সিআইএ ,এজেন্সী, কোম্পানী যে যাই বলুক সারা বিশ্বে একনামে পরিচিত বহুল
চর্চিত এই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। ভ্যাটিকান থেকে মক্কা আর মার্সেনারি থেকে মাফিয়া.....নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এমন কেউ নেই যাকে তারা ব্যাবহার করতে পিছ পা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন এটি একটি স্বা্ধীন সংস্থা, যার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং উচ্চপদস্থ নীতিনির্ধারকদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে গঠিত অফিস অফ স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেস (OSS)-এর উত্তরসূরী হিসেবে সিআইএ'র জন্ম। এর কাজ ছিলো যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করা। ১৯৪৭ সালে অনুমোদিত হওয়া ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সিআইএ গঠন করা হয়, যাতে বলা হয় ‘এটি কোনো পুলিশ বা আইন রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান নয়, দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই কাজ করুক না কেনো’। প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের সময় সিআইএ (Central Intelligence Agency) গঠনে ভুমিকা রাখেন। বিশেষ নিরাপত্তা আইনের আওতায় মার্কিন কংগ্রেস এটি গঠন করা হয়। সিআইএ গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা অফিস অব স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেস (ওএসএস) বিলুপ্ত করা হয়। সিআইএ গঠনের উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন নিরাপত্তাকে আরো সুসংহত করা। এর অফিসিয়াল ভিশন হচ্ছে- ‘One Agency. One Community. An Agency unmatched in its core capabilities, functioning as one team, fully integrated into the Intelligence Community.’
কর্মী সংখ্যাঃ অজ্ঞাত,সম্ভাব্য সংখ্যা ২০,০০০
সদর দপ্তরঃ জর্জ বুশ সেন্ট্রার ফর ইন্টেলিজেন্স,ভার্জিনিয়া ,ল্যাংলী।
জবাবদিহিতাঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সংস্থা প্রধানঃ ডেভিড পেট্রাউস
বাজেটঃ ৪৫ বিলিয়ন ,ঘোষিত।
সিআইএ'র প্রাথমিক কাজ হচ্ছে বিদেশি সরকার, সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা এবং জাতীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে তা সরবরাহ ও পরামর্শ প্রদান করা। সিআইএ এবং এর দায়বদ্ধতা ২০০৪ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ২০০৪-এর ডিসেম্বরের পূর্বে সিআইএ ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা; এটি শুধু নিজের কর্মকাণ্ডই নয়, বরং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডও দেখাশোনা করতো। কিন্তু ২০০৪ সালে অনুমোদিত ইন্টেলিজেন্স রিফর্ম অ্যান্ড টেররিজম প্রিভেনশন অ্যাক্ট, ২০০৪ দ্বারা তা পরিবর্তিত হয়।
মুল দায়িত্বঃ
এতোটাই বিশাল যে সম্পুর্ন বর্ননা কঠিন।সাধারন ভাবে বৈদেশিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা, গুপ্ত হত্যা, বৈদেশিক নীতি নির্ধারনে সহায়তা, কাউন্টার টেররিজম, নিজেস্ব লোক সংগ্রহ ও নেটওয়ার্ক তৈরী,বিদেশী কুটনৈতিকদের ওপর নজরদারি,শত্রু এজেন্টদের সন্ধান,সাইবার ওয়ার্ফেয়ার পরিচালনা, নতুন প্রযুক্তি সংগ্রহ,ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা,ড্রোন আক্রমন,গুপ্ত কারাগার পরিচালনা,বিশ্বের বড় বড় কর্পোরেশন গুলির নীতি নির্ধারনের চেস্টা,ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্পিওনাজ।
