অনেক দিন ধরে কিছু একটা লিখার ইচ্ছা হচ্ছিল।কিন্তু ভেবে পাচ্ছিলাম না কী লিখব।তাই আজকে আমার জীবনের এক বিশাল ট্রেজেডির ঘটনা দিয়ে লিখা শুরু করব বলে ঠিক করেছি।
আমি তখন থার্ড ইয়ারে।আমাদের জন্য সেটা লাস্ট ইয়ার।ঠিক করা হল আমাদের ডিপার্টমেন্ট (ইংরেজী) থেকে স্টাডি ট্যুরে যাওয়া হবে।আমরা সবাই খুশিতে আয়োজন শুরু করলাম।কে কে যাবে তার একটা তালিকা তৈরী হল।ঠিক হল প্রত্যেকে ১৫০০ টাকা করে চাঁদা দিবে।মোট ৪০ জন ছাত্র রাজী হল।আমাদের সাথে যাবে আমাদের সবার প্রিয় ম্যাডাম ফারজানা ইসলাম,ডিপার্টমেন্ট হেড,লিলি বিলকীস এবং বাংলা বিভাগের শামীম স্যার।আমাদের ট্যুর ৭ দিনের,চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত।বিশাল আয়োজন।
আমি বাসায় বলে টাকা জোগার করলাম।সবাই বলল আমার গীটারটা নিতে।আমি সানন্দে রাজি হলাম।যাবার ৪ দিন আগে আমি জ্বরে পড়লাম।আমার মেজাজ গেল খারাপ হয়ে।ভাবলাম আমার আর যাওয়া হবে না।আল্লাহর অশেষ দয়ায় ১ দিন আগে জ্বর সেরে গেল।আমাদের ট্রেন হল রাত ১১টার।আমি রাত ৯টায় ভাত খেয়ে আমার ক্লাসমেট ও ঘনিষ্ট বন্ধু মামুনের বাসায় গেলাম।সাথে গীটারের ব্যাগ আর ছোট একটা ট্রাভেলিং ব্যাগ।খাবার সময় আমার বড় বোন বলছিল মাত্র জ্বর থেকে উঠেছিস সাবধানে যাস।চারিদিকে পক্স হচ্ছে।আমি মনে মনে একটু দমে গিয়েছিলাম।কারণ আমার আপু সবসময় যেটা সন্দেহ করে সেটা ৮০% ঠিক হয়।যাই হোক, মামুনের বাসায় যেয়ে দখলাম মামুন রেডী।এরপর আমরা গেলাম স্বপনের বাসায়।তিনজনে মিলে সি এন জি নিয়ে আসলাম কমলাপুর স্টেশন এ।দেখি আমাদের স্যার ম্যাডামরা চলে এসেছেন।প্রায় সবাই চলে এসেছে।আমরা সবাই আনন্দে হইহুল্লোর শুরু করে দিলাম।
যথারিতী ট্রেন আসল।আমরা সবাই হুরমুর করে ট্রেনে উঠলাম।পুরো একটা বগি আমরা দখল করলাম।ট্রেন ছাড়ল।রাতের ট্রেন।স্বপন আবার ভিডিও ক্যাম নিয়ে এসেছিল।সে ভিডিও করা শুরু করল।সবাইকে এই যাত্রার অনুভুতি বলতে বলল একজন একজন করে।একসময় শামীম স্যার জিজ্ঞেস করলেন গীটার কার।আমি বললাম আমার।আমি গীটার বের করলাম।শুরু হল রাতের ট্রেনের মূর্ছণার সাথে গীটারের মূর্ছণা।একের পর এক গান গেয়ে গেলাম।সকলে গলা মেলাল।আমি এই ট্যুরের একটা থিম গান বানিয়েছিলাম।সেটা গাইলাম।আর আমাদের হুল্লোর আর চিৎকারে মুখোরিত হয়ে উঠলো ট্রেন।
রাত ৩টায় সবাই একটু ঝিমিয়ে পড়ল।ম্যাডাম সবাইকে ঘুমিয়ে পড়ার পরামর্শ দিলেন।অনেকে ঘুমিয়ে পড়ল।আমি হঠাত করে অনুভব করলাম আমার ঘাড়ের উপর গুটি গুটি কীছু এক্টা।সে যায়গাটায় চুলকাচ্ছিল।আমার হাতেও র্র্যাশ লক্ষ করলাম।আমি সেগুলোকে পাত্তা দিলাম না।আর ট্রেন বা বাসে আমার কখনো ঘুম হয়লা।ট্রেন থেকে আমি,মামুন আর আরো অনেকে ভোর হওয়া দেখলাম।চট্টগ্রামের পাহাড়ের সারি দেখতে পাচ্ছিলাম।আস্তে আস্তে ট্রেন পৌছল স্টেশনে।আমরা সবাই নামলাম।
স্টেশন থেকে ৫মিনিটের হাটাপথ হচ্ছে আমাদের হোটেল।হোটেলে গিয়ে আমি,মামুন,রাশেদ,শাওন আর জিয়া একটা রুম নিলাম।একে একে গোসল করে নিলাম সবাই।আমার খুব ক্লান্ত লাগছিল।আমাদের নাস্তা খেয়েই বেড়োনোর কথা।আমরা সবাই নাস্তা খাবার জন্য ডাইনিং হলে গেলাম।নাস্তা খেতে বসলাম।কিছুক্ষণ পর শাওন হঠাত বলল,”কিরে তোর কি পক্স উঠছে নাকি?” সে আমার কাছে এসে ভালো করে দেখল।আমিও লক্ষ করলাম আমার গায়ে গোটা গোটা পক্সের দাগ।তখন আমার মনের অবস্থা ভয়াবহ।ম্যাডামদের ডেকে বলা হল।সিদ্ধান্ত হল আমাকে ফেরত পাঠানো হবে।:’((
তারপর হোটেলের ম্যানেজার আমার জন্য ফিরতি টিকেট নিয়ে আসল।আমাকে বাসে তুলে দিল।আমি আর আমার গীটার দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।সারা রাস্তা আধো ঘুম আধো জাগোরণের মধ্যে দিয়ে আসলাম।ঘুমের ঘোরে শুধু হইহুল্লোর শুনতে পাচ্ছিলাম।চমকে জেগে উঠে এত খারাপ লাগছিল যে বলার না।সমুদ্রতো দূরের কথা,ফয়েজ লেক,কাপ্তাই হ্রদ কিছুই দেখা হলনা।তবে একদিন ইনশাল্লাহ যাবো সমুদ্রের কাছে।বলব প্রথমবার তাকে দেখতে এসে দেখতে পারিনি।আমি চলে আসাতে আমার বন্ধুরা মন খারাপ করেছিল।বিশেষ করে মামুন,রাশেদ,শাওন।তারা প্রায় প্রতিদিন কল করে আমার শরীরের অবস্থার কথা জানতে চেয়েছে,আর বলেছে কী কী মজা করেছে।
এই হল আমার বিশাল ট্র্যাজেডির ঘটনা।এত শখ করে গীটার নিয়ে গেলাম ম্যাডামদের ইম্প্রেস করব,সমুদ্র দেখব,হইহুল্লোর করব,কিছুই করা হলো না।আশা করি আবার একদিন যাবো দল বেধে,তখন বিধাতা বাধা প্রদাণ করবে না।