কথায় বলে ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।’ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে বিকৃত ও নিন্দিত করার হেন ষড়যন্ত্র নাই যেটা সেক্যুলার এবং বামপন্থী শিবির করছে না। সংগঠন হিসাবে জামায়াতে ইসলামী এবং ব্যক্তি হিসাবে জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতা এবং বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র হননের হেন অপচেষ্টা নাই যেটা ওরা করছে না। হেন অপবাদ নাই যেগুলো সেক্যুলার এবং বামপন্থী ঘরানা ইসলামী নেতৃবৃন্দের নামে দিচ্ছে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পর থেকে আজ পর্যন্ত এই ৩৬ বছর ধরে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে অব্যাহতভাবে গালাগালি করা হচ্ছে। জামায়াত নেতারা কোনো সময় হচ্ছেন ‘আল বদর’, কোনো সময় হচ্ছেন ‘রাজাকার’, কোনো সময় হচ্ছেন ‘পাকিস্তানের দালাল’, কোনো সময় হচ্ছেন ‘যুদ্ধাপরাধী’, আবার কোনো সময় হচ্ছেন ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’। হাল আমলে জামায়াতকে জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ৩৬ বছর ধরে বিরামহীনভাবে জামায়াতের বিরুদ্ধে এই ধরনের গালিগালাজ চলছে। অথচ সিনিয়র নেতা এবং বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে এই ৩৬ বছরে ওরা একটি অভিযোগ বা একটি অপবাদ ও প্রমাণসহ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে এই ধারাবাহিক গালিগালাজ, উস্কানি এবং ডাহা মিথ্যাচারের অংশ হিসাবে এই সেদিন দুই নেতা এবং একজন প্রাক্তন সচিবের বিরুদ্ধে ঐ ঘরানার তরফ থেকে একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয়। কিন্তু এই মামলার পরিণতিও যা হবার তাই হচ্ছে। যেদিন মামলা করা হয় সেদিন এই মামলার খবরটি সেক্যুলার শিবিরের পত্র-পত্রিকাসমূহে অত্যন্ত ফলাও করে প্রচার করা হয়। শুধু তাই নয়, সেক্যুলার শিবিরে লক্ষ্য করা যায় উল্লাস। তারা ভেবেছিল, এবার জামায়াতকে শায়েস্তা করা যাবে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা যে সে কথা নয়। যদি মামলাটি প্রমাণিত হয় তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
সেক্যুলার শিবিরে এই উল্লাস সম্ভবত একেবারেই ভিত্তিহীন ছিল না। কারণ, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করার পর যে দিন সংবাদটি পত্র-পত্রিকায় ছাপা হলো সেদিন ইসলামপন্থী শিবিরেও উদ্বেগের ছায়া পড়ে। আইন-কানুন সম্পর্কে যাদের সুস্পষ্ট ধারণা নাই সেই সব ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী মহল আশঙ্কা করেন যে, এবার বুঝি সত্যের ওপর মিথ্যার জয় হতে যাচ্ছে। সেক্যুলার ও বামপন্থী ঘরানার করায়ত্তে রয়েছে ৯০ শতাংশ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া। সুতরাং তাদের প্রোপাগাণ্ডার জোরে ইসলামপন্থীদের যুক্তিতর্ক পাবিত হয়ে যাবে। কিন্তু ওপারে অন্তর্যামী মুখ টিপে হাসছিলেন। এই মামলাটি রজ্জু করার পর এবং মিডিয়ায় ব্যাপক পাবলিসিটি পাওয়ার পর যখন চারদিকে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় তখন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আইনের সঠিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন যে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করলে আইনানুগ হয় না। এই মামলাটি করতে হয় রাষ্ট্রকে। আর যদি কোনো ব্যক্তি এই ধরনের মামলা করে বসেন তাহলে রাষ্ট্রকে সেটা অনুমোদন করতে হয়। সুতরাংএক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের মাননীয় হাকিম সেই কাজটিই করেছেন যে কাজটি আইন তাকে করতে বলেছে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দানের জন্য সংশিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ওসি সাহেবও সেই কাজটিই করেছেন যে কাজটি করার জন্য আইন তাকে নির্দেশ দিয়েছে। আইন বলছে যে, এসব এক্ষেত্রে পুলিশ তখনই তদন্ত করবে যখন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে তদন্তের নির্দেশ দেবেন। আর এই কথাটিই বলেছেন সংশিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
এসব কথা পত্র-পত্রিকায় আসার পর এই মামলাটির ভাগ্যে কি পরিণতি ঘটতে পারে সেটা বিলণ বুঝতে পেরেছেন ঐ শিবিরের রথী-মহারথীরা। আগের দিনের উলাসের সুর মুহূর্তেই ভিন্ন সুরে রূপান্তরিত হয়। তারা সভা-সমিতি করে, গোলটেবিল বৈঠক করে বলতে শুরু করে যে মামলার মেরিটকে সেই সাথে অভিযুক্তদের অপরাধকে হালকা করার জন্যই নাকি এই মামলাটি সাজানো হয়েছে। অন্যেরা সভা-সমিতি করে বলেন যে, ষড়যন্ত্র করে নাকি এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরেকজন আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী তো বলেই বসলেন যে, বিএনপি নাকি এই মামলার নেপথ্যে রয়েছে। যারা এসব কথা বলছেন, তাদেরকে এখন বলতে হবে যে কারা এই মামলাটি সাজিয়েছেন? যারা গোলটেবিল বৈঠক করে এ মামলার পেছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ আবিষ্কার করেছেন তাদেরকে বলতে হবে, কারা এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্য নটরাজ? অভিযুক্তদের অপরাধ হালকা করার জন্যই নাকি এই মামলা করা হয়েছে। তাহলে এখন তারাই বলুন, কি করলে অপরাধ হালকা না হয়ে খুব ভারী হবে? মামলার বাদীর নাম ফজলুর রহমান। জনাব ফজলুর রহমান তার আরজির সপেক্ষে সাক্ষী মেনেছেন দু’টি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে। একজন হলেন ‘প্রথম আলোর’ সম্পাদক মতিউর রহমান এবং আরেকজন হলেন দৈনিক ‘ভোরের কাগজের’ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। আরেকজন হলেন প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক। এখন আওয়ামী ঘরানার লোকজনই বলুন যে, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক- এই তিন ব্যক্তি কি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক? নাকি তারা বিএনপির সমর্থক? এরা কি জনাব মুজাহিদ, কাদের মোলা এবং শাহ আব্দুল হান্নানের তথাকথিত অপরাধকে হালকা করার জন্য এই মামলা দায়েরে বাদী ফজলুর রহমানকে সাহায্য করেছেন? আলোচ্য গোলটেবিল বৈঠকের আলোচকদের ভাষায় এই তিনজন কি ষড়যন্ত্রকারী? এসব প্রশ্নের জবাব তাদেরই দিতে হবে। কারণ, এই ঘরানা কথায় কথায় প্রতিটি বিষয়ের মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ আবিষ্কার করেন। তারপরেও যে প্রশ্ন থেকে যায়, সেটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মামলার বাদী ফজলুর রহমান। কে এই ফজলুর রহমান?আমার আগের একটি পোষ্টে বলেছি ফজলুর রহমান কে? তাই আমি ঐ বিষয়টি নিয়ে আর আলোচনা করছি না। তবে ঐ রিপোর্ট থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আলোচ্য ফজলুর রহমান মূলত আওয়ামী ঘরানারই লোক। তাই প্রথমে ওরা উল্লসিত হয়েছিলেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে উদোরপিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা করেছেন। তবে সেই অপচেষ্টাতেও তারা নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।