সময় পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে ঘুরে বেড়ানো আমার একটি শখ। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটগুলো এমনিতে খুব আহামরি নয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সাম্প্রতিককালে আপডেট করা হয়েছে। অবাক হয়ে গেলাম এই ওয়েব সাইটের ডিজাইন ও ব্যবহৃত ছবিগুলো আমেরিকার ইষ্টার্ণ বিশ্ববিদ্যালয় এর ওয়েবসাইট হতে কপি (একে শিক্ষার ভাষায় বলে Plagiarism ) করে নেয়া!
আমেরিকার ইহ্টার্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট (www.eastern.edu/ )
এবার দেখুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের http://www.univdhaka.edu /ওয়েবসাইট
এইবার দেখুন খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের ওয়েব
যা একেবারে এশিয়ার প্রথম সারির ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের আগের ওয়েব সাইটের অবিকল নকল!
আবার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ডেফোডিল ইন্টাঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের ক্যাম্পাস লাইফ পেইজের সকল লেখাই কপি করা হয়েছে আমেরিকার জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্যপম্পাস লাইফ এর পেইজ থেকে!
ডেফোডিল ইন্টাঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের ক্যাম্পাস লাইফ পেইজের ছবি
ওয়েব সাইটের তথ্যের ও ছবির কপিরাইট থাকে তাই যেকোন লেখা/ছবি/ডিজাইন চুরি করা তাও আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এমন কাজ করা সম্ভব হয় কারন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েব নির্মান যারা করে থাকেন তাদের কাজ তদারকি করার জন্য কোন অভিজ্ঞ কমিটি থাকে না। ওয়েব নিমার্ণ নিয়ে যতটুকু বুঝি তাতে মনে হয়ঃ অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট মৌলিক হওয়া খুবই জরূরী।
ওয়েব সাইট প্ল্যাজিয়ারিজম সম্পর্কে যারা জানতে চান, এই লেখাটি পড়ুন (Click This Link )। এখানে বলা আছে - "That code, which is saved into a file on a server, is copyright-able. Also, the images and text used to populate the layout are also copyright-able as they too are saved into files on a Web server". সুতরাং ওয়েবের কোড, লেখা এবং ছবি সবই কপিরাইটেবল এবং সাধারনতঃ কপিরাইট নোটিশ ওয়েবের নিচেই থাকে।
এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমনঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রফেসরদের দিয়ে তথ্য ঠিক করে লিখে নেওয়া যেতে পারে। আবার চারুকলার লোকজন দিয়ে চমৎকার ডিজাইন করে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এদেশে সব দ্বায় ওয়েবমাষ্টারের উপরই বর্তায়। দুঃখের ব্যপার হলো- যতটুকু মিল পাওয়া যায় তা অনায়েসে দুর করা যেত (আর একটু পরিশ্রম করলেই)। মৌলিক ও সুন্দর ডিজানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট কি আমরা আশা করতে পারি না? এত বড় ক্যাম্পাস ও এত নামী অ্যালামনীর (নোবেল বিজয়ীও আছেন) এর কি মূল্য থাকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে ওয়েব দুনিয়ায় বিশ্ববাসীর কাছে সুন্দর করে তুলে ধরা না যায়?
আরও খুব মজার ব্যপার হলো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচুতলার লোকেরা বুঝতে পারে না যে ওয়েব কত জরুরী একটা ব্যপার। দেশের খুব কম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য ওয়েবস্পেস বরাদ্দ করে থাকে। আর ছাত্রদের জন্য তো করেই না। অথচ বর্হিবিশ্বে রিসার্চ পর্যায়ের প্রতিটি ছাত্রই ইউনিতে ওয়েব স্পেস পায়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে কি বোঝায় তা জানি না। তবে পৃথিবীর অনেক দেশই নিজেদের ডিজিটাল বলে দাবি না করলেও ডিজিটাল সুযোগ সুবিধা মানুষকে দেয়।
শিক্ষা বিষয়ক আমার অন্যান্য লেখাঃ
বাংলাদেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ ও র্যাংকিং কথন
কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে ব্যবসা!
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুগলের স্কলার প্রকাশন সংখ্যা
বাংলাদেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের (অসম্পূর্ণ) র্যাংকিং
আমার এই লেখাটি বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই আর দশটা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভিন্ন একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে বিন্দুমাত্র ভুলও বড় হয়ে চোখে পড়ে। কারণ, এখানেই আমরা শিখতে যাই। বিভিন্ন GNU/GPL লাইসেন্সের টেমপ্লেট দিয়ে অনায়েসেই ওয়েব বানানো যেতে পারে কিন্তু মূল নির্মাতার নাম উল্লেখ করতেই হবে। এটাই সেই লাইসেন্সে বলা আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৩৩