একজন শহীদ শফি ইমাম রুমী । আমাদের নতুন প্রজন্মের আইডল ও গর্ব করার মত এক বীর
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শাফি ইমাম রুমী ১৯৫২ সালের ২৯ মার্চ শরীফ ও জাহানারা ইমামের উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আই.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে রুমী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। তিনি ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সুযোগ পেলেও যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার পর আর পড়তে পারেননি।
শফি ইমাম রুমী (২৯ মার্চ, ১৯৫২ - নিখোঁজ ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি ছিলেন শহীদ জননী খ্যাত জাহানারা ইমামের জেষ্ঠ্য পুত্র। জাহানারা ইমাম রচিত একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থে রুমীকে অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখা যায় এবং তাঁর মৃত্যুর জন্য জাহানারা ইমাম শহীদ জননী উপাধি পান।
শহীদ রুমীর মুক্তিযুদ্ধে যোগদান ও মুক্তিযুদ্ধে তার ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীঃ
যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে, রুমী ধারাবাহিকভাবে তাঁর মা ও বাবাকে নিজের যুদ্ধে যাবার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল মাকে রাজি সক্ষম হন। তিনি ২ মে সীমান্ত অতিক্রমের প্রথম প্রয়াস চালান। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাঁকে ফেরত আসতে হয় এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন। তিনি সেক্টর-২ এর অধীনে মেলাঘরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই সেক্টরটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন খালেদ মোশাররফ ও রশিদ হায়দার। প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি ঢাকায় ফেরত আসেন এবং ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন। ক্র্যাক প্লাটুন হল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনাকারী একটি সংগঠন। রুমী ও তার দলের ঢাকায় আসার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন হামলা করা। এ সময় তাঁকে ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা করতে হয় যার মধ্যে ধানমণ্ডি রোডের একটি আক্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
ধানমণ্ডি রোডের অপারেশনের পর রুমী তার সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে কাটান, এবং এই রাতেই বেশকিছু গেরিলা যোদ্ধার সাথে পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী একটি অজ্ঞাত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক যোদ্ধাকে গ্রেফতার করেন যার মধ্যে ছিলেন আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারাক, আজাদ ও জুয়েল। রুমীর সাথে তার বাবা শরীফ এবং ভাই জামীকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের স্থানে রুমীকে ভাই ও বাবাসহ একঘরে আনলে রুমী সবাইকে তার যুদ্ধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করতে বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, পাক বাহিনী তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন এবং এর সব দায়-দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। ৩০ আগস্টের পর রুমী ও তার সহযোদ্ধা বদী এবং চুল্লুকে আর দেখা যায়নি।
ইয়াহিয়া খান ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলে অনেক আত্মীয় তাঁর জন্য আবেদন করতে বলেন। কিন্তু রুমী যে বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ধরা পড়েছে, তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইতে রুমীর বাবা শরীফ রাজি ছিলেন না। ফলে রুমীর আর ঘরে ফেরা হয়নি।
যুদ্ধের রণাঙ্গন থেকে শহীদ রুমির চিঠিঃ রণাঙ্গণ থেকে রুমী চিঠি লিখেছিলেন তাঁর মামা সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশাকে। তিনি বর্তমানে 5 Grenfell Gardens, Harrow Middlesex, HA3 0QZ, UK এই ঠিকানায় থাকেন। চিঠিটি কী অসামান্য ছিলো , তা না পড়লে বুঝা সম্ভব না । চিঠিটি পুরোটাই তুলে ধরলাম নীচেঃ
Agartala, June 16, ‘71
Dearest Pasha Mama,
Don’t be surprised! It was written and has come to pass. And after you read this letter, destroy it. Don’t try to write to Amma about this letter. It will put them in danger.
This is a hurried letter. I don’t have much time. I have to leave tomorrow for my base camp.
We are fighting a just war. We shall win. Pray for us all. I don’t know what to write.. ..there is so much to write about. But every tale of atrocity you hear, every picture of terrible destruction that you see is true. They have torn into us with a savagery unparalleled in human history. And sure as Newton was right, so shall we too tear into them with like ferocity.
Already our war is far advanced. When the monsoons come we shall intensify our operation.
I don’t know when I shall write again. Please don’t write to me.
And do your best for SHONAR BANGLA.
Bye for now. With love and regards.
Rumi.
ইংরেজীতে লেখা এই চিঠি পড়ে আমি বেশ অবাক না হয়ে পারলাম না । এখানে তিন থেকে চারটি শব্দ সরাসরি ব্ল্যাইকির কবিতা থেকে নেয়া। রণাঙ্গণে থেকেও শহীদ রুমীর কী অসামান্য শব্দচয়ন ছিল , তা চিঠিটা পুরোপুরি না পড়লে বুঝা যাবে না ।
আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতির পরিবর্তন হয়। আর ৪২ বছর বয়সী বাংলাদেশ নামক ক্ষুদ্র একটা রাষ্ট্রে বসে আমরা স্বপ্ন দেখি আজ থেকে একশত চল্লিশ বছর পর আরেকজন রুমীর জন্ম হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যার লেখা চমৎকার একটা বই পড়ে প্রতিটি ভবিষ্যত বাংলাদেশী তরুণ বলে উঠে ,
আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা বাঙালি..আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা রুমী
পরিবারের সাথে শহীদ রুমির একটি ছবিঃ
আজ ২৯ মার্চ, রুমী ভাইয়ের জন্মদিন। শহীদ শফি ইমাম রুমী । এই রুমীই গেরিলা যোদ্ধা রুমী। আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই আজ আইডল হচ্ছেন সেই সাহসী-নির্ভীক , শহীদ রুমি । হাজারো বাঙ্গালীর গর্ব এই শহীদ রুমী।
পোস্ট তথ্যসূত্রঃ উইকিপেডিয়া ও ইন্টারনেট । ছবিগুলোও উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত।
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন