দারসুল কুরআন
সূরা আল ফুরকান, ২৫ নম্বর সূরা, ৬ষ্ঠ (ও শেষ) রুকু, ৬১-৭৭ নম্বর আয়াত
সূরার নামকরণ:
১.প্রথম আয়াত ‘তাবা..রাকাল্লাযি.. নাযযালাল ফুরক্বা..ন’ এর ‘আল ফুরক্বান’ শব্দটিকে এর নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
২.চিহ্ন হিসেবে নামকরণ হয়েছে। তবে, বিষয়বস্তুর সাথে এর যথেষ্ট মিলও আছে। (তাফহীমুল কুরআন)
নাযিল হওয়ার সময়কাল:
১.ধারণা করা হয়, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাক্কায় অবস্থানকালের মাঝামাঝি সময়ে
আলোচ্য বিষয় ও মূল বক্তব্য:
১.রাসূল (সা.) এর উপস্থাপনকৃত আদর্শে কাফির (বা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী) দের সন্দেহ ও তার জবাব
২.সত্য দ্বীনের (তথা ইসলামের) দাওয়াত প্রত্যাখ্যানের পরিণতি
৩.ঈমানদারদের নৈতিক বৈশিষ্ট্য ও কাফিরদের চরিত্র ইত্যাদি।
আয়াতভিত্তিক ব্যাখ্যা:
আয়াত:৬১.কল্যাণময় তিনি, যিনি আকাশে বুরুজসমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন (বা সৃষ্টি করেছেন) সূর্য ও দীপ্তিময় চাঁদ।
ব্যাখ্যা: একটি ব্যাখ্যা অনুযায়ী ‘বুরুজসমূহ’ বলতে ‘সুরক্ষিত এলাকা’ বুঝানো হয়েছে- যেখানে শাইতন ও জ্বীন পৌঁছতে পারে না।
আয়াত:৬২.যারা অনুসন্ধানপ্রিয় অথবা যারা কৃতজ্ঞতাপ্রিয় তাদের জন্যে তিনি রাত্রি ও দিবস সৃষ্টি করেছেন পরিবর্তনশীলরূপে।
ব্যাখ্যা: দিন রাতের পরিবর্তনের মাঝে অনেক ভৌগোলিক জ্ঞান ও কৃতজ্ঞতার বিষয় রয়েছে।
আয়াত:৬৩.রহমান (আল্লাহ) এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা (অশালীন ভাষায়) কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম (অর্থাৎ, প্রশান্তভাবে জবাব দেয়)।
ব্যাখ্যা: জন্মগতভাগে সব মানুষই আল্লাহর বান্দা। কিন্তু তাঁর অতি প্রিয় ও পছন্দনীয় বান্দা হচ্ছে তারা যারা পূর্ণ চেতনা সহকারে গোলামী (বা বন্দেগী) কবুল করে নিজেদের মধ্যে এ সকল গুণ সৃষ্টি করবে (যা পরে আলোচিত হচ্ছে)। (তাফহীমুল কুরআন)
মুমিনদের প্রথম গুণ:
১.তারা আল্লাহর বান্দা (বা দাস) হয়। যখন যা আদেশ হয়, তা পালনের জন্য প্রস্তুত থাকে। (মাআরিফুল কুরআন)
২.কুরআন মানতে হলে কুরআন বুঝা ও মানা অপরিহার্য..
