মুখখানি ছলাত করে পানিতে উঠে ভেসে।
এর পর কি হল তা ছয়ফল মুল্লুকের মুখেই শুনা যাক
জামাল রূপে পাগল হয়ে
দেশ ছাড়িলাম জাহাজ লয়ে
ডুবল জাহাজ লবলং সাগরে ,
আমারে যে ধইরা নিল
দেও দানবে ।
উল্লেখ্য নীল নদের দেশ মিশরে বাস করত ছয়ফুল মুল্লুক নামে এক যুবরাজ । আর জামাল পরীকে খুঁজতে গিয়ে যে লবলং সাগরে তার জাহজটি ডুবল সেটি হলো মিশর আর সৌদী আরবের মাঝখানে থাকা আজকের লোহিত সাগর যা বিশ্বের সবচেয়ে লবণাক্ত সাগরগুলির একটি।
ছবি-৫: লবলং তথা লোহিত সাগরের ছবি
যাহোক, দুর দুরান্ত হতে মানুষ এসে এ সব পালাগান দেখতো শুনতো । সারারাত ধরে চলত নাচগান । কাকা কোনটিই বাদ দিতেন না । গতকাল রাতে তিনি তার সমবয়সিদেরকে নিয়ে পাশের গ্রামে অনুষ্টিত বেদের মেয়ে মহুয়া পালাগানটি দেখতে গিয়েছিলেন। দাদার চোখকে ফাকি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে সারারাত জেগে পালাগান শুনে দিনের বেলায় একটি লম্বা ঘুম দিয়েছেন । এখন রাতের খাবার খেয়ে আগের দিনের দেখা পালা গানের কাহিনী ও গান গুলি নিয়েই চিন্তায় ছিলেন।মাঝে মাঝে একটু গুনগুনিয়ে কি সব কথামালা বলে গানের সুরে টান দিতেন।বুঝলাম কাকাকে আগের রোগে ধরেছে। কথন যে আজ ঘুমাবে তা আল্লাই জানে । আমি জানি তাকে চিন্তার জগত হতে গল্প কথার মধ্যে নামিয়ে আনতে পারলে অল্পক্ষনের মধ্যেই তার পুর্ব অভ্যাস মত ঘুমিয়ে পরবে , আমিও চলব ভুত দেখার জন্য নদীর ঘাটের পানে ।
এই কথা ভেবে কাকাকে বললাম চিন্তা বাদ দিয়ে গতকালের দেখা তোমার মহুয়া পালাগানের গল্পটাই একটু বল । কাকা বললেন ভাল কথাই বলেছিছ, তাহলে মহুয়ার গল্পটিই শুন । আমি বললাম মহুয়াটা আবার কে? কাকা বললেন বেশি প্রশ্ন না করে মনোযোগ দিয়ে গল্প শুন, তোর সব প্রশ্নের উত্তর পাবি । এ কথা বলে কাকা শুরু করল, মহুয়া হল হুমরা বাইদ্যার মেয়ে। হুমরা বইদ্যার দল ঘাটে ঘাটে নোঙর ফেলত ও হাট বাজারে পাড়ায় সাপের খেলা দেখাত।একদিন হুমরা বাইদ্যার দল নদের চাঁদের জমিদারী এলাকায় গ্রামে সাপের খেলা দেখাতে আসে। তখন মহুয়ার রূপে মুগ্ধ হয়ে নদের চাঁদ তাকে প্রেম নিবেদন করে। আমি বললাম প্রেম জিনিসটি আবার কি? কাকা বললেন চুপ কর, এত বুঝার কাম নাই যা বলছি তাই এখন শুন । বড় হলে বুঝবে প্রেম কি জিনিষ, তখন তুই আমার থেকে পালিয়ে থাকবে । আমি বললাম তাহলে আর শুনে কাম নাই , তুমি এখন ঘুমাও। কাকা বললেন বলা যখন শুরু করেছি তখন শেষ না করে ঘুমাতে পারবনা । আমি জানতাম গল্প একটু বলার পরেই কাকা ঘুমিয়ে পড়বে, তাই বললাম বেশ তাহলে তোমার গল্প বলা আবার শুরু কর।
কাকা বললেন মহুয়ার রূপে-গুণে মুগ্ধ নদের চাঁদ তৎক্ষণাৎ তার প্রেমে তো পরলই , হাজার টেকার শাল দিল আরো দিল টেকা কড়ি, বসত করতে হুমড়া বাইদ্যারে দিল একখান বাড়ী। আমি কাকাকে জিজ্ঞেস করলাম মহুয়ার রূপ কেমন ছিল , কাকা বললেন সেটা তোকে কেমনে বুঝাই? আমি বললাম দাঁড়াও,তোমার বই এর তাকে থাকা একটি বইএর উপরে একটি সুন্দর মেয়ের ছবি দেখেছি , উঠে গিয়ে নিবু নিবু হরিকেনের আলো উসকে দিয়ে বইটি নিয়ে ছবিটি কাকাকে দেখায়ে বললাম দেখতো এমন নাকি , কাকা বলল দুষ্ট কোথাকার, তুই আমার বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করিছ , এই কাজ আর করবিনা, তবে তুই ঠিকই ধরেছিছ, মহুয়া দেখতে এমনই রূপবতি। বললাম ঠিক আছে,তোমার বই নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করবনা, এখন তোমার গল্প বলা শেষ কর দেখি।
ছবি-৬ : বেদের মেয়ে মহুয়ার ছবি
কাকা বললেন নদের চাদের উদ্দেশ্য ছিল মহুয়া তার এলাকায় স্থায়ী হোক। হুমরা বেদে উপহার গ্রহণ করল , পাশের গ্রাম উলুয়াকান্দায় গিয়ে বাড়ি বানাল। এই পর্যন্ত বলে কাকা শুরু করল একটি গান-(অনেক বছর পরে গানের সব কথাগুলি জানতে পারি ময়মনসিংহ গীতিকায় থাকা মহুয়ার কাহিনী পাঠে)
নয়া বাড়ী লইয়া রে বাইদ্যা বানলো জুইতের ঘর,
লীলুয়া বয়ারে কইন্যার গায়ে উঠলো জ্বর।
নয়া বাড়ী লইয়া রে বাইদ্যা লাগাইল বাইঙ্গন,
সেই বাইঙ্গন তুলতে কইন্যা জুড়িল কান্দন।
কাইন্দ না কাইন্দ না কইন্যা না কান্দিয়ো আর,
সেই বাইঙ্গন বেচ্যা দিয়াম তোমার গলায় হার।
এই গানের কথাগুলি তখন এলাকায় চলতি পথে কিশোর যুবাদের কণ্ঠে, রাখাল বালক আর নৌকার মাঝি, ফসলের খেতে কাজ করার সময় অনেক চাষীর কন্ঠেই শুনা যেতো জোড়ালো আওয়াজে ।
যাহোক, বুঝলাম চাচা ভাতিজার ঘুম আজ হারাম, কাকার মুহুয়ার পালাগান শেষ হতে রাত না আবার পার হয়ে যায়, আমি কি আর গল্প শুনার মধ্যে আছি, আমি চাই কাকা তাঁর অভ্যাস মত গল্প বলতে বলতে ঘুমিয়ে যাক আর আমি যাই শ্মশান ঘাটে । তাই কাকার গান থামানোর জন্য বললাম কাকা আর তর সইছেনা তার পর কি হল তারাতারি বল। এ কথায় গান থামিয়ে কাকা বলা শুরু করলেন হুমরা বেদের চোখ ফাকি দিয়ে নদের চাদ নিত্যই মহুয়ার সাথে দেখা সাক্ষাত করে ।কিন্তু দুজনের দেখা সাক্ষাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরদার হুমরা বেদে। একদিন নদের চাঁদ মহুয়াকে নিয়ে পালিয়ে যায়। গল্পটা ভালই লাগতেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কাকা নিশ্চুপ হয়ে যায় ।ক্ষানিক পরেই শুনা গেল নৌকার দাঁড় টানার শব্দের মত কাকার নাসিকা গর্জনের শব্দ । এ অপেক্ষাতেই ছিলাম।মনে মনে বললাম কাকা তুমি শান্তিতে ঘুমাও আজ তোমার ভাতিজা তোমাকে ভুত দেখায়েই ছাড়বে, তার আগে শ্মশান ঘাটে গিয়ে দেখে আসি ভুত বস্তুটা দেখতে কেমন ,আর ভুতেরা রাতের বেলায় শ্মশান ঘাটে করেইবা টা কি। চুপি চুপি বিছানা ছেড়ে উঠে আগে থেকেই যোগার করে রাখা কালো চাদরটি গায়ে জড়িয়ে শ্মশান ঘাটের উদ্দেশ্যে ঘর হতে বেরিয়ে পরি। ঘর হতে বের হওয়ার পরে যে সমস্ত ঘটনা ঘটল সে এক বিরাট কাহিনী।
কিন্তু এই কাহিনীটা প্রায় অর্ধ শতাব্দি পরে স্মৃতিকথন হিসাবে লেখার অনেক পুর্বেই ছেলেবেলায় কাকার মুখে শুনা মহয়া কিছছা কাহিনীটি ময়মনসিংহ গীতিকায় আরো বিষদভাবে পাঠ করে ছিলাম। একারণে স্মৃতির মনিকোঠায় জমে থাকা ময়মনসংহ গীতিকায় থাকা কাহিনীগুলি এক এক করে বেরিয়ে এসে ঐ রাতে শ্মশান ঘাটে দেখা কাহিনী লেখায় বিঘ্নতা সৃষ্টি করছিল বারে বারে । তাই লেখার বিঘ্নতা কাটিয়ে উঠার জন্য ময়মনসিংহ গীতিকা প্রসঙ্গ গুলি পরের পর্বে একটু বিষদভাবে লেখার জন্য তুলে রেখে শ্মশানঘাটে ভুত দেখার কথা বলায় মনোনিবেশ করলাম ।
ছেলেবেলায় আমি এক হুজুরের কাছে শুনেছিলাম, কাওকে জিন ভুত পেত্নিতে ধরলে তার হাতের কনিষ্ট আঙ্গুলে খুব জোড়ে চেপে ধরে ‘ইয়া আল্লা মুশকিল কুশা’ বললে ভুত নাকি ভয় পেয়ে বাপ বাপ ডেকে পালায়, এছাড়া এই কথা বললে ভুত নাকি ধারে কাছে আসতেও সাহস পায়না ।তাই বুকে সাহস নিয়ে ভুত যেন অন্ধকারে আমাকে দেখতে না পায় সে জন্য কালো চাদরটি দিয়ে ভাল করে আপাদ মস্তক ঢেকে মুখে ‘ইয়া আল্লা মুসকিল কুশা’ জপতে জপতে শ্মশান ঘাটের দিকে এগিয়ে গেলাম। শ্মশান ঘাটের কাছে গিয়ে চারপাশটা ভাল করে দেখে নিয়ে নদীর দিকে ঝুকে পরা বাঁকা তাল গাছটিতে হেলান দিয়ে বসে অধিক আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি কখন ভুত আসবে । অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়না, ভুত আসেনা। এসময় মনে পরে দাদীর কাছে শুনা ‘ঠাকুমার ঝুলিতে’ থাকা ভুত প্রেত রাক্ষস খোক্কস,দেও দানব ,ডাকিনী যোগিনীদের কথা ।সে সমস্ত গল্পে দাদীর মুখে শুনেছিলাম ভুতেরা নানা জাতের হয় ও তারা বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন সময়ে রাত নিশিতে মানুষের সামনে দেখা দেয়। যেমন-
পেত্নী নাকি একটি নারী ভূত, এরা যে কোন আকৃতি ধারন করতে পারে, তবে পেত্নীদের আকৃতিতে সমস্যা আছে, তাদের পাগুলো নাকি পিছনের দিকে ঘোরানো থাকে। তাই ভাবলাম পেত্নী আসলে কোন ভয় নাই, এরা হেটে আমার দিকে আসতে চাইলে পা পিছনের দিকে থাকে বলে এরা আমার কাছে আসতে চাইলে বরং আমার থেকে দুরেই চলে যাবে ।
ছবি-৭ : একটি পেত্নীর ছবি
শাকচুন্নি নাকি বিবাহিত মহিলা ভূত । তারা নাকি আম গাছে বসবাস করে । তাই এরা এখানে আসবেনা, কারণ আমিতো বসে আছি তাল গাছের তলে। আরো নাকি আছে পেঁচাপেঁচি ভুত।তবে এদেরকেও আমি ভয় পাইনা মোটেও, কত পেঁচাপেঁচি ধরেছি আমি গাছের ডালে চড়ে। মেছোভুতের কথা শুনেছি নসু কাকার মুখে ,এদের সাথে কাকার নাকি অনেকবার দেখা হয়েছে বিলে মাছ ধরার কালে। এরা নাকি নির্জন সময়ে খালে বিলে মাছ ধরার কালে কারো ডুলিতে ধরা মাছ থাকলে তাকেই ধরে মাছ খাওয়ার তরে । আমি তো মাছ ধরতে আসিনি কিংবা আমার কাছে কোন মাছ নাই, তাই এরা কেন আসবে আমার কাছে । তবে কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম দেও আর নিশি ভুতের কথা ভেবে। কারণ দেও ভুত নাকি নদী তীরেই বেশী থাকে।দাদীর কাছে গল্পে শুনেছি নিশি ভুতেরা নাকি সবচেয়ে ভয়ংকর জাতের ভুত ।আর এই নিশি ভুত নাকি রাত গভীরে এসে শিকাড় ধরে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে রাত গভীর হয়ে আসলে খালের উপর ঝুলে পরা শেওড়া গাছের ডালের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাশের শন শন শব্দ শুনতে পাই। উল্লেখ্য ছোটকালে অনেকের কাছে শুনেছি এ খালের উপর দিয়ে আমাবশ্যা তিথিতে ঘুড়ার মত দেখতে পাখাওয়ালা জন্তু জানোয়ার নাকি শন শন শব্দ করে ঝড়ের বেগে উড়ে যায় নদীর দিকে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যেতো কোন রকম ঝড় বৃষ্টি ছাড়াই খালের পাড়ের বড় কড়ই গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে আছে নীচে।মানুষে বলত এটা নাকি দেও আর নিশি ভুতেরই কাজ । অনেকের ধারনা এখানে এই খালের শেষ প্রান্তে নদীর তীরে মাটির নীচে নাকি প্রচুর সোনা রোপার গুপ্তধন রয়েছে, আর ভূতেরা নাকি সেটা পাহাড়া দিয়ে রাখছে,তাই রাত বিরাতে সেখানে খালের উপর দিয়ে নিশি ভুতের আনাগোনার আলামত পাওয়া যায়।
ভুতের অপেক্ষায় বাঁকা তাল গাছে হেলান দিয়ে বসে এসব কথাই ভাবতেছিলাম গভীরভাবে , তখন বাতাশের শন শন শব্দ ও আকাশে বিজলীর চমকানো দেখে মনে হল এখনই বুজি ভুত সেই উড়ন্ত ঘোড়ার বেশ ধরে মাথার উপরে চলে আসবে ।
B8 : ছবি-৮ : পঙখীরাজ ঘোড়াসম ভুতের ছবি
তবে আশার কথাও আছে । দাদীর কাছে ঠাকুমার ঝূলিতে থাকা গল্পে শুনেছি ব্রক্ষদৈত্যও নাকি আছে।এরা ভাল ও বিপদগ্রস্থ মানুষকে দুষ্ট ভুতের হাত হতে রক্ষা করে । তাই মনে সাহস এলো দুষ্টভুত যদি এসেই পড়ে তবে ‘ইয়া আল্লা মুসকিল কোশা’ জপতো অছেই সে সাথে ব্রক্ষদৈত্য এসে উদ্ধার করবে আমাকে।
ছবি-৯ : ব্রক্ষদৈত্যের ছবি
গল্পে এটাও শুনেছিলাম যে ডাকিনী মায়াবিনী নামেও নাকি এক জাতের ভুত আছে , এরা থাকে তাল গাছে । রাত নীশিতে গাছ হতে নেমে এসে শ্মশানঘাটে গিয়ে অন্য ভুতের সাথে পাখনা মেলে নাচে। এ কথা ভাবার সাথে মনে হল আমিতো সত্যিই এখন বসে আছি তালগাছের নীচে , এখানে এই ভুতদেরই আসার সম্ভাবনা বেশী একথা ভাবার সময় একটু তন্দ্রাভাব এসে গিয়েছিল।সেসময় আধা ঘুমে আধা জাগরনে মনে হল ভয়াল দর্শন বিশাল ধারালো নখ নিয়ে একটি অদ্ভুত দর্শন নারিমুর্তী পরীরমত পাখনা মেলে নেমে আসছে শ্মশান ঘাটের দিকে।
ছবি- ১০: ভীষণ দর্শন এক মায়াবিনী
এর পরে পরেই মনে হল ভয়াল দর্শন পাখনা ওয়ালা মুর্তীটিকে তাড়া করে একদিকে সুর্য আর দিকে চন্দ্রকে রেখে আকাশ হতে নীচে নেমে আসছে কয়টি সুন্দর পরি , আর তার নীচে নীচে নাচছে হাস্যোজ্জল অগনিত ভুতের মাথার খুলী ও কংকাল ।মনে হল এ যেন দাদীর কাছে শুনা ঠাকুমার ঝুরির গল্পের কাহিনীর মত পরী আর ভুতের ছবি ।মনে মনে ভাবলাম শ্মশান ঘাটে নীশিরাতে বিভিন্ন জাতের ভুতেরা বুজি এমনিভাবেই নাচানাচি করে।
ছবি -১১ : পরী আর ভুতের নাচানাচি
আমি যখন শ্মশান ঘাটে নদীর তীরে তাল গাছে হেলান দিয়ে আত্মহারা হয়ে অপুর্ব দর্শন ভুতেদের নাচানাচি কল্পনা করছি, সে সময় বাড়িতে ঘটে যায় আর এক মহাবিপত্তি । আমার বিড়ি খোর চাচা মাঝে মাঝে রাতে এক ঘুম দিয়ে উঠে প্রকৃতির ডাক সেরে দিয়াশলাই জ্বেলে টেন্ডো পাতার বিড়িতে আগুন ধরিয়ে পুরা বিড়ি শেষ করে লম্বা ঘুম দিতো। রাত গভীরে বিড়ি খাবেতো খা, সেদিনই তাঁকে বিড়ি খেতে হল। বিড়ি খাওয়ার জন্য দিয়াশলাই জ্বালিয়ে দেখতে পায় আমি বিছানায় নেই ।তাই আমার নাম ধরে খুবই ডাকছিল । তবে আমাকে পাবে কোথায়, আমিতো ভুত দেখার জন্য ঘর হতে বেড়িয়ে গেছি। আমাকে বাড়ীর আশে পাশে কোথাও না পেয়ে চিল্লা চিল্লি করে বাড়ীর সব লোকজনদের ঘুম ভাঙ্গিয়ে জড়ো করল। এদিকে বিপত্তি আর একটি নীজেই ঘটিয়ে রেখেছিলাম। দিন কয়েক আগে বাড়ীতে বেড়াতে আসা আমার সাথে সারাক্ষন এটা সেটা নিয়ে লেগে থাকা দুষ্টের শিরোমনি বড় ফুফুর বাচাল মেয়েটাকে বিকেল বেলায় কথাচ্ছলে বলেছিলাম আজ রাতে ভুত দেখতে শ্মশান ঘাটে যাব,ফিরে এসে তোকে ভুতের ভয় দেখাব। তখন আমার কথায় পাত্তা দেয়নি বরং কোমড় বাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে একটা ভীতুর ডিম বলে উপহাস করে বলে ছিল ‘যা যা তুই যদি ভুত হছ আমি হব তোর শাকচুন্নী’ ।
ছবি -১২ : শাকচুন্নীরূপি বাচাল মেয়েটি
এখন বাড়ীতে আমাকে না পাওয়ায় দুষ্টুটা সকলকে বলে দেয় ভুত দেখার জন্য আমি নাকি শ্মশান ঘাটে গেছি ।বড়রা তৈরী হয় শ্মশান ঘাটে আমাকে খুঁজতে যাওয়ার জন্য। মশালের আলোকে নাকি রাতের বেলায় ভুতেরা ভয় পায়, তাই বাঁশের চোংগার মাথায় নেকড়া বেধে তা কেরোসিন দিয়ে ভিজিয়ে মশাল জ্বালিয়ে দুই কাকা ছোটেন শ্মশান ঘাটের পানে। ছোট কাকা প্রায় দৌঁড়ে সকলের আগে পৌঁছে যায় শ্মশান ঘাটের কাছে। বিপত্তিটা বাধাল মশালের সাথে না গিয়ে আগেই আমার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে তাল গাছের কাছে পৌঁছে গিয়ে। তার চড়া গলার ডাক শুনে নদী তীরের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার ভুত দেখায় বিঘ্ন ঘটে । আচমকা তার ডাক শুনে মনে করেছি নিশী ভুত বুজি পিছন দিক হতেই এসে গেছে । ভুত দেখার জন্য যেইনা পিছন ফিরেছি তখন কালো চাদরে ঢাকা আমাকে দেখে ভুত মনে করে ছোট কাকা ভয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গোঙ্গাতে থাকে ,মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে ।
ছবি-১৩ : কাকাকে ভয় দেখানো ভুত
কাকা প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।কিছুটা হুস এলে বাপরে বাপ কত বড় ভুতরে বলে বির বির করতে থাকে । মেঝো কাকাতো রাগে গড় গড় করতে করতে আমাকে টেনে হিচরে বাড়ীর পথে নিয়ে চলে । ছোট কাকাকেও ধরাধরি করে বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়। বাড়ীতে নিয়ে এসে ছোট কাকাকে গায়ে সাবান মেখে গোসল করানো হয়। গোসল করানোর সময় কাকার হাতে পায়ে কাল কাল লম্বা অনেক চুল পাওয়া যায়। সবাই বলাবলি করছিল এগুলি নাকি ভুতের চুল । সকলের ধারনা ভুতে নাকি কাকাকে ধাক্কা দিয়ে মটিতে ফেলে দিয়েছে। আচমকা বাঁকা তাল গাছের নীচের ঢালু জায়গায় মাটিতে পরে যাওয়ায় কাকার বাদিকের চোয়াল সামান্য বেকে গেছে । সবাই বলছে এটা ভুতের থাপ্পর খেয়ে হয়েছে।আর ভুতটা নাকি তাল গাছে আমার উপর ভর করেই বসে ছিল। আমিতো ভালকরেই জানি কাকা ভুত দেখে নাই দেখেছিল কাল চাদরে মোড়া আমাকে । যাহোক, বিভিন্ন হট্টগোলে রাত পোহাল ।
সকালে কাকার বাঁকা চোয়াল সুজা করার জন্য পাশের গ্রাম থেকে রুস্তম ওজাকে ডেকে আনা হলে। ওঝা এসে মাটিতে ছোট গর্ত করে খাল পাড়ের রড় শেওড়া গাছের মরা ডাল কেটে তাতে আগুন ধরিয়ে তার ঝোলা হতে একটি হাতাওয়ালা কোদাল বের করে সেটাকে গনগনে আগুনের উপর রেখে টকটকে লাল করল ।পরে আগুনে তেতে উঠা কোদালটি কাকার চাপার কাছে নিয়ে বির বির করে কি সব মন্ত্রকথা বলে ছেকা দিল ।গরম কোদালের ছেকা খেয়ে কাকার চোয়াল মহুর্তেই সোজা হয়ে গেল। পরে ওজার কাছ হতে জানা গেল ভুতে ধরা রোগীদেরকে ওনি গরম কোদালের ছেকা থেরাপী দিয়েই ভাল করেন । কাকাকে তো ভাল করল, কিন্তু আমি ভীত হয়ে পড়লাম, আমার মধ্যে ভুতের কোন আছর পরেছে কিনা তা দেখার জন্য ওজা আমাকেও না তপ্ত কোদালের ছেকা দেয়?কিন্তু আমাকে কোদাল থেরাপী না দিয়ে শুধু আমার বাহাতের কনিষ্ট আঙ্গুলে খুব জুড়ে কিছুক্ষন চাপাচাপি করে ওজা ঘোষনা করল আমার উপরে এখন ভুতের কোন আছর নেই । যাক হাফ ছেড়ে বাচলাম ।
ছবি-১৪: ভুতে ধরা মানুষের চিকিৎসার জন্য কোদাল থেরাপী
কোদালের গরম ছেকা খেয়ে ভুতের ভয় দুর হয়ে কাকা ভাল হয়ে যায়। কাকাকে আসলে কোন ভুতে ধরে ছিল কিনা তা নিয়ে চিন্তায় পড়লাম , আমার কেবলি মনে হতো কাকা কোন ভুত দেখে নাই, কালো চাদরে দেখা আমাকে দেখে শুধু ভুতের ভয় পেয়েছিল।আর তাঁর গায়ে গতরে ভুতের কালো চুল পাওয়ার বিষয়টিও পরে আমার কাছে খোলাসা হয়েছে । দিনের বেলায় তাল গাছের নীচে গিয়ে দেখা গেল সেগুলি চুল নয়, বিষয় অন্য কিছু , সেগুলি ছিল তাল গাছের নীচে মাটিতে পরে থাকা পচা পাটের আশ। উল্লেখ্য বর্ষাকালে খালের পানিতে পাট গাছ জাক দিয়ে পঁচানোর পরে খালের পারে তালগাছের নিচে বসে পাটের আশ ছাড়ানো হতো। সে সময় পাট গাছের নীচের অংশের পঁচা ছোবরা মাটিতে ফেলে রাখা হতো যা দেখতে অনেকটা ছিল মানুষের মাথার লম্বা চুলের মত ,ভুত দেখে ভয় পেয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে গড়াগড়ি দেয়ায় সময় চুলের মত পঁচা পাটের আশ কাকারগায়ে গেগে গিয়েছিল, যাকে সবাই বলছে ভুতের চুল । এদিকে শ্মশান ঘাট হতে আমাকে ধরে আনতে গিয়ে কাকাকে ভুতে ধরার বিষয়টি বিবিধ মুখরোচক গল্পাকারে পাড়াময় ছড়িয়ে পড়ে।দেখা হলেই বন্ধুরা আমার কাছে জানতে চাইত ভুত দেখতে কেমন , ভুতের সাথে কোন কথা হয়েছে কিনা, ভুতেরা শ্মশানঘাটে রাতে কি করে ইত্যাদি বিষয়। কাকার অসময়ে ডাকাডাকির কারণে আমিতো সে দিন নীশি রাতে বেশিক্ষন শ্মশানঘাটে থাকতে পারিনি । ভুত দেখার সুযোগটাও তেমন পাইনি। তবে তাল গাছের গোড়ায় হেলান দিয়ে বসে ভুত বিষয়ে গভীর চিন্তামগ্ন হয়ে নদীর তীরে শ্মশান ঘাটে কাছে বসে কল্পনায় আসা ধাড়ালো নখওয়ালা মায়াবী ডাকিনীর সাথে ভুতেদের নাচানাচির কথাটা বলে দেই। কল্পনার কথাটি বাদ দিয়ে মঝা করার জন্য তাদেরকে বললাম শ্মশানঘাটে নিশী রাতে শুধু ভুতই আসেনা, মায়াবী ডাকিনী যোগীনীরাও নেমে এসে নাচনাচি করে। বললাম আমার কথা বিশ্বাস না হলে তারা যদি ভুত দেখতে চায় তবে সাহস করে নিশি রাতে কালো কাপরে আপাদমস্তক ঢেকে শ্মশান ঘাটে গিয়ে যেন গভীর চিন্তামগ্ন হয়ে ভুত আসার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে, শুধু খেয়াল রাখতে হবে উনারা যেন তাদেরকে দেখতে না পায়। তাহলে তারা অবশ্যই ভুত দেখতে পাবে এটা আমার পাক্কা প্রমিস ছিল তাদের কাছে ।
