বুরুনডাঙ্গা (Burundanga)। বৈজ্ঞানিক নাম Scopolamine । পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ড্রাগ। কোন নেশাখোর এটা ব্যাবহার করে না কারন এ ড্রাগে কোন রিক্রিয়েশন নেই। এটা ব্যাবহৃত হয় অপরাধী, ডাকাত, ধর্ষক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থার ইন্টারোগেশন পর্যন্ত নানা কাজে ।
খাবারের সাথে মিশিয়ে যেমন খাইয়ে দেয়া যায় তেমনি নিশ্বাসের সাথে সামান্য পরিমান প্রবেশ করলেও একজন ব্যাক্তি আক্রান্ত হয়ে যায়। এই ড্রাগ গ্রহনকারীকে দেখলে আর দশ জন সাধারন মানুষের মতই স্বাভাবিক মনে হয় কিন্তু তার নিজের ইচ্ছাশক্তি বলে কিছু থাকে না। যে তাকে যাই করতে বলবে সে তাই করবে। এমনকি ওভারডোজ হয়ে গেলে মানুষ মারাও যেতে পারে।
ফুলসহ গাছ।
যেমন মনে করেন শহিদ সাহেব রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, কেউ একজন এগিয়ে এসে একটি কাগজ দিয়ে তাকে বলল কাগজে লেখা ঠিকানাটা তাকে একটু দেখিয়ে দিতে। লেখা গুলো ছোট ছোট করে লেখা হওয়ায় তিনি বেশ কাছ থেকে পড়তে গিয়ে কাগজে মেশানো বুরুন্ডাঙ্গা নিশ্বাসের সাথে গ্রহন করলেন। এর পরপরই তার মধ্যে বিশেষ কোন পরিবর্তন দেখা না গেলেও তিনি কিন্তু পুরোই সম্মহিত হয়ে গেছেন। এখন ঐ লোক যদি বলে - তোমার বাসায় নিয়ে চলো আর সব মালামাল ট্রাকে তুলে আমারকে দিয়ে দাও, সাথে তোমার ক্রেডিট কার্ড দাও আর পিন নাম্বারটা বলো এবং তোমার চেক বইয়ে সই করে আমাকে দাও, তিনি বিনা বাক্য ব্যায়ে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই তার সব কথা পালন করবেন। এমনকি অন্য কেউ দেখে বুঝতেও পারবে না যে সে আরেক জনে কথায় এইসব কাজ করছে বা তার হুশ নাই। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো তিন চার দিন পর যখন তার হুশ ফিরবে তখন তার সম্মহিত সময়ের কোন কথাই মনে থাকবে না।
মেয়েদের ক্ষেত্রে সম্মহিত করে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে, তাকে ধর্ষনও করা হয় যেটা দক্ষিন আমেরিকায় বিশেষ করে কলাম্বিয়ার অনেক মেয়ের ক্ষেত্রেই হয়েছে।
সম্মহিত ব্যাক্তিকে দিয়ে যে কোন অপরাধও করানো যায়। যে কোন অপরাধ মানে যে কোন অপরাধ। চুরি থেকে শুরু করে এমনকি খুন পর্যন্ত।
গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ করে CIA আর KGB ৬০ এর দশক থেকে কারো কাছ থেকে কথা বের করার জন্য এটা ব্যাবহার করছে। ওরা এর নাম দিয়েছে "টুথ সিরাম"।
যেহেতু এটা অপরাধীরা ব্যাবহার করে তাই ড্রাগ হিসাবে এর আলোচনা তেমন হয় না। কিন্তু তাই বলে এটার ব্যাবহার কিন্তু থেমে নেই। কে জানে হয়তো বাংলাদেশেও এর ব্যাবহার হচ্ছে। যা এখনো মিডিয়া বা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী নজরে আসেনি। তাই সবার সাবধান হওয়া জরুরী।
এই ফলের বীজ থেকেই বুরুন্ডাঙ্গা তৈরী হয়।
এই ড্রাগের উৎস যে গাছ থেকে তা পাওয়া যায় মূলত কলাম্বিয়ায়। তবে এর আশেপাশে দুই একটি দেশেও এ গাছ পাওয়া যায়। গাছের ফুল ও মূলকে নেশাদ্রব্য হিসাবে ব্যাবহার করা গেলেও মূলত বীজ থেকেই মূল দ্রব্যটি পাওয়া যায়। বীজের এক্সট্রেক্ট কে ল্যাবে প্রসেস করে মূল ড্রাগটি তৈরী হয়। দেখতে কোকেন বা হিরোইনের মত এমন কি ঘনত্ব এবং ওজনও একরকম । কিন্তু মাত্র ১ গ্রাম বুরুন্ডাঙ্গা ১২-১৫ জনের মৃত্যুর জন্যে যথেষ্ট।
ফলের বীজ
সাবধানতাঃ
১। সবাইকে এই ধরনের ড্রাগ ও এর ব্যাবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো জরুরী।
২। অপরিচিত কেউ বেশি কাছে ঘেষার চেষ্টা করলে সতর্ক হোন।
৩। পথে কেউ কোন কাগজ দেখিয়ে পড়ে দিতে বললে তাকে পুলিশের কাছ থেকে সহযোগিতা নেয়ার ব্যবস্থা করে দিন। অপরাধী হলে পালানো চেষ্টা করবে, আর আপনার কাজ হলো চিৎকার করে লোকজনকে দিয়ে তাকে ধরিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া এবং এই ধরনের ড্রাগের ব্যাপারটা খুলে বলা।
৪। অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু খাবেন না।
৫। যেহেতু নিশ্বাসের মাধ্যমে সামান্য পরিমান প্রয়োগ করতে পারলেই একজনকে বশ করা যায় তাই এ ব্যাপারে যতটা সম্ভব সতর্ক থাকা। সবচেয়ে ভালো হয় মাস্ক ব্যাবহার করা। তাতে নিয়মিত ধুলাবালি থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে আবার এ ধরনের বিপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
উৎসঃ vice এর YouTube চ্যানেল থেকে সংগৃহীত। লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=ToQ8PWYnu04
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৭ সকাল ১১:৫৯