মুমিনদের দ্বিতীয় গুণ:
১.পৃথিবীতে নম্র, গাম্ভীর্য ও বিনয় সহকারে চলাফেরা করে। গর্ব করে চলে না, অহংকারীর মতো পা ফেলে না। (মাআরিফুল কুরআন)
২.(কারণ) চালচলন মানুষের মানসিকতা, স্বভাব ও অন্তর্নিহিত ভাবধারার বাস্তব প্রতীক হয়ে থাকে। (তাফহীমুল কুরআন)
৩.নরম চালচলন বলতে দুর্বল ও রোগাক্রান্ত লোকের মতো চলাফেরা বুঝায় না। (তাফহীমুল কুরআন)
৪.রাসূল (সা.) এমন দৃঢ় পদক্ষেপে চলাফেরা করতেন যে, মনে হতো তিনি যেনো নীচের দিকে নামছেন। (তাফহীমুল কুরআন)
৫.হযরত উমার (রা.) একজন যুবককে মরার মতো চলতে দেখলেন; তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি অসুস্থ-রোগাক্রান্ত?’ সে বললো জি না। তিনি চাবুক হাতে নিয়ে ধমকে দিলেন ও বললেন, শক্তি সহকারে চলাফেরা করো। (তাফহীমুল কুরআন)
মুমিনদের তৃতীয় গুণ:
১.যখন অজ্ঞতাসম্পন্ন লোক তাদের সাথে কথা বলে, তখন বলে সালাম।.. (উদ্দেশ্য এই যে,) মূর্খতার জবাবে তারা নিরাপত্তার কথা বলে, যেনো অন্যরা কষ্ট না পায় এবং তারা নিজেরা যেনো গুনাহগার না হয়। (মাআরিফুল কুরআন)
২.জাহিল অর্থ লেখাপড়া না জানা নয় বরং যে মূর্খতার আচরণ করে, অসম্মানজনক কথা বলে..। (তাফহীমুল কুরআন)
৩.মুমিনগণ তাদের গালাগালি ও অন্যায়ের জবাবে গালাগাল ও অন্যায় করে না বরং তাদেরকে সালাম দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। (তাফহীমুল কুরআন)
আয়াত:৬৪.এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে;
ব্যাখ্যা:
মুমিনদের চতুর্থ গুণ:
১.মুমিনরা দিনরাত আল্লাহর গোলামীতে ব্যস্ত থাকে। দিনে শিক্ষাদান, প্রচার, সংগ্রাম ইত্যাদি কাজ করে এবং রাতে আল্লাহর সামনে ইবাদাত করে (যেমন: তাহাজ্জুদ পড়ে)। (মাআরিফুল কুরআন)
২.মুমিনদের রাত নাচ, গান-বাজনা, চুরি, ডাকাতি (ও এ ধরনের বাজে কাজ) এর পরিবর্তে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে থাকা, বসা ও শোয়া অবস্থায় দুআ ও ইবাদাত করার মাধ্যমে অতিবাহিত হয়। (তাফহীমুল কুরআন)
৩.ফজর ও ইশা জামায়াতে পড়ার সওয়াব.. (সারারাত নফল নামায পড়ার সমতুল্য..)। মুনাফিকদের জন্য এ দু’ ওয়াক্ত নামাযের জামায়াতে আসা কঠিন..।
আয়াত:৬৫.এবং যারা বলে, হে আমার পালনকর্তা, আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ;
ব্যাখ্যা:
মুমিনদের পঞ্চম গুণ:
১.রাতে ইবাদাতে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তারা নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকে না বরং সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে ও আখিরাত নিয়ে চিন্তিত থাকে। (মাআরিফুল কুরআন)
২.নিজেদের বিপুল মাত্রার নেক আমল সত্ত্বেও তারা এ ভয়ে কাঁপতে থাকে যে, আমাদের আমালের ত্রুটিগুলো আমাদেরকে কঠিন আযাবে নিয়োজিত করে না দেয়.. (অহংকারহীনতা..) (তাফহীমুল কুরআন)
আয়াত:৬৬.বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা!