শ্মশানঘাটে গিয়ে এমনতরভাবে ভুত দেখার পরে বেশ কিছু দিন কেটে যায় । ভুলতে পারিনা নদী তীরে শ্মশান ঘাটে মায়াবী ডাকিনী যোগীনীদের সাথে ভুতের নাচানাচির কথা।অনেক সময় ভেবেছি এটা কি আমি স্বপ্নে কিংবা বাস্তবে না শুধু কল্পনায় দেখেছি। , তারপর মনে মনে ভাবি, না! আমিতো সে রাতে একটুও ঘুমাই নাই,শুধু একটু তন্দ্রাভাব এসেছিল , তাহলে স্বপ্নই বা দেখব কিভাবে। আবার ছোটকালে দাদীর কাছে শুনেছি ভুতেরা নাকি স্বপ্নে দেখা দিতে পারেনা। ভুতেদের সে ক্ষমতাই নাই। কেও যদি ভুত দেখে তবে তা বিশেষ অবস্থায় জাগরনেই দেখে, স্বপ্নে নয়।যদিও স্বপ্নে ভুতের মত কিছু দেখে তবে তা শুধুই প্রতিকী। সুতরাং স্বপ্নে দেখা ভূত কখনই প্রকৃত অর্থে ভূত নয়। তাই বিশ্বাস করতে শুরু করি, আমি মনে হয় সজাগ থেকেই আসল ভুত দেখেছি। কারণ জীবনে কত স্বপনই তো দেখেছি কিন্তু কোন দিন স্বপ্নে ভুত দেখি নাই,আর পরিচিত অন্য কারো কাছে স্বপ্নে ভুত দেখার কথাও তেমনকরে শুনি নাই, তবে অনেকেই স্বপ্নে ভুতুরে কান্ড ঘটতে দেখেছেন বলে জানা যায়,কিন্তু কান্ড ঘটানোর কর্তা মূল ভুতের সাক্ষাত কখনো পায়নি।
পরবর্র্তী সময়ে পরিনত বয়সে ভুত দর্শন বিষয়ে বিভিন্ন লেখা হতে জানতে পেরেছি যে মনের গহীনে জমে থাকা ভৌতিক বিষয়গুলি বিশেষ নৈসর্গিক অবস্থায় (যথা রাত্রী নিশিতে ভৌতিক একটি পরিবেশে) ভাবনার একটি স্তরে এসে বাস্তব উপলব্দির কাছাকাছি চলে আসে। তখন চিন্তার গভীরতা বৃদ্ধি পেয়ে চিন্তাযুক্ত উপলব্দিগুলি অনেক সময় আরো বিচিত্রভাবে মনসচক্ষে বাস্তবে দেখার ক্ষমতা সৃষ্টি করে । চিন্তিত বিষয়ের উপলব্ধি আরো গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে উঠলে মনোযোগ আরো বেশি গভীর অনুভবের স্তরের দিকে যায় । অনুভবের সে স্তরে তখনকার চিন্তাভুক্ত বিষয়গুলি মনুষচক্ষে ধরা দেয় ও সেগুলিকে বাস্তব বলে মনে হয়। সে সময়কার দেখা বিষয়গুলিকে অনেকেই হয়তো বলবেন দৃস্টিভ্রম, তবে সেটা মনের সাধারণ অবস্থায় ক্ষনিকের জন্যই ঘটে থাকে । কিন্তু আমার দেখা বিষয়গুলি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে একটি ভৌতিক পরিবেশে গভীরভাবে চিন্তামগ্ন হয়ে দেখা একটি বেশ লম্ব ঘটনা। তাই, গভীর রাত্রী নিশীতে নির্জন শ্মশান ঘাটে দেখা ভুত,মায়াবিনী আর পরিদের নাচা নাচিকে স্বপ্ন , বাস্তব বা কল্পনাপ্রসুত বলব সে প্রশ্নের উত্তর আজো পরিস্কার ভাবে মিলেনি ।
তবে একটি কথা সত্য বলে জানি সেটা হলো ভূত বিশ্বাসীদের মনে গেঁথে থাকে ভূত। কারণ জন্ম থেকে মানুষের অবচেতন মনে ভূত বেশ বড় একটা জায়গা করে নেয় । প্রচুর ভূতের গল্প শোনা মানুষের মনের অন্দরে ভুত বেশ থাবা গেড়ে বসে। এর ফলে মানসিক কাঠামোতেও ভূত তার পাকাপাকি একটা জায়গা করে নেয়। ভূত দেখার মানসিকতা নিয়ে The Houran and Lange model ( সুত্র https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/9229473/) মতবাদটি বলছে, একজন মানুষই অপরকে ভূত দেখতে উদ্বুদ্ধ করে। যদি একজন মানুষ কোনও জায়গায় ভূত দেখেছে বলে দাবি করে, তাহলে ভূতে বিশ্বাস করে এমন মানুষরা সে কথা শোনার পর সেই নির্দিষ্ট জায়গায় ভূত দেখবেই। এটা বাস্তবের থেকেও বড় অবচেতন মনের ক্রিয়ায় হয়ে থাকে। আর ভূতে বিশ্বাস রাখে এমন একজন মানুষের মস্তিষ্ক নিজের অজান্তেই ভূতের পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম। সাধারণ গল্প কথায় ভুতের সাক্ষাত পাওয়ার স্থান হলো গাছপালায় ঢাকা ভাঙ্গাচোঙ্গা পোড়ো বাড়ি, কবরস্থান, শ্মশান , শেওড়াতলা বা বড় বটগাছ। কারণ মানুষ ঐসমস্তজায়গাতেই ভুত দেখা দেয় বলে মনে করে । অবশ্য জার্নাল অফ সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে Houran and Lange model এর সীমাবদ্ধতা ও অসারতার দিকগুলিও বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে( সুত্র : https://core.ac.uk/download/pdf/161883567.pdf )
একজন বিজ্ঞানী ( নিউরোলজিষ্ট) একথাও বলেছেন যে যাঁরা প্রচন্ড ভূতে বিশ্বাস করেন বা ভূত দেখেছেন বলেন তাদের উপর কাজ করে এক বিশেষ বৈদ্যুতিক তরঙ্গ। ডি পিজ্জাগালি নামে এক বিজ্ঞানী ২০০০ সালে একটি পরীক্ষা করেন। তাতে তিনি দেখিয়েছিলেন, ভূতে বিশ্বাসীরা তাঁদের মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধে নিজের উপর অতিরিক্ত আস্থা পোষণ করেন। যাঁরা ভূত দেখবেন বলে ব্রেন ওয়ার্ক করে রাখেন তাঁদের মস্তিষ্কই তাঁদের ভূত দেখায়।
পিজ্জালীর সাথে আমি অনেকটাই সহমত পোষন করি । কেননা সেই দিন রাতের আঁধারে শ্মশান ঘাটের কাছে তাল গাছে হেলান দিয়ে বসে একাকীত্বের ভয় মনে উদিত হোয়ায় অন্য কারও উপস্থিতি জানান দেয়। খাল পাড়ের শেওড়া গাছটা হঠাত নড়ে ওঠা, শ্মশানঘাটে কারও উপস্থিতি নজরে আসার মত দৃশ্য দেখে মনে হলো এভাবেই বুজি আমরা আমাদের মনগড়া ভুতুড়ে পরিবেশ নিজেরাই তৈরি করে নিই।
এছাড়া ভূত দেখার পিছনে নাকি রয়েছে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের কারসাজি? যে তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র আমাদের ভূত দেখায় বা ভূতের সঙ্গে পরিচয় করায় তার নাম ইনফ্রাসাউন্ড। আমরা যে কম্পাঙ্কের শব্দ শুনে অভ্যস্ত, এটি তার চেয়ে নিচু কম্পাঙ্কের শব্দ। ইনফ্রাসাউন্ডের সঙ্গে ভূতের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক ভাবে গবেষণা করেছেন কানাডার নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. পারসিঙ্গার এবং তাঁর লরেনটিয়ান ইউনিভার্সিটির টিম। তাঁরা একটি যন্ত্রও তৈরি করেন যার নাম গড হেলমেট।
