১। টক টু হার (হাবলে কন এলা) link
আলমোদোভারের সিনেমা আমাকে মোহগ্রস্ত করে রেখেছে বহুদিন। তার সেন্স অফ কালার, তার সিনেমা্টোগ্রাফি, তার স্ক্রিপ্ট রাইটিং অথবা অ্যাক্টরদের দিয়ে সেরা পারফরম্যান্স বের করে আনা- সব কিছুই এককথায় অসাধারণ। তার 'অল আবাউট মাই মাদার' (লিনক ) ১৯৯৯ সালে বের হয় এবং সেরা ফরেন মুভি হিসাবে অস্কারও পেয়েছে। তবে ২০০২ সালে বের হওয়া 'টক টু হার' দেখে এখনো আমি মোহ কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
হাসপাতালে ২ জন পুরুষের গার্লফ্রেন্ড ভিন্ন দুর্ঘটনায় কোমায় আছে। এই দুই পুরুষের ভিতরে অদ্ভুত এক বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। কালচক্রে দুই জনেরই জীবন জড়িয়ে যায় একে অন্যের সাথে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মুভিটার শেষ সিনের আগে কোনও মতেই বুঝা যাবে না কোনদিকে যাচ্ছে এই কাহিনী। কিছু অপ্রাসঙ্গিক তথ্য, আলমোদোভার একজন স্বঘোষিত সমকামী। বোধহয় তার চলচ্চিত্র দেখলেই সহজে তা বোঝা যায় । যৌনতা বিষয়ক উদ্ভট কিন্তু চমকপ্রদ সব জিনিসপাতি থাকে তার মুভিতে। তার আরেকটি কমেডি ধাঁচের মুভি 'ওমেন অন দা ভার্জ অফ আ নার্ভাস ব্রেকডাউন' (লিংক ) দেখলাম। এটাও চমৎকার। আর হ্যাঁ, আলমোদোভারের প্রায় সব মুভিতেই মূল চরিত্র নারী। তবে দয়া করে তার 'কিকা' দেখবেন না।
২। '8 1/2 (Otto E Mezzo)' লিংক এবং 'La Dolce Vita' (লিংক )
এই দুটি মুভি চলচ্চিত্রের ইতিহাস বদলে দিয়েছে। ফ্রেদেরিকো ফেল্লিনি ইতালিয়ান ফিল্ম জগতে নয়, বরং সারা পৃথিবীর ফিল্ম ভক্তদের কাছে কিংবদন্তির নাম। তার অবিস্মরণীয় দুটি সিনেমা। দ্বিতীয়টি এক সাংবাদিককে নিয়ে যে রাতের রোম-এ ঘুরে বেড়ায় তারকাদের খবর সংগ্রহের জন্য। হ্যাঁ, তিনি একজন 'পাপারাজ্জি'। সেই শব্দটাও এসেছে এই মুভি থেকেই। 'লা ডলছে ভিটা'-এর একটি সিন আছে রোমের এক ঝর্নায়। এটা অন্যতম বিখ্যাত সিন সিনেমা ইতিহাসে। তথাকথিত 'রিচ অ্যান্ড ফেমাস' লোকদের জীবন যাপনের অসারতা তুলে ধরাই উদ্দেশ্য ছিল ফেলিনির এই মুভিতে। এখানে বলা দরকার, 'লা দলচে ভিটা' মানে হচ্ছে 'দা সুইট লাইফ'।
8½ নিয়ে কথা বলার কোনও সাহস দেখানো উচিত না আমার। মুভিটার প্রথম সিনটাই আপনাকে বুঝিয়ে দেবে আপনি চলে যাচ্ছেন কোনও এক হালুসিনেশনের জগতে। এক ফিল্ম ডাইরেক্টর, যে কিনা তার পরের মুভিটা নিয়ে আর আগাতেই পারছে না- তার সংগ্রাম আর অন্তরজ্বালা নিয়ে মুভি। একটি সিন আছে, নায়ক তার হাতে চাবুক নিয়ে তার বিভিন্ন নায়িকাদের শাসন করছে। আল্টিমেট মেল ফ্যান্টাসিকে তীব্র ব্যাঙ্গ বিদ্রুপের মাঝে উপস্থাপন করা হয়েছে এই সিনে। আর হ্যাঁ, এই সিনেমায় প্রথম দেখি আনুক আইমিকে। আর প্রথম দেখায়ই প্রেম। আজো পথ চেয়ে বসে আছি ...
৩। পারসোনা (লিনক )
ইংমার বার্গম্যানের আমার সব চেয়ে প্রিয় মুভি। এটা ঢাকায় ডিভিডি তেমন পাওয়া যেত না বলেই কিনা, অনেক বার্গম্যান ভক্তই দেখেননি। একজন বিখ্যাত নায়িকা হঠাৎ কথা বন্ধ করে দিয়েছেন। কেন, বোঝা যাচ্ছে না। তার দেখভাল করার জন্য আরেক নার্সকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি একাই ওই নায়িকার সাথে সময় কাটানোর জন্য একা একা কথা বলতে থাকেন। আস্তে আস্তে দেখা যায়, দুজনের 'পারসোনা' এক হয়ে যাচ্ছে।
সব সময়ের মতই বার্গম্যানের মুভি চরম স্লো কিন্তু সিনেমাটোগ্রাফি অসাধারণ। লাইট আর শ্যাডোর মাইন্ড ব্লোয়িং কাজ আছে এতে। কমপক্ষে 720p না হলে এই মুভি দেখবেন না তাই।
৪। আ শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট লাভ (link )
ক্রিস্তফ কিওলস্কির দেকালগ লিনক , থ্রী কালারসঃ রেড , হোয়াইট, ব্লু, দা ডাবল লাইফ অফ ভেরনিক- সবই অসাধারণ। তবে আমার ব্যাক্তিগত পছন্দ 'আ শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট লাভ'। ফ্রেঞ্চ সব সিনেমাই নাক উঁচু ধরণের। 'আমাদের মুভি বুঝলে বুঝো নাইলে ফুটো' টাইপ। তবে এই মুভিটি পোলিশ ভাষায়।
১৯ বছর বয়স্ক তমেক নিজের এপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে বাইনোকুলারে দেখে সারাক্ষণ এক মধ্য বয়স্ক সুন্দরী মহিলাকে যে তার পাশের বিল্ডিং-এ থাকে। তার এই অবসেশন এক সময় বিপদ ডেকে আনে তার জীবনে। দুইজনের সম্পর্ক আস্তে আস্তে ভিন্ন মোড় নেয় বাস্তবেও। সিনেমার শেষ সিনটি নায়িকার অনুরোধে ক্রিস্তফ পরিবর্তন করেছিলেন। নায়িকা বলেছিলেন, দর্শকের জন্য একটা 'ফেইরি টেইল' সমাপ্তি দরকার। আর হ্যাঁ, এই মুভি কপি করেই বলিউডে নির্মিত হয় Ek Chhotisi Love Story।
৫। 2046 (link )
ওয়ংকার ওয়াই-এর মুভিতে সিনেমাটোগ্রাফি সব সময়ই অসাধারণ। সম্প্রতি তার 'ডেজ অফ বিং ওয়াইল্ড' লিনক দেখলাম। কিন্তু তার চেয়ে আমার ব্যাক্তিগত পছন্দ ২০৪৬। এটা অনেকটা ব্যর্থ প্রেমের ফ্যান্টাসি জাতীয় মুভি। কালারের ব্যবহার সিনগুলিতে মাথা ঘোরানোর জন্য যথেষ্ট। নিচের ছবিটা তাই প্রমাণ করবে । আর হ্যাঁ, চাইনীজ সুন্দরী ঝাং জিয়ি উপরি বোনাস । একই সাথে ওংকার ওয়াই-এর 'ইন দা মুড ফর লাভ' পেলেও দেখে ফেলবেন চোখ বন্ধ করে! লিনক
আপাতত এই কয়টাই থাকল। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আরও মুভি নিয়ে আমার অনুভূতি শেয়ার করব আপনাদের সাথে। বাস্তবতার গ্যাঁড়াকল থেকে মুক্তি পেতে একটা ভালো মুভি অনেক সাহায্য করে! ভালো থাকুন।