ব্যাখ্যা:
১.জাহান্নামের আযাব অত্যন্ত ভয়ংকর।
২.সেখানে মৃত্যু হবে না।
আয়াত:৬৭.এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না, কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এ দু’য়ের মধ্যবর্তী।
ব্যাখ্যা:
মুমিনদের ষষ্ঠ গুণ:
১.অপব্যায় করে না, কৃপণতাও করে না বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করে.. (মাআরিফুল কুরআন)।
২.রাসূল (সা.) বলেন, ব্যয় করতে গিয়ে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করা মানুষের বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। (আহমাদ, ইবনে কাসীর)
৩.বেহুদা খরচ ৩ রকম: ১.নাজায়েয কাজে ২.হালাল কাজে মাত্রাতিরিক্ত ৩.নেক কাজে লোক দেখানোর নিয়তে.. (তাফহীমুল কুরআন)
৪.কৃপণতা ২ রকম। ১.সামর্থানুসারে প্রয়োজনমতো খরচ না করা ২.ভালো কাজে খরচ করতে কুন্ঠিত হওয়া.. (তাফহীমুল কুরআন)
আয়াত:৬৮.এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদাত করে না (বা শিরক করে না), আল্লাহ যাকে হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং (উপরন্তু) ব্যাভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা (গুনাহের) শাস্তির সম্মুখীন হবে।
ব্যাখ্যা:
মুমিনদের সপ্তম গুণ:
১.আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে না (শিরক বিশাল গুনাহ) (মাআরিফুল কুরআন)
২.শিরকের প্রকারভেদ: আল্লাহর অস্তিত্ব, গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারে শিরক করা।
৩.প্রচলিত শিরকের উদাহরণ: ১.পেশাকে রিযক (বা জীবনোপকরণ) দাতা মনে করা ২.মানুষকে আল্লাহর মতো নির্ভুল বিধান তৈরির যোগ্য মনে করা।
মুমিনদের অষ্টম গুণ:
১.কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না এবং ব্যাভিচারের নিকটবর্তী হয় না। (মাআরিফুল কুরআন)
২.হত্যা ও ব্যাভিচার সম্পর্কিত ব্যাখ্যা: ইসলামে হত্যার ৫ টি বৈধ কারণ নিম্নরূপ-
কুরআন থেকে সৃংগৃহীত: ১.ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যাকারীকে শাস্তি প্রদান করা (কিসাস) ২.ইসলাম প্রতিষ্ঠায় বাধাদানকারী হয়ে যুদ্ধ করলে আর তাকে হত্যা ছাড়া উপায় না থাকলে ৩.ইসলামী রাষ্ট্রে অশান্তি সৃষ্টিকারী বা রাষ্ট্রব্যবস্থার পতন ঘটাতে সচেষ্ট ব্যক্তি
হাদীস থেকে সৃংগৃহীত: ১.বিবাহিত যেনাকারী ২.মুর্তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড (সব জাতিই তার বিশ্বাসঘাতকদের শাস্তি প্রদান করে) (তাফহীমুল কুরআন)
৩.আল্লাহ বলেন, (ক)“হে বনী-আদম, আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে।” (০৭/সূরা আল আরাফ:২৬) (খ)“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেনো তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাজাত করে।” (২৪/সূরা আন নূর:৩০) (গ)“.. যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে যে ব্যক্তি কুবাসনা করে ও যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে তোমাদের ব্যাপারে প্রলুব্ধ হয়ে পড়বে।..।” (৩৩/সূরা আল আহযাব:৩২)
৪.রাসূল (সা.) বলেন (ক)যে ব্যক্তি কোনো অপরিচিত নারীর প্রতি যৌন লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, কিয়ামাতের দিন তার চোখে উত্তপ্ত গলিত লোহা ঢেলে দেওয়া হবে। (ফাতহুল কাদীর) (খ)‘স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোনো নারীর কাছে যেও না, কারণ শয়তান তোমাদের যে কোনো একজনের মধ্যে রক্তের ন্যায় প্রবাহিত হবে।’ (তিরমিযী) (গ)চোখ দুটো ব্যভিচার করে, দৃষ্টি এদের ব্যভিচার; হাত দুটো ব্যভিচার করে, স্পর্শ এদের ব্যভিচার; পা দুটো ব্যভিচার করে, এ পথে চলা এদের ব্যভিচার; কথোপকথন জিহ্বার ব্যভিচার, কামনা-বাসনা মনের ব্যভিচার; অবশেষে যৌনাঙ্গ এ সকলের সত্যতা অথবা অসত্যতা প্রমাণ করে। (আল হাদীস)
৫.পীরের সাথেও পর্দা ফরয। দুলা-ভাই ও শ্যালিকার মধ্যে পর্দা ফরয। দেবর ও ভাবীর মধ্যেও পর্দা ফরয।
৬.আধুনিক যুগে পর্দাহীনতার কিছু ক্ষেত্র : টিভি, রেডিও, সিডি, ডিশ, মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ছায়াছবি ও নাটক, কনসার্ট, সৌন্দর্য প্রদর্শনী, নগ্নতা, ভালোবাসা দিবস, থার্টি ফার্ষ্ট নাইট, পার্ক ও লেকে পর্দাহীনতা, বন্ধু কর্তৃক পর্দাহীনতায় সহায়তা
৭.হারাম (বা নিষিদ্ধ) পথ: যিনা বা অবৈধ নারীকে বিয়ে, বৈধ নারীকে অবৈধভাবে ব্যবহার, সমলিঙ্গ বা জীবজন্তুর সাথে কুকর্ম, হস্তমৈথুন প্রভৃতি।
আয়াত:৬৯.কিয়ামাতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং সেখানে লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।
ব্যাখ্যা:
১.জাহান্নামে ধারাবাহিকভাবে শাস্তি পেতে হবে।
২.চামড়া আগুনে ঝলসে গেলে নতুন চামড়া দেওয়া হবে।
আয়াত:৭০.কিন্তু যারা তাওবা (বা প্রত্যাবর্তন) করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকাজ করে, আল্লাহ তাদের (পেছনের) গুনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
ব্যাখ্যা:
মুমিনদের নবম গুণ:
১.তারা তাওবা বা প্রত্যাবর্তন করে এবং সৎকাজ করে সঠিক তাওবার প্রমাণ দেয়। (মাআরিফুল কুরআন)
২.পুরষ্কার: গুনাহ পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেওয়া। অর্থাৎ, (ক)গুনাহ বাদ + সওয়াব, অতএব, পাপ পুণ্যে পরিণত (অথবা) (খ)বারবার অতীত পাপ স্মরণ করে লজ্জিত হওয়া ও পুণ্য কাজ বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে..
৩.(তাওবার দরজা খোলা না রেখে) তাদেরকে যদি বলা হতো কিছুতেই ক্ষমা নেই তবে তাদেরকে ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো না। (তাফহীমুল কুরআন) (তাওবা সংক্রান্ত আবু হুরায়রা (রা.) ও একজন স্ত্রী লোকের কাহিনী..)
আয়াত:৭১.যে তাওবা করে ও সৎকাজ করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।
ব্যাখ্যা:আল্লাহ বলেন, “আর যে ব্যক্তি তাঁর প্রতি অনুগত হয় তাকে তিনি স্বীয় পথ দেখিয়ে দেন। (১৩/সূরা আর রাদ:২৭)
আয়াত:৭২.এবং যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়।
ব্যাখ্যা:
মুমিনদের দশম গুণ:
১.মিথ্যা ও বাতিল মজলিসে যোগ দেয় না (মুশরিকদের ঈদ, গান-বাজনার মাহফিল, নির্লজ্জতা ও নাচ-গানের মাহফিল, মুদপান করা ও করানোর মজলিস ইত্যাদি)। (মাআরিফুল কুরআন)
২.মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না..। হযরত উমার ফারুক (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যা সাক্ষ্যদানের অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে যায়, তাকে ৪০ টি বেত্রাঘাত করা দরকার। এছাড়া তার মুখে চুন-কালি মেখে বাজারে ঘুরিয়ে লাঞ্ছিত করা দরকার। এরপর দীর্ঘদিন জেলখানায় আটকে রাখা প্রয়োজন। (মাযহরী) (মাআরিফুল কুরআন)
৩.তারা কোনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যা প্রকৃতই ঘটেছে বলে জানে না, তাকে প্রকৃত ঘটনা বলে প্রকাশ করে না। (তাফহীমুল কুরআন)
৪.তারা মিথ্যা পর্যবেক্ষণ করে না। মিথ্যা অনুষ্ঠিত হতে দেখলে তা দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে না। (তাফহীমুল কুরআন)
৫.কেমন খারাপ কাজ হয় তা বুঝতে ঐ খারাপ মাহফিলে যাওয়া দরকার এই কুযুক্তির জবাব..