সংগঠনঃ
সিআইএর সাংগঠনিক কাঠামো যে কোন বিশ্বখ্যাত মাল্টি ন্যাশানাল কর্পোরেশনের সমকক্ষ। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিভাগ আছে। তবে সিআই এ মুলত ৪টি ডাইরেক্টরেট এ ভাগ করা।
এদের অধীনে অনেক ধরনের ইউনিট, স্পেশাল অপারেশন টিম, রিসার্চ টিম কাজ করে থাকে।এরা হলো
১। ডাইরেক্টরেট অফ ইন্টেলিজেন্স
২। ন্যাশনাল ক্লান্ডেস্টাইন সার্ভিস
৩। ডাইরেক্টরেট সাপোর্ট
৪। ডাইরেক্টরেট অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
অর্গানাইজেশনাল স্ট্রাকচার
১।ডাইরেক্টরেট অফ ইন্টেলিজেন্সঃ
সকল প্রকার গুরুত্বপুর্ন বৈদেশিক ইস্যুতে গবেষনা ও তথ্য উপাত্ত সংরক্ষন ,বিশদ ভাবে বিশ্লেষন করে
প্রাপ্ত তথ্য হতে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা। পরিকল্পনা প্রনয়ন ও কৌশল নির্ধারনে ভুমিকা রাখা।
যুক্তরাস্ট্রের জন্যব সম্ভাব্য হুমকিগুলি চিন্নিত করা। ড্রাগস,অস্ত্র বেচাকেনা, তথ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ
করা। প্রতি গোয়েন্দা সংক্রান্ত তথ্য এফবিআইকে সরবরাহ করা।
এ বিভাগের অধীনে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগ MENA ,দক্ষিন এশিয়া বিভাগ OSA,রাশিয়ান ও
ইউরোপিয়ান বিভাগ OREA , ইরাক,এশিয়া প্যাসিফিক,ল্যাটিন আমেরিকা, ও আফ্রিকা বিভাগ
(APLAA)এর বিশ্লেষনের জন্য আলাদা আলাদা ডেস্ক রয়েছে।
২।ন্যাশনাল ক্লান্ডেস্টাইন সার্ভিসলঃ
এক কথায় ডাইরেক্টরেট অফ অপারেশন্স বলতে যা বুঝায়। সারা দুনিয়া
পরিচালনা করে। একজন অ্যাসোসিয়েট ডেপুটি ডাইরেক্টরের অধী্নে এই ডাইরেক্টরেট সারা দুনিয়ায় কাজ করে চলেছে। হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গোপনে বিভিন্ন অভিযান পরিচলনা, তথ্য সংগ্রহ, সামরিক অভিযান পরিচালনায় অপারেশনাল সহায়তা প্রদান, বিশ্বব্যাপি আক্রমনাত্বক কার্যক্রম পরিচালনা করা। সংগঠনের হান্টার কিলার টিমগুলিকে এই বিভাগ নিয়ন্ত্রন ও সরাসরি পরিচালনা করে।
৩।ডাইরেক্টরেট অফ সাপোর্টঃ
যুক্তরাস্ট্রের জন্য রাজনীতিবিদদের প্রনীত নীতি ঠিকমত যাতে কার্যকর হয় তার জন্য বস্তুগত সহায়তা যেমন নিরাপত্তা, আভ্যন্তরিন কমিউনিকেশন রক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা।
৪। ডাইরেক্টরেট অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজিঃ
বৈজ্ঞানিক গবেষনা, আবিস্কার, উন্নতি সাধনা, নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও এর সাম্রিক কাজে ব্যবহার উপোযোগী করা, দূর পাল্লার পর্যবেক্ষন বিমান পরিচালনা করা, ড্রোনের সাহায্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে হামলা করা। এছাড়া কোম্পানী তৈরির মাধ্যমে বিশ্বের গুরুত্বপুর্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনকারী প্রতিস্টানে বিনিয়োগ করা।
কথিত ইউএফও আসলে সিআইএর যুদ্ধ বিমান পরীক্ষা।
সিআইএ স্টিলথ সাবমেরিন সী শ্যাডো।
জবাবদিহিতাঃ
কংগ্রেসনাল অ্যাফেয়ার্স অফিস,হোয়াইট হাউস, ও ২০০৪ সালের সংশোধিত সন্ত্রাস দমন আইনে
অধীনে ডাইরেক্টর অফ ন্যাশানাল ইন্টেলিজন্স। সিআইএ ডাইরেক্টর মুলত এই যোগাযোগ রক্ষা করেন আর
ডেপুটি ডাইরেক্টর নিয়ন্ত্রন করেন সিআইএ’র আভ্যন্তরীন কর্মকান্ড।
বর্তমান প্রধানঃ জেনারেল(অব) ডেভিড পেট্রাউস
প্রধান বিচরন এলাকাঃ সমগ্র সৌরজগত
তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতিঃ
। সরাসরি নিজেস্ব এজেন্ট নিয়োগ করা।
। গোয়েন্দা তথ্য আউটসোর্সিং করা।
। প্রযুক্তি ব্যবহার। য়
। নন গভর্নমেন্ট ডেভলপমেন্ট সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করা।
। বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডি কে কখনো সরাসরি ব্যবহার করা কখনো তা্দের মাধ্যমে অন্যান্য সংগঠনকে ফান্ডিং করে তথ্য সংগ্রহে কাজে লাগানো।
। সমমনা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা।
। মিডিয়াকে ব্যবহার। সিআইএ’র তথ্য সংগ্রহের বড় একটি মাধ্যম হচ্ছে মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা, টিভিচ্যানেল, সরকারি প্রকাশনা, পরিসংখ্যান, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করে।
।বড় বড় সেনা কর্মকর্তাদের অস্ত্র ব্যাবসার ফাঁদে ফেলে দলে টানা।
। ব্যাপকভাবে গুরুত্বপুর্ন লোকজন কিনে নেয়া।
। ফ্যামেলি ট্রী ট্রাকিং এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ।
বিতর্কিত অভিযানঃ
ব্যাপক সাফল্যর পাশাপাশি সিআইএর বিশ্বজুরে দুর্নাম আছে। দেশে দেশে গুপ্তহত্যা ক্যু , জনপ্রিয় সরকারকে উতখাত, অজনপ্রিয় সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে নিজের স্বার্থ হাসিল করে শেষপর্যন্ত তাকে ছূড়ে ফেলা। (মোবারক,বেন আলি) সহ বহু দুর্নামের ভাগীদার এই সঙ্গঠন এর অনেক বিতর্কিত প্রজেক্ট ও অভিযান রয়েছে।
প্রজেক্ট এমকে আল্ট্রাঃ
মানুষের মন নিয়ন্ত্রনের জন্য ড্রাগস হিপনোটিজম ব্যাবহার করে মধ্য ৫০ দশক থেকে ৬০ এর দশকের শেষ পর্যন্ত সিআইএ এ প্রজেক্ট পরিচালনা করেীক কথায় ব্রেন ওয়াশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া।
বে অভ পিগস এর অভিযানঃ ১৯৬১সালে ক্যাস্ত্র সরকারকে উৎখাত করতে কিউবান মার্সেনারীদের দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে সিআইএ।
চে গুয়েভারা হত্যা ১৯৬৭
প্যাট্রিক লুমুম্বা হত্যা ১৯৬১
অপারেশন মকিং বার্ডঃ
৫০ এর দশকের শুরু থেকে ৬০ দশকের শুরু পর্যন্ত গুয়েতেমালার বামপন্থী সরকারে বিরুদ্ধে ৩০০০ সিআইএ এজেন্ট একযোগে প্রপাগান্ডা যুদ্ধ শুরু করে এবং একপর্যায়ে গুয়েতেমালাতে অভ্যুত্থান ঘটাতে সক্ষম হয়।
অপারেশন নর্থ উডঃ ৬০ এর দশকের শুরুতে অ্যামেরিকা জুড়ে খুন জখম রাহাজানির ঘটনা তৈরি করে তা কিউবার ঘাড়ে চাপানোর জন্য এই পরিকল্পনা করা হলেও প্রেসিডেন্ট কেনেডি তা বাতিল করে।
অপারেশন ফোনিক্সঃ কেনেডি নিহত হওয়ার পর ভিয়েতনামে মার্কিন অভিযান শুরু করার লক্ষে ১৯৬৪ সালে সিআইএর পরিকল্পনায় টংকিং উপসাগরের তীরবর্তি এলাকায় উত্তর ভিয়েত্নামি সৈন্যদের ছদ্যবেশে মার্কিন নিয়োগ করা মার্সেনারিদের হামলায় ১০,০০০ দক্ষিন ভিয়েতনামি নিহত হয়।এর দোহাই দিয়ে অ্যামেরিকা উত্তর ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। সেই সাথে কার্যকর করা শুরু হয় অপারেশন ফোনিক্স ১৯৬৭ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে সিআইএ খুন করে ৩০,০০০ এর বেশি উত্তর ভিয়েতনামি রাজনীতিবিদ।
ইরান কন্ট্রা কেলেংকারিঃ