ছবি-১৫ : গড হেলমেট পরিহিতা এক নারি
ভূত বিশ্বাসীরা এই হেলমেট মাথায় পরলে, এটি চৌম্বকীয় সিগন্যাল ছুড়ে তাঁদের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশকে উদ্দীপ্ত করে। তাঁরা অবাস্তব অকল্পনীয় দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। দেখা গেছে, নির্জন জায়গায় যতক্ষণ ভূত বিশ্বাসীরা হেলমেটটি পরে ছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে তাঁদের অনেকে ভূত দেখেছেন বা ভূতের ছায়া দেখেছেন।
ছবি-১৬ : চৌম্বকীয় সিগনাল তরঙ্গ
Source : Click This Link
‘জার্নাল অফ কনসাসনেস এক্সপ্লোরেশন এন্ড রিসার্চে’প্রকাশিত এই গবেশন টিমের লেখকগন বলেছেন “The God Helmet places four magnetic coils on each side of the head, above the temporal lobes in the brain ।
এই ক্ষেত্রগুলির সংস্পর্শে আসা কিছু ব্যক্তি পরীক্ষার সময় ‘আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা’ থাকার কথা জানিয়েছেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে নাস্তিকদের পাশাপাশি ধর্মীয় বিশ্বাসীরাও ছিল। পরীক্ষাগুলি যে ঘরে পরিচালিত হয়েছিল সেখানে ৮০% ব্যক্তিই ‘অশারিরিক প্রাণীদের’ উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন।
গবেশক টিমের মতে The temporal lobe is involved in processing sensory input into derived meanings for the appropriate retention of visual memory, language comprehension, and emotion association.
ছবি ১৭ : টেম্পোরাল লোব
এই ক্ষেত্রগুলির সংস্পর্শে আসা কিছু মানুষ পরীক্ষার সময় ‘আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা’ থাকার কথা জানিয়েছেন। পরীক্ষাগুলি যে ঘরে পরিচালিত হয়েছিল সেখানে ৮০%মানুষই ‘অশারিরিক প্রাণীদের’ উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন, অপরদিকে সেখানে থাকা কম সংখ্যক মানুষই ঈশ্বরের উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন।
যাহোক, দেখা যায় এ সমস্ত পরিক্ষনের মাধ্যমে কয়েকজন বিজ্ঞানী ভূতের অস্তিত্ব আছে বলে দেখেছেন বা বলেছেন , তবে তা একটু অন্যভাবে। তাদের পরিবিক্ষনে ভূতেরা পৃথিবীতে আছে। তবে তিনারা প্রকৃতিতে বা পোড়ো বাড়িতে কিংবা শ্মশানে বাস করেন না। তিনাদের বাস কেবল সেই সব মানুষের মনে, যাঁরা ভূতে বিশ্বস করেন বা ভূত দেখতে চান।
ভুত আছে কি নেই এই কথা নিয়ে মানুষ মাথা ঘামিয়েছে সভ্যতার আদিকাল থেকে। আর এ সব কাহিনীর শ্রোতা-পাঠকগনও তাদের অবিশ্বাসকে শিকেয় তুলে রেখে, শুনে অথবা পাঠ করে গিয়েছেন ভূতের গল্প যুগের পরে যুগ ধরে। কিন্তু গল্পের শেষে সেই প্রশ্নটাই উঠেছে ভূত কি সত্যিই আছে? পরীক্ষাগারে বিস্তর সময় খরচ করে ভূতের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব প্রমানের গুরুদায়িত্বটি পালনে আগ্রহ দেখাননি তেমন করে কেউ।তবে এ কাজে এগিয়ে এসেছিলেন বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ ব্রায়ান কক্স।সম্প্রতি কক্স জানিয়েছেন, ভূতের অস্তিত্ব নেই। যদি তা থাকত, তা হলে বিশ্বের সব থেকে বড় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তা ধরা পড়তই। মানুষের মৃত্যুর পরে তার আত্মা কোথায় যায়, তা নিয়ে সভ্যতার উন্মেষের কাল থেকেই মানুষ সন্ধান চালিয়েছে। যদি তেমন কোনও ‘যাওয়ার জায়গা’ থাকত, তা হলে তা নিশ্চিত ভাবেই বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র সার্ন এর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার এ ধরা পড়ত।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের পাঠক কুলের অনেকেই জানেন কি ‘সেই লার্জ হাড্রন কোলাইডার’ । তবে যারা এখনো এই যন্ত্রটির সাথে সম্যক পরিচিত নন তাদের জন্য যন্ত্রটির বিষয়ে ছোট্ট একটি সচিত্র পর্যালোচনা এখানে তুলে ধরা হলো,যা থেকেধারনা করা যাবে যে যন্ত্রটি এই বিশাল ইউনিভার্সের ফিজিক্যাল ও নন ফিইক্যাল বিষয়েরা অসতিত্ব সনাক্তকরনে কত ক্ষমতাসম্পন্ন একটি যন্ত্র ।
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার বা বৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক (Large Hadron Collider সংক্ষেপে LHC) পৃথিবীর বৃহত্তম ও সবচেয়ে শক্তিশালী কণা ত্বরক এবং মানবনির্মিত বৃহত্তম যন্ত্র। ইউরোপীয় নিউক্লীয় গবেষণা সংস্থা সার্ন এই ত্বরক নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেছেন। যন্ত্রটিকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের কাছে, ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তের প্রায় ১৭৫ মিটার নিচে ২৭ কিলোমিটার পরিধির একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে(সুত্র: Click This Link) ।
ছবি - ১৮ : লার্জ হাড্রন কলাইডার এর একাংশের ছবি
এখন অবধি এই যন্ত্রটি বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ল বিষয় পর্যবেক্ষন ও এনালাইসিস করেছে যার মধ্যে কোয়ার্ক-গ্লুন প্লাজমা (কৃষ্ণগহ্বরের বাইরে ঘন পদার্থ Fluid form of Matter) তৈরির সাক্ষী হয়েছে,
ছবি-১৯ : একটি ব্লেক হোলের ছবি
ছবি-২০ : Quark –Gluon- Plasma পরিচিতি
ছবি - ২১ : যে পাঁচটি কারণ কোয়ার্ক-গ্নোন-প্লাজমা স্টাডির গুতুত্বনির্দেশ করে।
ভ্যটিকান সিটিতে পোপের সরকারী বাসভবন Sistine Chapel এর সিলিংএ ৪ বছর(১৫০৮-১৫১২)সময় নিয়ে বিখ্যাত ইটালিয়ান চিত্র শিল্পী Michelangelo https://en.wikipedia.org/wiki/Michelangelo অঙ্কিত Fresco (বিশেষ পদ্ধতিতে ঘরের দেয়ালে বা সিলিংএ অঙ্কিত তৈলচিত্র) চিত্রকর্মে বাইবেলের বিবরনের আলোকে পৃথিবীর প্রথম মানব আদম( আ

ছবি-২২: ইটালিয়ান চিত্র শিল্পী Michelangelo অঙ্কিত Fresco চিত্রকর্ম
সুপারসিমেট্রির (a mechanism to give particles masses that requires the existence of a new particle) বিরুদ্ধে মূল প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে এবং ‘হিগস বোসন’ আবিষ্কার করেছে।
উল্লেখ্য ২০১১ সালে সার্নের বিজ্ঞানীরা এ কণার প্রাথমিক অস্তিত্ব টের পান। শেষ পর্যন্ত লার্জ হাড্রন কলাইডারের ATLAS এবং CMS ডিটেকটরের মাধ্যমে পরিক্ষন শেষে ২০১২ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে সার্নের বিজ্ঞানীরা
ঘোষনা করেন যে 125 GeV মাস রিজিয়নে তারা একটি নতুন কণার সন্ধান পেয়েছেন যা হিগস- বোসনের সাথে সঙ্গতিপুর্ণ ।
ছবি-২৩ : ATLAS ডিটেকটরের ছবি
ছবি-২৪ CMS ডিটেকটরের ছবি
ছবি-২৫ : In an artist’s conception ,a Higgs boson erupts from a collision of protons
অবশেষে হিগস-বোসন হান্টার্স থেকে "গড পার্টিকেল" পাওয়া গেল । এই নব আবিস্কৃত কণাই অস্তিত্বের(Physical existence মূল হতে পাvhv ধারনাটিকে কনফার্ম করেছে ।
এখানে উল্লেখ্য আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদযলয়ের সাবেক অধ্যাপক বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯২৪ সালে বোসন জাতের কণার ব্যাখ্যা দেন। পদার্থ বিজ্ঞানী পিটার হিগস ১৯৬৪ সালে তাত্ত্বিকভাবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। তাঁর মতে, এর ফলেই এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এ কণাটিই গড পার্টিকেল বা ‘ঈশ্বর কণা’ নামে পরিচিতি পায়। হিগসের এই কণার বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ জানিয়েছিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। দুই বিজ্ঞানীর নামে কণাটির নাম দেওয়া হয় হিগস বোসন। ২০১১ সালে সার্নের বিজ্ঞানীরা এ কণার প্রাথমিক অস্তিত্ব টের পান। শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিক ভাবে সার্নের গবেষকেরাই ঘোষণা দিলেন হিগস বোসনের অনুরূপ একটি কণা আবিষ্কারের।
তবে বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং সতর্ক করে বলেছেন মহাবিশ্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ঈশ্বর কণা খ্যাত এই হিগস বোসন কণার।অবশ্য হিগস বোসন কণা থেকে কবে নাগাদ এ ধরনের মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে, তার কোনো সময় উল্লেখ তিনি করেননি। তবে এ ধরনের কণা যেন অতিশক্তি অর্জন না করে সে বিপদের কথা ভাবার পরামর্শ তাঁর।
যাহোক ,লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার যে কোনও এনার্জিকেও বিশ্লেষণ করতে সমর্থ। কক্সের মতে, ভূত যদি থাকত, তবে তারা এনার্জি দিয়েই গঠিত হত। কারণ, আত্মা যে কোনও পদার্থ দিয়ে গঠিত নয়, তা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। অথচ থার্মোডিনামিকস-এর দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী এনার্জি উত্তাপে লোপ পায় সুত্র : Click This Link )।
ছবি-২৬ : থার্মোডিনামিকস
Thermodynamics is a branch of physics which deals with the energy and work of a system.
The second law Thermodynamics states that there exists a useful state variable called entropy S. The change in entropy delta S is equal to the heat transfer delta Q divided by the temperature T.