মুমিনদের একাদশ গুণ:
১.যদি অনর্থক ও বাজে মসলিসের কাছ দিয়ে ঘটনাক্রমে যায়, তবে গাম্ভীর্য ও ভদ্রতা সহকারে চলে যায়। (মাআরিফুল কুরআন)
২.(বাজে) মজলিসের কাজকে ঘৃণা করা সত্ত্বেও পাপাচারী ব্যক্তিদের অবজ্ঞা করে না। (মাআরিফুল কুরআন)
৩.নিজেদেরকে উত্তম মনে করে অহংকারে লিপ্ত হয় না। (মাআরিফুল কুরআন)
৪.এরূপ কোনো জিনিসের সাথে পথে ঘাটে সাক্ষাত হলে তার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে এমনভাবে পাশ কেটে চলে যায়, যেমন একজন পরিচ্ছন্ন স্বভাব-প্রকৃতির মানুষ ময়লা-আবর্জনার স্তুপের কাছ থেকে চলে যায়। (তাফহীমুল কুরআন)
৫.তবে, খারাপ বস্তু বা কাজকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অপসারণ করতে পারলে সবচেয়ে ভালো।
আয়াত:৭৩.যাদেরকে তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বুঝানো হলে তাতে অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না।
ব্যাখ্যা:
মুমিনদের দ্বাদশ গুণ:
১.যখন আল্লাহর আয়াত ও আখিরাতের কথা স্মরণ করানো হয়, তখন তারা এসবের প্রতি অন্ধ ও বধিরদের মতো মনোযোগ দেয় না। (মাআরিফুল কুরআন)
২.শ্রবণশক্তি ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের মতো এগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে ও সে অনুযায়ী আমল (বা কাজ) করে। (মাআরিফুল কুরআন)
৩.তারা এমন লোক নয় যে, আল্লাহর আয়াত শুনেও বসে থাকবে বা কাজে ঝাপিয়ে পড়বে না। (তাফহীমুল কুরআন)
৪.তারা সেটির গভীর প্রভাব তাদের মন-মগজে গ্রহণ করে, যে পথ-নির্দেশনা তাদের দেওয়া হয় তা পালন করে। (তাফহীমুল কুরআন)
৫.কুরআনের কোনো কোনো আয়াতকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে না মানলেও চলে এ কুযুক্তির জবাব..
আয়াত:৭৪.এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ করো।
ব্যাখ্যা:
মুমিনদের ত্রয়োদশ গুণ:
১.দুআ করে এই বলে যে, স্ত্রী সন্তানগণ যেনো চোখের শীতলতা দানকারী হয় এবং নিজেরা যেনো মুত্তাকী লোকদের মধ্যে নেতা হতে পারে। (মাআরিফুল কুরআন)
২.নেতা হতে পারার দুআ করার উদ্দেশ্য এই যে, আমাদেরকে এমন যোগ্য করে দিন, যাতে মানুষ দ্বীন ও আমালে আমাদেরকে (রাসূল সা. এর অধীনে) অনুসরণ করে এবং আমাদের জ্ঞান ও আমাল দ্বারা তারা উপকৃত হয়। ফলে আমরা এর সওয়াব পাবো। (মাআরিফুল কুরআন)
৩.তাদের অবস্থা সেই লোকদের মতো হয় না, যারা নিজেদের বংশের লোকদের বিভিন্ন ধর্মীয় মতে ও দলে শামিল থাকার কারণে খুব খুশি হয় আর মনে করে, ঠিক আছে, সব ব্যাংকেই কিছু না কিছু জমা করা আছে। (তাফহীমুল কুরআন)
৪.তারা সৎকাজে একে অপরের চেয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। (তাফহীমুল কুরআন) (উল্লেখ্য, এ আয়াতে নেতৃত্বের লোভ করার কথা শেখানো হয়নি বরং সৎ কাজে অগ্রবর্তী হতে পারার দুআ করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।)
আয়াত:৭৫.তাদেরকে তাদের সবরের প্রতিদানে জান্নাতে কক্ষ দেয়া হবে এবং তাদেরকে সেখানে দুআ ও সালাম সহকারে অভ্যর্থনা করা হবে।
ব্যাখ্যা:
সবরের বিভিন্ন অর্থ:
১.তাড়াহুড়ো না করা, নিজের প্রচেষ্টার ত্বরিত ফল লাভের জন্য অস্থির না হওয়া এবং বিলম্ব দেখে সাহস না হারানো
২.তিক্ত স্বভাব, দুর্বল মত ও সংকল্পহীনতার রোগে আক্রান্ত না হওয়া
৩.বাধা বিপত্তির বীরোচিত মোকাবেলা করা এবং শান্ত চিত্তে লক্ষ্য অর্জনের পথে যাবতীয় দুঃখ কষ্ট সহ্য করা
৪.দুঃখ-বেদনা ভারাক্রান্ত ও ক্রোধান্বিত না হওয়া এবং সহিষ্ণু হওয়া
৫.সকল প্রকার ভয়ভীতি ও লোভ-লালসার মোকাবেলায় সঠিক পথে অবিচল থাকা, শয়তানের উৎসাহ প্রদান ও নফ্সের খাহেশের বিপক্ষে নিজের কর্তব্য সম্পাদন করা, গুনাহের লাভ ও আরাম প্রত্যাখ্যান করা এবং নেকী ও সততার সকল প্রকার ক্ষতি ও বঞ্চনাকে সাদরে বরণ করা ইত্যাদি।
আয়াত:৭৬.তথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। অবস্থানস্থল ও বাসস্থান হিসেবে তা কত উত্তম।
ব্যাখ্যা:
জান্নাতের বর্ণনা:
১.জান্নাতে আছে এমন সব নিয়ামাত যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি, কোনো কান কখনো শুনেনি এবং কোনো অন্তর কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।
আয়াত:৭৭.বলুন (হে নবী), আমার পালনকর্তা পরোয়া করেন না যদি তোমরা তাঁকে না ডাকো। তোমরা মিথ্যা বলেছো। অতএব সত্বর নেমে আসবে অনিবার্য শাস্তি।
ব্যাখ্যা: আল্লাহর গোলামী করার গুরুত্ব:
১.আল্লাহর গোলামী না করলে তাঁর কাছে আমাদের কোনো মর্যাদা নেই।
২.আল্লাহর কোনো ঠেকা নেই যে, মানুষ তার গোলামী না করলে তাঁর কোনো কাজ ঠেকে থাকবে।
শিক্ষাবলী:
১.আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে হবে। ২.দ্বীনি জ্ঞানার্জনে ব্রতী হতে হবে। ৩.অন্তরে বিনয় এবং চলাফেলায় সুরুচী থাকা দরকার। ৪.তর্কপ্রিয় লোকদের চেয়ে সত্যসন্ধানীদের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করা দরকার। ৫.ইবাদাতের জন্য রাত্রি জাগরণে সচেষ্ট হতে হবে। ৬.ইবাদাতে সন্তুষ্ট হওয়া যাবে না এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির দুআ করতে থাকতে হবে। ৭.অপব্যয় ও কৃপণতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। ৮.শিরক, অকারণে হত্যা, ব্যাভিচার ইত্যাদি কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। ৯.তাওবা করতে হবে ও সৎ কাজ করতে থাকতে হবে। ১০.খারাপ কাজ বর্জন করতে হবে ও বাজে মসলিসে যাওয়া যাবে না। ১১.কুরআন বুঝতে হবে ও মানতে হবে। মানা সবচেয়ে জরুরী; পরে মানার স্বার্থে বুঝা জরুরী এবং উভয়ের স্বার্থে পড়া জরুরী। ১২.আপনজন ও আত্মীয়দের জন্য দুআ করতে হবে। ১৩.সৎ কাজে অগ্রবর্তী হতে হবে। ১৪.ইসলামী আন্দোলনের ফরয দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বা পরীক্ষাস্বরূপ যে বিপদাপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করতে হবে।
সম্পাদনা: ইঞ্জিনিয়ার আবু রামিন
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১৮