এখন আমি অনেক বড় হয়ে গেছি মা ...এখন আমি অনেক স্বার্থপর
আমার নিকটাত্মীয় কিংবা বোনদেরকে আজকে যখন দেখি একটা বাচ্চার জন্যই এত এত শিক্ষক- অঙ্কের, গানের, ছবি আঁকার, ধর্ম শেখার জন্য হুজুর, আবার বই পড়তে ব্রিটিশ কাউন্সিল। আমি তখন অবাক হয়ে ভাবি, এই এক জীবনে আমার মা কতগুলো শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন? জীবনে প্রথম কবিতা মায়ের কাছে শেখা, মজা করে অঙ্ক করা মায়ের কাছে শেখা, রবিন্দ্রনাথ আর নজরুল কে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মা, প্রথম বাংলাদেশের পতাকা আঁকতে শিখিয়েছিলেন মা, ধর্ম একজন মানুষ কে নৈতিক হতে শেখায়,সংযত করে এই উপলব্ধির বীজ প্রথম বুনে দিয়েছিলেন মা। আমার কাছে সবচেয়ে বড় আর আন্তরিক শিক্ষকটির নাম আমার মা জোবায়দা লুৎফুন্নাহার কাদেরী।
এই দূর পরবাস থেকে মাকে ফোন দিলেই মুঠোফোনে সবার আগে যেই কথাটি শুনতে হয় সেটি হল- তুই দেশে ফিরে আসবি তো? প্রতিদিন একবার করে বাবা মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করি দেশে ফিরে যাওয়ার। কারন তারা বিশ্বাস করেন- দেশকে অনেক কিছু দেয়ার বাকি আমাদের প্রজন্মের। আমার মা বিশ্বাস করেন দেশের প্রতি আমার যে ঋণ তা আমার শরীরের সমস্ত রক্তের ফোয়ারাতেও শোধ হবেনা। এভাবেই আমার এবং আমাদের মাঝে দেশাত্মবোধের আর দেশকে ভালবাসার শেকড় প্রোথিত করে দেন আমাদের সেই চিরকালের বনফুলের পাপড়ি মায়েরা।
যখনই কোথাও বন্যা বা ঘুর্নিঝড় হত- সাথে সাথে আমার মায়ের প্রশ্ন- কিছু না করে বসে আছ কেন? ঈদের বোনাস মায়ের হাতে দিলে তার প্রথম কথা- এই টাকা দিয়ে তোমাদের বাড়ী বাঁশখালির অনাথ শিশুদের ঈদের কাপড় কিনে দেব। কতটা উদার, মানবিক আমাদের মায়েরা! কখনও তারা জাহানারা ইমাম হয়ে রুমি কে যুদ্ধে পাঠান, কখনো সুফিয়া খাতুন হয়ে শহীদ আজাদের স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে আজীবন ভাত না খেয়ে থাকেন , কখনও রমা চৌধুরীর মত রাস্তায় খালি পায়ে হেটে বেড়ান কারন মাটির নিচে যুদ্ধে হারানো তার সন্তানে শুয়ে আছে। আমাদের মায়েরা আজও গ্রাম থেকে নগরে টলমল করে থাকা অশ্রুবিন্দু।
আমার কখনই দুঃখ বা আক্ষেপ হয়নি এই ভেবে যে আমার মা চিকিৎসক, বিজ্ঞানী বা শিক্ষক নন। আমি গর্ব বোধ করি আমার মা এবং তার মত লক্ষ লক্ষ গৃহিণী মা কে নিয়ে- যারা চিকিৎসক, বিজ্ঞানী বা শিক্ষক নন । কিন্তু তারা জন্ম দেন বিজ্ঞানীর, তৈরি করেন একজন প্রকৌশলী কে, ভিত্তি গড়ে দেন একজন চিকিৎসকের, চেতনা বুনে দেন আগামীদিনের নেতার মাঝে। আজকের মা দিবসে পৃথিবীর সব নিঃস্বার্থ, আত্মত্যাগী আর নির্মোহ মায়েদের জন্য অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।