সিআইএ’র পরিকল্পনায় ১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইরানের নিকট বেশকিছু অস্ত্র বিক্রি করে এবং তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিকারাগুয়ার তৎকালীন সরকারবিরোধী কন্ট্রা বিদ্রোহীদের কাছে পাচার করে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভর্তি প্রথম বিমানটি ১৯৮৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ইসরাইলের মাধ্যমে ইরানে পৌঁছানো হয়। এ কেলেঙ্কারির কারণে কিছু উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা প্রশাসন থেকে বিদায় নেন। তাদের মধ্যে তৎকালীন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ল্যারী স্পীকস, রাজনৈতিক পরিচালক মিথ ড্যানিয়েল, সিআইএ প্রধান উইলিয়াম ক্যাসি, হোয়াইট হাউস কমিউনিকেশন ডিরেক্টর প্যাট্রিক বুচানন, স্টাফপ্রধান ডোনাল্ড রিগ্যান, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাকফার্লেনও ওই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান সিনেটর জন টাওয়ার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রদত্ত রিপোর্টে বলা হয়, পদচ্যুত জাতীয় নিরাপত্তা সহকারী অলিভার নর্থ সব তৎপরতার নায়ক ছিলেন। অবশ্য পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান স্বীকার করেন যে, ইরানে মার্কিন জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে তিনি গোপনে এ চুক্তি অনুমোদন করেছিলেন। এটি যে ভুল ছিল তা তিনি নিজেই পরবর্তীতে স্বীকার করে নেন।
গুয়ানতানামো বে কারাগার ও ইউরোপের সিআইএর গোপন কারাগারঃ
২০০২ সালে সন্ত্রাসে বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পর মার্কিনিরা সারা বিশ্ব জুড়ে গোপন কারাগার তৈরি করে।সে সব কারাগারে সিআইএ সমস্ত পৃথিবী থেকে শ্রেফ সন্দেহের বশে শত শত ইসলাম ধর্মাবলম্বিকে ধরে এনে তথ্য আদায়ের নামে ভয়াবহ নির্যাতন করে। কিউবার গুয়ান্তানামো বে কারাগার এর মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত যা নাতসীদের কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মত বিনা বিচারে হাজার হাজার মানুষকে ধরে এনে প্রচন্ড নির্যাতন করে আটকে রাখা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রায় আড়াইশো বছরের ইতিহাসে অন্যতম জঘন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এই কারাগারে।
সাম্প্রতিক কিছু তৎপরতাঃ
আবার অপারেশন ফোনিক্সঃ ৩ বছর ধরে সোমালিয়া, ইয়েমেন,ইরাক,আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে অপারেশন ফোনিক্সের আদলে সিআইএ’র হান্টার কিলার “টাস্কফোর্স ৮৮” এর টিমগুলি সক্রিয় ভাবে প্রতিপক্ষকে হত্যা করে চলেছে।
অপারেশন জেরিনিমোঃ
ওসামা বিন লাদেন কে খুজে বের করে হত্যা করা।
সিআইএ পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে লাদেনকে খুজে বের করতে নিজেদের চর ডাক্তার শাকিল আফ্রিদির মাধ্যমে একটি ভুয়া টিকাদান কর্মসুচি শুরু করে। টীকা দেওয়া নিয়ে এই প্রকল্প থেকে এক সময় একটি শিশুর ডিএন এর সাথে পুর্বে সংগ্রহ করে রাখা লাদেনের মৃত বোনের ডিএন এ মিলে গেলে সেই সুত্র ধরে বিন লদেন কে স্পট করে সিআইএ। এরপর সিআইএর কমান্ডে নেভি সীল সদস্যরা লাদেন কে হত্যা করতে অভিযান চালায়।
বলা হয়েছে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে র পর ওসামা বিন লাদেনের দেহ গোপনে সিআইএ-র বিমানে উড়িয়ে আনা হয় আমেরিকায়। এরপর ডেলাওয়ারের ডোভার থেকে
