somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদিপৃথিবীর গান

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল 10 ফেব্রুয়ারি 2007 আমার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ 'আদিপৃথিবীর গান' বইমেলায় এনেছে পাঠসূত্র। এ উপলক্ষে নজরুল মঞ্চে সন্ধ্যা 6টায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। কবি-লেখক-সাংস্কৃতিক কর্মীসহ অনেকেই এতে উপস্থিত ছিলেন।
56 পৃষ্টার এ বইয়ে মোট 48টি কবিতা রয়েছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন নজরুল ইসলাম বাবুল। বইটির মূল্য 60টাকা।অ্যার্ডন, শ্রাবণ ও লিটম্যাগ চত্বরে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

লেখক পরিচিতি :
আহমেদ স্বপন মাহমুদের জন্ম 21 মাঘ 1372 বঙ্গাব্দ, নেত্রকোণা জেলায়। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘদিন, পাশাপাশি লেখালেখি ও সাংবাদিকতা। দেশে ও দেশের বাইরের বাংলা ও ইংরেজি পত্রপত্রিকায় লিখছেন কবিতা, প্রবন্ধ ও কলাম। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে চারটি কবিতাগ্রন্থ ও কবিতা বিষয়ে সমালোচনা গ্রন্থ 'সমূহ সংকেতের ভাষা'। এছাড়াও উন্নয়ন গবেষণা ও সমাজ রাজনীতি বিষয়ে রয়েছে তাঁর বেশ ক'টি গ্রন্থ যা দেশে বিদেশে আলোচিত ও সমাদৃত। সমকালীন কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে একনিষ্ট কর্মী হিসেবেও তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত।

লেখকের প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ :
অতিক্রমণের রেখা (কাব্য, শ্রাবণ 2000), সমূহ সংকেতের ভাষা (গদ্য, শ্রাবণ 2001), সকল বিকেল আমাদের অধিকারে আছে (কাব্য, জয়ামি 2004), অবিচল ডানার উত্থান (কাব্য, জয়ামি 2006)।

কবিতা নিয়ে :
অস্তিত্বের এক গভীরতর স্তর থেকে উঠে আসে আহমেদ স্বপন মাহমুদের শব্দমালা। যে ঘোরলাগা তীব্রতার দিব্যপ্রভা মানবীয় উচ্চারণকে প্রকৃতই কবিতাপদবাচ্য করে তোলে সেই তীব্রতার উপস্থিতি তাঁর কবিতায় ল্যণীয়। গদ্য ও পদ্যের কোনো এক সীমান্তরেখাকে তাঁর কাব্যভাষার বিচরণত্রে হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যটিই তাঁর কাব্যভাষার শক্তির উৎস।

বই থেকে কয়েকটি কবিতা :

লোনাবালা

পেঁৗছে গেছি লোনাবালা, দীর্ঘ ভ্রমণের পর, প্রীতিময়
এই শীতের বিকেলে দেখো পাহাড় কী আনন্দময়
সবুজ জড়িয়ে আছে গায়ে, আর হালকা কুয়াশা
ধীরে ধীরে ঘন আর স্থির হয়ে আসে;

অদ্ভুত পাখিটার নাম তুমি শুনেছো, তোমার আশ্রয়ে
সে বহুদিন থাকে, আর সময় হলে উড়াল দেয়
ঘুরে ফিরে তারপর ফিরে আসে এই উপত্যকাময়
দেশে, স্তরে স্তরে সাজানো তোমার রূপময় স্তনোল্লাসে।

এই যে পাহাড় থমথম, নিবিড়, অতিদূর নগর কোলাহল থেকে
তুমিও সুস্পষ্ট, প্রাকৃতিক, জানাও গভীর আহ্বান
পাখি আর পাহাড়ের, মানবের প্রেমে
আকাশে মেঘের সাথে কথা হয়, উপত্যকা ঘিরে
স্পর্শ করে আছে যে মেঘ তা নেমে এসে
ঝরনায় অভিভূত জল হয়ে ঝরে, আলোময় প্রাণ হয়ে
ঘাসের শরীরে, এ দৃশ্য আনন্দময়, বিশিষ্ট শীত বিকেলে।

আর তুমি জেগে ওঠো লোনাবালা
উপত্যকাময়, আদি পৃথিবীর গানে।
...
দীর্ঘশ্বাস

কাসা রোসারিও থেকে দণি চীন সমুদ্র পেরিয়ে
তারপর সুবর্ণভূমি, পথে আরও আছে মেট্রো মানিলা
আনীলাকে দেখি নাই, না দেখেও যার প্রেমে মন মুগ্ধ হয়_
ফেলে আসি সিবু দ্বীপে তুখোড় মরোবালিকা, জাজ্বল্যমান
আরো নাম, আর যত কাহিনী-বিষাদ-কেদ, যুদ্ধ-ইতিহাস
বৃষ্টি আর কান্নায় মিশেছিলো ফালির দীর্ঘশ্বাস;

দীর্ঘ দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা
কত অাঁকাবাঁকা পথ, কত মনস্তত্ত্ব
ঝড় বয়ে গেছে, টাইফুনে থেমে গেছে কিছু প্রাণ
কিছু প্রাণ অতৃপ্তি নিয়ে বাঁচে, কিছু যুদ্ধে আর প্রেমে_
দীপ্ত সুবর্ণপরানে, আমাদের নগরের কোলাহল থামে না তবু;
প্রতিদিন ঝড়, প্রতিদিন ইতঃস্তত, কী হবে না হবে
এইসব অস্থিরতা, সময়ের মহাকাল ধরে তোমারে আমারে
দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাসে বাঁচিয়ে রাখে।
...
জপ

তাহারে চিনি না, নাম জপ করি, না দেখে যে প্রেম আশেকে মাশেকে, লোকে বলে, তাহা খাঁটি, ফলে ইহাতে মনোনিবেশ করে তার প্রেমে_ কার যেন প্রেমে উঠতে থাকি, আর নাম জপ করি_ যে নামের আকারপ্রকার নাই_ তবু কেন সাঁই_ অরূপে আকার পাই, তাহারে তো চেনাজানা নাই, সাকারে নিজ রূপে বাস করে নিরাকার চিনি নাই অমূল্য রতন, ফলে অধিক যতন করে বন্ধঅন্ধকারে নয়ন মুজে আমাতে নিরাকার দেখি _ আর নাম জপ করি_ কার যেন নাম সাঁই_ সে যে আমার আমার।
...
উত্থান

ব্যক্তিগত আলোরাশি তোমাকে দিলাম
উত্থানের গান আর দূর সাগরের ঢেউ।

আকাশের সকল মেঘ নির্বাপিত হলে
আলো হয়ে তুমি যাত্রা শুরু হও
উত্তাপে,
তথাপি বেদনা ও নির্জনতা ঘেরা
অন্তহীন ব্যথার চূড়ায়
অস্বচ্ছ রেখায়
আলোর বেদনা হয়ে থাকো_

ব্যক্তিগত আলোরাশি তোমাকে দিলাম
উত্থানের গান আর দূর সাগরের ঢেউ।
...
ফুল

ফুল দেখে সপ্রতিভ হওয়ার হেতু কী কী থাকতে পারে
এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ওড়ে গেল শত প্রজাপতি!

বসন্তে লাল শাড়ি পরা সি্নগ্ধ মেয়েদের খোঁপায় লাল কৃষ্ণচূড়া
আনন্দময় ঘ্রাণ বটে, স্বস্তিদায়ক;

কিন্তু বাগানে যেসব ফুল ফুটে থাকে
আর প্রতিদিন মালির অাঁচড়ে বিদ্ধ হয়
এদের কর্তিত দেহের ভিতর কী এমন জাদু থাকে
যা দেখে প্রণয়ের মত মুগ্ধ হতে হয়।

আরও আরও হেতু হয়তো আছে
প্রীতিমুগ্ধ চোখের রঙ
আর বহুবর্ণ ভালোবাসা অাঁকা
সুরভিত ফুলের প্রভাতে;
ফলে ফুল দেখে সহজে মুগ্ধ হয় মন
দগ্ধদহনও থাকে_ প্যারাডক্স_ অগি্নফুলবন!
...
আকাশের তারাগুলো নিভে গেলে

আকাশের তারাগুলো নিভে গেলে আমরা বনস্পতির কাছে গিয়ে শান্ত হতে চাই; বনে বনে যেসব পাখি থাকে তারা স্বপ্ন ভালোবেসে চঞ্চল উড়ে যায় বিভিন্ন আকাশে_ মানবের আকাশ পাখিদের মত নয়; পাখিদের ভালোবাসা ঢের ঢের সোনা হয়ে ওঠে; মানুষ কেবল প্রতিপ হয়_ একবার ভালোবাসা নিঃশেষ হলে মানবের ােভ, ঘৃণা, হেলা অবহেলা আরও যত বিশেষ্য বিশেষণ অতল রাত্রির অাঁধারের মত ঘিরে থাকে, আর অসহায় মানবের আর্তনাদ_ রক্তের প্রজ্বলন্ত উষ্ণীষ হারায় অনন্ত নিঃসীমতায়_ যেখানে আগুনের তীব্র দহন আর পিশাচ নাচে তারাদের অন্ধকারে।

তখন প্রার্থনার মতো প্রেম_ প্রিয় আকাঙ্ার দহন, সমুদ্রের গোধূলি বা সারারাত্রির অনিদ্রা ও চুম্বনের গভীর মমতার কোনো আলাদা অর্থ থাকে না; রূপ থেকে রূপে রূপান্তর হতে হতে যারা পথ হেঁটে গেছে দীর্ঘকাল সেই পথে কখন হারায় মানুষের মন, হৃদয় যখন খেলা করে আবেগের শিরোনাম হয়ে তার থেকে গভীর গভীর পৃথক।

পৃথক মানুষ হয়ে কতবার অন্তর থেকে অন্তরে ছাই হয়ে ঝরে গেছে হৃদয়ের অপার খোলস_ ভালোবেসে সেইসব আগুনের দিন ঝরে গেছে গহন শূন্যতা নিয়ে কতবার_ অন্ধকার মহাজীবশূন্যতার পাড়ে_ দিগন্তহীন সমুদ্রের অশেষ কান্নার আর রক্তাক্ত পাখির গান হয়ে_ আগুন হয়ে_ পৃথিবীর ধূলি ইতিহাস থেকে_ মমতার আকাশ থেকে উদাস উদাসীন_ ইয়ত্তাহীন;

আমরা উদাস হয়ে যাই_ ভালোবেসে আকাশ নয়_ শান্ত বনস্পতি বা কোনো নদীর কলতান নয়_ কেবল অস্থির, চঞ্চল_ কেবল নতুন হৃদয় খোঁজে কে কাকে পোড়াই অথবা কার প্রেমে কে পোড়ে কার কত রক্ত ঝরে সকল আশ্রয় যখন শেষ হয়_ বড় অদ্ভুত অভিনব মানবের হদয়!



সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:৪০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার একটা ব্যক্তিগত সমুদ্র থাকলে ভালো হতো

লিখেছেন সামিয়া, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আমি এসে বসছি
নরম বালুর উপর,
সামনে বিশাল সমুদ্র,
ঢেউগুলা আমারে কিছু একটা বলতে চাইতেছে,
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।

আমার মাথার উপর বিশাল আকাশ,
আকাশের নিচে শুধু পানি আর পানি,
আমি একলা,
আমার সামনে সমুদ্রের একলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৭



জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)। রাজনীতি করা ভালো। বোকা, সহজ সরল লোকদের রাজনীতি করা ঠিক না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে... সাজাই এ ঘর ফুলে ফুলে ...

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল দ্বার খোল, দ্বার খোল....
বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে লাগে দোল। সাথে সাথে দোলা লাগে বুঝি আমাদের অন্তরেও।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজড ! নতুন করে ওপেন করার সুযোগ নেই......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৪৫


..বলে মনে করেন জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্বনামধন্য থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রধানের সাথে বৈঠকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন বন্ধ করা নিয়ে কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৪১


সম্প্রতি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বহুল আলোচিত "ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন" বন্ধ করা নিয়ে অনেককেই উদ্বিগ্ন দেখতে পাচ্ছি। বিষয়টি আমাদের মতো সাধারণ আমেরিকান নাগরিকদের জন্য কিছুটা হলেও চিন্তার কারণ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×