somewhere in... blog

মেধাবীরা অনেক ক্ষেত্রে ইসলামী সংগঠনে কেনো সক্রিয় হচ্ছে না? দায়ী কি সংগঠন নাকি মেধাবী নিজেই?

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বীকারোক্তি:
লেখক নিজেকে মেধাবী মনে করেন না এবং তিনি আল্লাহর রহমতে কখনো নিষ্ক্রিয়ও ছিলেন না।

মেধাবী কারা:
যারা ভালো বিষয়ে ভালো রেজাল্টধারী এবং বিভিন্ন কাজে বিশেষভাবে পারদর্শী- এ ধরণের লোকেরাই সাধারণত মেধাবী হিসেবে সর্বস্তরে স্বীকৃত।

মেধাবী নেতৃত্বই কাম্য:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইসলামী আন্দোলনে মেধাবী লোকেরা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অবশ্য বাংলাদেশের অবস্থা ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী ছাত্র সংগঠনের সাবেক একজন কেন্দ্রীয় সভাপতি মালয়েশিয়া, তুরস্ক, শ্রীলংকা ইত্যাদি দেশে ঘুরে এসে আফসোসের সাথে এ সত্য স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তিনি বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। সব জায়গায় দেখলেন কেন্দ্রীয় কমিটির শতকরা প্রায় নব্বই ভাগ সদস্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রভৃতি। আফসোস, বাংলাদেশে ১-২ জনও নেই!

মেধাবীদের ব্যাপারে অভিযোগসমূহ:
১.মেধাবীরা চায় তাদেরকে বুদ্ধিজীবী ঘোষণা করে পৃথক একটি ‘প্লাটফর্ম’ করে তাদেরকে ‘তেল দেওয়া’ হোক, উন্নত জীবন দিয়ে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হোক। বিনিময়ে তারা সংগঠনকে শুধু বুদ্ধি দেবে এবং বিভিন্ন গবেষণা করবে। তারা তাদের মেধাকে সংগঠনে বিলীন করে দিয়ে নিছক কর্মী হিসেবে জীবন যাপন করতে চায় না।
২.মেধাবীরা দায়িত্বশীল কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হতে নয়, বরং নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে বা অন্তত উপদেষ্টা হতে চায়।
৩.মেধাবীরা ‘শুনলাম ও মেনে নিলাম’ ধরনের প্রক্রিয়াতে প্রবেশ করে না। ফলে তাদেরকে সংগঠনে রাখা যায় না। কারণ এদেরকে ধরে রাখার অর্থ আনুগত্যহীনতার দরজা খুলে দেওয়া।
৪.মেধাবীরা মূল্যায়ন পেতে চায়, মূল্যায়ন না পেলে যতো ভালো কাজই হোক খুব কম মেধাবীই সে কাজটি করতে চায়।
৫.মেধাবীরা বুদ্ধিজীবি হতে চায়, বেশি বুঝে, বৈঠকে বেশি কথা বলে, জটিল কথা বলে এবং খালি প্যাচায়। ওদের কথায় কান দিলে চলে না।
৬.মেধাবীরা উপদেষ্টা হতে চান; কর্মী নন। তারা আনুগত্য করতে নয় বরং উপদেশ দিতে ভালবাসেন। তাদেরকে ধরে যদি রাখতেই হয় তাহলে কর্মী না বানিয়ে ও আনুগত্যের আশা না করে ধরে রাখতে হবে।

মেধাবীদের উপর অভিযোগের পর্যালোচনাসমূহ:
১.মেধাবীরা সাধারণত তেল দিতে অভ্যস্ত নয় বরং উল্টো তারা পরামর্শ দেয়, প্রস্তাব দেয় এবং নতুন কর্মসূচী দেয়। অনেক সময় সেগুলো হয়তো দায়িত্বশীলের মাথাতেও ধরে না। আর সংগঠন মেধাবীদেরকে উন্নত জীবন দেবে কেনো বরং উন্নত জীবনই তো মেধাবীদের পেছনে ছোটে। মেধাবীরা নিজ যোগ্যতায় উন্নত জীবনের যতোটা পাওয়ার কথা অনেক সময় সংগঠন করার কারণে সেটা থেকে বঞ্চিত হয়।
ইসলামবিরোধী বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের বিপক্ষে মিছিলে না এসেও ইসলামের বেশি ক্ষতি করছে। একইভাবে ইসলামের পক্ষের মেধাবীরা ইসলামের পক্ষে ঝটিকা মিছিলে না এসেও ইসলামের বেশি উপকার করতে পারে। সেই যথাযথ ও বৃহত্তর উপকার গ্রহণ না করে কেবল ঝটিকা মিছিলের উপকার নিতে যাওয়া কি হাতি মেরে মশা বাঁচানোর মতো নয়?
এমন সময় গিয়েছে যখন ফেসবুক ব্যবহার করতে বাধা দেওয়া হতো। তখন অনেকেই (যারা আগে বুঝেন) বলেছিলেন, ফেসবুকই একসময় হবে সবচেয়ে বড় মিডিয়া। সেই সব ফেসবুক বিদ্বেষী দায়িত্বশীলকে এখন দেখা ফেসবুকে পেজ খুলেছেন। তিনি বুঝলেন ঠিকই; তবে দেরিতে।
২.অমুসলিম সমাজেও অনেক সময় কর্মীরা নেতার কঠিন আনুগত্য করে। ঐ নেতারা কি আনুগত্যের আয়াত-হাদীস শুনিয়ে আনুগত্য আদায় করে? রাসূল (সা.) আনুগেত্যের আয়াত শুনানোর আগে কি সাহাবীগণ (রা.) তাঁর আনুগত্য করেননি? আনুগত্যের আয়াত-হাদীস শুনিয়ে আনুগত্য আদায় করার অপরিহার্যতা সাধারণত তখনই সৃষ্টি হয়- যখন নেতৃবৃন্দ স্বীয় জ্ঞান, গুণ, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা বা এ জাতীয় বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে কিছু অধ:স্তন লোককে অগ্রসর মনে করায় হীনমন্যতায় ভোগেন অথবা অধিকতর যোগ্য লোকদেরকে নিজের পদ-পদবীর জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করেন।
কোনো কর্মীর প্রস্তাবের দুর্বলতা যুক্তি দিয়ে খণ্ডন না করে আনুগত্যের আয়াত দিয়ে করালে কোনো প্রজ্ঞাবান ও মেধাবী লোকই সংগঠনে সহজে টিকতে পারবে কি? প্রজ্ঞাবান ও মেধাবী লোকেরা নতুন নতুন পথ-পন্থা প্রস্তাব তুলে ধরবে- এটাই স্বাভাবিক । সেগুলোর চেয়ে উত্তম প্রস্তাব না দিয়ে একের পর এক সকল প্রস্তাব নাকচ করতে থাকলে এ আশা করা যায় না যে, আনুগত্যের আয়াত শুনেই প্রজ্ঞাবানদের অন্ধ আনুগত্য পাওয়া যাবে।
৩.‘শুনলাম এবং মেনে নিলাম’ এটা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের (সা.) ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু অনেকে এটাকে সংগঠনের প্রতিটি ইউনিট পর্যন্ত দেখতে চায়- যা সবসময় বাস্তবসম্মত নয়। যুক্তি, বুদ্ধি, তথ্য, ইতিহাস, পরিসংখ্যান ইত্যাদিকে ভিত্তি করে সংগঠন ও কর্মপদ্ধতি দাঁড় করালে আনুগত্যের আয়াত মুখস্ত করিয়ে বা এ সম্পর্কিত দারস শুনানো ছাড়াই জনশক্তি আনুগত্য করবে ইনশাআল্লাহ।
৪.অ-মেধাবীরা কি মূল্যায়ন পেতে চায় না? মূল্যায়ন চাওয়ার রোগটি কি কেবল মেধাবীদের? তাছাড়া গুণের কদর না করলে গুণী তৈরি হবে কি? অবশ্য, একথা ঠিক যে, মানুষের কাছে নিজের কদর আশা করা উচিত নয়।
একজন লোক জীবনের সর্বক্ষেত্রে মূল্যায়ন পেয়ে থাকলে হঠাৎ তার থেকে কথা বলার ক্ষেত্র সরিয়ে নিলে সে কি বছরের পর বছর চুপ করে থেকে সামনের সারিতে কাজ করতে পারবেন? তাকে মূল্যায়ন করে না এমন নেতা কি তাকে মানোন্নয়নের ছাড়পত্র (Clearance)দেবেন?
ইসলামবিরোধী দলগুলো তাদের স্বার্থে প্রায়ই মেধাবীর মূল্যায়ন করে থাকে। তাহলে আমরা কেনো ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যায়নের হকদারদেরকে মূল্যায়ন করতে পারবো না?
৫.অনেক সময় মেধাবীদের নিস্ক্রিয়তার সমালোচনা করা হলেও ভালোবাসার প্রশংসা করা হয়না। তাছাড়া কেনো মেধাবীরা সক্রিয় হচ্ছেন না সেটার কারণও নিরপেক্ষভাবে উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়না। এক্ষেত্রে সমস্যা মেধাবীরও থাকে আবার নেতারও থাকে। একচেটিয়া কারো দোষ দেওয়া অনুচিত।
৬.দরকার ছিলো এই যে, সংগঠনে সকল কর্মীই উপদেষ্টা হবে। কিন্তু আফসোস, এখন উল্টো কর্মীদেরকে কেবল ‘কাজের লোক’ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। নেতার ভাবখানা এমন যে, ‘যা বলেছি সেটা মেনে চলেন, এতো কথা (বা উপদেশ) কিসের?’ মেধাবীরা যুক্তি দিয়ে চিন্তা করবে, যুক্তি সহকারে কথা বলবে- সেটাকে কর্মীর পরামর্শ মনে না করে উপদেশ মনে করাটাই তো আসল সমস্যা। নেতা যোগ্যতা ও প্রজ্ঞায় ঠিক থাকলে প্রায় সবাই আনুগত্য করবে। তখন মেধাবীরা ‘মুরসি’র কাছাকাছি বা আরও ভালো হবে ইনশাআল্লাহ; যদি সংগঠনের কর্মীকে ‘মাটিকাটা কর্মীতে’ পরিণত না করা হয়। (কৃতজ্ঞতা: মুহসিন আব্দুল্লাহ, সম্পাদনা: ইঞ্জিনিয়ার আবু রামিন)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৩
৪৫৬ বার পঠিত
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×