স্বাধীনতার পর বৈদেশিক পরামর্শ ও সহযোগিতা ছিল আমাদের দেশে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহনের মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় গোড়ামী আমাদের সংস্কৃতিতে বাসা বেধেছে। তাই পরবর্তী সরকার গুলো পরিবার পরিকল্পনা গ্রহনের ফলাফল পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।এই ব্যর্থতা অথবা দুর্বল সফলতার মূলে রয়েছে একটি ধর্মীয় ভ্রান্ত ধারণা- "মুখ দিব আল্লায়, খাওন দিব আল্লায়"। আমরা অতিমাত্রায় ধর্মভীরু বলে এই অযৌক্তিক ভ্রান্ত ধারণার বেড়াজাল ছিন্ন করতে পারিনি। তাই দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমরা দেখেছি জ্ঞানের উপর গোড়ামীর বিজয়। মুখ ও খাবার একই সৃষ্টিকর্তার দান হলেও তা অর্জনের জন্য যে চেষ্টা ও যোগ্যতার প্রয়োজন এ সম্পর্কে আমাদের ধর্ম কোন ব্যখ্যাতো দেয়নি, উল্টো আমাদের স্বাধীন যুক্তি চিন্তার পথে চাপিয়ে দিয়েছে পাহাড়সম অন্তরায়। তাই শিক্ষিত সমাজের একাংশ পরিবার পরিকল্পনা সম্পূর্ণ রূপে গ্রহণ করলেও জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশ এখনো এর বাইরেই অবস্থান করছে। আমরা কেন জানি বুঝতে চাইনা বড় পরিবার আর লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে জমি দখল করে জমিদার হওয়ার সময় অনেক আগেই চলে গেছে। তাই -"আমরা আছি ১০ভাই, আমার সমান কেহ নাই" এই মানসিকতা এখনি ত্যাগ করতে হবে।
১৯৭২ সালে আমরা কিছু পাই বা না পাই, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্য একটি আধুনিক সংবিধান পেয়েছিলাম। ধর্মভীরু বাঙ্গালী জাতির সামনে ধার্মিকের ভান ধরে উপস্থিত হন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। যিনি আধুনিক রাষ্ট্রের মূলনীতি (ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার) উপেক্ষা করে বাঙ্গালীর ধর্মীয় অনুভুতিকে কেন্দ্র করে নিজের ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াসের নিমিত্তে উত্তম সংবিধানের উপর কালিমা লেপন করেন পঞ্চম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি যে ধর্ম নয়, একথা বাঙ্গালী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনের মাধ্যমে প্রমান করে দিয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্র নায়কের এই অদূরদর্শীতার কারণে আমাদের দেশে ইসলামি ধর্মীয় মৌলবাদের পুনঃজন্ম হয়। যা আমাদের আধুনিক গতিশীল রাষ্ট্রের লাগাম টেনে ধরে।
ধর্মীয় গোড়ামী রাষ্ট্রের সমর্থনের মধ্য দিয়ে ক্ষতবিক্ষত বাঙ্গালী জাতির উপর"মরার উপর খাড়ার ঘা" হয়ে দেখা দেয়। দরিদ্র গ্রাম্য পরিবারে যেখানে সদস্য সংখ্যা সীমিত রাখাই সমুচিন, সেখানে ধর্মীয় মৌলবাদ পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধিতে উৎসাহ যোগিয়েছে এবং পরিবার পরিকল্পনাকে আল্লাহ বিরোধী কার্যকলাপ বলে প্রচার করেছে এবং এর সহযোগিদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করেছে। আমাদের ধর্মভীরু অশিক্ষিত পরিবারগুলো ধর্মীয় মৌলবাদিদের কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে পরিবার পরিকল্পনাকে পাপের কাজ মনে করেছে। যার ফলশ্রুতিতে "জনসংখ্যা সমস্যা" নামক এক নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়। এই নতুন সমস্যাকে মোকাবেলা করার জন্য সরকার সেই পুরাতন পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিকেই কার্যকর করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এই পদ্ধতি যদি পূর্বেই(গোড়ায়) কার্যকর করা হত তাহলে আমার মনে হয় জনসংখ্যা নামক সমস্যা এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যার উদ্ভবই হত না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০০৯ রাত ২:০৪