একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামাত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আটক রাখার আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। একইসঙ্গে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে ট্রাইবুনাল।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামাতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বুধবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে হাজির করা হয়।
জামিন আবেদনের শুনানিতে সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কবে শেষ হবে সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ নির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেনি। আর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন ও সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও কাউকে বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল ধরে আটক রাখা বেআইনি।
সাঈদী যেকোনো শর্তে জামিন পেতে রাজি আছেন বলেও ট্রাইবুনালকে জানান তিনি।
সাঈদীর জামিনের বিরোধীতা করে ট্রাইবুনালের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট হায়দার আলী বলেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে আসামিদের জামিন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই।
জামিন আবেদনের বিপরীতে যুক্তি দিয়ে তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর কোথাও গণহত্যার আসামি জামিনের জন্য বিবেচিত হয় না।
এরইমধ্যে সাক্ষীদের ভয়-ভীতি দেখানোর কারণে জামাত নেতাদের বিরুদ্ধে ৬টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, জামিনে মুক্ত হয়ে সাঈদী তদন্ত কাজে বাধা তৈরি করতে পারেন।
পরে সাঈদীর জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে ট্রাইবুনাল। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়।
পরে সাঈদীকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এর আগে ২৩ ডিসেম্বর সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থার আইনজীবীরা (প্রসিকিউটর)। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শাহিনুর ইসলামের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হয়। গত ২ নভেম্বর এক আদেশে ট্রাইব্যুনাল ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের প্রতিবেদন জমা দিতে তদন্ত সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছিল। একই সঙ্গে সাঈদীকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আটক রাখারও আদেশ দেয়া হয়।
গত ৫ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাঈদীকে আটক দেখানোর এক আবেদনের ওপর শুনানি শেষে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তে ১৭ আগস্ট প্রথম পিরোজপুর যায় তদন্ত দল। পরে আরো দুদফায় ওখানে তদন্ত করে প্রতিনিধিদল। এ পর্যন্ত ৪২ জন সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করেছে তারা।