আমি জানি পত্রিকায়, ফেসবুকে, টুইটারে বা ব্লগে মাকে নিয়ে লিখলে অনেক বেশি নেকামো আর কৃত্রিমতা হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মত কিছুটা রক্ষণশীল আর আটপৌরে বাঙালী পরিবারে মাকে কখনও মুখ ফুটে বলা হয়না ভালবাসার কথা, কোথায় যেন একটা দূরত্ব, একটা সংকোচের পর্দা। ভালবাসা প্রতিদিনের তবে আজ একদিনের জন্য হলেও পুরো পৃথিবীকে চিৎকার করে বলতে চাই –মা, তুমি অসাধারন , তুমি বৃষ্টির পর শেষ বিকেলের কোমল আকাশকে ধারন কর, তুমি ভোরের ঠান্ডা বাতাসের মত স্নিগ্ধ, তুমি আমার রক্তের প্রতিটি কণিকার প্রবাহের সাথে মিশে আছ। বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমাকে।
আজ বিশ্ব মা দিবস। কাতালগঞ্জের বত্রিশ নাম্বার বাসাটিতে একজন মা অধীর প্রতীক্ষায় বসে থাকবে। মুখে হয়ত কিছুই বলবেনা কিন্তু মনে মনে অপেক্ষা করবে- বিকেল হলেই তার ছোট্ট ছেলেটি আড়ং কিংবা নবরুপা থেকে কেনা একটা আকাশী রঙের মিহি সুতোয় বোনা শাড়ী নিয়ে এসে মায়ের হাতে দেবে। কিন্তু পৃথিবীটা খুব নির্মম। তার সেই অযোগ্য, হতভাগা ছেলেটা বড় বিজ্ঞানী আর অনেক বড় মানুষ হওয়ার স্বপ্নে মাকে ছেড়ে জুলিয়া গিলার্ডের দেশে এক উজ্জ্বল শহরে বসে আছে। আমরা নিজেদের নিয়ে এতই ব্যস্ত যে আমাদের পেছন ফিরে তাকানোর সময় নেই, আজীবন নিজেকে উৎসর্গ করা মানুষ টিকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। এখন আমি অনেক বড় হয়ে গেছি মা, অনেক বেশি স্বার্থপর!
(লেখক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত।)
দৈনিক পুর্বকোনে ১২।০৫।২০১৩ তে প্রকাশিত মা দিবসের বিশেষ লেখা-
Click This Link


আমাদের পহেলা বৈশাখ! এবার ১৪৩২।
বাঙলা বা ইংরেজি যেকোন নববর্ষই আমাদের জন্য আনন্দের ইংরেজি অবশ্য বছরের শেষ রাতটা সবাই অনেক আনন্দ করে। সে হিসেবে পহেলা বৈশাখের আনন্দ সাধারণতঃ দিনের বেলায়।
যদিও এবার জমকালো বৈশাখী লেজার... ...বাকিটুকু পড়ুন
লীগের মাস্তানদের নির্যাতনে বিসিএস ক্যাডার পরিবার অসহায়, একঘরে হয়ে আছি!
যে পরিবারটি আমাদের জীবনকে নরক বানানো শুরু করেছে, সেটি সুমন রায়ের পরিবার। দেখুন তাদেরই কিছু পাগলামি ও অপকর্মের প্রমাণ যা ক্যামেরায় ধরা পড়লো। ক্যামেরা না থাকলে বা অগোচরে কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
আজকের ডায়েরী- ১৫০
গতকাল ছিলো বাংলা নববর্ষ।
সকালে এক জরুরী কাজে আমি উত্তরা গিয়েছিলাম। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু দেরী করে ফেললাম। আজ বাসার সবাই মাওয়া যাবে। সেখানেই... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই সময়ের কিঞ্চিৎ ভাবনা!
বাক স্বাধীনতা কিংবা যা মনে আসছে তাই লিখে বা বলে ফেলছেন, খুব একটা ব্যাক স্পেস চাপতে হচ্ছে না এখন, তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোন দল নির্বাচিত হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....
কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....
হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ১০ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরা বেশীরভাগ সময়ই সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। গত তিনদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন