মনে হচ্ছে শিরোনামটা যুতসই হল না।
এগুলা হচ্ছে ইহুদি নাসারাদের চক্রান্ত, আমেরিকার চাল, ভারতীয় দালালদের ষড়যন্ত্র, ইজরাইলই হচ্ছে সকল সমস্যার মূল।
জ্বী হ্যাঁ বন্ধুগণ আজ আপনাদের শিখাব কিভাবে যাবতীয় দোষ অন্যের ঘারে চাপিয়ে দিয়ে নিজে সাধু সাজা যায়?
কিছু প্রশ্ন?
-সাম্প্রদায়ীকতা ছড়ায় কারা?
-ভিন্ন মতালম্বীদের সব সময় শত্রু মনে করে কারা?
-ভিন্ন মত / ভিন্ন গোষ্ঠিকে সহ্য করতে পারে না কারা?
-নিজেদের যে কোন দূরাবস্তার জন্য ভিন্ন গোষ্ঠি ( ইহুদী নাসাড়া, ভারত,আম্রিকা,ইজরাইল) কে দায়ী করে কারা?
সচেতন মানুষ মাত্রই এসব প্রশ্নের উত্তর জানেন কিন্তু বিভিন্ন কারণে প্রকাশ করতে পারেন না মনে এক ধরণের ভীতি কাজ করে। একে তো আল্লাহর ভয় তার উপর সমাজের ভয় তো আছেই।
সমস্ত ভয় ডরের ঊর্ধে উঠে আমি তা আপনাদের হয়ে প্রকাশ করে দিচ্ছি। ভুল হলে ক্ষমা করার প্রয়োজন নেই, আমাকে জাস্ট ভুলটি ধরিয়ে দিন আমি তা শুধরে নিব। ভুল স্বীকার করতে মুক্তমনারা লজ্জ্বীত নয়।
এবার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছি
উপরোক্ত প্রশ্নেগুলোর এক কথায় উত্তর হচ্ছে, মুসলিমরা।
হ্যাঁ আমরা মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশী সাম্প্রদায়ীকতা ছড়াই। প্রতিটি মুসলিমের মধ্যেই শুপ্ত অথবা অশুপ্ত অবস্থায় লুকিয়ে থাকে সাম্প্রদায়ীকতার বীজ। ছোট সময় থেকেই ধর্ম/ ধার্মিকেরা তাদের সে শিক্ষাই দেয়। একজন মুসলিম শিশু পরিবার এবং সমাজ থেকে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়, সচেতন অথবা অবচেতন ভাবেই সম্প্রাদায়ীকতার শিক্ষা পায়।
প্র্যাকটিক্যাল মুসলীমরা, মানে সহীহ মুসলীমরা আরও খোলাসা করে বললে আলেম সমাজ এবং মসজিদের হুজুররাই সবচেয়ে বেশী সাম্প্রদায়ীকতা ছড়ায় আর ভিন্ন ধর্ম ভিন্ন গোষ্ঠিকে ইঙ্গিত করে নানা কূটুক্তিমুলক বক্তব্য প্রদাণ করে। (কখনোই তারা নিজেদের দোষ দেখতে পায় না)
ময়না তদন্ত কেন মুসলীমদের কথাই বললাম? - কারণ এটাই সত্য। আমি নিজেও মুসলীম এবং একসময় প্র্যাকটিক্যাল মুসলীম ছিলাম ( শুধু তাই নয় কিছুটা জিহাদী মাইন্ডেডও ছিলাম ওই সময়টাতে আমাকে জঙ্গিতে রুপান্তর করা অসম্ভব কিছু ছিল না। ) এখনও মাঝে মাঝে ধর্ম পালন করি জ্ঞান অর্জনের উদ্দ্যেশ্যে কোন পূণ্যের আশায় নয়। মানে সত্যিই আমি ভুল পথে আছি কি না তা যাচাই করার জন্যই ধর্ম কর্ম পালন করি, ধর্মীয় সমাবেশে যাই, হুজুরদের বয়ান খুব মনযোগ সহকারে শুণি। বেশ কিছু হুজুরের সাথে আমার নিয়মিত উঠাবাসা তাদের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমার অবিশ্বাসের কথা তারা জানে না,( একজন ছাড়া) তাদের সাথে মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় আশয় নিয়ে আলাপ হয় এভাবেই নিজকে যাচাই করি।
বলতে লজ্বা নেই- আমার অবিশ্বাসের অন্তত ৬০% কারণ এই সব হুজুরেরা বা প্র্যাকটিক্যাল মুসলীমেরা। তাদের সাথে যত মিশেছি, যতই ঘনিষ্ঠ হয়েছি, যতই তাদের চিন্তাধারার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করেছি ততই আমার মনে অবিশ্বাসের ভীত শক্ত হয়েছে।
তার মানে এই হাদিসটি সহীহ- হাদিসে আছে আলেমরা সবার আগে দোযখে যাবে ৪০ কাতার আলেমদের মধ্যে মাত্র এক কাতার বেহেশতে যাবে।
উল্লেখ্য- আমাদের দেশের অধিকাংশ আলেম,হুজুররাই বেশ শ্বান্তিপ্রীয় শুধু ওই জিহাদীরা ছাড়া। জিহাদীরাও কিন্তু শ্বান্তিপ্রীয় শুধু ধর্মের ব্যপারটি ছাড়া, ধর্মের ব্যপারে তারা যারপর নাই উগ্র। জিহাদীরা সাধারণত চুরি,ডাকাতি, ছিনতাই, অন্যন্য অপকর্ম করে না। শুধু ধর্মীয় ব্যপারে তারা খুন করতে দিধা বোধ করে না। আর এটাকে তারা পূণ্যের কাজই মনে করে, ধর্ম থেকে তারা সে শিক্ষায় পায়।
এবার আসি মূল কথায়- যদিও পুরোনো কাসুন্দি নতুন কিছু নয় তবুও তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। গতকাল জুমার নামাজের জন্য মসজিদে ঢুকলাম ১:১০ এ, ১:২৫ পর্যন্ত বয়ান শুনলাম এই ১৫ মিনিটের মধ্যে ঈমাম সাহেব অন্তত ৭ বার ইহুদি নাসাড়া, ইহুদি নাসাড়া বলে প্রলাপ বকলেন। গুলশানের জঙ্গিদের নাকি ইহুদি নাসারাড়া ব্রেইন ওয়াশ করেছে ( প্রকৃত পক্ষে ব্রেইন ওয়াশের সর্বোচ্চ রশদ রয়েছে তাদের ধর্মে তরা কখনোই তা দেখতে পায় না শ্বান্তির চাদরে তা লুকিয়ে রাখে, আর অন্যের উপর দোষ চাপায়। )
হুজুরের ধরাণা, ইহুদী নাসারাড়া সারা বিশ্বে ইসলামকে নস্যাৎ করার জন্য না না পাঁয়তারা করছে। এ ব্যপারে সকল মুসলীম ভাইদের সতর্ক থাকার আহ্বান করছেন।ঈহুদী নাসারাদের পণ্যে বর্জন করা প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। বিভিন্ন বিষয়ে হুজুর শুধু দেখতে পান ভারত,আমেরিকার চাল আর ইহুদী নাসাড়াদের ষড়যন্ত্র।
আমার মনে হয় কেউ যদি পিছন দিয়ে বায়ু ছাড়ে আর তাতে যদি গন্ধ বেশী হয় তাহলেই ঈহুদী নাসাড়াদের ষরযন্ত্র খুঁজে পাবে, খুঁজে পাবে ভারত,আম্রেকির চাল। তা না হলে বায়ুতে এত গন্ধ হইল কিভাবে? কোন মুসলিমের বায়ুতে গন্ধ হতে পারে না ইহা মোটেও ছহীহ বায়ু ছাড়া নয়। আমাদের বেশী বেশী সহীহ বায়ু ত্যাগ করা শিখতে হবে।
(লাইন গুলো হাস্যকর এবং নিম্নমানের কিন্তু ব্লগে এর চেয়ে ভাল উদাহারণ দেয়া সত্যিই কি অতটা প্রয়োজন? )
উপরোক্ত হুজুর জাস্ট একটা উদাহরণ মাত্র, দেশের সবগুলো ধর্মান্ধদের ঠিক একই চরিত্র একই চিন্তাধারা কারণ তরা সকলেই একই গ্রন্থ থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। রাজনীতি,অর্থনীতি,সমাজ,সামাজিকতা ইত্যাদি বিষয়ে কোন ধর্মান্ধের সাথে ১০ মিনিটি আলাপ করবেন আর তার বক্তব্যে, *ইহুদী নাসারা* *ভারতের দালাল* *আম্রিকার চাল* *ষরযন্ত্র* *চক্রান্ত* এই শব্দগুলো বার বার উচ্চারিত হবে না তা হতে পারে না।
আমার কথা বিশ্বাস না হলে কষ্ট করে একটু নিজে ট্রাই করে দেখুন ধর্মান্ধদের সাথে আলোচনা করুন। তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করুন। আর পার্থক্যগুলো নিজ চোখেই যাচাই করুন। এভাবেই তারা নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজে সাধু সাজার ব্যর্থ প্রয়াস করে।
আসলে আমি যা প্রকাশ করতে চাই তা হল- সাম্প্রদায়ীকতার বিষ ছড়ানোর জন্য ইসলামই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। প্রতিটি শিশুকে ছোট সময় থেকেই মগজে এই বিষের বীজ বপন করে দেয়া হয়। আর এ জন্য দায়ী তাদের ধর্মগ্রন্থ,হাদীস,আর ধর্মীয় পুস্তক। জিহাদের ফজীলত ও গুরুত্ব, কাফের হত্যা করার পুরুষ্কার, কাফেরদের হত্যা করো, তাদের কাটো জোড়ায় জোড়ায়, পিছন থেকে তাদের গর্দানে আঘাত করো। তাদের যেখানে পাও সেখানেই হত্যা করো, শহীদের পুরুষ্কার, বিধর্মীদের তোমরা কখনও বন্ধু রুপে গ্রহণ করো না, তাদের অনুসরণ অনুকরণ করো না। যে বিধর্মীদের অনুসরণ করবে পরকালে তার হাশর বিধর্মীদের সাথেই হবে... ইত্যাদি... ইত্যাদি... ইত্যাদি.... না না উস্কানীমূলক বক্তব্যে ভরপুর ইসলামিক জ্ঞান।
যদিও তারা তা দেখতে পায় না, তারা বলে এর আগে পিছের আয়াত পড়তে হবে আর শানে নূয়ুল জানতে হবে এভাবেই যুগ যুগ ধরে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। কেউই প্রশ্ন করে না- একটা আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে আমাদের সেই সময়ের ঘটনা, পরিস্থিতি জানতে হবে আমাদের ১৪০০ বছর পিছনে যেতে হবে। তাহলে এই সব আজগুবী গ্রন্থের আইনে কিভাবে তামাম দুনিয়া চলে? আল্লাহ পাক দুনিয়ায়, মানুষ সৃষ্টি করেছেন হাজার রকমের, খাদ্যভ্যাস করেছেন ভিন্ন, ভাষা সৃষ্টি করেছেন হাজারে হাজারে। তৈরী করেছেন ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ, মূল কথা- প্রতিটি জাতিতে জাতিতে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। জাতিতে জাতিতে ভৌগলিক সীমারেখা যত বেশি দূরত্ব তাদের পার্থক্যও তত বেশী। এত এত পার্থক্য থাকার পরেও আল্লাহ পাক, তামাম বিশ্ববাসীর জন্য একটি মাত্র আইন গ্রন্থ চাপিয়ে দিলেন। আর এই আজগুবী গ্রন্থগুলো শুধু মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতেই অবতীর্ণ হত একদল মূর্খ, মেষ পালক, ছাগল পালকদের উপর। বলা হল এই আইনে তামাম দুনিয়া চলবে এর অস্বীকারকারীকে হত্যা কর.. ইত্যাদি।
ওহহহহ আমি তো অন্য দিকে চলে যাচ্ছি!!! এই আলোচনা আজকে না আরেক দিন। কথা দিচ্ছি, একটি মাত্র আইনে সারা পৃথিবী চলতে পারে তার যৃক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা কেউ আমাকে দিতে পারলে আমি অবশ্যই বুঝ মানব। আর ততদিন পর্যন্ত কোরানের কথা অনুযায়ী আমি অবুঝ, আমি বধির, আমি শিশু।
ওহে মুমিন বান্দারা তোমরা আর কতকাল শ্বান্তির চাদরের আড়ালে লুকিয়ে থাকবে? এর পরেও কি তোমরা সবকিছুর জন্য ঈহুদী নাসারাদের দায়ী করবে? শোন হে মুমিন বান্দারা বেশিদীন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে টিকে থাকা যায় না। তোমরা কখনোই তোমাদের দুর্গন্ধকে ধামা চাপা দিয়ে রাখতে পারবে না।
*তারা যতই করুক লুকোনোর চেষ্টা, মুক্তমনারা উম্মোচন করবে দিবে তাদের আসল রুপটা।*
ভিডিওটি দেখুন- এতে কি অন্য ধর্মানুভূতি আহত হয় না???
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:১০