মেরীল্যান্ডের বেথেসডা আর্মড ফোর্সেস ইন্সটিটিউট অফ প্যাথলজিতে নিয়ে সংরক্ষন করা হয় লাদেনের দেহ সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বৈজ্ঞানিকরা তার দেহের নানা পরীক্ষা করেন।
লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে উৎখাত ও লিবিয়ার কর্তৃত্ব নেয়া। গুজব আছে যে লিবিয়ায় সিআইএর সাথে একযোগে কাজ করেছে আল কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি।
যুগ যুগ ধরেই পাকিস্তান রাস্ট্র সিআইএর অবাধ চারনক্ষেত্র। ভুট্টুহত্যা ও জিয়াউল হকের উত্থান,পতন মৃত্যুতে তাদের হাত রয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। ৯০ এ বেনজির ভুট্টর বরখাস্ত হওয়া থেকে পারভেজ মোশারফের ক্ষমতা দখল,কার্গিল যুদ্ধ ... বেশিরভাগ সময়েই কোন না কোন ভাবে সিআইএ ভুমিকা রেখেছে। পাকিস্তানের মাটিতে প্রতিদিন সিআইএর ড্রোন মিসাইল ছুড়ছে। ২০০৫ এ পাকিস্তানে ভুমিকম্পে দুর্গতদের সহায়তার নামে ৩০০ সিআইএ অপরেটর কাশ্মীর হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। যাদের লক্ষ ছিলো পাকিস্তানের পারমানবিক স্থাপনাগুলি খুজে বের করা।
বাংলাদেশে সিআইএঃ বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসাবে জন্ম লাভের আগে থেকেই সিআই এ এদেশে সক্রি্য। বাংলাদেশের অনেক ঘটনায় কখনো এককভাবে কখনো পার্শবর্তি দুইটি রাস্ট্রর যেকোন এক্টির সাথে যৌথ ভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সমাজে প্রভাব বিস্তার করার চেস্টায় লিপ্ত আছে।
১৯৭৩ এ জাহাজ বোঝাই চাল ফেরত যাওয়া।
১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টের ঘটনায় রহস্যজনক ভুমিকা রাখা ।
সাবেক সেনাপ্রধান ও ’৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ নূরউদ্দীন খান ২০০৪ সালে তৎ কালীন জোট সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎ খাত করে একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছিলেন। ২০০৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস ওয়াশিংটনে পাঠানো এক গোপন বার্তায় এমন কথাই বলেছিলেন। ‘সম্ভাব্য অভ্যুত্থানে সমর্থন দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান যুক্তরাষ্ট্রের’ শিরোনামের ওই তারবার্তা থেকে জানা যায়, নূরউদ্দীন খান তৎ কালীন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারকে উৎ খাত করে দুই বড় দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন। নূরউদ্দীন খানের মতে, বাংলাদেশের পরিবারতান্ত্রিক সরকার ও ইসলামি জঙ্গিবাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হলো রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারপদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করা। এতে ভবিষ্যতে দুই নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সব পথ রুদ্ধ হবে। নূরউদ্দীন খান দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চান।
হ্যারি কে টমাস নূরউদ্দীনের প্রস্তাব শুনে সঙ্গে সঙ্গে এর বিরোধিতা করেন। তিনি সাবেক সেনাপ্রধানকে জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎ খাতের কোনো পরিকল্পনা সমর্থন করবে না। হ্যারি কে টমাস এই ঘটনা তার প্রাক্তন দুলাভাই বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দিন আহামেদের চ্যানেলে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে অবহিত করেন।
বাংলাদেশে সিআইএ যাদের প্যাট্রন করেঃ
াবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্যসচিব ও আত্মীয় ...যিনি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে মার্কিন সরকারের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন।
গাবর দ্যা সাবেক স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ।(তেমন বেইল দিতো না,বুশের ছোট ভাইয়ের ফুটফর্মায়েশ খেটে দিতো)
ইত্তেফাকের সাবেক মালিক এর এক পুত্র একজন ব্যারিস্টার যিনি তত্বাবধায়ক আমলে ক্ষমতাধর উপদেস্টাও ছিলেন।
ইংরাজি দৈনিক (উর্দুতে হপে সিতারাই রোজ) এর স্বনামধন্য সম্পাদক সাহেব।
মিসেস চক্রবর্তি।
বর্তমানে হাসিনার হাতে বঞ্চিত ১৯৭১ এর তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা ।
চাপ দাড়িওয়ালা জামাতি ব্যারিস্টার সাহেব।
টাকলু বেভারেজ ব্যবসায়ি।
নিকট অতীতে মারা যাওয়া যীশুর অনুসারি মস্ত এক ব্যাবসায়ি
ও তার গুস্টি।
একজন উপজাতি আইনজ্ঞ রাজা মশাই।
এবং ওয়ান এন্ড অনলি
মাওলানা আবুল আলা মওদুদি।
ভ্যাসিলি নিকোতিচ মিত্রোখিন ১৯২২ সালে মধ্য রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কাজাখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক মিত্রোখিন ইউক্রেনের মিলিটারী প্রসিকিউটর পদে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এমজিবি’র ফরেন ইন্টিলিজেন্স অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। কয়েকটি অপারেশনে ব্যর্থতার পর তাকে কেজিবি’র নবগঠিত আর্কাইভ শাখার প্রধান পদে সরিয়ে নেয়া হয়।
১৯৮৫ সালে অবসর নেন মিত্রোখিন। কিন্তু ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে তার তত্ত্বাবধানেই কেজিবি আর্কাইভের সব গোপন নথিপত্র লুবিয়াংকের কার্যালয় থেকে ইয়াসেনেভোস্থ কেজিবি’র প্রধান কার্যালয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। এই সময়ের ভিতর জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তিনি বিভিন্ন গোপন দলীলের কপি সংগ্রহ করেন।
১৯৯২ সালে সদ্য স্বাধীন বাল্টিক রাষ্ট্র লাটভিয়ার মার্কিন দূতাবাসে দলীলের কপিসহ হাযির হন ৭০ বছরের বৃদ্ধ মিত্রোখিন। কিন্তু সিআইএ তার উপর ভরসা রাখতে পারেনি। এরপর তিনি বৃটিশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। সে বছরই মিত্রোখিন ও তার পরিবারের সাথে ৬ ট্রাংক ভর্তি ২৫ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হয়।
১৯৯৯ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় ভ্যাসিলি মিত্রোখিন ও অধ্যাপক ক্রিষ্টোফার এন্ড্রু’র লেখা ‘দ্য মিত্রোখিন আর্কাইভ’ ‘দ্য এজিবি এন ইউরোপ এন্ড দ্য ওয়েষ্ট’। একই বছর নিউইয়র্ক থেকে ‘দ্য সোর্ড অব দ্য শিল্ড’ ‘দ্য মিত্রোখিন আর্কাইভ এন্ড দ্য সিক্রেট হিষ্ট্রি অব কেজিবি’।
ভ্যাসিলি মিত্রোখিনের লেখা এবং বৃটেন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য মিত্রোখিন আর্কাইভ’ নামক ঐ বইয়ের ভলিয়্যুম-২ এ যে বোমা বিস্ফোরণ করা হয়েছে তাহলো “ধর্মীয় দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী ছিলেন সিআইএ’র এজেন্ট।”
সামগ্রিক তথ্যসুত্রঃ
লিগ্যাসী অব অ্যাসেজ, হিস্টোরী অব সিআইএ
ইন্টারনেট
সিআইএ চীফের নাম আর ছবি দিতে ভুলে গেছিলাম..এখন যুক্ত করে দিলাম।