প্রমিথিউস মোহামেদ বুয়াজিজি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
মানুষ সময়ের নির্মান।অধিকাংশ মানুষই সময়ের স্রোতের ভেলায় ভেসে চলে। তবে কেউ কেউ সেই সময়কেই নির্মানের আস্পর্ধা দেখান।মোহামেদ বুয়াজিজি-সেই দুর্লভ, অজয়'দেরই একজন।
সংগ্রামী জীবনের থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা মানুষের সবচে বড় শিক্ষা, সবচে বড় সম্পদ।সংগ্রামী জীবন তাই সাধারণ্যে মিশে থেকেও অসাধারণ।
মোহামেদ বুয়াজিজি তিউনিশিয়ার সিদি বুজিদ শহরের আর দশটা ছাপোষা পরিবারের মতোই এক মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান।বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী সেটাও একখানা ছিলো।তবে তা দিয়ে মডেল ইকোনমি'র তিউনিশিয়ায় তাঁর ভাগ্যে কোন শিকে ছিঁড়েনি।অথচ নব্য উদারনৈতিক ব্যবস্থার "মডেল ইকোনমি" দিয়েই মিষ্টার জাইন আল আবিদিন বেন আলি বিশ্ব মোড়লদের কাছে নিজের স্বৈরশাসনকে বৈধ করে নিয়েছিলেন। কখনো-সখনো সাবেক প্রভু ফ্রান্স, গণতন্ত্রের সূতিকাগার ইউরোপ আর "মানবাধিকার" এর এক্সপোর্টার যুক্তরাষ্ট প্রমুখদের পিঠ চাপরানো জুটেছে সুবোধ এবং অনুগত ধামাধরা হিসেবে।
জীবিকার প্রয়োজনে বুয়াজিজি পথে নেমেছিলেন হকার হিসেবে।ফলমুল আর সবজি ফেরি করে বিক্রি করতেন।স্বৈরচারী রাষ্ট্রে বাহ্যিকভাবে যত আধুনিক হোকনা কেন ভিতরটা থাকে কুৎসিত আঁধারে ঢাকা।সেই আঁধার গ্রাস করে বুয়াজিজিদের বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনকেও।তাঁকে অপদস্ত হেনস্তা করা হয় বৈধ অনুমোদনপত্র না থাকার অভিযোগে; উল্টিয়ে দেয়া হয় তাঁর ভ্যান, ছুঁড়ে ফেলা হয় মালামালকে।
একজন হকারের ভ্যান উল্টিয়ে দিয়েই বেন আলি সরকার ২৩ বছরের কুক্ষিগত মসনদকে উল্টানোর সূচনা করলেন!অদৃষ্টের রসিকতা বুঝি এমনই নির্মম হয়।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তবেই মানুষ রুখে দাড়ায়।কথাটা চমৎকার; আমাদের সময়ে সময়ে আশ্বাস যুগিয়েছে তবে একটা মস্ত ফাঁকি আছে।আমরা কিভাবে বুঝবো যে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে!সাধারণ্যের উপলব্ধির জন্য চাই উদাহরণ, চাই দৃষ্টান্ত।
বুয়াজিজি'রা শুধু উপলব্ধিই করেন না, নিজেরাই দৃষ্টান্ত হয়ে যান।তাঁর গায়ের আগুনের দগদগে শিখা শুধু তার কাঁচা মাংশকেই পোড়ায় না, আমজনতার বিবেক কিংবা মগজ যাই বলি না কেনো, সেটাকেও পোড়ায়!বুয়াজিজি নিজশরীরের সেই আগুনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ভাগ্যের কাছে সমর্পন করে সবকিছু মেনে নেওয়া নিগড়বন্দী মানুষের গায়েও।সেই আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে সিদি বুজিদ থেকে তিউনিশ, কার্থেজ, পুরো তিউনিশিয়া, উত্তর আফ্রিকা থেকে আরব বিশ্ব, সেখান হতে গোটা দুনিয়ায়।
বুয়াজিজির ভাই যেমনটা বলেছেন "Freedom is expensive and my brother paid the price of freedom" and "My brother has become a symbol of resistance in the Arab world"
গ্রীক প্রমিথিউস দেবতারাজ জিউসের নিকট হতে আগুন চুরে করে তা মরনশীল মানুষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।অপরাধে জিউস তাঁকে দেন এক নিষ্ঠুরতম অন্তহীন শাজা। প্রমিথিউসকে শেকলবদ্ধ করা হয়েছিলো দূর ককেশাস পাহাড়ের এক শিলাখন্ডে।রোজদিন এক ভয়ালদর্শন ইগল তাঁর কলিজা খুবলে খেতো আর খুবলে খাওয়া কলিজা রোজরাত্রে পূর্ণতা পেতো।তবুও প্রমিথিউস কখনোই তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাননি কিংবা অনুতপ্ত হননি।
যুগে যুগে পৃথিবীতে হয় বাংলামুলুকে নুর হোসেন হয়ে কিংবা উত্তর আফ্রিকায় বুয়াজিজি'র মতো প্রমিথিউসদের জন্ম হয় বলেই আমরা দুর্বলচিত্ত, ভীরু, ঘরকুনো মানুষরা গণতন্ত্রের সাধ পাই; সেটা যত ভংগুরই হোকনা কেন।তবু গণতন্ত্র তো! আর কে না জানে
"The worst form of democracy is better than the best from of dictatorship".
"স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক" যুগে যুগে, দেশে দেশে।
ছবি:উইকিপিডিয়া
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন