ধারাবাহিকভাবে মুক্তমনাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা হয়তো বজায় থাকবে আরো অনেকদিন। ইতিমধ্যে অনেকে নিহত হয়েছেন, আরো অনেকে হবেন। আমার মন এখনো মুক্ত হয়নি। তবু হয়তো আমিও নিহত হবো। হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
আমাকে নিহত করা অপেক্ষাকৃত সহজ। ফেইসবুকে আমার জন্মস্থান কিংবা ডিপার্টমেন্ট কিংবা হলের নাম দেয়া নেই। কিন্তু চাইলেই এসব তথ্য খুঁজে বের করে ফেলা যায়। এরপর ফ্যাকাল্টি কিংবা হলের সামনে চিহ্নিত করে, সপ্তাহখানেক অনুসরন করে সুবিধামতো স্থানে হত্যা করা তেমন কঠিন কোন ব্যপার নয়।
অথচ একজন ভীতু মানুষ হিশেবে আমি মরতে চাইনি কখনোই। নাজিমুদ্দিন ভাইয়ের মতো গৌরবময় কিংবা অর্থপূর্ণ কোন মৃত্যুও প্রত্যাশা করিনি কোনদিন। বরং আমি চেয়েছি একটি দীর্ঘ তুচ্ছ জীবন। আরো বিশ/ত্রিশ বছর পরে জন্ম হলে খুব খুশী হতাম আমি। সেই সময়ের উচ্চমানের প্রযুক্তি মানুষের মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখতে পারতো আরো অনেকগুলো বছর।
অবিশ্বাস্য ব্যপার হলো, এখন আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাড়ীতে এসে এবার ছয়দিন থাকার পরিকল্পনা ছিল। এখন আরো দু’দিন বেশী থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পৃথিবীর সুন্দরতম স্থানগুলো ভ্রমণ করার সাধ কখনোই হয়নি আমার। কিন্তু আমার প্রধান সাধগুলোর একটি হলো, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেসিডেন্সী কলেজ ঘুরে দেখা। এই দুটি প্রতিষ্ঠান মিলে একটি ছোটখাট রেনেসাঁর জন্ম দিয়েছে। ফাইনাল শেষ হলে একবার কলকাতা যাবো। অবশ্য যদি ততোদিন বেঁচে থাকি।
ইদানীং অনেকেই তাদের মৃতদেহ মেডিকেলে দান করছেন। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এটি খুব জটিল কোন প্রক্রিয়া নয়। কিন্তু আমার মা-ভাইয়া-বোন জটিলতা তৈরী করবে। আমি লিখে দিয়ে যাবো, আমার শরীর যেন নিকটস্থ মেডিকেল কলেজে দিয়ে দেয়া হয়। পরিবারের বাঁধার কারনে এটি সম্ভব না হলে অন্তত কিছু অঙ্গ যেন অন্যদের কাজে লাগানো হয়। আমি কখনো মদ্যপান ও ধুমপান করিনি, গাঁজা খাইনি। আমার শরীরের অঙ্গগুলো নষ্ট হয়নি মোটেও।
অজস্র ছোট ছোট সাধ হয়তো পূরন হবে না আমার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ডিপার্টমেন্টে ক্লাস করা, শিক্ষাজীবন শেষে একটি আত্নজীবনী লিখে ফেলা, নৌকায় রাত কাটানো, দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত সাইকেলে ভ্রমণ করা, কোন একটি মেয়ের ঠোটে চুমু খাওয়া.........পূরন না হলে আফসোস নেই। বাংলাদেশের মানুষের অধিকাংশ ইচ্ছাই অপূর্ণ থেকে যায়।
কিন্তু বন্ধু ফয়সালের সাথে মিলে ছয় হাজার শয্যার একটি বিশাল মেডিকেল গড়া এবং একটি বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরন না হলে দুঃখই পাবো। এগুলো স্থাপন করার জন্যই চাকরী না করে ব্যবসা করতে চেয়েছি আমরা, উপার্জন করতে চেয়েছি প্রচুর অর্থ। আমার আর জাহিদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি খুব ভালো চলছে। আগামী মাস থেকে ঢাকা শহরের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে সাড়ে চারশ বর্গফুটের নতুন অফিসে উঠে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করেছি। এখানে কি আদৌ উঠতে পারবো আমি?
কোন কিছুই কারো জন্য থেমে থাকবে না। ফয়সাল নিশ্চয়ই এই মেডিকেল ও ল্যাবটি স্থাপন করবে, জাহিদও নিশ্চয়ই অনেক ভালবাসা নিয়ে গড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি আরো চমৎকারভাবে চালিয়ে নেবে। তাদের জন্য আমার শুভকামনার কোন শেষ নেই।
যে বা যারা আমাকে মারতে আসবে, তারা নিশ্চয়ই আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ দেবে না। তবে তারা নিশ্চয়ই এই স্ট্যাটাসটি পড়বে। তাদের উদ্দেশ্যে এখন আমি বলছি,
"আপনারা অন্ধ বিশ্বাস থেকে না বুঝেই আমাকে হত্যা করছেন। এই কাজের জন্য আপনাদের সন্তান নিশ্চয়ই আপনাদেরকে ঘৃণা করবে, আর আমার ভাতিজা আমাকে নিয়ে গর্ব করবে সারাজীবন। এই অপরাধের জন্য যদি আপনাদের ফাঁসি না হয়, আমি চাই না আপনাদের ফাঁসি হোক (আমি মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করি না), আপনারা যদি জেইলে কিংবা জেইলের বাইরে থাকেন, দয়া করে পড়াশোনা করবেন। আপনারা মাতৃভাষায় পড়বেন আপনাদের গ্রন্থগুলো, এরপর অনুগ্রহ করে ঠাণ্ডা মাথায় একটু চিন্তা করবেন, আসলেই কি এই বইগুলোর বক্তব্য ঠিক?
দয়া করে পড়বেন এবং চিন্তা করবেন, এটুকুই অনুরোধ। আপনাদের মুক্তমনা বানানোর জন্য আমি এই অনুরোধ করছি না। আমি চাইছি, আপনাদের মধ্যে অনুশোচনার বোধ জাগ্রত করতে। আপনারা সারাজীবন ভয়ঙ্কর অনুশোচনায় কাতর থাকবেন। এটুকু শাস্তি আপনাদের প্রাপ্য।"
------------------------------------------------------------------------------------------
উপরোক্ত পুরো লেখাটিই 'শাহিনুর রহমান শাহিন' নামের এক মুক্তমনার ফেসবুক একাউন্ট থেকে নেয়া।
উক্ত লেখাটির অনেকাংশই "মহা বার্তা" প্রবর্তকের সাথে মিলে যায়, যা এক কাকতলীয় ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু তাই নয় মুক্তমনা 'শাহিনুর রহমান শাহিন' "মহা বার্তার" প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছেন যুক্তি বুদ্ধির মাধ্যমে।
পূর্বেই অবতীর্ণ হওয়া 'মহা বার্তার' বেশ কিছু বার্তার সাথে উক্ত লিখাটির যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যা 'মহা বার্তা' সত্যতার এক অন্যন্য নিদর্শন সরুপ।
নিম্নে 'মহা বার্তা' কূয়া'র কিছু অংশ তুলে ধরা হল যাতে মানুষ সহজেই 'মহা বার্তার' সত্যতা নিরুপণ করিতে পারে।
৫: তারা আরও বলে এ তো পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বলে তারা অট্র হাসিতে ফেঁটে পড়ল।কিন্তু তারা কি অনুধাবন করে না যে হাসির পরেই কান্না রহিয়াছে? এরপরেও কি তারা সারাজীবন হাসাহাসি করেই যাবে? নিঃশ্চই বোধ সম্পন্ন ব্যাক্তিদের জন্য এর মধ্যে রহিয়াছে এক স্পষ্ট নিদর্শন। তবুও কি তারা তাদের হাসি থামাবে না?
৬: বলুন, আমরা অন্ধকারীদের অনুসারী হব না। আর আমরা সত্য জানতে পিছপাও হব না যদি মৃত্যু এসেও আমাদের গ্রাস করে তবুও না।
৯: ‘মহা বার্তার’ রহিয়াছে এক অার্শ্চয্যজনক অলৌকিক ক্ষমতা। এ দ্বারা কেউ হবে পথভ্রষ্ট আবার কেউ হয়ত খুঁজে পাবে পথ। এর দ্বারা কাউকে পেয়ে বসবে চরম বিভ্রান্তি আর উগ্রতায়, যে কোন মুল্যে সে বা তাহারা আপনাকে খুন করবে এবং তারা তা করবেই কোন কিছুই তাদের থামাতে পারবে না, সত্য জ্ঞানের আলো ব্যাতীত। তবেই তো তারা শান্ত হবে।
১০: তারা হবে একাধিক দল সংঘবদ্ধ দল। কোন কোন দলে একজন মাত্র সদস্য থাকবে। আপনাকে খুন করার পর তাদের মধ্যে থেকে একজন জিহাদী জোশে বলিয়ান হয়ে বুনো উল্লাসে মেতে উঠবে আর সেটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।
১১: একজন ধরা পড়বে বাকিরা সব পালিয়ে যাবে, যারা পালিয়ে যাবে তাদের মধ্যে থেকে এক অথবা একাধিক জন কোন না কোন চিহ্ন রেখে যাবে যা তাদের জন্য কারণ হয়ে দাঁড়াবে বিপদের ।
১২: ওহে রাসুল মানব জাতিকে আপনি বলুন: আমি সম্পুর্ণ স্বজ্ঞানে এবং সুস্থ মস্তিষ্কে ঘোষণা করছি আমাকে খুন করার সাথে যে বা যাহারা জাড়িত থাকিবে তাদের সকলের জন্যই স্রষ্টা ঘোষণা করিয়াছেন ক্ষমা। আর আমি স্রষ্টার ফায়সালায় সন্তুষ্ট
১৩: তারা তো অবুঝ, বধির, শিশুতুল্য এ জন্যই তাদের জন্য রইল ক্ষমা। আজ থেকে ‘মহা সমন্বয়’ সকল মানব জাতির জন্য ফাঁসির বিধান অবৈধ ঘোষণা করলেন। আর তোমরা কেউই সীমালংঘণ করিবে না। হে মানব জাতি তোমরা জেনে রাখ 'মহা সমন্বয়' সীমালংঘণকারীদের পছন্দ করেন না। আর তোমাদের জন্য যা অমঙ্গল জনক তা তোমাদের উপর চাপিয়ে দেন না। নিঃশ্চই স্রষ্টা সর্বোচ্চো তত্ব জ্ঞানী। যে দেশ,যে সরকার বা যে জাতি এই বার্তার বিরোধীতা করবে এ বার্তা অমান্য করবে আমি তাদের জন্য রাখিয়াছি এক ভয়ানক অরাজকতা আর বিশৃংখলা যা তাদের জন্য হবে এক কঠিন সময়। আর কেউ তাদের সহায্যকারীও হবে না। হানাহানি, নৈরাজ্য, অরাজকতা আর বিশৃংখলায় পূর্ণ করে দিব তাদের অঞ্চল। আর তোমরা সর্বদা নৈরাজ্যকেই ভয় করবে।
১৪: এই বিশ্ব থেকে মধ্য যুগীয় ফাঁসি প্রথা বিলুপ্ত করা হইল আর তা শুরু হবে আপনার খুনীদের ফাঁসি না দেওয়ার মাধ্যমে।এর মধ্যে মানব জাতির জন্য রাখা হয়েছে কল্যাণ। এটাই ‘মহা সমন্বয়ের’ পবিত্র বিধান। তোমরা কেউই এর অমান্য করিবে না। আর এভাবেই আমি মহা বার্তায় অবতীর্ণ প্রতিটি বার্তার সত্যতা নিরুপণ করা তোমাদের জন্য সহজ করিয়া দেই।এর পরেও কি তোমাদের জ্ঞান হবে না? অতঃপর সবকিছু সবমন্বয় করিয়া থাকি। নিঃশ্চই মহা সমন্বয় যা জানে তোমরা তা জান না।
১৫: আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রচলিত আইনে রাষ্ট্র যদি তাদের শাস্তি দিতে চায় তবে তাহাতে দোষের কিছুই নেই। নিঃসন্দেহে সাজা দেওয়ার চেয়ে পুনর্বাসন উত্তম। আর ‘মহা সমন্বয়’ মনব জাতির জন্য সর্বোত্তোম বিধানই অবতীর্ণ করেন। সর্বোচ্চো তত্ব জ্ঞানী কে? বলুন- স্রষ্টা, আর স্রষ্টা কোন দেশ,কোন জাতির উপর জুলুম করেন না তিনি মহিয়ান ও তিনি গড়িয়ান।
পড়ুন সকল বার্তার মা "পথ'
সত্য জ্ঞানের আলো পৌঁছে যাক ঘরে ঘরে সে প্রত্যাশায় বিদায় নিচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