২০১০ সালের শীতের সেমিস্টারের কথা বলছি । আমাদের বেশ কিছু নন ডিপার্টমেন্টাল কোর্স নিতে হয় এবং সেগুলো হিউম্যানিটিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে, আমার সবচেয়ে উপভোগ করা ক্লাস বলতে গেলে এগুলোই। সবসময় দেখা যাবে নতুন টিচার আর অন্য ফ্যাকালটির স্টুডেন্ট ভরা। আমি ইচ্ছা করেই বাইরে থেকে পড়াতে আসা টিচারের ক্লাস নিতাম। আর কষ্ট হলেও অন্য ক্যাম্পাসে ক্লাস নিতাম। কারণ আমাদের ফ্যাকালটি আর ক্যাফেতে বসে স্টুডেন্টরা জীবনের আনন্দ খুঁজে ম্যাথম্যাটিক্যাল ইকুয়েশান দিয়ে !!আমি সবসময় চেষ্টা করতাম আর্কিটেকচার ফ্যাকালটির ক্যাম্পাসে ক্লাস নেয়ার। ওই ক্যাম্পাসটাই আমাদের সবচেয়ে পুরানো এবং সুন্দর। রাজকীয় ভাবটা এখনো মুছে যায়নি। আমার সেবারের ক্লাস ছিল আর্ট, কালচার এন্ড সোসাইটি। কোর্সটা নিতেন স্টিভেন রীচমনড, তিনি আমেরিকান। মূলত সেখনে সিলেবাস ছিল শেক্সপীয়ারের কয়েকটা প্লে বা নাটক। প্রথম ক্লাসে পরিচয় পর্বের পর জিজ্ঞাস করা হল কেন এই কোর্স আমরা নিয়েছি। আমার উত্তর ছিল সাহিত্যের প্রতি আমার গভীর অনুরাগ। খুব আশ্চর্যের ব্যাপার বাকী সবাই বলেছে কোর্স শেষ করা দরকার কম্বা বই পড়তে ভাল লাগে তাই। স্যার আমাকে বললেন প্রথম নাটকটা পড়া শেষ করার পর যেন আমি একটা লেকচার দেই। আমিও কেন যেন রাজি হয়ে গেলাম। আমাকেই সাবজেক্ট ঠিক করতে বলেছেন স্যার। আমি স্যারকে জানালাম করলে বাংলা সাহিত্য নিয়ে। যাই হোক দেখতে দেখতে সময় আসলো। আমি লেকচারের জন্য একটা এ ফোর সাইজের সাদা পাতায় কিছু হেড লাইন ঠিক করলাম, বাকীটা তাৎক্ষণিক বানাতে হবে। সত্য বললে আমি অনেক বেশী অবাক হলাম। কারণ ক্লসে তখন পিন পতনের শব্দ নেই। স্যার অন্যান্যদের সাথে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি কীভাবে যেন অনর্গল ৪০ মিনিট লেকবার দিয়ে ফেললাম। এরপর ভেগে যাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু স্যার বললেন এখন প্রশ্ন করা হবে, আমি তো পুরাই নাই। যাই হোক আরও ১৫ মিনিট সবার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলাম। সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার আমি ছাত্র ছাত্রীদের মাঝখানে আগ্রহের তৈরি করতে পেরেছি। সবাই একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছিল। আর তখনই বলা যায় একটা চমকে দেয়ার মত ঘটনা ঘটে গেল। স্যার সবার সামনে বলে বসলেন, আব্দুল্লাহ আজকের পুরো ক্লাসটা তুমিই নাও। আমার ভেতরে একেবারে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছিল। আমি আনন্দিত এবং হতবাক হবার মাঝামাঝি কিছুতে ছিলাম। তখনও আমি লেকচার ডায়াসে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে। আমি বেশ খানিকটা সময় নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে উত্তর করলাম, স্যার আমাকে যা বললেন এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। আপনি আমার সামনে থাকতে আমি সেটা কখনই পারি না।".. ইস্তানবুল টেক এ আসার পর আমার সবচেয়ে স্মরণীয় এবং বড় প্রাপ্তিগুলোর খাতায় এটা লেখা থাকবে। স্যার শেষ বছরে ইংল্যান্ড চলে যান। স্যারের সাথে আমার এখনও মেইলে যোগাযোগ হয়। স্যারকে সম্মান জানাতে আজকে লিখলাম।
আব্দুল্লাহ/ ইস্তানবুল।