তুমি কি নিশ্চিত সু? প্রানী গুলো সম্পর্কে তুমি অন্য যা কিছু বলেছো তা ঠিক আছে। কিন্তু এ কথাটা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।' অবিশ্বাস ভরা গলায় বললেন প্রা।
'অবশ্যই নিশ্চিত মহামান্য প্রা,' উত্তেজনায় নীল হয়ে উঠেছে সুয়ের সবুজাভ দেহ, 'আমাদের তরঙ্গের মাধ্যমে মহাকাশযানটার মূল কম্পিউটারের তরঙ্গ আমি ধরতে পেরেছি। সেখানে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়া আছে। ওরা শক্তি সংগ্রহে প্রানীদেহ ভক্ষণ করে।'
প্রা বুঝতে পারলেন তাঁর দেহ অধিক বিস্ময়ে অল্প অল্প কাঁপছে, 'এটা কিভাবে সম্ভব সু? একটা প্রানী কখনো শক্তি সংগ্রহে অন্য প্রানীদেহ ভক্ষণ করতে পারে না। এটা সম্ভব নয়।'
'শুধু তাই নয় এরা একে অপরকে হত্যাও করে। সে কাজের সুবিধার্থে ওরা প্রচুর যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে। এরা আমাদের মত নয়। ওদের প্রানীজগৎ-টা একদম অন্য ভাবে গড়ে উঠেছে। ওরা জন্মগত ভাবেই ধ্বংসাত্মক।'
জোরে শ্বাস টেনে উপস্থিত সবার দিকে তাকালেন প্রা। অধিকাংশের দেহই নীল হয়ে উঠেছে। অল্প-বিস্তর কাঁপছে সবাই।
বলে যায় সু, '...এরা সাধারণত দূর্বল প্রানীকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ মুখের ভেতরে থাকা ধাঁরালো হাড় দিয়ে পিষে...'
'চুপ করো সু! চুপ করো!' চেঁচিয়ে ওঠেন প্রা, জোরে শ্বাস টেনে বলেন, 'একটাই উপায় আছে এখন। আমরা সবাই মিলে ওদের মহাকাশযানটার কাছে গিয়ে আমাদের সম্মিলিত মানসিক তরঙ্গ প্রয়োগে ওদের মূল কম্পিউটারের প্রোগ্রাম রিভার্স করতে পারি, যেন মহাকাশযানটা নিজে থেকেই এখান থেকে সরে যায়। আর ওদের ডেটাবেস থেকে কিছু তথ্য মুছে ফেলতে পারি যেন ওরা আমাদের গ্রহটাকে আর খুঁজে না পায়।'
'এটা আমরা কখন করবো মহামান্য প্রা?'
'এক্ষুনি! এক্ষুনি করতে হবে কাজটা।'
**************************************************
'জর্জ, রাডারে নিরিহ প্রানের যে অস্তিত্ব ধরা পড়েছিল তা কাছে আসছে! স্ক্রিনের ফোঁটা গুলো দেখেছো? একটা ফোঁটা একটা প্রান। সংখ্যায় খুব বেশি নয়। মাত্র পনেরো-ষোলোটার মতো।' রাডার বোর্ডে ঝুঁকে পড়ে বলে মঈন।
'দেখি ওদেরকে ফোকাস করে স্ক্রিনে নিয়ে আসো তো, চেহারাটা দেখি।' কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে জর্জ।
ক্যাপ্টেনের কথানুযায়ী একটা বোতাম ঘোরায় মঈন।
'খাইছে! এতো দেখতে একদম মুরগির মতো। রংটা কেবল সবুজাভ।' বিস্ময়ে হা হয়ে যায় সুন্দরী নেভিগেটর সুজানা।
কাপটা টেবিলে রেখে স্ক্রিনের দিকে ঝুঁকে পড়ে জর্জ, 'মঈন, লাইফকম কাজ করার মত দূরত্বে এসেছে ওরা?' উত্তেজনা যে ক্যাপ্টেনকেও পেয়ে বসেছে তা বোঝা যায় গলার হালকা কাঁপুনিতে।
'লাইফকম ইতিমধ্যেই চালু করেছি...' বলে চলে মঈন, ' কম্পিউটার বলছে ওদের বুদ্ধিমত্তা প্রায় শূন্য। দৈহিক গঠন মুরগির কাছাকাছি। কম্পিউটার সন্দেহ করছে এরা মুরগিরই কোনো উন্নত প্রজাতি, ডাবলক্রসব্রিডিং কিংবা আলট্রামিউটেশন!'
'মাই গড!' শিউরে ওঠে জর্জ, 'দেখো তো এদের মাংস খাওয়া যাবে নাকি!'
'যাবে!' বলে মঈন, 'কম্পিউটার বলছে ওদের মাংস সুস্বাদু। স্বাস্থ্যমানও ভালো!'
'আমার প্রিয় ক্রু সকল!' গলা চড়ায় জর্জ, 'রে গান গুলো নিয়ে এক্ষুনি বাইরে বেরুই চলো। রাধুনী রোবট গুলোও তৈরি হোক। আজ মোরগপোলাও-এর ভোজ হবে!'
দলনেতার ঘোষণা শুনে খুশিতে হইহই করে ওঠে কন্ট্রোল রুম ভর্তি মানুষ গুলো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ২:২৫