somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

জনরাষ্ট্র ভাবনা-১৫

০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংবিধানের ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি: (১০)

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি: শুভঙ্করের ফাঁকি: (৩)

পুনরাবৃত্তি: সংবিধানের প্রস্তাবনায় ও দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে মোট ১৮টি ধারায় মূলনীতিগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। এই মূলনীতিগুলিতে এত অসঙ্গতি ও ফাঁকি বিদ্যমান যে হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখেও শেষ করা যাবে না। আমি বিদগ্ধ পাঠকদের শুধু মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য খুব সংক্ষেপে আলোকপাত করবো।

জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে

গণতন্ত্র (Democracy):

গণতন্ত্র (Democracy) বলতে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা বোঝায় যেখানে জনগণের ক্ষমতা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে এবং সেই প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে।

গণতন্ত্রের মূলনীতি হলও মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, আইনশৃঙ্খলা, এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা করা। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে জনগণের ইচ্ছা এবং অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হয়।

গণতন্ত্র জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, এবং জনগণের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য ক্ষমতা প্রদান করে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যক্তি স্বাধীনতা, মত প্রকাশের অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এটি মানুষের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করে। গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত হয় জনগণের দ্বারা, তাই তাদের কাছে জবাবদিহি থাকতে হয়। এটি দুর্নীতি হ্রাস করে এবং সরকারী কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে। গণতন্ত্র শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তনকে সম্ভব করে তোলে, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সমাজে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি একটি নিরাপদ এবং স্থিতিশীল সমাজ গঠনে সহায়ক।

গণতন্ত্র ভিন্নমত এবং মতবিরোধের স্বাধীনতা দেয়, যা একটি সমাজের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতি বাড়াতে সহায়ক। এটি গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, এবং শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন মতামত প্রকাশের সুযোগ তৈরি করে।

গণতন্ত্রে বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকে, যা আইনের শাসন বজায় রাখতে সহায়ক। এটি নাগরিকদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করে এবং নির্বাহী শাখার অবৈধ কর্মকাণ্ড রোধ করে।

গণতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বিভিন্ন সমাজের এবং গোষ্ঠীর মানুষের মতামত গুরুত্ব পায়। এটি নীতি নির্ধারণে সবার মতামতকে বিবেচনা করে।

গণতন্ত্র হলও একটি সরকার ব্যবস্থা যেখানে জনগণের ক্ষমতা এবং মতামত শ্রেষ্ঠত্ব পায়। এটি নাগরিকদের স্বাধীনতা, সমতা, এবং ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গণতন্ত্রের পক্ষে প্রধান যুক্তি হলো এটি জনগণের অধিকার রক্ষা করে, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে, এবং সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

গণতন্ত্র (Democracy) মতাদর্শকে সংবিধানের মূলনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসাবে সংবিধানে উল্লেখ করা হলেও এই সংবিধানের মধ্যে এমন অনেক বিধান আছে যা গণতান্ত্রিক মতাদর্শের পরিপন্থী।

সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক আদর্শের পরিপন্থী। পরে পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হবে।

এই সংবিধানে গণতান্ত্রিক মতাদর্শের পরিপন্থী অনেকগুলি বিধান আছে। যেমন, সংবিধানের ৪৮ ধারার বলা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার ক্ষেত্র ছাড়া রাষ্ট্রপতি অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শ দিয়েছেন কি না এবং দিয়ে থাকলে কি পরামর্শ দিয়েছেন তা নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না।

সংবিধানের এই বিধানটি গণতন্ত্রের পরিপন্থী। সংবিধান যেহেতু প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা প্রদান করেছে যে তিনি রাষ্ট্রপতিকে দুইটি ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য সব বিষয়ে পরামর্শ দিবেন এবং রাষ্ট্রপতি সেই পরামর্শ অনুসারে কাজ করবেন সেহেতু জনগণের জানার অধিকার আছে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে কি পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে রাষ্ট্রপতিকে যে পরামর্শ প্রদান করেন তা তার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পরামর্শ নয়; এটা রাষ্ট্রীয় কাজের একটি অংশ। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে রাষ্ট্রীয় কাজ করেন। তাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের মালিক জনগণের জানার অধিকার আছে যে তিনি কি পরামর্শ দিয়েছেন এবং একই সাথে এটা জানারও অধিকার আছে যে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মতে কাজ করছেন কি না। সংবিধানের এই বিধানের দ্বারা জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, এবং জনগণের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার গণতান্ত্রিক আদর্শ ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। গোপনে বা তলেতলে কাজ করার সুযোগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে অংশ নিয়ে থাকে। কিন্তু সংবিধানের ৭০ ধারার বিধানের দ্বারা সংসদ সদস্য তথা জনগণের প্রতিনিধির ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে।

৭০ ধারায় বলা হয়েছে, "কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-
(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা
(খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন,
তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।"


এই সংবিধান যে সম্পূর্ণ ভাবে গণতান্ত্রিক মতাদর্শের পরিপন্থী একটি দলিল এই ধারা তার একটি স্পষ্ট প্রমাণ। এই বিধানের মাধ্যমে সংসদকে একটি রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে। এই বিধানের ফলে একজন জনপ্রতিনিধির স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করার ক্ষমতা হরণ করা হয়েছে। এই বিধানের ফলে একজন জনপ্রতিনিধির একমাত্র কাজ হচ্ছে নিজ দলের ন্যায় বা অন্যায় যেকোন সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা, যা গণতান্ত্রিক মতাদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

জনরাষ্ট্র ভাবনা-১৪

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম বিহীন বিশ্ব গড়ার চেষ্টা বিশ্ব জনসংখ্যা অনেক কমিয়ে দিবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫০



নেতানিয়াহু বলেছে তাদের সাথে অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র আছে। সে মুসলিম বিশ্বকে বড় রকমের হুমকি দিয়েছে। সে গণহত্যা চালাচ্ছে। আত্মরক্ষায় মরিয়া মুসলিমরাও গণহত্যা চালাবে। তখন আর সভ্যতার বাণীতে কাজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপিনামা - যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১


জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল আত্নপ্রকাশ করেছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) কে নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে এই দল গঠিত হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

হারিয়েছি অনেক কিছু....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

হারিয়েছি অনেক কিছু....

আমি প্রতিদিন নিয়ম করে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাটি। তবে ইদানিং হাটাহাটিতে অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হচ্ছে! এই যেমন, হাটাহাটির টার্গেট মিসিং! যে পথে হাটার কথা, সে পথে না গিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ২০০০ বছরের পুরনো মরদেহের ডিএনএ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৫



২০০০ বছরের পুরনো মরদেহের ডিএনএ থেকে জানা গেলো যত চমকপ্রদ তথ্য।


পল্লব ঘোষ
Role, বিজ্ঞানবিষয়ক সংবাদদাতা
Reporting from লন্ডন
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×