delta S = delta Q / T
তবে একমাত্র ভূতেরাই যদি এই সূত্রকে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল জেনে থাকে, তা হলে কিছু বলার নেই। কিন্তু তা যদি না হয়ে থাকে, তা হলে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার তাদের খোঁজ পেতই (সুত্র : Click This Link
তাই সার্ন তথা ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ-এর তরফে মানচেষ্টার ইউনিভার্সিটির কণা পদার্থবিজ্ঞানের সিনিয়র ফেলো এবং যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক ফিকশন স্টরির উপস্থাপক ব্রায়ান কক্স (Brian Cox) ভুতের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিবিসি চ্যনেল -৪ থেকে সম্প্রাচিত The infinite Monkey cage অনুষ্ঠানে ভুতের অস্তিত্ব নিয়ে পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছেন যে ভুতের কোন অস্তিত্ব নেই।
ছবি-২৭ : The infinite Monkey cage
তবে যদি কোন ভৌতিক এনার্জি তাপকে প্রতিহত করতে সমর্থ হয়? সেখানে কী হবে, তা কিন্তু কক্স বলেননি।
পক্ষান্তরে একদল বিজ্ঞনী দেখাতে সমর্থ হয়েছেন যে মানুষের চোখের একটি ভুতুড়ে ক্ষমতা রয়েছে।
ছবি-২৮ : মানুষের চোখ "ভূতের চিত্রগুলি" সনাক্ত করতে পারে Human Eye Can See 'Ghost Images' (সুত্র Click This Link)
এ প্রসঙ্গে হেরিয়ট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ড্যানিয়েল ফ্যাসিও বলেছেন "যদিও মস্তিষ্ক স্বতন্ত্রভাবে সেগুলি দেখতে পাচ্ছে না, চোখটি কোনও না কোনওভাবে সমস্ত নিদর্শনগুলি সনাক্ত করে এবং তারপরে তথ্যটি রেখে এবং সবকিছুকে একত্রে সংমিশ্রণ করে,"সুত্র:https://www.livescience.com/33664-amazing-optical-illusions-work.html )
যাহোক, মোদ্দা কথা হলো এইসমস্ত যন্ত্রের দৃষ্টি এড়িয়ে ভুতেদের অস্তিত্ব ফাকি দিতে পারবেনা যদি তারা আদৌ থেকে থাকে ।
ভূত আছে কি নেই এই তর্ক চলছিল, চলছে চলবে। বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়ে ভূতের অস্তিত্ব বিপন্ন করা একদমই উচিত হবে না কারণ দক্ষিনারঞ্জন মিত্রের ঠাকুমার ঝুলি আর দাদা মশায়ের থলি এবং এ সামু ব্লগের অনেক ব্লগারের ভুতের গল্পের রসেই তো আমরা রসাল হই, আমরা একটু নির্মল বিনোদন পাই। এমন সৃষ্টি পেতে যদি একটু ভূতকে ভয় পাই তাতে ক্ষতি কী? শেষ কথা হলো আমার অভিজ্ঞতা হতে বলতে পারি 'ভুত ভয়ংকর কিছু নয় ( যদিও দুর্বল চিত্তের মানুষেরা নীজের ভুলেই কিছুটা ভয় পায়), ভূতেরা খুবই ভাল' বিভিন্ন জাতের ভুতেদের নাচানাচির দৃশ্যটি কল্পনায় হলেও দেখতে কতইনা বিচিত্র আর উপভোগ্য!!
ভুত আছে কি নেই এই প্রসঙ্গের ইতি টেনে ফিরে যাই আমার পোষ্টের মুল কথায়।কিন্তু সে কথাগুলির কলেবর বেশ বড় হয়ে গিয়াসে বলে সেগুলি পরের পর্বে দেয়াই সঙ্গত বলে মনে করি। তবে পরের পর্বে যাওয়ার আগে আরো একটি প্রাসঙ্গিক কথা বলে যেতে যাই । তা হলো জীবনের পড়ন্ত বেলায় পরশ পাথর প্রাপ্তির কাহিনীটা যখন লিখছি তখন সেসময়কালে খালের উপর দিয়ে ডানাওযালা ভুতুরে ঘোড়া উড়াউড়ি করে গুপ্ত ধন পাহড়া দেয়ার যৌক্তিকতা ও কার্য কারণের একটি ভাবনাও পেয়ে বসে ।মনে পড়ে যায় আমাদের এলাকায় পানির জন্য যেখানেই মাটির কুপ খনন করা হতো সেখানেই মাটির বেশ গভীরে অনেক পুড়াতন ভাঙ্গা চোড়া পুড়া মাটির হাড়ি পাতিল পাওয়া যেতো,এখনো পাওয়া যায় । বছর ষাটেক আগে আমাদের বাড়ির পাশে একটি পতিত জমি চাষের সময় লাংগলের ফলার আচরে একটি অদ্ভুত আকারের পাথরের শীল পাটা পাওয়া যায়। শীলটি পাটার উপরে নীচের চিত্রটির মত খাড়াখাড়ি অবস্থায় দাঁড়ানো ছিল বলে দেখতে পাওয়া যায় । এটা কোন আমলের তা কেও বলতে পারেনা ।মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বাড়ী ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র অশ্রয় নেয়ায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে খালি বাড়ী হতে এই মুল্যবান নিদর্শনটি লুট হয়ে যায়।
ছবি -২৯ : মাটির নীচে প্রাপ্ত শীল পাটা
আমাদের গ্রামের লালমাটির টিলার উপরের মাটিতে রয়েছে বিপুল পরিমান ভাঙ্গাচুরা হাড়ি পাতিল থালাবাসনের টুকরা,এদেরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় চাড়া । জমিতে এদের বিশাল উপস্থিতির কারণে উচুভিটা জমি চাষ দেয়া কৃষকের জন্য ছিল বেশ কষ্টকর ব্যপার। জমিতে কষ্ট করে চাষ দেয়ার সময় লাঙ্গলের ফলার সাথে ভাঙ্গা হাড়ি পাতিলের টুকরা উঠে আসলে কৃষক মাথায় হাত দিয়ে বলত কপালে আছে চাড়া ,এগুলি মনে হয় আমাদেরকে করবে ভিটা মাটি ছাড়া। কষ্ট করে চাষ দিয়ে এমন জমিতে ফলানো যেতো শুধু মাস কলাই,এক বিঘা জমি চাষে এক মন কলাই ফলানো যেতোনা । ছোট সময় শুনেছি আমাদের গ্রামে কেও মারা গেলে মানুষ যেমনি কাঁদত মৃতের জন্য তেমনি নাকি কাঁদত চাড়া ভর্তী মাটিতে কবর খোরার কষ্টের কথা ভেবে, কারণ মাটি যত কাটত ততই বের হতো চাড়া আর কোদালের মুখ হয়ে যেতো ভোতা ,কোদালীর মাথার ঘাম পায়ে পড়ত, আধাদিন কেটে যেতো শুধু কবর খোরতেই । যাহোক, ইত্যাকার আলামতের কথায় পরিস্কার ভাবে প্রমানিত হয় এখানে এক সময় একটি বর্ধিষ্ণু জনপদ ছিল, ভাওয়াল গাজীপুর এলাকার সাংস্কৃতিক জগতে কয়েক শত বছরের পুরাতন সোনাভানের পুথিতেও এখানকার সমৃদ্ধশালী জনপদের উল্লেখ রয়েছে দেখা যায়। লেখাটির এ পর্যায়ে এই এলাকার ঐতিহাসিক ঘটনাবলী এবং এর সাথে যুক্ত পুরাকির্তীগুলির বিষয়ে কিছুটা নাড়াচাড়া করে যে মনিমুক্তাসম ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় তা পরের পঞ্চম পর্বে লেখার বাসনা নিয়ে এ পর্বের লেখায় এখানেই ইতি টানলাম। পরশ পাথর প্রাপ্তির পরের পর্ব দেখার জন্য আমন্ত্রন রইল ।
এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ
তথ্য সুত্র: যথাস্থানে লিংক আকারে দেয়া হয়েছে ।
ছবিসুত্র : কৃতজ্ঞতার সহিত গুগল অন্তর্জালের পাবলিক ডমেইনের চিত্রসমুহ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৫০