কর্নফুলী পেপার মিলস লিমিটেড
কাপ্তাই উপজেলা থেকে রাঙ্গামাটি শহরের দূরত্ব প্রায় ৫০/৬০ কিলোমিটারের মত। যানবাহন বলতে এখানে চলে সি এন জি আর বাস। পাহাড়ি আকাবাকা রাস্তায় বাসগুলো যে বেপরোয়া ভাবে চলে তাতে আমি অনেক বেশি ভয় পেয়েছিলাম এবং বাহন হিসেবে সি এন জি টাকেই বেছে নেই। সি এন জি কে স্থানীয়রা বলেন ট্যাক্সি। এখানকার সি এন জি তে উঠতে গেলে অনেক সাবধান। এদের হিসাবটা একটু অন্য রকম। মনে করেন ৪০ কিলোমিটারের ভাড়া ৫০০ টাকা। এখন যদি ১৫ কিলোমিটার যাওয়ার পর সি এন জি ওয়ালা যদি তার কোন সমস্যার কারনে আর না যেতে পারে তবু আপনার কাছ থেকে পুরো ভাড়া আদায় করে ছাড়বে। আরেকটা বিষয় দেখার মত ছিল। একটা সি এন জি তে মোট সিট ৫ টা। প্রতি সিটের ভাড়া যেই দূরত্বে ৪০ টাকা হলে মোট ভাড়া হয় ২০০ টাকা কিন্তু সেই দূরত্বে যদি আপনি রিজার্ভ যেতে চান তাহলে ভাড়া চাইবে ৫০০ টাকা।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ আসলে কাপ্তাইয়ে নয়। এটা অবস্থিত বড়ইছড়ি নামক স্থানে। দুপুরে খাবারের জন্য এখানে খুব বেশি হোটেল নাই কিন্তু রুপসী কাপ্তাই নামে একটা হোটেল রয়েছে যেটাতে অনেক চমতকার সব মারমা খাবার পাওয়া যায়। বেম্বু চিকেন, রুই মাছ, কাঁকড়া, মুরগী ইত্যাদি। যদিও আমরা যখন যাই তখন বেম্বু চিকেন কিংবা কাঁকড়া ছিল না। তাদের রান্নাটাও অদ্ভূত। রান্নায় তারা কি একটা পাহাড়ি পাতা ব্যবহার করে আর তরকারীর স্বাদটাই চেঞ্জ হয়ে যায়। শুরুর দিকে যদিও আমার খেতে একটু সমস্যা হচ্ছিল কিন্তু পরে অনেক মজা লাগা শুরু হয়।
হোটেল রুপসী কাপ্তাইয়ের ভেতরেঃ
খাবারের ক্ষেত্রে আমার সব থেকে বেশি সমস্যা ছিল আতপ চালের ভাত। সিদ্ধ চালের ভাতের জন্য আমার মন কেদে উঠত কিন্তু সিদ্ধ চাল ছিল এই খুবই অপ্রত্যাশিত একটা বস্তু।
রাঙ্গামাটি থেকে বড়ইছড়ি যাবার পথে মাঝখানে ঘাগড়া নামক একটা বাজার পরে। স্থানীয়রা বলেন ঘায়ারা। একদিন বড়ইছড়ি যাবার পথে দেখি সেখানে হাট বসেছে। নেমে গেলাম পাহাড়ি হাট দেখতে।
পাহাড়ি আনারস
পাহাড়ি আম
স্তুপ করে রাখা কাঠাল
আনারস আর কলা
বেচাকেনা চলছে
এখানকার আদীবাসীরা হাটে কিভাবে যায় আমার দেখা হয় নাই কিন্তু আমি তাদেরকে দল বেধে ফিরতে দেখেছি। একটা চান্দের গাড়িতে করে তারা দল বেধে হাট থেকে ফেরে। কি যে অদ্ভূত সুন্দর সে দৃশ্য আমি তা বলে বোঝাতে পারব না। হাট বার ছাড়া আর কোন সময় আমি এই চান্দের গাড়ির দেখা পাই নাই।
চান্দের গাড়িতে হাট থেকে ফেরা
চান্দের গাড়িতে হাট থেকে ফেরা
এই জিনিসটা স্থানীয় ভাষায় কি বলে আমি জানিনা। কিন্তু আদীবাসীদের জীবনে এটার গুরুত্ব অপরিসীম। এটা নিয়ে তারা কাজে যায়, হাটে যায়, মাঠে ঘাটে সব জায়গায় যায়।
এবার পাহাড়ের উপরে কিছু মেঘ দেখিঃ
খুব ইচ্ছা ছিল, এই পাহাড়টা আমার থাকবে আর যেটা আমি কেউ একজনকে গিফট করব। দাম ও জিজ্ঞেস করেছিলাম পাহাড়ের। ৭/৮ লক্ষ টাকার মত হবে। কিন্তু অত টাকা তো আমি আর দিতে পারব না তাই মনে মনেই সেটার মালিকানা গ্রহন করে মনে মনেই কাউকে গিফট করেছিলাম।
রাঙ্গামাটি শহরে আমার সব থেকে প্রিয় নামহীন রাস্তাটা। একটা নাম ও দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু স্টাবলিশ করাতে গিয়ে ঝামেলায় পড়লাম। লোকজন পাগল- ছাগল ভাবা শুরু করল। তাই পাগলামী টা বাদ দিয়ে নামটা নিজের মধ্যেই রেখেই আত্মতৃপ্তি লাভ করার চেষ্টা করি আরকি...............
(চলবে)
রাঙ্গামাটি ছবি ব্লগ (পর্ব- চার)
রাঙ্গামাটি ছবি ব্লগ (পর্ব-তিন)
রাঙ্গামাটি ছবি ব্লগ (পর্ব- দুই)
রাঙ্গামাটি ছবি ব্লগ (পর্ব-এক)