বইয়ের নাম “নজরুলের পত্রাবলী’
প্রকাশক নজরূল ইনষ্টিটিউট।
আমাদের নজরুল তার জীবনী লেখেননি।
তিনি বলেছেন “ আমার জীবনের যে বেদনা, যে রং, তা আমার লেখায় পাবে।
অবশ্য লেখার ঘটনাগুলো আমার জীবনের নয়, লেখার রহস্যটুকু আমার, ওর বেদনাটুকু আমার। ঐখানেই তো আমার সত্যিকার জীবনী রয়ে গেল।”-পৃ: ১২
এই বই পড়ার পরে আমি কিন্চিৎ আবেগীত, ইমোশনাল।
নজরুলের সাথে ছোটবেলা থেকে এতটাই পরিচিত আমরা যে,
বড় হয়ে তার সম্পর্কে আর অধিক জানার চেষ্টাই করিনি।
এখন দৈবক্রমে নজরুলের চিঠি পড়ে দেখি হায় হায়
ঘরের মানুষটাকে এতোদিনেও চেনা হলো না !
জানা হলো না তার মনের কথা !
নজরুল নামটি উচ্চারণ করলেই মনের মধ্যে একটা ছবি ভেসে ওঠে-
দুরন্ত, স্কুল পালানো, বিদ্রাহী এক যুবক, কিশোর, তরুনের।
এই লোকটা যে এই গ্রহেরই মানুস,
এরও যে সূখ- দুখ ছিল, না পাওয়ার বেদনা ছিল,
এসব আমাদের মাথায় আসে না।
রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারেও তাই।
এই বই থেকে আমি কি কোট করব?
পুরো বইটাই কোট করা যায় যে !
আমাদের হক সাহেব, মানে যারে আমরা শেরে বাংলা বলি,
তিনি পর্যন্ত এই দূখি লোকটাকে কষ্টা দিয়েছেন । (জ্ঞাতে কি অঞ্জাতে জানি না) নজরুলের মুখেই শুনুন সে কথা:
“আমার স্তী আজ প্রায় পাচ বৎসর পঙ্গু হয়ে শয্যাগত হয়ে পড়ে আছে। ওকে অনেক কষ্টে এখানে এনেছি। ওর ওসুখের জন্য এখানে সাত হাজার টাকার রৃন আছে। এর মধ্যে মারোয়ারি ও কাবুলিওয়ালাদের রৃনই বেশী। হক সাহেব যখন আমার কাছে এসে কাঁদতে থাকেন যে, আমায় রক্ষা করো, মুসলমান ছেলেরা রাস্তায় বেরুতে দিচ্ছে না, আমি তখন মুসলিম লীগের ছাত্র ও তরুনদের লীডারদের ডেকে তাদের শান্ত করি। তারপর Assembly-র সমস্ত মুসলমান মেম্বারদের কাছে আমি আবেদন করি । তারা আমার আবেদন শুনলেন। 74 জন মেম্বার হক সাহেবকে সমর্থন করতে রাজি হলেন।
নবযুগের সম্পাদনার ভার যখন নিই, তার কিছুদিন আগে ফিল্মের Music Direction - এর জন্যে সাত হাজার টাকার কন্ট্রাক্ট পাই।
হক সাহেব ও তার অনেক হিন্দু মুসলমান Supporter আমায় বললেন যে,
তারা ও রৃন শোধ করে দেবেন। আমি Film এর contract cancel করে দিই।
পরে যখন দুতিন মাস তাগাদা করেও টাকা পেলামনা,
তখন হক সাহেবকে বলঅলাম ‘আপনি কোনো ব্যংক থেকে
অল্প সুদে আমায় রুণ করে দেন।
আমার মাইনের অর্ধেক প্রতিমাসে কেটে রাখবেন।
হক সাহেব খুশি হয়ে বললেন, পনের দিনের মধ্যে ব্যবস্তা করব।
তারপর সাত মাস কেটে গের, আজ নায় কাল করে তদার Supporter রাও উদাসীন হয়ে রইলেন। আপনি জানেন সেক্রেটারিয়েটে হক সাহেব বলেন
কাজীর রৃন শোধ করে দিকত হবে;
আপনিও আমাকে বলেন ও হয়ে যাবে’
আমি নিশ্চিন্ত মনে কাজ করলাম।
আপনি জানেন হিন্দু -মুসলমান unityর জন্য আমি আজীবন
কবিতায় গানে, গদ্যে দেশবাসীকে আবেদন করেছি।
সেসব সাহিত্যে স্থান পেয়েচে- সে গান বাংলার
হাটে, ঘাটে, পল্লীতে, নগরে গীত হয়।
আমি হিন্দু- মুসলমান ছাত্র ও তরুনদের সংঘবদ্ধ করে রেখেছি,
যদি হক মন্ত্রিত্ব ভেংঙে যায়, তাহলে আবার coalition ministry-র জন্য।
হক সাহেব একদিন বললেন, ‘কিসের টাকা?
আমি চুপ করে চলে এলাম্ তারপর আর তার কাছে যযাইনি”।
পৃ: ১০৭-১০৮
এই চিঠিটা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লেখা।
শেরে বাংলাকে আমি ছোট করছি না।
নজরুলের জীবনে যা ঘটেছিল তাই উল্লেখ করছি।
শেরে বাংলার মতো লোক এই কাজ করতে পারলে অন্যরা তার সাথে কি করেছে তা সহজেই অনুমেয়।
নজরুলের একটা অক্ষেপ শোনাই তাহলে। :
“ বাঙালী মুসলমান সমাজ ধনে কিনা জানিনে,
কিন্তু মনে যে কাঙাল এবং অতি মাত্রায় কাঙাল,
তা আমি বেদনার সাথে অনুবব করে আসছি বহুদিন হতে।
আমায় মুসলমান সমাজ ‘কাপের’ খেতাবের যে শিরোপা দিয়েচে,
তা আমি মাথা পেতে গ্রহন করেচি।” পৃ-১৪
আরো একটু শুনেন:
“মুসলমান সমাজ আমাকে আঘাতের পর আঘাত দিয়েচে নির্মমভাবে।
তবু আমি দু:খ করিনি বা নিরাশ হইনি তার কারন,
বংলার অশিক্ষিত মুসলমানেরা গোড়া
এবং শিক্ষিত মুসলমানেরা ঈর্ষাপরায়ন।’ পৃ-১১
হিন্দুরাও যে তাকে কোলে করে রেখেছে তা নয়।
তবু ঘরের মানুষের আঘাত গভরে গিয়েই তো লাগে।
নজরুল বাংালী মুসলমানের এহেন আচরনের কারণ উদঘাটনের চেষ্টাও করেছেন।
সেসব এখানে আনছি না। আগ্রহীরা পড়ে নেবেন ।
সে সাথে আহমদ ছফার ‘ বাংঙালী মুসলমানের মন’ টাও পড়ে নিতে পারেন, এবং আবুল মনসুরের ‘ বাঙলাদেশের কালচার’টাও দেখতে পারেন।
নজরুলের এতো সব চিঠির মধ্যে সবচেয়ে করুন আর স্পর্শকাতর অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনকে লেখা চিঠিটা।
ফজিলাতুননেসাকে না পাওয়ার বেদনায় কাতর,
ক্লান্ত নজরূলের আকুতি ঝরে পরেছে এ চিঠিতে। বেশ বড় চিঠি।
এই চিঠিটার অডিও আবৃত্তিও আছে সার্চ করে শুনতে পারেণ।
একটা লাইন শুধু বলছি:
“আচ্ছা বন্ধু, ক ফোটা রক্ত দিয়ে এক ফোটা চোখের জল হয়-তোমাদের বিজ্ঞানে বলতে পারে?”
চিরদূখি এই কবির সাতকাহন শেষ করব তার পুত্র
কাজী অনিরুদ্ধকে লেখা চিঠি দিয়ে:
বাবা নিনামনি,
তোমারও চিঠি পেয়েছি-চমৎকার লেখা তোমার ।
তোমাকে এইবার মায়ের বাড়ীতে চাকরি করে দেব্ তোমার ফুল পেয়েছি।
চমৎকার ফুল - সুন্দর গন্ধ। ভগবানকে দিয়েছি তোমার পুল।
তিনি তোমার ফুল পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন্ তোমাকে চুমু দিয়েছেন তিনি।
কালি ফুরিয়ে গেল তাই টেন্সিলে লিখছি, তোমরা বীর ছেলে হয়ে উঠবে,
দুষ্টুমি করো না , কেঁদো না, জল ঘেঁটো না। আমি রোজ তোমাদের দেখে আসি,
চুমু খাই, তোমরা যখন ঘুঘোও।
চন্ডীর সংঙ্গে খেলা করব্ ঘুমোলে আমায় দেকতে পাবে।
তখন আমি কোলে নেব। আরো ফুল পাঠিয়ো,
তোমাদের ভগবানকে দেব্
এতোগুলো চুমু নাও।
ইতি- তোমার বাবা। ” পৃ: ১০১
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৮