দেশে প্রথম বারের মত অটিজম শিশুদের সেবা দিতে যাত্রা শুরু করল শিশু বিকাশ কেন্দ্র। অটিজম শিশুদের জন্য সরকারী কোন হাসপাতালে সর্বপ্রথম একটি সমন্বিত কার্যক্রম। সম্পূর্ণ বিনামুল্যে এ সেবা প্রদান করা হবে কেন্দ্রটিতে । মূলত: অটিজম (প্রতিবন্ধী) শিশুদের এখানে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। প্রথমিক ভাবে দেশের ৫টি মেডিকেলে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। তার মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ একটি।
‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র’ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এইচএনপিএসএ এর আওতায় বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রম। শিশু বিকাশ কেন্দ্র (সিডিসি) সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধীনে এবং শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধনের সার্বিক তত্ত¡ধানে পরিচালিত হচ্ছে। শিশু বিকাশ কেন্দ্রে নিউরোডেভেলপ মেন্টাল প্রবলেম (বিকাশগত সমস্যা), সেরিব্রাল পলসি (পক্ষাঘাত), মৃগি রোগ ও অনান্য খিছুনি রোগ, অটিজম, বিহেভিয়ার প্রবলেম (আচরণগত সমস্যা), স্পীচ ডিলে (বাকশক্তি সমস্যা), চোখে না দেখা কানে না শোনা, লানিং ডিসঅ্যাভিলিটি রোগের চিকিৎসা করা হয়।
অটিজম শিশুদের সেবা প্রদান করা লক্ষ্যে দেশের পাঁচটি মেডিকেল ও মেডিকেল কলেজ হাপাতালে যাত্রা শুরু করেছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র। প্রাথমিক ভাবে ৫টি মেডিকেলে যাত্রা শুরু করেছে এটি। এগুলো হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিডফোর্ড হাসপাতাল, সারওয়ার্দি হাসাপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তবে বছর শেষে আরও ৫টি মেডিকেলে এ সেবা চালু হবে। ২০১১ সালের মধ্যে অবশিষ্ট মেডিকেলে এ সেবা চালু করা হবে বলে জানালেন ডা. নায়লা জামান খান।
এমএজি ওসমানী মেডিকের কলেজ হাসপাতালে ১৭ আগষ্ট শিশু বিকাশ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী আবু তাহের মো. ইব্রাহিম, এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক ডা. এহতেশামুল হক দুলাল, শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শিশু বিকাশ কেন্দ্রের তত্ত¡াবধায়ক ডা. মো মনোজ্জির আলী, সহকারী অধ্যাপক ডা. প্রভাত রঞ্জন দে, সহকারী অধ্যাপক ডা. আমিন উদ্দীন চৌধুরী ও আরপি(শিশু) ডা. মাবুবুল আলম।
শিশু বিকাশ কেন্দ্রে ১৮ বছরের (যিড় এর নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়) নীচে যে কোন শিশু কে সম্পূর্ন বিনামূল্যে সেবা প্রদান করা হবে । প্রাথমিক অবস্থায় এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার দেখার পর আরপি’র (শিশু) কাছে পাঠাবেন। আরপি যদি রেফার করেন তখন শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ডাক্তার, ডেভেলামেন্ট থেরাপিষ্ট ও সাইকোলজিষ্ট শিশুটিকে দেখবেন। টিমে আছেন ডা. শ্যামজয় দাশ, ডেভেলামেন্ট থেরাপিষ্ট আফসানা ফেরদৌস , সাইকোলজিষ্ট মো.হাফিজ ও অফিস ম্যানাজার খসরুল হক।
শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) প্রফেসর ডা. নায়লা জামান খান বলেন এটি হচ্ছে কোন সরকারী হাসপাতালে প্রথম সমন্বিত কার্যক্রম। কারণ এর আগে কোন সরকারী হাসপাতলে ডাক্তার , ডেভেলাপমেন্ট থেরাপিষ্ট ও সাইকোলষ্টি এক সাথে কাজ করেননি। স¤প্রতি আমরা সিলেটের নিæ আয়ের মানুষদের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করব। সেখান থেকে এই ধরনের শিশুদের খুঁজে বের করে তাদের চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা হবে। আর তাদেরকে ২ বছরের মধ্যে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সদ্য জন্মগ্রহণ করা শিশুদেরকেও চিকিৎসা প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান । মেটার্নাল চাইল্ড ও হাসপাতালে যে সব শিশু ভর্তি হয় তাদের কে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
প্রাথমিক ভাবে এক থেকে দুইবার দেখার পর রোগী যদি সুস্থ হবে বলে মনে করা হয় তাহলে তাকে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের মাষ্টার্স নাম্বার দেওয়া হবে না। তবে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় নিয়ে জেনারেল এসেসম্যান্ট করার সময় যদি ডাক্তার ও ডেভেলাপমেন্ট থেরাপিষ্ট মনে করেন দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন তখন শিশুটিকে সদস্য করে নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে রোগীর জন্য আলাদা একটি আইডি নাম্বার বা মাষ্টার্স নাম্বার প্রদান করা হবে। রোগীর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যত বার ডাক্তাররা দেখবেন ততবার একই নাম্বারে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। রোগী তার আইডি( মাষ্টার্স) নাম্বার বললেই চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব । তবে প্রতিবার শিশু বিকাশ কেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য মেডিকেলর এর সাধারন নিয়ম অনুযায়ী সাড়ে পাঁচ টাকা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
বিশ্বনাথের দরিদ্র শিশু বাদশার(৪) বাবা জানান আমার ছেলেকে এখানে ১৮ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিতে পারব। তিনি বলেন বাদশার বয়স চার বছর তার পরও কথা বলতে কিংবা হাটতে পারে না । এখানে এসে ডাক্তার কথায় স্বপ্ন দেখছি ছেলেটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শিশু বিকাশ কেন্দ্রের তত্ত¡াবধায়ক ডা. মো. মনোজ্জির আলী জানান আগে এসব রোগীদের ঢাকায় নিয়ে যেতে হত। বর্তমানে তাদের চিকিৎসা সিলেট করা হবে। সিলেটে এধরনের অনেক রোগী আছে তারা খুবই গরীব পরিবারের বলে চিকিৎসা করাতে পারছে না। এখানে বিনামুল্যে চিকিৎসা করাতে পারবে। এট সিলেটবাসীর জন্য খুশির খবর।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. প্রভাত রঞ্জন দে বলেন এটি একটি ভাল উদ্যোগ সিলেট তথা দেশের শিশুদেও জন্য। এর ফলে অটিজম শিশুদেরকে আগে যে সেবা প্রদান করা যায়নি এখন তা প্রদান করা সম্ভব হবে।
চলতি মাসের ১৭-২০ তারিখে মধ্যে ১৬ টি শিশুকে জেনারেল এসেসম্যান্ট দেওয়া হয় তাদের মধ্যে ১০টি শিশুকে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সদস্য (মাষ্টার্স আইডি) করা হয়েছে। কারণ তাদেরকে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা প্রদান করা প্রয়োজন। বাকি ৬ টি শিশুকে সাধারণ (স্বল্প মেয়াদী) চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে বলে জানালেন অফিস ম্যানাজর খসরুল হক।
প্রতিবন্ধি শিশুদের সেবা দিতে সরকারী হাসপাতালে প্রথম সমন্বিত কার্যক্রম ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র’
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
সুন্নী না হয়ে জান্নাতি হওয়ার কোন সুযোগ নাই
সূরাঃ ১৭ বনি ইসরাঈল, ৭৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৭৭। আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে আমি যাদেরকে পাঠিয়ে ছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও সুন্নাত (নিয়ম) এরূপ ছিল। আর তুমি আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী...
বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী...
ময়মনসিংহ গীতিকা প্রকৃতপক্ষে একক কোনো কাহিনী নির্ভর বই না। 'ময়মনসিংহ গীতিকা' হচ্ছে কবিতা বা গানের সংকলন, যা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের মুখেমুখে প্রাচীন কাল থেকে ভিন্নভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্যাটারি অটো রিক্সা বন্ধ করা কী খুব কঠিন কাজ?
বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড় হল এখন অটো রিক্সা, স্বল্প পরিশ্রমে সহজ আয়ের মাধ্যম হিসাবে খুবই জনপ্রিয় একটা পেশা। স্বল্প ভাড়ার জন্য অনেক মানুষ এখন পায়ে হাঁটা ভুলেই গেছে আর হাঁটার... ...বাকিটুকু পড়ুন
জিয়াউর রহমান
চাইলে জিয়াউর রহমান ঢাকায় ঝাঁ চকচকে দালান কোঠা রাস্তা বানিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে উন্নয়ন করার বাহাদুরি করতে পারতেন। সেটা না করে তিনি ঘুরতে লাগলেন সারা দেশে, গ্রামে গঞ্জে গিয়ে খাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জবাবদিহিতার অনন্য দৃষ্টান্ত
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে। সেসব পোস্টে তার বিরুদ্ধে বিপুল... ...বাকিটুকু পড়ুন