মানুষ তো মানুষের জন্য। প্রবাদটি অনেকদিন আগে থেকেই শুনে আসছি। পত্র-পত্রিকায়, টেলিভিশনের পর্দায় মানুষ মানুষের জন্য বলে যে কত হাজারো বিজ্ঞাপনে হাজারো মানুষের প্রাণ বাঁচছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। তাদের কেউ হয়তোবা রোগে, কেউবা বস্তুহারা আরো অনেক কারনেই এসব সাহায্যের জন্য হাত পাততে বাধ্য হতে হয়েছে অসহায় মানুষগুলোকে। এসবের মূল কারন ছিল দারিদ্রতা। মানুষের অসহায়ত্বের শেষ নেই। অনেকেই অনেক কারণে অসহায় হতে পারে। কিন্তু জন্ম যাদের আজন্ম পাপ তাদের কি দোষ। একই পৃথিবীতে আমি আপনি জন্ম গ্রহণ করেছি। সৃষ্টিকর্তা কারো জন্য কোন দেশ ফিক্সট করে দেন নাই। কোন পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করে দেন নাই। তবে আজ মনুষ্যসৃষ্ট পাসপোর্ট ভিসার কল্যাণে রোহিঙ্গা নামের একটি অসহায় জাতি আজ বিপন্ন। আপনি যদি একটাও রোহিঙ্গার কথা নিজের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন তবে আপনি বুঝতে পারবেন যে একটা রোহিঙ্গা দিনের পর দিন কতটা অসহায় আর নিরুপায় হয়ে সাগরে ভাসছে। যাদের চোখে আশার আলোকচ্ছটার বিন্দুমাত্র নেই। আশা করাও যেন তাদের মহাপাপ।
যখন তারা মিয়ানমার হতে বউ বাচ্চা সহ একটা নৌকাকে জীবন সম্বল করে সাগরের অথৈই জলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে তখন হয়তো তাদের একটাই আশা থাকে কয়েকটা দিন সাগরের পানিতে ভেসে থেকে অজানা কোন দেশে পাড়ি দিয়ে কোনমতে বেঁচে থাকা। কিন্তু হায় সৃষ্টিকর্তা তাদের সৃষ্টি করেছে কিন্তু থাকার জন্য একখন্ড জায়গা বরাদ্দ করে নাই। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেলে মেয়ের। যেখানে সে তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একটু মাথা গোজে।
নৌকায় ভাসা রোহিঙ্গারা একটু খাবারের আশায় চেয়ে থাকে আকাশের দিকে। তাদের কারো মুখে খাবার নেই। নেই বিশুদ্ধ পানি। নৌকা ছাড়ার সময় যেটুকু খাবার ছিল তা শেষ হয়েছে অনেক আগেই। অভুক্ত মা তার ছেলের দিকে চেয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে। আর তাকায় সাগরের অথৈই পানি দিকে। পরিবারের কর্তা নিরুপায় সাগরের পানিতে ভাসতে থাকে।
তারা রোহিঙ্গা, তারা কোন দেশের কোন বৈধ নাগরিক নন, সৃষ্টিকর্তা তাদের জন্য কোন দেশ নির্ধারিত করে দেন নি! যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে থাকবে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে থাকবে বা রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে থাকবে। তাই তারা কখনও কোন সাংবাদিক বা কোন এনজিও সংস্থার কাছ হতে ত্রাণ ও আশা করতে পারে না। করবেই বা কেন? এটা তো নেপালের ভূমিকম্প নয়! যে অন্যান্য দেশ ত্রাণ দেবার জন্য হুরোহুরি লেগে যাবে। আর মিডিয়া সেগুলো নিয়ে বড় বড় অক্ষরে নিউজ করবে। নেপালের প্রাণীগুলো মানুষ ছিল। আর সাগরে ভাসমান প্রাণীগুলো যে কি সেটা আমার জানা নেই।
আপনাকে বলছি-
খাবারের কষ্ট কখনো অনুধাবন করেছেন কি? একটা নৌকায় আপনার পরিবার পরিজন নিয়ে সাগরে ভাসছেন। ৫ কেজি চিড়ে আর ১ কেজি গুড় খাবার হিসেবে আপনার আছে। আপনার স্ত্রী আর আপনি ১ মুঠো চিড়ে খাচ্ছেন দিন একবেলা। আর সন্তানগুলো সেই চিড়েই খাচ্ছে। ৪/৫ দিনের শেষে কোন চিড়ে বা গুড় নেই নেই খাবার পানি। ১ম দিন অভুক্তটা বুঝলেও সন্তানদের কোনমতে বুঝিয়ে চালিয়ে দিলেন। কিন্তু ২য় দিন না খাওয়া, ৩য় দিন না খাওয়া। চেয়ে আছেন কোন ত্রান সংস্থার দিকে। অথবা কোন দেশ কবে আপনাকে স্বীকৃতি দেয় সেই ভাবনায়। অথচ সেই ত্রাণ সংস্থারও অবস্থা নেই কারন তারা আপনাকে মানুষ হিসেবে মনেই করছে না। মানবিক দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পেয়েছে শুধু আপনার বেলাতেই।
সামহোয়ারইন ব্লগ বলতে যে কিছু একটা আছে সেটা আপনি জানেনই না। এটি কোন ত্রান সংস্থা বা কোন দেশের আর্থিক সাহায্যের কোন টিম নয়। আপনি এক টুকরো রুটির জন্য যাদের কাছে আশা করছিলেন তাদের বদলে সেই রুটি নিয়ে হাজির হয়েছে সেই অজানা সামহোয়ার ইন ব্লগ নামের অজানা একটি গ্রুপের কিছু সদস্য। অন্তত আজকের বিকেলটায় একটি রুটি স্ত্রী-সন্তানদের হাতে দিয়ে বলতে পারবেন এই নাও খাও।
রোহিঙ্গা বা মুসলিম নয় একজন মানুষের প্রতি একজন মানুষ হয়ে সামহোয়াইর ইন ব্লগের প্রতি এতটুকু আস্থা কি আমি আশা করে পারি না? সামু’র সাফল্য গাঁথা অনেক কথাই তো পড়েছি আগে। আমি বিশেষ করে রানা প্লাজার অনুদানের বিষয়টার কথা বলছি। ২০১৫ সালের বিশ্বে আমাদের চোখের সামনে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে একজন মুক্তচিন্তার মানুষ হয়ে এটা ভাবতে বড় কষ্ট হচ্ছে।