গোবর্ধন এখন ভন্ড
এইবড় বয়সটাকে আর না বাড়াইবার জন্য বাসা হইতে চাপাচাপি শুরু করিয়াছে। আহা! আমার বয়েসী কোনো যুবকের সহিত এমন হইলে তো তাহার মনে দখিনা হাওয়া বইতে শুরু করিত। কিন্তু আমার এতে কপালের ভগ্নরেখাই দ্রুত ডালপালা বিস্তার করিল। রাত্রিবেলায় নিজের শয্যাপাশে কালোকেশী নারীর কথা চিন্তা করিবা মাত্র মনটা হুহু করিয়া উঠিল।নিজেকে চাপাতির তলায় মাথা পাতয়া রাখিয়া অসহায় বলির পাঠা মনে হইতে লাগিলো।অবশেষে আর বিলম্ব না করিয়া মানসপটের কথা মানিয়া সন্ন্যাসব্রত পালনের সিদ্ধান্ত লইলাম এবং তীর্থে গমন করিলাম।
প্রথম কটা দিন ভালোই কাটিল। তীর্থের খাবার-দাবার আর দেবীদূর্গার সংস্পর্শে স্বাস্থ্যটাও বিশেষ ভাল হইয়া উঠিল। হঠাৎ ই একদিন মন্দির হইতে বাহির হইয়া এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় লক্ষ্য করিলাম। সুহাসিণী নারী সহসা দন্ত হারাইলে যতটা না অভিভূত হয় তাহার চাইতেও অধিক অভিভূত হইলাম। দেখিলাম আমার ডায়পার কালের দোস্ত গোবর্ধন অভাবীদের দান করিয়া ফিরিতেছে। পড়নে তাহার ধুতি পান্জাবী। গলায় পৈতা। বুঝিলাম ব্রাক্ষ্মন এবার সতবিত ফিরিয়া পাইয়াছে। তাহার এহেন অবস্থা দেখিয়া বুকখানি মোর গর্বে দু-ইন্চি প্রসারিত হইলো। দৌড়ে গিয়ে কহিলাম…
-আমার গোবূউ.…
-গোবু কে বৎস??? আমি গোবর্ধন।
- তা ঠিক আছে! কিন্তু তোর এত উন্নতি কীভাবে??
- সে অনেক কথা! বলিতে পারিস মা পার্বতী তাহার কালীমূর্তি ধারণ করিয়া সত্যটা চোখে ধরাইয়া দিয়াছে।
যাক গে।জটলার মধ্যে আর বাকচিত হইলো না।দান-খয়রাত শেষে গোবর্ধন আমাকে মন্দিরের পিছনের পানশালায় লইয়া গেলো। দেশ-বিদেশের হাজারো নামী লোকের আগমন সেখানে। গোবর্ধন আমাকে এখানে লইয়া আসায় তাহার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার সীমা রইলো না। নিজের নামের পূর্বে 'শ্রী' বা 'শ্রীমান্ִ কল্পনা করিতেও বাধিল না।
গোবর্ধনকে আমার বিবাহ হইতে শুরু করিয়া সন্ন্যাসব্রতের যাবতীয় বিবরণ দিলাম। গোবর্ধন ও কহিলো কেমনে সে পিতার আচরণে আশাহত হইয়া তীর্থে আগমন করিআছে। মনে মনে ভাবিলাম গোবু আমার অনেক পাল্টাইয়া গিয়াছে। মা বীণাপাণির বরে তাহার শুভবোধ উদয় হইয়াছে।সে বারংবার উঠিয়া যাইয়া আগত বিদেশি অতিথিদের সেবা করিতে লাগিল।ধর্মের নানা কথা শুনাইয়া,হস্তরেখা পরখ করিয়া সকলেরই সহিত ভাব জমাইয়া লইলো। তারপর কিছু দক্ষিনার কথা আসতেই বিনয়ের ঢেকুর তুলিয়া না করিয়া দিলোঅ। কিন্তু ভীনদেশিরা জোড় করিআ হইলেও তাহার পকেট পুরিয়া অর্থ দিত। মনে মনে ভাবিলাম "গোবর্ধন তুই পারিস ও বটে! "
খানাপিনা শেষ করিয়া গোবর্ধন তাহার দক্ষিনা বিলিয়ে দিতে লাগিলো। ভাবিলাম এমন দানবীর সুহৃদকে পাইলে হয়্তো মিথিলারাজ জনক ও সীতাদেবীকে রামচন্দ্রের হাতে তুলিয়া দিতে একবার হইলেও ভাবিতেন। আহা! এমন বন্ধু কে না চায়?
হঠাতই যেই পানশালায় খানাপিনা সাড়িলাম সেথায় হট্টগোল শুনিতে পাইলাম। কোনো এক বিদেশিনীর নাকি সোনার বালা খোয়া গিয়াছে। কেহ কেহ নাকি তাহাদের হাতঘড়ি, মানিব্যাগ ও পাইতেছে না। আমি ঐখানে যাওয়া ধড়িব এমন সময় গোবর্ধন কহিল "যাই দোস্ত, এবার পাশের মন্দিরটায় যাব।" আমি আমার বন্ধুর কাছ হইতে বিদায় লইলাম। পানশালায় হট্টগোলে একলা যাওয়া সমীচীন মনে করিলাম না। দেবীরে দুইটাকার বাতাসা চড়াইবার লাগি মানিব্যাগখানা বাহির করিতে পকেটে হস্ত প্রবেশ করাইলাম। কিন্তু একি!!! মানিব্যাগ কই???
দূরে চাহিলাম। দেখিলাম গোবর্ধন এখাধিক মানিব্যাগের টাকা গুনিতেছে। রোদে চকচক করা একখানি বালাও নজরে পড়িল। মনে মনে বলিলাম "গোবর্ধন, তুই পারিস ও বটে! আমারেও ছাড়লি না" …
১. ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪ ০